Ajker Patrika

নায়িকাদের এ প্রশ্ন কখনো করতে নেই

খায়রুল বাসার নির্ঝর
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২: ১৬
নায়িকাদের এ প্রশ্ন কখনো করতে নেই

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘স্পর্শ’র শুটিং করতে ঢাকায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শনিবার সন্ধ্যায় ছিল সিনেমার সংবাদ সম্মেলন। শুটিংয়ে দেরি করে আসার ব্যাপারে ‘সুনাম’ আছে ঋতুপর্ণার। এদিনও দেড় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছালেন। তারপর হাসিমুখে দেরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। বললেন সিনেমা, নিজের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে অনেক কথা।

‘স্পর্শ’ সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হলেন কেন?
সিনেমাটি খুবই ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট নিয়ে তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের সিনেমা আমি করতে চাই। বাংলা সিনেমা এখন আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে। অনেক পরিণত সাবজেক্ট আমরা পাচ্ছি। মনে হয়েছিল, সিনেমাটি করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। এর আগে কলকাতায় ১২ দিনের শুটিং করেছি। বাংলাদেশ অংশের শুটিংয়ের জন্য অনেক দিন ধরে আমাদের কথাবার্তা চলছিল। অবশেষে আমি আসতে পারলাম। আমার আর নিরবের খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র এ ছবিতে। ডিরেক্টর খুব সুন্দর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন আমাদের নিয়ে। নিরব তো হ্যান্ডসাম হিরো। খুব ভালো করেছে সে। আমাদের কেমিস্ট্রিটা দর্শকের ভালো লাগবে। আমি জানি, বাংলাদেশের দর্শক আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমার নতুন নতুন কাজ তাঁরা দেখতে চান।

স্পর্শ কী নিয়ে তৈরি হচ্ছে?
স্পর্শ আসলে খুব সেনসিটিভ একটা শব্দ। এর অনেক রকম মানে হয়। এ সিনেমায়ও স্পর্শর অনেক রকম মানে আছে, দর্শক সিনেমাটি দেখলে বুঝতে পারবেন। স্পর্শ শুধু একটা কিছুকে কেন্দ্র করে নয়; বহু সম্পর্কের ভেতরে স্পর্শ কীভাবে কাজ করে, সেটা নিয়েই কথা।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সিনেমার মধ্যে তুলনা টানতে বললে কোন ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে রাখবেন?
দুটো জায়গার দুটো ধারা। এভাবে তুলনা করা যায় না। দুই জায়গাতেই খুব ইন্টারেস্টিং কাজ হচ্ছে। কনটেন্ট এখন একটা অন্য জায়গায় চলে গেছে। এখন ওটিটি যেভাবে এসেছে, সেখানে আমরা নতুন কনটেন্ট পাচ্ছি, নতুন শিল্পী ও নির্মাতারা কাজ করছে। পুরোনো অনেক শিল্পী ফিরে আসছেন। এখন আমার মনে হয়, কনটেন্ট ইজ দ্য কিং। কনটেন্ট যত ভালো তৈরি হবে, শিল্পীরাও নিজেদের নতুনভাবে এক্সপ্রেস করতে পারবেন।

বাংলাদেশের অনেক অভিনেতার সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কারা আপনার বেশি প্রিয়?
আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তারা সবাই আমার খুব ফেবারিট। এত ভালো সম্পর্ক আমার সবার সঙ্গে! ফেরদৌস আমার খুব ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে অনেক বছরের সম্পর্ক, ফ্যামিলির মতো আমাদের রিলেশনশিপ। মান্না ভাইয়ের কথা বলব। তাঁর সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি। মান্না ভাইকে খুব মিস করি। অদ্ভুত তাঁর স্টারডম ছিল। এখনো তাঁর স্ত্রী শেলি আপার সঙ্গে আমার গভীর যোগাযোগ। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করি, তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক আমার রয়েই যায়। আমিন খানের সঙ্গে অভিনয় করেছি, রিসেন্টলি আরিফিন শুভর সঙ্গে কাজ হয়েছে। ফলে সবার সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক। আমি যাঁকে খুব সম্মান করি এবং ভালোবাসি, তিনি হচ্ছেন আলমগীর ভাই। তাঁর সঙ্গেও অনেক কাজ করেছি। তাঁর পরিচালনায় কাজ করেছি। এখন নিরবের সঙ্গে করছি। আমি মনে করি, অভিনয়শিল্পীরা তাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে বেঁচে থাকে। আমি ওই ভার্সেটাইল জায়গাটার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই।

৫২ বছর বয়সেও আপনি ফিটনেস ধরে রেখেছেন…
(রেগে গিয়ে) এটা বলার কি খুব দরকার? নায়িকাদের এ প্রশ্ন কখনো করতে নেই। আর ওই বয়সটা এখনো হয়নি আমার, যেটা আপনি বলছেন।

আপনার কাঁধে ব্যান্ডেজ দেখতে পাচ্ছি। আঘাত পেয়েছেন?
পরশু দিন সেটে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। আমি একটা নতুন ছবির শুটিং করছি। ‘দাবাড়ু’ নাম। একটা শট ছিল—আমি রান্না করছি, কড়াইয়ের মধ্যে একটা বল এসে পড়বে এবং সেটা উল্টে যাবে। উল্টে না গিয়ে গরম পানি ছিটকে এমন ছ্যাঁকা লেগেছে যে একটু ক্ষত হয়ে গেছে। কিন্তু শুটিং শিডিউল আবার মিস করা যাবে না। ব্যথা নিয়েই কাজ করব; কারণ, আমি মনে করি, দিস ইজ মাই কমিটমেন্ট।

সম্প্রতি বাংলাদেশের কোনো সিনেমা দেখা হয়েছে?
বেশ কিছু ছবি রিলিজ হয়েছে। ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়ে খুব আলাপ হচ্ছে। তার আগে ‘হাওয়া’। চঞ্চলের সঙ্গে আমার দেখা হলো কয়েক দিন আগে। আমরা আমেরিকাতে একটা শো করলাম একসঙ্গে। মৃণাল সেনকে নিয়ে একটা সেমিনার ছিল, সেখানে আমার বক্তব্যও ছিল—আমরা একসঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম অনুষ্ঠানে। আর আমার বন্ধুর ছবিও রিলিজ হয়েছে না? ফেরদৌসের? ‘মাইক’ সিনেমার জন্য ওকে আমার অনেক শুভেচ্ছা। ওর আরেকটা ছবি আসছে বোধ হয় ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ নামে।

প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি টালিউডে খুব বিখ্যাত। আপনারা নতুন কোনো কাজ করছেন একসঙ্গে?
১৫ বছর পরেও যখন আমরা ‘প্রাক্তন’ বলে একটা ছবি করেছি, সেটা পুরো বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। তার এক-দেড় বছর পর ‘দৃষ্টিকোণ’ নামে আরেকটা ছবি করলাম, কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায়। সেটাও ম্যাসিভ হিট। এর পরে আমরা আরেকটা ছবি করব, যেটা আমাদের ক্যারিয়ারের ৫০তম ছবি হবে। সে স্ক্রিপ্টটা লেখা হচ্ছে।

জনপ্রিয়তার পাশাপাশি আপনাদের নিয়ে কিছু সমালোচনাও আছে। শ্রীলেখা মিত্র অভিযোগ করেছিলেন, ওই সময় আপনারা মনোপলি করে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেককে কাজ করতে দেননি। এ নিয়ে কিছু বলবেন?
যোদ্ধারা সব সময় যুদ্ধ করেই জিতেছে। আমি নিজেকে একজন চলচ্চিত্রকর্মী এবং চলচ্চিত্রের যোদ্ধা বলেই মনে করি। আমার সম্বন্ধে কে কী বলল, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি কাজ দিয়েই আমার পরিচয় দিয়ে দিয়েছি। তা ছাড়া এত বছর তো পরিশ্রম ছাড়া, ভালো কাজ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যায় না। শাহরুখ খান আমাকে বলেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি খুবই নির্মম জায়গা। এখানে যুদ্ধ করেই নিজের জায়গা তৈরি করতে হয়।

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে সিনেমায় কাজ শুরু করল। আপনার সন্তানদের নিয়ে কী পরিকল্পনা? ওরা সিনেমায় আসবে?
না, ওরা এখন পড়াশোনা করছে। ছেলে আমেরিকাতে আছে, আর মেয়ে সিঙ্গাপুরে। মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে। ছেলে জাস্ট টুয়েলভ শেষ করেছে। এখন এ ধরনের কোনো প্ল্যান নেই। 

বলিউডে নতুন কাজের খবর আছে?
বলিউডে আমার চারটি ছবি রেডি। শিগগির রিলিজ হবে। ‘স্পর্শ’ সিনেমার শুটিং শেষ করেই আবার মুম্বাই যাব। ‘কালত্রিঘরি’ নামে একটা সিনেমা করলাম আরবাজ খানের সঙ্গে। ওটা তাড়াতাড়িই আসবে। আরেকটা সিনেমা করলাম, দীপক তিরোজি কামব্যাক করল একটা লাভস্টোরিতে। আরেকটা একটু অন্য ধরনের ছবি করছি। যেটার নাম ‘ইকতার’। সেটাও আসছে।

বাংলাদেশের প্রতি আপনার একটা আবেগের জায়গা আছে। আপনার মা-বাবার জন্মস্থান এখানে…
বাংলাদেশ তো আমারই দেশ। আমি তো এটাকে আলাদা করে দেখি না। সে জন্য বোধ হয় এখানকার মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। কারণ, আমার বাবার দেশ বিক্রমপুর, আর মায়ের দেশ মানিকগঞ্জ। ফলে আমার একটা ভিত আছে এখানে। আমি যখন একটা ছবি করতে এসেছিলাম অনেক বছর আগে, তখন মায়ের জন্মস্থানে গিয়েছিলাম। সেটা দেখে এসেছিলাম।

এখানকার কোন খাবার বেশি পছন্দ আপনার?
বাংলাদেশের ভর্তা আমার সবচেয়ে ফেবারিট। এটা খেতে হবে। সে যে ভর্তাই হোক, চিংড়িভর্তা, আলুভর্তা, বেগুনভর্তা। আর ভালো লাগে কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি এবং অবশ্যই ইলিশ মাছ।

শুনেছি শিক্ষিকা হিসেবে নাকি আপনি খুব ভালো?
আমি আসলে টিচার হতে চেয়েছিলাম। টিচিং প্রফেশনটাকে খুব ভালোবাসি। আমার নিজের ভেতরে একটা শিক্ষিকা সত্তা আছে। আমার মেয়ে বলে, ইউ আর ভেরি গুড টিচার। আমার মেয়ের পরীক্ষার সময় আমিই পড়াই। বাট যেটা ডেসটিনি, ঈশ্বর যেটা আমার জন্য রেখেছেন, সেটাই আমি করেছি। আর সেটা ভালো করে যাতে করতে পারি, তার জন্য পরবর্তীকালে প্রচুর পরিশ্রম করেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত