জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
বেদনায় ভরা ছিল দিনটি। লাশ পড়েছে ঢাকায়, এ খবর রটে গিয়েছিল। থোকা থোকা কয়েকটি নাম—রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম, সফিউর, অহিউল্লাহ, আবদুল আওয়াল, সিরাজুদ্দিন। পুরো নামের দরকার পড়ে না। সংক্ষেপে বলা নামগুলোই যেন এক-একটা গ্রেনেড। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা শহীদ হলে পুরো দেশে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল মানুষ। সে এক অনন্য ইতিহাস।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আলো জ্বলেছিল, সেই আলো ক্রমেই বিচ্ছুরিত হতে হতে আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জ্বলজ্বলে তারা। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে তাই গর্ব করতে পারি। আমরা পৃথিবীর সকল ভাষা নিয়ে গর্ব করতে পারি।
ভাষারা বড় কষ্টে আছে। বড় বড় ভাষার চাপে অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভাষা দিনে দিনে মরে যাচ্ছে, সে কথা আমরা জানি। আমরা জানি, বেশ কিছু ভাষা তাদের বাণিজ্যিক প্রভাব ছড়িয়ে অন্য ভাষাগুলোকে গলাটিপে মারছে, সেই আর্তনাদও শোনা যায়, কিন্তু ভাষাগুলোকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাঁচে না। দেখা যায়, কোনো এক মলিন গ্রামে কোনো এক অশীতিপর একাই সেই ভাষাকে আলিঙ্গন করে বেঁচে আছেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় কোনো এক সমৃদ্ধ ভাষার ঐতিহ্যময় একটি উপাখ্যান। এ সময়টিতে ২২টি ভাষা রয়েছে, যা মৃত্যুর মুখোমুখি। আরও ২৯টি ভাষাও পৌঁছে গেছে মৃত্যুর কাছাকাছি। কেন ভাষা মরে যায়, তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। ভাষাগুলো যেন টিকে থাকে, তা নিয়ে কাজও করছেন ভাষাবিজ্ঞানীরা। কিন্তু ভাষা টিকবে কী করে, তা যদি ব্যবহার করা না হয়? ব্যবহার করা না হলে সে ভাষা তো টেকে না।
একুশে ফেব্রুয়ারির কিছু অঙ্গীকার ছিল। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। ১৯৫৬ সালে ভাষাটি তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আদেশবলে কিছু প্রতিষ্ঠিত হলেও তাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় পরিচর্যার। সেই পরিচর্যার অভাব ঘটেছে। তাই প্রতিবছর যখন ঘুরে আসে একুশে ফেব্রুয়ারি, তখন একই কথার পুনরাবৃত্তি শোনা যায়—উচ্চ আদালতের ভাষা কি বাংলা হয়েছে? উচ্চশিক্ষার ভাষা কি বাংলা হয়েছে? সর্বস্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যের আঞ্চলিক কার্যক্রমের ভাষা কি বাংলা হয়েছে? শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন এবং প্রতিটিরই নেতিবাচক উত্তর।
বিভিন্নভাবে ভিনদেশি ভাষার প্রতিও আগ্রহ থাকতে পারে। তাতে ক্ষতি কিছু নেই। নতুন জ্ঞানলাভের জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভিনদেশি ভাষার দরকারও আছে। কিন্তু সেটা তো হবে নিজের ভাষা ঠিকভাবে রপ্ত করার পর। আমাদের প্রবণতায় স্পষ্ট দেখা যায়, নিজ ভাষার প্রতি মমত্ব নেই, ইংরেজির প্রতি মোহ অনেক বেশি, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিন্দি।
এসব সংকটের কথা মনে রেখেও বলা যায়, সে এক অসাধারণ ইতিহাস গড়েছিল বাঙালি। ধর্মে-বর্ণে-শ্রেণিতে বিভক্ত মানুষ সেদিন একাত্ম হয়েছিল। এবং তারা গড়ে নিয়েছিল জাতিগত পরিচয়, আর তা দিয়েই এগিয়ে সৃষ্টি করেছে একটি দেশ—বাংলাদেশ যার নাম।
ভাষার অতীত ইতিহাস মনে রেখে নতুন নতুন সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এখন সময়ের দাবি। কোথাও কি বাঁশিতে উঠেছে নতুন সুর? কোথাও কি গানের কথায় লেগেছে ভিত্তিভূমির অনুরণন? কোথাও কি আঞ্চলিক ভাষাগুলো নিয়ে মেতেছেন একদল গবেষক? কোথাও কি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর ভর করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছেন কোনো তরুণ?
ভাষা টেকে কীভাবে? ভাষা টেকে সেই ভাষায় কথা বললে। সেই ভাষায় সাহিত্য-সংগীত-নাটক ইত্যাদি নির্মাণ করলে। পাড়ায়-পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে, বিতর্ক সভা করলে। আরও কতভাবে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। নিজের ভাষা ঠিকভাবে রপ্ত করে ভিনদেশি ভাষায়ও তুখোড় হওয়া চলে। কিন্তু এ জন্য চাই মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা।
বিশ্বের সকল ভাষাই কারও না কারও মাতৃভাষা। সব ভাষার ওপরই রাখতে হবে ভালোবাসার হাত। তবে নিজ হাতে নিজস্ব ভাষায় যখন বলা হবে কথা, তুলে ধরা হবে নিজের আত্মপরিচয়, তখনই বলা যাবে, ‘এ মাটি আমার কাছে সোনা।’
বেদনায় ভরা ছিল দিনটি। লাশ পড়েছে ঢাকায়, এ খবর রটে গিয়েছিল। থোকা থোকা কয়েকটি নাম—রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম, সফিউর, অহিউল্লাহ, আবদুল আওয়াল, সিরাজুদ্দিন। পুরো নামের দরকার পড়ে না। সংক্ষেপে বলা নামগুলোই যেন এক-একটা গ্রেনেড। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা শহীদ হলে পুরো দেশে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল মানুষ। সে এক অনন্য ইতিহাস।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আলো জ্বলেছিল, সেই আলো ক্রমেই বিচ্ছুরিত হতে হতে আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জ্বলজ্বলে তারা। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে তাই গর্ব করতে পারি। আমরা পৃথিবীর সকল ভাষা নিয়ে গর্ব করতে পারি।
ভাষারা বড় কষ্টে আছে। বড় বড় ভাষার চাপে অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভাষা দিনে দিনে মরে যাচ্ছে, সে কথা আমরা জানি। আমরা জানি, বেশ কিছু ভাষা তাদের বাণিজ্যিক প্রভাব ছড়িয়ে অন্য ভাষাগুলোকে গলাটিপে মারছে, সেই আর্তনাদও শোনা যায়, কিন্তু ভাষাগুলোকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাঁচে না। দেখা যায়, কোনো এক মলিন গ্রামে কোনো এক অশীতিপর একাই সেই ভাষাকে আলিঙ্গন করে বেঁচে আছেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় কোনো এক সমৃদ্ধ ভাষার ঐতিহ্যময় একটি উপাখ্যান। এ সময়টিতে ২২টি ভাষা রয়েছে, যা মৃত্যুর মুখোমুখি। আরও ২৯টি ভাষাও পৌঁছে গেছে মৃত্যুর কাছাকাছি। কেন ভাষা মরে যায়, তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। ভাষাগুলো যেন টিকে থাকে, তা নিয়ে কাজও করছেন ভাষাবিজ্ঞানীরা। কিন্তু ভাষা টিকবে কী করে, তা যদি ব্যবহার করা না হয়? ব্যবহার করা না হলে সে ভাষা তো টেকে না।
একুশে ফেব্রুয়ারির কিছু অঙ্গীকার ছিল। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। ১৯৫৬ সালে ভাষাটি তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আদেশবলে কিছু প্রতিষ্ঠিত হলেও তাকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় পরিচর্যার। সেই পরিচর্যার অভাব ঘটেছে। তাই প্রতিবছর যখন ঘুরে আসে একুশে ফেব্রুয়ারি, তখন একই কথার পুনরাবৃত্তি শোনা যায়—উচ্চ আদালতের ভাষা কি বাংলা হয়েছে? উচ্চশিক্ষার ভাষা কি বাংলা হয়েছে? সর্বস্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যের আঞ্চলিক কার্যক্রমের ভাষা কি বাংলা হয়েছে? শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন এবং প্রতিটিরই নেতিবাচক উত্তর।
বিভিন্নভাবে ভিনদেশি ভাষার প্রতিও আগ্রহ থাকতে পারে। তাতে ক্ষতি কিছু নেই। নতুন জ্ঞানলাভের জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভিনদেশি ভাষার দরকারও আছে। কিন্তু সেটা তো হবে নিজের ভাষা ঠিকভাবে রপ্ত করার পর। আমাদের প্রবণতায় স্পষ্ট দেখা যায়, নিজ ভাষার প্রতি মমত্ব নেই, ইংরেজির প্রতি মোহ অনেক বেশি, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিন্দি।
এসব সংকটের কথা মনে রেখেও বলা যায়, সে এক অসাধারণ ইতিহাস গড়েছিল বাঙালি। ধর্মে-বর্ণে-শ্রেণিতে বিভক্ত মানুষ সেদিন একাত্ম হয়েছিল। এবং তারা গড়ে নিয়েছিল জাতিগত পরিচয়, আর তা দিয়েই এগিয়ে সৃষ্টি করেছে একটি দেশ—বাংলাদেশ যার নাম।
ভাষার অতীত ইতিহাস মনে রেখে নতুন নতুন সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এখন সময়ের দাবি। কোথাও কি বাঁশিতে উঠেছে নতুন সুর? কোথাও কি গানের কথায় লেগেছে ভিত্তিভূমির অনুরণন? কোথাও কি আঞ্চলিক ভাষাগুলো নিয়ে মেতেছেন একদল গবেষক? কোথাও কি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর ভর করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছেন কোনো তরুণ?
ভাষা টেকে কীভাবে? ভাষা টেকে সেই ভাষায় কথা বললে। সেই ভাষায় সাহিত্য-সংগীত-নাটক ইত্যাদি নির্মাণ করলে। পাড়ায়-পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে, বিতর্ক সভা করলে। আরও কতভাবে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। নিজের ভাষা ঠিকভাবে রপ্ত করে ভিনদেশি ভাষায়ও তুখোড় হওয়া চলে। কিন্তু এ জন্য চাই মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা।
বিশ্বের সকল ভাষাই কারও না কারও মাতৃভাষা। সব ভাষার ওপরই রাখতে হবে ভালোবাসার হাত। তবে নিজ হাতে নিজস্ব ভাষায় যখন বলা হবে কথা, তুলে ধরা হবে নিজের আত্মপরিচয়, তখনই বলা যাবে, ‘এ মাটি আমার কাছে সোনা।’
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৫ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৫ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৫ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫