রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি বহুল পরিচিত শব্দ হলো ‘কুপোকাত’। আমরা পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে কাউকে কুপোকাত করা বা নিজেরা কুপোকাত হওয়া অর্থে প্রায়ই শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি, কুপোকাত শব্দটি কীভাবে বাংলা ভাষায় প্রযুক্ত হলো? শব্দটির কোনো চিত্রকল্পময় রূপ আছে? কীভাবে কুপোকাত শব্দটি পরাজিত বা পর্যুদস্ত অর্থ নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে? অথবা শব্দটির আক্ষরিক ও আলংকারিক অর্থ কী? তবে চলুন আজ জানব কুপোকাত শব্দের আদ্যোপান্ত।
সংস্কৃত ‘কূপক’ শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে কুপোকাত শব্দটি। এটি বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই অর্থেই প্রযুক্ত হয়ে থাকে। আক্ষরিকভাবে কুপোকাত শব্দের অর্থ হলো (বিশেষ্যরূপে) পতন, ভূমিসাৎ। আর আলংকারিকভাবে এর অর্থ হলো (বিশেষণরূপে) পরাজিত বা পর্যুদস্ত, পরাভূত, নাশপ্রাপ্ত। সুতরাং এই নিরিখে কাউকে কুপোকাত করা মানে হলো তাকে পরাজিত বা পর্যুদস্ত করা। ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’-এ কুপোকাত শব্দটি ‘কুপোকাৎ’ বানানে লিপিবদ্ধ হয়েছে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের রচনা (১৮৯৬) থেকে। প্রয়োগবাক্যটি বিধ্বস্ত বা পরাজিত অর্থে এমন—‘এই দেখ চাঁদ, এ শালা কুপোকাৎ।’
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ কুপোকাত শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে ‘কুপোর মতো উল্টাইয়া পড়া’ আর গৌণার্থে ‘পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হওয়া।’ এই অর্থের সপক্ষে এখানে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের রচনা থেকে একটি প্রয়োগবাক্য দেওয়া হয়েছে এমনভাবে—‘ওগো দেখলে গো, মামা কুপোকাত।’ জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ কুপোকাত শব্দের একাধিক আলংকারিক অর্থ দেওয়া হয়েছে। যেমন: ‘ (বিদ্রুপে) মোটা দেহের পতন, পড়িয়া যাওয়া, পরাজয়, মৃত্যু, সর্বনাশ প্রভৃতি।
এবার কুপোকাত শব্দটিকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করি। মূলত কুপোকাত শব্দটি একটি চিত্ররূপময় বা চিত্রকল্পময় শব্দ। সেটি কীভাবে এবার তা বলি। কুপো ও কাত শব্দের সমন্বয়ে কুপোকাত শব্দটি জাত। কুপো শব্দের অর্থ হলো পেটমোটা ও সরু গলাবিশিষ্ট বড় পাত্র, যাতে তেল রাখা হয়। আর কাত হলো হেলে পড়া বা ভূমিতে ঢলে পড়ার অবস্থাবিশেষ। এবার কুপোকাত শব্দটি চিত্রকল্পরূপে বুঝতে হলে মনে মনে একটি দৃশ্যের কল্পনা করুন। কোনো একটি ঘরে একটি তেলের কুপো কাত হয়ে পড়ে আছে আর এর থেকে তেল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে এ দৃশ্য থেকেই কুপোকাত শব্দটির উৎপত্তি। অর্থাৎ চিত্রকল্প অনুসারে কুপোকাত শব্দের অর্থ পেটমোটা ও সরু গলাবিশিষ্ট তেল রাখার পাত্রটি মাটিতে কাত হয়ে পড়া। পাত্রের তেল মাটিতে গড়িয়ে পড়লে যেমন চরম বিপর্যয়সূচক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তেমনি পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে কোনো ব্যক্তিবিশেষও কুপোকাত হলে যাপিত জীবনে করুণ অবস্থা নেমে আসে। এমনকি এর ফলে ব্যক্তির পঞ্চত্বপ্রাপ্তিও ঘটতে পারে!
সাধারণত শব্দ ব্যবহারের ভাব বা প্রকৃতি ও পরিস্থিতির প্রসঙ্গই ঠিক করে দেয় শব্দের অর্থের প্রবণতা। এই নিরিখে বলা যায় কুপোকাত শব্দ প্রয়োগের মাঝে ব্যঙ্গকরণের একটি সূক্ষ্ম ভাব সুপ্ত রয়েছে, যার ফলস্বরূপ আমরা কোনো ব্যক্তিকে কুপোকাত করতে পারলে মনে মনে পুলক অনুভব করি আবার নিজে কুপোকাত হলে কষ্ট স্বীকারের পাশাপাশি লজ্জাও অনুভব করি। আক্ষরিক ও আলংকারিক উভয় রূপেই কুপোকাত করা বা হওয়ার মধ্যে কোনো গৌরব নেই।
সুতরাং অনৈতিকভাবে ও অহেতু কুপোকে কাত না করে সদা দণ্ডায়মান রাখুন, কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকুন।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি বহুল পরিচিত শব্দ হলো ‘কুপোকাত’। আমরা পরিস্থিতির প্রসঙ্গভেদে কাউকে কুপোকাত করা বা নিজেরা কুপোকাত হওয়া অর্থে প্রায়ই শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি, কুপোকাত শব্দটি কীভাবে বাংলা ভাষায় প্রযুক্ত হলো? শব্দটির কোনো চিত্রকল্পময় রূপ আছে? কীভাবে কুপোকাত শব্দটি পরাজিত বা পর্যুদস্ত অর্থ নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে? অথবা শব্দটির আক্ষরিক ও আলংকারিক অর্থ কী? তবে চলুন আজ জানব কুপোকাত শব্দের আদ্যোপান্ত।
সংস্কৃত ‘কূপক’ শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে কুপোকাত শব্দটি। এটি বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই অর্থেই প্রযুক্ত হয়ে থাকে। আক্ষরিকভাবে কুপোকাত শব্দের অর্থ হলো (বিশেষ্যরূপে) পতন, ভূমিসাৎ। আর আলংকারিকভাবে এর অর্থ হলো (বিশেষণরূপে) পরাজিত বা পর্যুদস্ত, পরাভূত, নাশপ্রাপ্ত। সুতরাং এই নিরিখে কাউকে কুপোকাত করা মানে হলো তাকে পরাজিত বা পর্যুদস্ত করা। ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’-এ কুপোকাত শব্দটি ‘কুপোকাৎ’ বানানে লিপিবদ্ধ হয়েছে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের রচনা (১৮৯৬) থেকে। প্রয়োগবাক্যটি বিধ্বস্ত বা পরাজিত অর্থে এমন—‘এই দেখ চাঁদ, এ শালা কুপোকাৎ।’
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ কুপোকাত শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে ‘কুপোর মতো উল্টাইয়া পড়া’ আর গৌণার্থে ‘পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হওয়া।’ এই অর্থের সপক্ষে এখানে গিরিশ চন্দ্র ঘোষের রচনা থেকে একটি প্রয়োগবাক্য দেওয়া হয়েছে এমনভাবে—‘ওগো দেখলে গো, মামা কুপোকাত।’ জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ কুপোকাত শব্দের একাধিক আলংকারিক অর্থ দেওয়া হয়েছে। যেমন: ‘ (বিদ্রুপে) মোটা দেহের পতন, পড়িয়া যাওয়া, পরাজয়, মৃত্যু, সর্বনাশ প্রভৃতি।
এবার কুপোকাত শব্দটিকে একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করি। মূলত কুপোকাত শব্দটি একটি চিত্ররূপময় বা চিত্রকল্পময় শব্দ। সেটি কীভাবে এবার তা বলি। কুপো ও কাত শব্দের সমন্বয়ে কুপোকাত শব্দটি জাত। কুপো শব্দের অর্থ হলো পেটমোটা ও সরু গলাবিশিষ্ট বড় পাত্র, যাতে তেল রাখা হয়। আর কাত হলো হেলে পড়া বা ভূমিতে ঢলে পড়ার অবস্থাবিশেষ। এবার কুপোকাত শব্দটি চিত্রকল্পরূপে বুঝতে হলে মনে মনে একটি দৃশ্যের কল্পনা করুন। কোনো একটি ঘরে একটি তেলের কুপো কাত হয়ে পড়ে আছে আর এর থেকে তেল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে এ দৃশ্য থেকেই কুপোকাত শব্দটির উৎপত্তি। অর্থাৎ চিত্রকল্প অনুসারে কুপোকাত শব্দের অর্থ পেটমোটা ও সরু গলাবিশিষ্ট তেল রাখার পাত্রটি মাটিতে কাত হয়ে পড়া। পাত্রের তেল মাটিতে গড়িয়ে পড়লে যেমন চরম বিপর্যয়সূচক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তেমনি পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে কোনো ব্যক্তিবিশেষও কুপোকাত হলে যাপিত জীবনে করুণ অবস্থা নেমে আসে। এমনকি এর ফলে ব্যক্তির পঞ্চত্বপ্রাপ্তিও ঘটতে পারে!
সাধারণত শব্দ ব্যবহারের ভাব বা প্রকৃতি ও পরিস্থিতির প্রসঙ্গই ঠিক করে দেয় শব্দের অর্থের প্রবণতা। এই নিরিখে বলা যায় কুপোকাত শব্দ প্রয়োগের মাঝে ব্যঙ্গকরণের একটি সূক্ষ্ম ভাব সুপ্ত রয়েছে, যার ফলস্বরূপ আমরা কোনো ব্যক্তিকে কুপোকাত করতে পারলে মনে মনে পুলক অনুভব করি আবার নিজে কুপোকাত হলে কষ্ট স্বীকারের পাশাপাশি লজ্জাও অনুভব করি। আক্ষরিক ও আলংকারিক উভয় রূপেই কুপোকাত করা বা হওয়ার মধ্যে কোনো গৌরব নেই।
সুতরাং অনৈতিকভাবে ও অহেতু কুপোকে কাত না করে সদা দণ্ডায়মান রাখুন, কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকুন।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪