Ajker Patrika

পরকীয়ার বলি

সম্পাদকীয়
পরকীয়ার বলি

আজকের পত্রিকার দুটি খবর। একটি খবর হলো, নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর গুপ্তাঙ্ক বারলিংটন মোড় এলাকায় বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় স্থানীয়রা আলতাফ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।

অন্য খবরটি হলো রাজধানীর মেরুল বাড্ডার একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বামী সেলিমকে আটক করেছে পুলিশ। দুটি ঘটনাই পরকীয়ার কারণে ঘটেছে বলে খবরে জানা গেছে।

প্রথম ঘটনায় আটক ওমানপ্রবাসী আলতাফের সঙ্গে নূর নাহারের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা দুজনেই বিবাহিত। দুজনেরই আলাদা সংসার আছে। সম্প্রতি নূর নাহার প্রবাসী আলতাফকে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা করতে বলেন। ব্যবসার প্রাথমিক মূলধন হিসেবে তিনি আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসে আলতাফ ৮ জুন পরিবারের অজান্তে দেশে ফেরেন, কিন্তু ব্যবসার টাকা দিতে নূর নাহার কালক্ষেপণ করতে থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে আলতাফ প্রথমে নূরু নাহার ও পরে তাঁর কন্যাকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

বাড্ডার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের তথ্য হলো, আটক সেলিম পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। এ নিয়ে সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। এর জেরেই তিনি স্ত্রী-সন্তানকে দুধের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। এ কথা তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।

সাম্প্রতিক কালে যেসব সামাজিক ব্যাধি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পরকীয়া। অবশ্য এটিকে কেউ কেউ সামাজিক ব্যাধি না বলে ব্যক্তির চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের চরম রূপ বলেও মনে করেন।

দুজন নারী-পুরুষ কেন এবং কখন পরকীয়ায় জড়ায়? হতে পারে পারিবারিক কলহ, একঘেয়ে সম্পর্ক, অপূর্ণ প্রত্যাশা, আকর্ষণ হারিয়ে ফেলা, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণ, মানসিক সমস্যা, সঙ্গীর উদাসীনতা, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, শখ থেকে, দূরত্ব ও শূন্যতা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর দূরে থাকা।

আমাদের দেশে পরকীয়া বিষয়টি ভালো চোখে দেখা না হলেও এটা ঘটে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিণতি হয় দুঃখজনক। যেমন নোয়াখালী ও বাড্ডার ঘটনা দুটি।

দুই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তির যদি শাস্তিও হয়, তাহলেও কি পরকীয়ার ঘটনা আর ঘটবে না?

পরকীয়া অপরাধ হোক কিংবা হোক সামাজিক সমস্যা—এ থেকে বেরিয়ে আসার সহজ কোনো উপায় সম্ভবত নেই।

সামাজিক সুশৃঙ্খলার জন্য নীতিনৈতিকতা অবশ্যই থাকতে হবে। আবার মন দেওয়া-নেওয়া যেকোনো নারী-পুরুষের মধ্যেই হতে পারে—তিনি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যা-ই হোন না কেন। সেটাকে ঢালাওভাবে অপরাধ বলাও কি খুব সংগত? ব্যভিচারের পথ প্রশস্ত না করে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, সেটা ভাবা দরকার গুরুত্ব দিয়েই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত