Ajker Patrika

আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ২৪
আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীরা

করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আবাসিক হল খোলা হয়নি। এ কারণে আবাসন সংকটে পড়েছেন রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা শুরু হলেও হল খোলেনি। সেখানকার শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

করোনার কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থী না থাকায় অনেক মালিকই ছাত্রাবাস বা মেস তুলে দিয়েছেন। এখন মেসের সিটের চাহিদা বেড়ে গেলেও, মালিকেরা দিতে পারছেন না। রাজশাহী শহরের বেশির ভাগ ছাত্রাবাসের সামনেই ঝুলছে ‘সিট খালি নেই’ লেখা সাইনবোর্ড।

রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির তথ্যমতে, শহরে ছোট-বড় সব মিলিয়ে মেসের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এর মধ্যে শুধু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নির্মাণ করা বড় বড় মেস মালিকেরা যুক্ত হয়েছেন সমিতিতে। বর্তমানে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৪৫০ জন মেস মালিক। এ সব মেসেও এখন সিট সংকট দেখা দিয়েছে।

নগরীর সাহেববাজার, আলুপট্টি, হেমেতখাঁ, কুমারপাড়া ও উপশহর এলাকার কোনো মেসে সিট খালি নেই। সাহেববাজার এলাকায় সিট খুঁজছিলেন কলেজছাত্র শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কলেজ খুলে গেছে। কিন্তু হল খোলেনি। তাই আপাতত কিছুদিন থাকার জন্য মেস খুঁজছেন। কিন্তু মেসেও সিট পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে পাচ্ছেন, ভাড়া বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল এবং সরকারি মহিলা কলেজে আবাসন সুবিধা আছে। এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবাসন সুবিধা আছে ২ হাজার ৫৪৮ জনের। নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে স্নাতকের (সম্মান) শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সিট নেই। এখানে তিনটি ছাত্রাবাস আছে। এর মধ্যে ছেলেদের দুটি, মেয়েদের একটি। তবে একটিও খোলেনি।

রাজশাহী কলেজে ছাত্রদের জন্য রয়েছে দুটি হল। ছাত্রীদেরও হলের সংখ্যা দুটি। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ জনের। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে আবাসিক ছাত্রীদের জন্য দুটি ভবনের ছাত্রীনিবাস রয়েছে। তিনতলা ও চারতলা ভবন দুটিতে ৩৬০ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থা আছে। রাজশাহী সিটি কলেজে ছাত্রদের জন্য ৪৮টি আবাসন সুবিধা আছে। এ ছাড়া কলেজিয়েট স্কুলে ৪০টি সিট আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই হল খোলেনি। তাই শিক্ষার্থীরা হন্নে হয়ে মেস খুঁজছেন।

সাহেববাজার এলাকার রসুল সুপার মার্কেট ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার সময় সব ছেলে চলে গিয়েছিল। সিট পড়েছিল ফাঁকা। গত মাসের শেষ দিক থেকে ছেলেরা আবার সিটে উঠে গেছে। কোনো সিট খালি নেই। তাও প্রতিদিন ১০-১৫ জন সিট খুঁজতে আসছে। তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’

রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় হোস্টেল বন্ধ। তবে আমরা একটা চিঠি পেয়েছি। দ্রুতই আমরা এইচএসসির জন্য হোস্টেল খুলে দেব। ইতিমধ্যে নোটিশ দিয়েছি। যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে আছে, তারা করোনা টেস্ট করে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এলেই হলে উঠতে পারবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৯ ও ২০২০ সালের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়। এরপর বিভাগগুলো পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ইতিমধ্যে অনেক বিভাগ পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। অনেক বিভাগে ফরম পূরণ চলছে। ফলে পরীক্ষা প্রস্তুতি ও ফরম পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছে। আবাসিক হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। তবে চাহিদার তুলনা সিট কম হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এতে একদিকে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অন্যদিকে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন। তিনি মাদারবক্স হলের আবাসিক ছাত্র। সম্প্রতি তাঁর পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ফরম পূরণ করতে তিনি রাজশাহীতে এসেছেন। কিন্তু এখনো কোনো মেসে সিট পাননি। বর্তমানে এক বন্ধুর সঙ্গে সিট ভাগাভাগি করে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার রুটিন দেওয়ার পর থেকে মেসে সিট খুঁজছি। কিন্তু সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলেও এখনো সিট পাইনি। এদিকে পরীক্ষার তারিখও এগিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।’

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু নাঈম বলেন, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বাড়ি থেকে এসেছি। হল বন্ধ থাকায় মেসে উঠেছি। কিন্তু মেসে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। কারও মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল আবাসিক হল খুলে পরীক্ষা নেওয়া। কিন্তু হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যারয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, হল খোলা বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ওপর নির্ভর করে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত