Ajker Patrika

জ্বালানির উত্তাপে চোখ রাঙাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪১
জ্বালানির উত্তাপে চোখ রাঙাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

একের পর এক করোনার নতুন ধরন বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্রমেই নাজুক করে তুলছে। দেশে দেশে ওমিক্রনের ধাক্কায় গতি হারাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। পণ্যের সাপ্লাই চেইনে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটার রেশ রয়ে গেছে এবং ওমিক্রনের সঙ্গে এ সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। আর কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেলের দাম যে উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে, তা মাঝে খানিকটা কমলেও দুদিন ধরে তা ধরাছোঁয়ার বাইরেই চলে যাচ্ছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। আর এই একটিমাত্র পণ্য এখন বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর চোখ রাঙাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের মতো দেশেও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদেরাও সামনে বাংলাদেশের জন্য মূল্যস্ফীতিকেই প্রবৃদ্ধির জন্য বড় বাধা বলে মনে করছেন।

জানা যায়, গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম নতুন বছরের প্রথম দুই সপ্তাহ টানা বেড়েছে। বছরের প্রথম সপ্তাহে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৮১ দশমিক ৭৬ ডলারে উঠে আসে। গত এক সপ্তাহে বা বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ৪৭ ডলার। এতে মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ। সপ্তাহখানেক আগেও জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ৭০ ডলারের মধ্যেই ছিল। দ্রুততার সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম এভাবে লাগামহীন বাড়তে থাকায় সারা বিশ্বে নিত্যপণ্যের দাম তথা মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা আরও তীব্র হচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো দেশে আমদানিনির্ভর এ পণ্যটির দাম বাড়লে অর্থনীতিতে এর চাপ তৈরি হয়। সম্প্রতি সরকার পণ্যটির দাম বাড়তে থাকায় স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করে। এতে পরিবহন খাত তথা পুরো বাজারব্যবস্থায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। ওই উত্তাপ এখনো কাটেনি, বরং এখন আবার নতুন করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে জ্বালানির অব্যাহত দাম বৃদ্ধি।

বিবিএসের সবশেষ তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এখন জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সমান হয়ে গেছে। সাধারণত মূল্যস্ফীতি ও মজুরি হার বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য ১ শতাংশের মতো হয়। কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এখন তা ৬ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার স্লথ হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানির দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ যেহেতু বেশির ভাগ নিত্যপণ্য আমদানি করে আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, ফলে এখানেও বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও আজকের পত্রিকাকে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আগাম দামে জ্বালানি তেল কিনে রাখার পরামর্শ দিলেও দুদিন ধরে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় ওই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও সামনের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতিকে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় ঝুঁকি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামনে বিশ্ব অর্থনীতির গতি স্লথ হলেও বাংলাদেশের গতি অনেকটাই ভালো থাকবে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা।

সরকার ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নানান বিধিনিষেধ জারি করতে শুরু করেছে। যদিও সামনে লকডাউন হবে কি না, এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। তারপরও ব্যবসা-বাণিজ্যের সময়সীমায় কড়াকড়ি আরোপের চিন্তাভাবনা চলছে। এটা কার্যকর হলে আবারও মানুষের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে একদিকে জিনিসপত্রের বাড়তি দাম, অন্যদিকে আয় কমে গেলে মূল্যস্ফীতির উত্তাপ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত