Ajker Patrika

সেই জিহাদ হাসানই এখন স্কুলের গর্ব

পল্লব আহমেদ সিয়াম, ইবি
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১০: ৪৪
সেই জিহাদ হাসানই এখন স্কুলের গর্ব

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বেড়ে ওঠা জিহাদ হাসানের। বাবা সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট। পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের গাজী বাড়ির ফারুক হোসেন ও রেহানা আক্তার দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জিহাদ। তিনি এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। গুচ্ছ পরীক্ষায় তাঁর নম্বর ছিল ২৯। জিহাদের চান্স পাওয়ায় খুশি মা-বাবা। অথচ এলাকার কেউ কল্পনাও করতে পারেননি জিহাদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় জিহাদের। জানান নিজের স্বপ্ন ও প্রতিবন্ধকতার কথা। জিহাদ বলেন, ‘ছোটবেলায় টাইফয়েড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হই। সেখান থেকেই স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। জন্মের পরে স্বাভাবিক থাকলেও মাত্র ৩ বছর বয়সে টাইফয়েড ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেড়ে ওঠা ৩ ফুটে থেমে যায়। স্বাভাবিকভাবে অন্যদের মতো হাটতে পারিনি।’

যে হরমোনটি উচ্চতার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সেটি হলো মস্তিষ্কের পিটুইটারি নামক হরমোন গ্রন্থি নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন। ছোটকাল থেকে এই হরমোনের আধিক্য হলে কেউ মাত্রাতিরিক্ত লম্বা হয় আর হরমোনটির কমতি হলে খর্বকায় বা বেঁটে হয়ে থাকে।

জিহাদ বলেন, সমস্যা থাকার কারণে স্কুলে চান্স পাওয়ার পর ভর্তি নিতে চাননি শিক্ষকেরা। সেটা সপ্তম শ্রেণির ঘটনা। স্যাররা ভাবছিলেন, সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না। পরে ওই স্কুলের শফিকুল স্যারের হস্তক্ষেপে ভর্তি হই। পরবর্তীতে স্কুল বন্ধু যোবায়ের ধ্রুব আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তেমনিভাবে কলেজে নাদিম নামে এক বন্ধু সহযোগিতা করেন। আজকের এই খুশির দিনে তাদের কথাও স্মরণ করেন জিহাদ।

জিহাদ জানান, তিনি বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। এসএসসি দিয়েছেন ঢাকা মুসলিম মডার্ন স্কুল থেকে। এইচএসসি দেন ঢাকা বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ থেকে। এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং এইচএসসিতে পান ৪.২৫। তাঁর ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করা। রেজাল্ট কম থাকায় সে সুযোগ হয়নি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নেন। সেখান থেকেই গুচ্ছে পরীক্ষা দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আর দশটা মানুষের মতো আমি জীবনে স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নকে লালন করেন ভর্তি হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম পছন্দ ছিল ইংরেজি। ইংরেজি বিভাগ পেয়েছি, এতেই আমি খুশি। পরিবার থেকে সব সময় সাপোর্ট পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া একটা যুদ্ধ ছিল আমার জন্য। সেই যুদ্ধে আমি জয়ী। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। আর পিছে ফিরে তাকানোর সময় নেই। সব সময় চাইতাম পড়াশোনায় যেন ঘাটতি না হয়। অসুবিধা তো থাকবেই, সেগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’

জিহাদের মা রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের ছেলে দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, এতে আমরা খুশি। ছোট থেকেই ওর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। অনেকেই দেখে হাসিঠাট্টা করে। ওই সময়গুলো মা হিসেবে খুব পীড়া দেয়। তবে এখন থেকে আমার সব কষ্ট সার্থক।’

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কী করতে চান, এমন প্রশ্নে জিহাদ হাসান বলেন, ‘জীবনের ইচ্ছা বিসিএস ক্যাডার হওয়া। দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করা। বিশেষ করে আমার মতো সমাজে যারা বিভিন্নভাবে সমস্যায় নিমজ্জিত, তাদের নিয়ে কাজ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত