Ajker Patrika

আলু এবং সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়
আলু এবং সিন্ডিকেট

একসময় বলা হতো, ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’। সেই স্বল্পমূল্যের আলুর দাম বাড়ার কারণে এখন সাধারণ মানুষের ‘আলুভর্তা’ অবস্থা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেজিপ্রতি আলুর পাইকারি দাম ২৬-২৭ ও খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে তিন দিন ধরে আবারও বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে এই পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে হিমাগারগেটে আড়তদারদের কারসাজি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতাকে দায়ী করা হয়েছে।

বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়ে মূলত চাহিদার চেয়ে জোগান কম হলে। কিন্তু আলুর ক্ষেত্রে ঘটনাটি উল্টো ঘটেছে। উৎপাদনের পরিমাণই বলে দিচ্ছে দেশে আলুর কোনো ঘাটতিই নেই। কারণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ১ কোটি ১৯ লাখ ৯১ হাজার টন। অন্যদিকে আমাদের চাহিদা মাত্র ৯০ লাখ টন। এরপরও কেন আলুর দামে এত ঊর্ধ্বগতি?

এমনিতেই বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম এখনো আকাশছোঁয়া। শীতের মৌসুম শুরু হলে ক্রেতারা ভাবেন, এবার বুঝি একটু রেহাই পাওয়া যাবে। কিন্তু শীত শুরু হলেও শাকসবজির দাম কমার কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাজার ব্যবস্থাপনার নৈরাজ্যের কারণে এমনটা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় সিন্ডিকেট হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা। এটা কি সরকারের ব্যর্থতা নয়?

সরকারের পক্ষ থেকে আলু আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু কারসাজির সঙ্গে জড়িতরা এখনো বহাল তবিয়তে তাঁদের অতি মুনাফার জায়গা থেকে দাম কমাচ্ছেন না। মূলত কৃষক থেকে শেষ ধাপের খুচরা ক্রেতার মাঝখানে অবস্থানরত ব্যবসায়ীরা এর পুরো লাভটা করছেন। শুধু উৎপাদক কৃষক এবং শেষ পর্যায়ের খুচরা ক্রেতারা ঠকছেন। বাজারের দুষ্টচক্রের এ নিয়ম ভাঙতে না পারলে শুধু আলু কেন, কোনো পণ্যের দামই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এ বছর আলুর দাম নিয়ে মূলত কারসাজিটা শুরু হয়েছে হিমাগার পর্যায় থেকে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, ফড়িয়া, হিমাগারের মালিক ও আড়তদারেরা মিলিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি সাধারণ ভোক্তারা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একেক সময় একেক পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আলু নিয়ে কারসাজি চলছে। দেশে আলুর মজুত বাড়তি থাকার পরেও পণ্যটির আমদানির ঘোষণা করে সরকার যেন তাঁদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।

নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের এটাই চাওয়া—কার্যকর ও স্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে সব পণ্যের সিন্ডিকেট চক্রের লাগাম টেনে ধরা; যাতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে দুবেলা খেয়ে বাঁচতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত