Ajker Patrika

গালির ফাঁদে নাটক সিরিজ

মীর রাকিব হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৪৭
গালির ফাঁদে নাটক সিরিজ

কয়েক বছর ধরে নানাভাবেই কথা বলা হচ্ছে, নাটকে আমরা কী দেখছি, তা নিয়ে। কথা হচ্ছে, নাটকে আমরা কী শুনছি, তা নিয়েও! কেউ বলছেন, নাটক তো বিনোদন, এখানে শিক্ষা নিতে আসবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, বিনোদন বলেই কি যা ইচ্ছে তাই বলা যায়। কী দেখছি আর শুনছির মাঝে এখন বড় ইস্যু হয়ে উঠছে ‘গালি’।

হিট হওয়ার আশায় চিত্রনাট্যকার আপত্তিকর নানা দৃশ্য, সংলাপ ব্যবহার করছেন। অকথ্য গালিগালাজেরও ব্যবহার বেড়েছে। কখনো কখনো এসব শব্দের ব্যবহার হয়তো জরুরি; তবে অবশ্যই পরিমিতিবোধটা থাকা উচিত। জরুরি নয়, তারপরও এমনটা ঘটছে বলে বিষয়টির সমালোচনা করছেন অনেকেই।

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকের চতুর্থ সিজন চলছে। সম্প্রতি প্রচারিত কয়েকটি পর্বে অভিনেতা মারজুক রাসেলের মুখে ‘যৌন কর্মীর ছেলে’ সংলাপের পাশাপাশি রয়েছে তুমুল গালিগালাজের ব্যবহার। ফলে বেশ সমালোচনা শুনতে হয়েছে পরিচালক  কাজল আরেফিন অমি ও তাঁর টিমকে! এরই মধ্যে ধারাবাহিকটির চারটি পর্ব প্রাইভেট করতে বাধ্য হয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। ইউটিউবে ভিউর হিসেবে এই ধারাবাহিক এখন বেশ আলোচিত। পরিচালক অমি বলেন, ‘এই নাটকে গালিটি অন্যভাবে, অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। আমার যাঁরা নিয়মিত দর্শক, তাঁরা ঠিকই পছন্দ করেছেন। যাঁরা খারাপ বলছেন, তাঁরাও আমার দর্শক।

তাঁদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পর্বগুলো প্রাইভেট করা হয়েছে। এডিট করে বিপটোন বসিয়ে আবার আপলোড করা হবে। ধারাবাহিকটির প্রতি পর্বের শুরুতে ডিসক্লেইমার দেওয়া থাকে, এটি এডাল্ট কনটেন্ট এবং গল্পের প্রয়োজনে কিছু কিছু জায়গায় আপত্তিকর শব্দ ব্যবহৃত হবে। যদি কেউ অল্পতে বিব্রত হয়ে থাকেন, তাহলে দেখা থেকে বিরত থাকুন।’ এটা কেবল এক নাটকের উদাহরণ। এমন অনেক নাটক-সিরিজ রয়েছে, যেখানে রয়েছে গালির যথেচ্ছ ব্যবহার।  

কদিন আগে মজা করে অভিনেতা ফারুক হোসেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, ‘আমার এক বন্ধু গালি নিয়ে বই লিখছে। বইয়ের নাম “আধুনিক গালি শিক্ষা”। বর্তমান সময়ে নাটক-সিনেমার সংলাপে যে পরিমাণ গালি ব্যবহৃত হচ্ছে, আমার ধারণা, তাতে একসময় গালির স্বল্পতা দেখা দেবে। ফলে একই গালি বারবার ব্যবহারের কারণে দর্শক বিরক্ত হবেন। তাই দর্শকদের কথা বিবেচনা করে নতুন এবং মানসম্মত আধুনিক কিছু গালি লেখার চেষ্টা চলছে।’

কয়েক বছর ধরেই নাটকে গালির ব্যবহার বাড়ছে। আগে গালাগাল থাকলে সেই দৃশ্য মিউট করে দেওয়া হতো। এখন অনেক নির্মাতা টিভিতে এই নিয়ম মানলেও ইউটিউবে মানছেন না। ইউটিউবের অবাধ স্বাধীনতার সঙ্গে যোগ হয়েছে ওয়েব সিরিজ। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত এসব ওয়েব সিরিজে সেন্সরের বালাই নেই।

সমাজের অন্ধকার দিক নিয়ে নানা রকম সিরিজ নির্মিত হচ্ছে। অনেক সিরিজেই নির্মাণে নতুনত্ব বা দর্শকদের সচেতন করার চেয়ে নারী চরিত্রগুলোকে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করে দর্শক টানাই থাকে নির্মাতাদের উদ্দেশ্য। সিরিজে ব্যাপক গালাগাল আর ইঙ্গিতপূর্ণ দৃশ্য থাকায় সেগুলো ‘হিট’ও হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। কিন্তু এর ফলে সচেতন দর্শক হারাচ্ছেন বাংলা নাটক। সমালোচনার মুখে পড়ছেন নির্মাতা ও অভিনেতারা। তাই এ বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সুধীজনেরা।

 স্ট্যান্ডার্ড ব্রডকাস্টিং অথরিটি তৈরি করা উচিত
রামেন্দু মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব
আমাদের দেশে একটি স্ট্যান্ডার্ড ব্রডকাস্টিং অথরিটি তৈরি করা উচিত। যারা একদিকে চোখ রাখবে কোথায় কী প্রচারিত হচ্ছে; অন্যদিকে কোনো অভিযোগ এলে সেটার সুরাহা করবে। এ ছাড়া সব টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই একটা শক্তিশালী প্রিভিউ কমিটি গঠন করতে হবে। তারা যে অনুষ্ঠানগুলো প্রচার করছে, সেগুলো কতটা গ্রহণযোগ্য, আপত্তিকর কি না, সেসব তদারক করবে। নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীদের দায়বদ্ধতার জায়গা হলো, জেনেশুনে এমন কোনো বক্তব্য না দেওয়া, যেটা নিন্দনীয়। 

 নির্মাতাদেরই সতর্ক 
হতে হবে সংলাপ নিয়ে
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
একসময় নাটক করার পর প্রশ্ন উঠত, এটার মেসেজ কী। সমাজের কাছে কী বলতে চাই। টেলিভিশনের নাটক তো পরিবারের বাচ্চা থেকে সবচেয়ে বয়স্ক লোকটা পর্যন্ত দেখবেন। সেখানে কেন অহেতুক আরোপিত গালি ঢোকাব! আমরা কি বাসার মানুষের সামনে ইচ্ছে হলেই গালি দিতে পারি? তাহলে নাটকে কেন সেটা দেখাতে চাইব! শিল্পীরাও এ বিষয়ে সচেতন নন। আমরা মিডিয়াতে যা কিছু করব, সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনেবুঝে, ভেবেচিন্তে করব। প্রতিটি নাটক একটি বার্তা দেয়। কখনো ভুল বার্তা দেয়, কখনো সঠিক বার্তা দেয়। কখনো দর্শককে অনুপ্রাণিত করে, কখনো বিক্ষুব্ধ করে। নির্মাতাদেরই সতর্ক হতে হবে সংলাপ নিয়ে। তা না হলে সবাই মিলে যদি কথা বলা শুরু করে, হয়তো সরকার সেন্সর বসিয়ে দেবে। সেটা কি ভালো কিছু হবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত