Ajker Patrika

আয়ে ভাটা, দ্রব্যমূল্যের চাপে বিপাকে মানুষ

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১১: ৪০
আয়ে ভাটা, দ্রব্যমূল্যের চাপে বিপাকে মানুষ

গৌরীপুরে দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ফলে দৈনিক মজুরিতে চলা খেটে খাওয়া মানুষ দিন কাটাচ্ছেন অর্ধাহার-অনাহারে। তাঁদের বেশির ভাগই আত্মসম্মানের ভয়ে কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। এ অবস্থায় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য সময় বছরের এ সময়ে সব ধরনের সবজির দাম থাকে অনেক কম। তবে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র বাজারে। শাক-সবজির দাম আকাশচুম্বী। এর সঙ্গে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা সয়াবিন তেলের দাম। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আরও বাড়তির দিকে তেলের দাম। এ ছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই পড়েছেন বিপাকে।

এদিকে মাংসের দোকানের সামনে এখন আর অনেকে যেতে সাহস পান না বলে জানিয়েছেন। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া কয়েকজন জানান, মার্চের এই সময়টাতে দৈনিক আয়ের মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। ফসল লাগানো শেষ হয়ে যায়, অপেক্ষা করতে হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় ধান কাটা শুরু পর্যন্ত। এ সময়টাতে তাঁদের দিনযাপন এমনিতেই অনেকটা কষ্টের হয়। এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দরিদ্র শ্রেণির মানুষতো বটেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে।

দাপুনিয়া গ্রামের কায়সার হোসেন জানান, বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবার। অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন কাজ নেই, তাই রিকশা চালাচ্ছেন। মহাজনের টাকা জমা দিয়ে সারা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা থাকে। এ টাকা দিয়ে চাল-ডাল ও তরকারি কেনেন।

কায়সার হোসেন বলেন, যেদিন সয়াবিন তেল কিনতে হয়, সেদিন কাঁচাবাজার করার টাকা থাকে না। তার ওপর আছে ছেলে-মেয়েদের অসুখ-বিসুখ, বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা। এভাবে আর বাঁচতে পারছেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এহন না খাইয়া মরবাম।’

মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, তাঁরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। সীমিত আয়ে সীমাহীন খরচের চাপে তাঁরা এখন ক্লান্ত। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, চাহিদা পূরণ করতে না পারায় স্ত্রী-সন্তানের সামনে যেতে তাঁদের এখন লজ্জা হয়। নানা অজুহাতে পালিয়ে বেড়ান।

শনিবার গৌরীপুর পৌরসভার বাজার ঘুরে পাওয়া যায় সয়াবিন তেলের দামের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় প্রতিটি দোকানেই রাখা হচ্ছে বোতলের গায়ের মূল্যের চেয়ে ২০-৪০ টাকা বেশি। একই চিত্র পাওয়া যায় কাঁচাবাজারেও। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করছেন।

গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লিপি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সবজির আমদানি কম থাকায় দাম বেড়েছে। বিশেষ করে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার পশ্চিমাঞ্চলে সবজি উৎপাদন কম হয়েছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, তেলের বোতলের গায়ের মূলের চেয়ে অতিরিক্ত দাম রাখার সুযোগ নেই। শিগগিরই বাজার তদারকি করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত