Ajker Patrika

সনদ-বাণিজ্য এবং আমাদের শঙ্কা

সম্পাদকীয়
সনদ-বাণিজ্য এবং আমাদের শঙ্কা

মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সব স্বীকার করেছেন, কীভাবে এই অপরাধ করা হতো সেই তথ্য এবং জড়িত থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা অর্থের বিনিময়ে আসলের মতো ‘ভুয়া’ সনদ সরবরাহ করতেন। শামসুজ্জামানের সহকারী ফয়সাল হোসেনকেও তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় একই অভিযোগে। অদ্ভুত হলেও সত্যি, এই সনদ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবরের স্ত্রী শেহেলা পারভীনের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে শামসুজ্জামানের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর আলী আকবরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে।

শামসুজ্জামান ও ফয়সালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হয়েছেন কুষ্টিয়া সদরের গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি। এই তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে গ্রেপ্তার হন কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুন।

শুধু তা-ই নয়, ডিবি জানায়, এই চক্রকে তথ্য দেওয়া বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৫-৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। জড়িত আছেন বোর্ডের কিছু সিবিএ নেতা, কম্পিউটার ও পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী। অবৈধভাবে ফল পরিবর্তন, নাম-ঠিকানা, বয়স পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কাজ করতে তাঁরা বানিয়েছেন এই সিন্ডিকেট।

খুব আশ্চর্য হতে হয় এটা জেনেও যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কিছু কর্মকর্তা শামসুজ্জামানকে বাঁচাতে নিয়েছেন ‘ঘুষ’, তা-ও ডলারে! দুদকেই যদি দুর্নীতিবাজেরা ঘাপটি মেরে থাকে, তাহলে এ দেশ থেকে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার দায়িত্ব আসলে কাকে দেওয়া উচিত কিংবা আদৌ কোনো সৎ-দায়িত্ববান ব্যক্তি আছেন কি না, যাঁরা তাঁদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করবেন—এমন প্রশ্ন উঠলে উত্তর খুঁজতে যে কারও ঘাম ছুটে যাওয়ার কথা। মন খারাপ হয়ে যায় এ তথ্য জানলে যে শিক্ষা বিটের কিছু সাংবাদিক সনদ-বাণিজ্যের এই চক্রের কথা জেনেও ‘ঘুষ’ নিয়ে চুপ ছিলেন।

আমরা দেখছি, শিক্ষা বোর্ড, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিংবা দুদক—কোনো প্রতিষ্ঠানই আসলে নিজের মতো করে দাঁড়াতে পারছে না। আর এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও যে পরিমাণ সম্পদ লুটেছেন, তা অকল্পনীয়। তাঁদের সঙ্গে যোগ করতে হয় অসৎ সংবাদকর্মীদেরও। এত ‘অসৎ সাহস’ তাঁরা পান কোথায়, কীভাবে পান সে প্রশ্ন চিরায়ত। কিন্তু এমন সাহস কেন দেখান, এই প্রশ্নের উত্তর সবার জানা—লোভ যে তাঁদের অধঃপতনের কারণ, এ কথা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড—কথাটি ধীরে ধীরে ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলছে অসৎ, ঘুষখেকো, দুর্নীতিবাজদের জন্য। তাদের জন্য অদক্ষ মানুষেরা সনদ পাচ্ছে টাকার বিনিময়ে। যেভাবে সেই সনদধারীরা তাদের অদক্ষতা ও অসততা ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাতে আমাদের শঙ্কা কাটে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত