Ajker Patrika

মিথ্যা প্রচার বাড়াচ্ছিল পাকিস্তান

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৯
মিথ্যা প্রচার বাড়াচ্ছিল পাকিস্তান

মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। এরই মধ্যে নভেম্বরের শেষ দিক থেকে আসলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধটা এতই পীড়া দিচ্ছিল যে পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধ শুরু করতে চাইছিল, আবার ভারতীয় বাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিতভাবে আক্রমণ করে পাকিস্তানিদের যুদ্ধের জন্য উসকানি দিচ্ছিল। ডিসেম্বরে এসে পাকিস্তানিরা বুঝতে পারে, ভুল হয়ে গেছে কোথাও। মার্চে যেভাবে ভেবেছিল এক লহমায় গুঁড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালিদের প্রতিরোধ, সেটা বাস্তবে ঘটেনি। বরং বাঙালিরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিসংগ্রামে।

রাওয়ালপিন্ডি থেকে পাকিস্তানের সরকারি মুখপাত্র জানাচ্ছিলেন ভারতীয় বিমানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের খবর। এপিপির বরাতে পরিবেশিত সে খবরে বলা হয়, ৩০ নভেম্বর বেলা ১১টা থেকে ১২টা ২ মিনিটের মধ্যে চারটি ভারতীয় জঙ্গিবিমান ও একটি আলোকচিত্র গ্রহণকারী সন্ধানী বিমান শিয়ালকোট এলাকায় পাকিস্তানি আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। এপিপির খবরে আরও বলা হয়, ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার দর্শনা এবং সিলেট জেলার শমসেরনগরে ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ চালায়। সব ফ্রন্টে ভারতের আক্রমণের তীব্রতা অব্যাহত ছিল, তবে বিভিন্ন স্থানে তাদের ভারতীয় সীমানা পার করে হটিয়ে দেওয়া হয়। খবরে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ১৩০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। ৮ জনকে আটক করা হয়। এগুলো ছিল পাকিস্তানের সরকারি প্রচারণা।

১ ডিসেম্বরেই এপিপি জানায়, বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার এখনো শেষ হয়নি। রয়টার্স পরিবেশিত খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতে অস্ত্র চালানের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ করার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এপিপি ও রয়টার্স পরিবেশিত খবরে বলা হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বাহিনী প্রেরণের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে অনুরোধ জানিয়েছেন, সে সম্পর্কে জাতিসংঘ মুখপাত্র বলেন যে এ রকম বাহিনী পাঠানোর আগে মহাসচিব উ-থান্টকে নিরাপত্তা পরিষদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়।

পিপিআই-এর পাঠানো খবরে বলা হয়, ১ ডিসেম্বর সিলেটে একটি জনসভা হয়, যেখানে বক্তৃতা করেন পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার লে. জে. এ এ কে নিয়াজী। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালের গণভোটে সিলেটবাসী তথাকথিত বাংলাদেশের পক্ষে নয়, পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয় এবং মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সিলেটবাসী তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিসর্জন দেবে।’ এই ভূখণ্ডের বাস্তবতা যে পরিবর্তিত হয়ে গেছে, সেটা নিয়াজীর চোখে ধরা পড়েনি।

এরই মধ্যে পাকিস্তান আর তুরস্ক একটি যুক্ত বিবৃতি দাঁড় করায়, তাতে পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারতের সৈন্য অপসারণের আহ্বান জানানো হয়। ওয়াশিংটন সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার জন্য নয়াদিল্লির ওপর চাপ অব্যাহত রাখে। ইয়াহিয়ার কাছে লেখা এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন নয়াদিল্লি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি সংযতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। সোভিয়েত নেতা কোসিগিনকে লেখা চিঠিতে তিনি ভারতকে সেনা মোতায়েন না করার ব্যাপারে সম্মত করার অনুরোধ জানান। ভারতকে সেনা মোতায়েন-বিষয়ক নিক্সনের বার্তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পল কিটিংকে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানই প্রথম সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন করেছে, অথচ কেউই তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে বলছে না। কিন্তু যখন ভারত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্তে সৈন্য পাঠিয়েছে, তখনই প্রত্যাহারের প্রস্তাব আসছে। …দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বাঁচাতে চাইছে।’

সূত্র: ১. ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক। ২. মাহমুদুল হক, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের খোঁজ মিলছে না

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

৫ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত