Ajker Patrika

দুর্ঘটনা ও মৃত্যু

সম্পাদকীয়
দুর্ঘটনা ও মৃত্যু

ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিরাপদে ঘরে ফেরা যাবে—এমন নিশ্চয়তা এখন আর কেউ কাউকে দিতে পারবেন না। দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু এত স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে যে এ নিয়ে হইচইওআর তেমন দেখা যায় না। সংবাদপত্রে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর খবর ছাপা হয়, সেগুলো কেউ পড়লে হয়তো ব্যথিত হন, কিন্তু এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে অসহায় মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি কেউ কি আর ভাবেন? সবকিছু যেন প্রতিকারহীন হয়ে পড়ছে। মৃত্যুকে বরণ করা ছাড়া যেন আর কিছু কারও করার নেই।

রোববার আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় পাশাপাশি দুটি খবর পড়ে ওপরের কথাগুলো মনে হলো। ‘বাহেডের ধাক্কায় ডুবল পিকনিকের ট্রলার’ শিরোনামের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবে যাওয়ায় সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে অন্তত তিন শিশু। ট্রলারটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিলেন এবং তাঁরা সবাই পিকনিকে যাচ্ছিলেন।

আনন্দযাত্রায় বেরিয়ে এমন করুণ মৃত্যু নিশ্চয়ই তাঁদের কারও প্রত্যাশিত ছিল না। বালু আনতে যাওয়া বাল্কহেড বেপরোয়াভাবে চলছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে প্রাণহানির ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু ট্রলার এবং বাল্কহেড চলাচলে সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়টি উপেক্ষিতই আছে। এসব দেখার দায়দায়িত্ব কি কারও নেই?

দ্বিতীয় খবরটির শিরোনাম ‘ছিটকে পড়ে কনটেইনার, মহাসড়কে আতঙ্ক লরি’। এ খবরে বলা হচ্ছে, চলন্ত লরি থেকে ছিটকে পড়ছে কনটেইনার। সেই কনটেইনারে চাপা পড়ে কখনো রিকশা আরোহী নিহত হচ্ছে, কখনো প্রাণ হারাচ্ছে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যানবাহনের যাত্রী। কনটেইনারবাহী এসব লরি এখন আতঙ্কের অপর নাম হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

লরি থেকে ছিটকে পড়া কনটেইনারের চাপায় তিন মাসে চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একাধিক ব্যক্তি। শনিবার সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় কনটেইনারের নিচে চাপা পড়েছে ব্যক্তিগত একটি গাড়ি। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সেই প্রাইভেট কারে থাকা শিশুসহ পাঁচজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশই ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরির কারণে হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কনটেইনার পরিবহনে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা কি একেবারেই অসম্ভব?

যাঁরা লরিতে কনটেইনার বহন করেন, তাঁরা তো নিশ্চয়ই লোড করার নিয়ম জানেন। অন্ততপক্ষে তিনটি শিকল দিয়ে কনটেইনারগুলো শক্ত করে বেঁধে দেওয়ার নিয়ম না মানার জন্যই মূলত দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। আবার শিকল ছিঁড়েও কনটেইনার পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।তাই দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সতর্কতা ও সচেতনতা। চালক ও পথচারী দুই পক্ষের জন্যই এটা জরুরি। এটা কি অসম্ভব কিছু?

সড়কে যানবাহন বাড়ছে, কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণ হচ্ছে না। দেশে দক্ষ চালকেরও ঘাটতি আছে। তাই চলাচলের সময় চালক এবং পথচারী দুই পক্ষই সাবধানতা ও সচেতনতা অবলম্বন না করলে দুর্ঘটনা কমবে কীভাবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত