Ajker Patrika

শেরেবাংলা কাঁদছেন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ১৭
শেরেবাংলা কাঁদছেন

বয়স যখন ৯-১০, তখন আবদুল আলীমের এক চাচা কলকাতা থেকে একটা কলের গান কিনে নিয়ে এলেন। তখন তাঁরা থাকেন মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যখন আলীম পান্তাভাত খাচ্ছিলেন, তখনই তাঁর কানে আসে সুমধুর আওয়াজ, গানের আওয়াজ। ভাত সেভাবে রেখেই আলীম ছুটলেন চাচার বাড়ির দিকে। দেখলেন, গোলমতো একটা জিনিস ঘুরছে আর গান বাজছে। গানটা সম্ভবত ছিল, ‘সদা মন চাহে মদিনা যাব...’।

গানটি ছিল কে মল্লিকের কণ্ঠে। কলের গান শুনে শুনেই বেশ কিছু গান রপ্ত করে ফেললেন আবদুল আলীম। গ্রামোফোন শুনতে শুনতেই তাল-লয় সম্পর্কে ধারণা এল। তবে মানুষের সামনে গান করতে লজ্জা পেতেন তিনি। গাইতেন মাঠে কিংবা মনুষ্যবিহীন কোথাও।

একদিন গ্রামের কিছু মানুষ এসে আলীমের বড় ভাইকে ধরলেন, ‘আলীমের গলা খুব মিষ্টি। ওকে গান শেখাও।’ টাকার লোভ দেখালেন ভাই। কিন্তু আলীম তো গাইবেন না। তখন গোলাম আলী নামে এক ভদ্রলোক নিয়ে এলেন হারমোনিয়াম। তাঁর কাছেই গান শেখা শুরু করলেন। লজ্জা ভেঙে গেল। গ্রামে যে থিয়েটার হতো, তাতে গাইতে লাগলেন তিনি।

ওস্তাদ গোলাম আলী একবার কলকাতায় নিয়ে গেলেন আলীমকে। গ্রামোফোন কোম্পানিতে তিনি দেখলেন কে মল্লিককে! দেখতে গেলেন আলিয়া মাদ্রাসা। শুনলেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক এখানে আসবেন। ভাই গোপনে একটা তালিকায় আলীমের নাম লিখে দিলেন। এই ছেলে গান গাইবে প্রধানমন্ত্রী এলে।

ফজলুল হক বসেছেন। আবদুল আলীমের নাম ঘোষণা করা হলো। দুরু দুরু বক্ষে ১০-১১ বছর বয়সী আলীম গাইলেন, ‘সদা মন চাহে মদিনা যাব...’। সামনে তাকিয়ে দেখেন, শেরেবাংলা ফজলুল হক অঝোর ধারায় কাঁদছেন। পরে আলীমকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘ভাই, তুমি আমার সাথে দেখা করে যাবে, তোমাকে আমি পোশাক তৈরি করে দেব।’ এরপর শেরেবাংলা খিদিরপুর, আলিপুর যেখানেই গেছেন, গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই গাড়িতে করে গিয়ে আলীম শুনিয়েছেন গান। পেয়েছেন টাকা! সেই তো শুরু।

সূত্র: শহীদুল ইসলামের নেওয়া আবদুল আলীমের সাক্ষাৎকার, গানপার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত