Ajker Patrika

ঐতিহ্যবাহী খালে পানি নেই

মো. নাজিম উদ্দিন, কেরানীগঞ্জ
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৩৮
ঐতিহ্যবাহী খালে পানি নেই

শুভাঢ্যা খাল কেরানীগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী খাল। দখল আর দূষণে ইতিমধ্যে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এই খাল। বর্ষা শেষে জলাধারে সাধারণত পানি থাকলেও এই খালে নেই পানির দেখা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, একসময় এই খাল দিয়ে বড় বড় লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করত। কথিত আছে, এই খাল দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টিমারে করে গোপালগঞ্জে গিয়েছিলেন। এই খালে এখন লঞ্চ তো দূরের কথা, খেয়া নৌকাও চলা দায়।

একটা সময় উপজেলার শুভাঢ্যা, আগানগর ও তেঘরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল এই শুভাঢ্যা খাল। এই খালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন উপজেলার অনেক বাসিন্দা। দেশীয় প্রায় সব প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম ছিল শুভাঢ্যা খাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকায় গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় দিয়ে খাল প্রায় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া খালের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ময়লা আর আবর্জনা দিয়ে ভরে গেছে। কোথাও কোথাও খালের মাঝখানেই জন্ম নিয়েছে বড় বড় গাছ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খালের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। খাল রক্ষায় সরকার বিভিন্ন সময় বরাদ্দ দিলেও খাতাপত্রেই তা সীমাবদ্ধ। জনগণের চোখে ধুলো দিতে কিছু কাজ করেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায়। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খালের উভয় পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ১৮৬টি ছোট-বড় স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া খালটি পুনরায় খনন করে সেখানে পানির নাব্যতা সৃষ্টি করা হয়।

খালটি পুনরায় দখল ও দূষণ হয়ে গেলে ২০১২ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে খাল খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এ কাজ করে। উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দখল ও দূষণের কারণে খালটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।

গত ২০১৫ সালের ৮ মার্চ পুনরায় খালটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ নসরুল হামিদ বিপু। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ করার কথা ছিল। এতে খালের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ করে খালের দুপাশে ব্লক বসিয়ে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা ছিল। ওই বছরের জুলাই মাসেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কয়েক মাস কাজ করে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৬ সালের শুরু থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ কিলোমিটারের পর থেকে বর্জ্য অপসারণ ও নাব্যতা সৃষ্টির কাজ করে। কাবিখা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের সংস্কারের পরে ওই বছরের ৩১ জুলাই খালে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। তবে ফের ময়লা-আবর্জনায় খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

শুভাঢ্যা এলাকার বাসিন্দা মুনসুর আলী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এই খালে গোসল করেছি। বাসাবাড়ির কাজে খালের পানি ব্যবহার করেছি। আর এখন এই খাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।’

ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শুভাঢ্যা খালটি কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী এই খাল রক্ষায় সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান দুটোই চলবে। খাল-নদী দখল-দূষণে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত