Ajker Patrika

রফিক আজাদ

সম্পাদকীয়
রফিক আজাদ

‘ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাব’—১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় লেখা এই পঙ্‌ক্তি কে না জানে! এর রচয়িতা কবি রফিক আজাদ। তিনি ছিলেন ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাংবাদিক, সম্পাদক ও লেখক। কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল রফিকুল ইসলাম খান আর ডাকনাম ছিল জীবন।

১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি ভাষাশহীদদের স্মরণে মা-বাবার কঠিন শাসন অস্বীকার করে খালি পায়ে মিছিল করেন। ভাষার প্রতি এই ভালোবাসা পরবর্তী জীবনে তাঁকে তৈরি করেছিল একজন কবি হিসেবে। এরপর তিনি ১৯৭১ সালে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

প্রেম, প্রকৃতি, বিদ্রোহ তাঁর কবিতায় নানাভাবে উঠে এসেছে। সাধারণ পাঠকের কাছে তিনি ‘ভাত দে হারামজাদা’ কিংবা ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’র কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর কবিতা পড়লে ষাট আর সত্তরের উত্তাল সময়প্রবাহকে হৃদয় দিয়ে বোঝা যায়। ‘যদি ভালবাসা পাই’ কবিতাটিতেও যেন স্বয়ং কবির হৃদয়টিই দেখা যায়। কবি বলেন: ‘যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব/ জীবনের ভুলগুলি/ যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে/ তুলে নেব ঝোলাঝুলি/...’

১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর। আবিষ্কার করেছিলেন নিরাশার এক শহর, দুঃখ ভারাক্রান্ত পৃথিবী। নিজেকে তাই দুঃখী প্রজন্মের কবি বলে ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা সমাজবিচ্ছিন্ন, আত্মধ্বংসী, মৃত্যুপরায়ণ, বিষণ্ন। আমাদের একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু সিগারেট...’

তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এর সম্পাদক ছিলেন। ‘রোববার’ পত্রিকায়ও নিজের নাম উহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন তিনি। কাজ করেছেন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন, উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে।

আমাদের দেশের অন্যতম এই কবি ৫৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২০১৬ সালের ১২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত