Ajker Patrika

মানুষের উদ্বেগ দূর হচ্ছে না

সম্পাদকীয়
মানুষের উদ্বেগ দূর হচ্ছে না

গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করলেও দলের নেতা-কর্মীদের সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও রাজপথে না থাকার বিষয়টিকে ‘সাময়িক’ বলছেন বিএনপির নেতারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল বলা হলেও বিএনপি আর কঠোর আন্দোলন করতে সক্ষম হবে কি না, তা নিয়ে সম্ভবত দলের মধ্যেই সংশয় আছে। বলা হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে দলটি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে দুটি কাজ নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একটি হলো, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া আর আরেকটি হলো বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলের আন্দোলনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবিলা এবং নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘স্বাভাবিক আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা অস্বাভাবিক পথে যাচ্ছে। সরাসরি পারছে না, তাই চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।’

আবার বিরোধী দলগুলোর হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যানবাহনে একের পর এক অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গাড়ি কারা পোড়াচ্ছে, কারা আগুন লাগাচ্ছে, তা নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। বিএনপির অভিযোগ—সরকারপক্ষই আগুন-সন্ত্রাস করছে আর দোষ চাপাচ্ছে আন্দোলনকারীদের ওপর।

আর পুলিশ মনে করছে, যারা অবরোধ দিয়েছে, তারা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে অগ্নিসংযোগসহ চোরাগোপ্তা হামলা করছে। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কয়েকটি চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা ও তাঁদের শক্ত মনোভাব পাওয়ার কথা বলছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁরা বলছেন, বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে অসংখ্য মামলা হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে কয়েক শ মামলাও রয়েছে। মামলার খরচ চালাতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পুরোনো মামলা তো আছেই, নির্বাচনের আগে এখন নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এখন ‘যা হওয়ার হবে’ এমন মনোভাব অনেকের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা আগুন-সন্ত্রাস করে কোনো সফল গণ-আন্দোলন হয় না।বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন না আনলে তাদের বাদ দিয়েই নির্বাচন হয়ে যাবে। আমেরিকাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ নির্বাচন নিয়ে সরকারকে চাপে রাখার যে নীতি নিয়েছে, তা কতটুকু ফল দেবে তা নিয়েও সংশয় আছে।

ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতের সমর্থন যে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর, সেটা অনেকটাই স্পষ্ট। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের মনোভাব স্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবে, এটা সব সময়ই দিল্লির চিন্তার বিষয়। বর্তমান সরকারকে দিল্লি ঝামেলায় ফেলতে চাইবে বলে মনে হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত