Ajker Patrika

পর্যটনে প্রবীণ

হাসান আলী
পর্যটনে প্রবীণ

আজকের প্রবীণদের অনেকেই যখন অল্পবয়সী ছিলেন, তখন মানুষের অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা ছিল সীমাহীন। খুব কমসংখ্যক মানুষই কম বয়সে শহর-বন্দর, বড় দালানকোঠা, মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি দেখেছে। যোগাযোগব্যবস্থা ছিল চরম প্রতিকূল। প্রয়োজন ছাড়া শহরে সাধারণ মানুষের আগমন ছিল সীমিত। জীবিকার জন্য একদল মানুষ এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গিয়েছে। সেসব মানুষের কাছে গল্প শুনে পাহাড়, বন-জঙ্গল, নদী, ঝরনা, হাওর, সাগর দেখার জন্য কেউ হয়তো আকুল হয়েছে। আবার কেউ কেউ বইপত্র পড়ে এসব তথ্য জেনেছে। মানুষের অদম্য কৌতূহল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব করে তোলে। মানুষ আর্থিক সংকট আর চরম প্রতিকূল যোগাযোগব্যবস্থা উপেক্ষা করে প্রকৃতির কাছে ছুটে গেছে।

আমাদের প্রবীণেরা নানা কারণে দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ পাননি। জীবনের নানা ক্ষেত্রে লড়াই-সংগ্রাম শেষে প্রবীণ জীবন রাঙিয়ে তোলা, উপভোগ করা একান্ত কাম্য হওয়া উচিত। জীবনকে আনন্দময় করার ক্ষেত্রে পর্যটন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

প্রবীণেরা নানা ধরনের অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন রকমের বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়েন। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য প্রবীণদের অবশ্যই ঘরের বাইরে যেতে হবে। নিজের দেশটাকে মন ভরে দেখতে হবে। দল বেঁধে বেড়াতে গেলে বেশি আনন্দ হবে। ঘরবন্দী জীবন প্রবীণদের 
জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে প্রবীণদের বাইরে বেড়ানোর হার বাড়বে। হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসে বিশেষ মূল্যছাড়ে থাকার সুযোগ দিতে হবে। যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার এবং সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট পাওয়ার সুযোগ দিলে প্রবীণেরা ভ্রমণে উৎসাহিত হবেন। বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক উৎসব, কনসার্ট, ফান গেম, নাটক-সিনেমায় নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে প্রবীণদের চলাচল বাড়বে। তাঁরা বেড়াতে যেতে পারেন সিলেটের চা-বাগান, জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ঝরনা, রাতারগুল, লাউয়াছড়ার মতো আকর্ষণীয় স্থানে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পুরোটাই একটা পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, সাত জেলা পরিবেষ্টিত বিশাল হাওর প্রবীণদের মুগ্ধ করে রাখতে পারে।

প্রবীণদের পর্যটনমুখী করতে পারলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হবে। জেলা-উপজেলায় ডাকবাংলো, সার্কিট হাউসগুলোতে প্রবীণদের জন্য থাকার সুযোগ করা যায় কি না, তা বিবেচনা করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রবীণদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য একটি কেন্দ্র খুলতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা, সমর্থন প্রবীণদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। পরিবহনের চালক, শ্রমিকদের সহযোগিতা চলাচল সহজ করে দেবে। রেস্টুরেন্টগুলো প্রবীণবান্ধব খাবারদাবারের ব্যবস্থা করে দিলে তাঁরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে, সেখানকার শিক্ষার্থীদের দিয়ে ‘সিনিয়র সিটিজেন ট্যুরিজম’ একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধাবঞ্চিত প্রবীণদের পছন্দের জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া-আসার খরচ বহন করতে পারে। প্রবীণেরা কোথাও বেড়াতে গেলে স্থানীয় লোকজনের আন্তরিক সহযোগিতাও জরুরি। প্রকৃতির কাছে যাওয়া একটা বড় সন্তুষ্টি। বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করার সময় প্রবীণবান্ধব ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।

লেখক: সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত