Ajker Patrika

বাংলাদেশ এখন ঋণ দেয়

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০৯
বাংলাদেশ এখন ঋণ দেয়

স্বাধীনতার পর বলতে গেলে শূন্য তহবিল দিয়ে দেশ পরিচালনার কঠিন পথে যাত্রা শুরু করেন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চারদিকে কেবল ‘নাই আর নাই’ কলরব। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মোটা ভাত আর মোটা কাপড় জোগানোই যেখানে চ্যালেঞ্জের, সেখানে মানুষ কর দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করবে—এটা অনেকটাই কঠিন বিষয়। এ রকম একটি সময়ে ১৯৭১-৭২ সালে বিধ্বস্ত দেশের রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ১৬৬ কোটি টাকা। বলা যায় এ টাকা একটি অসীম চাহিদাসম্পন্ন দেশের জন্য কিছুই না। ফলে সরকারকে হাত পাততে হতো উন্নত দেশ তথা দাতাদের কাছে। বলতে গেলে পুরোই সাহায্যনির্ভর অর্থনীতি। ঋণ আর অনুদান। যাকে বলে ধারকর্জের বাংলাদেশ। ওই সময়ে দেশটির অর্থমন্ত্রীকে টাকা ধারের জন্য উন্নত দেশের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হতো। নানান শর্তের বেড়াজাল সত্ত্বেও টাকা ধার করতে হতো। ৫০ বছর পর এসে ওই সব ঘটনা গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই সময়ের নির্মম বাস্তবতাকে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসীসহ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা পরিশ্রম, মেধা, যোগ্যতা দিয়ে আমূল পাল্টে দিয়েছেন।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ৫০ বছরে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাতে এমন অগ্রগতি হয়েছে—এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আয়ে। গত পাঁচ দশকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বা রাজস্ব আয় প্রায় ১৬০০ গুণ বেড়েছে। স্বাধীনতার পরের বছরে ১৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। দেশের বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় রাজস্ব আয় অপেক্ষাকৃত কম হলেও তা বাড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। রিজার্ভ, রাজস্ব আয়ে ভর করে শক্ত ভীতের ওপর এখন দেশের অর্থনীতি। ফলে একসময়ের ‘হাতপাতা’ দেশে এখন মুঠোভর্তি মুদ্রা! এ সক্ষমতায় ভর করে একসময়ের ঋণনির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন বিদেশি সহায়তা আর ঋণের ধার ধারে না। বরং অন্যকে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে দেশটির।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় দেশটিকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়ে এরই মধ্যে ঋণের একটি পরিমাণ ছাড় করেছে। এ টাকা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। চলতি বছরের মে মাসে মুদ্রা বিনিময় বা কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলঙ্কাকে এই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর এ ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন ঋণদাতা দেশের তালিকায় নাম লেখাল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক যুগে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীত হওয়ায় ঋণ দেওয়ার এই সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শুধু শ্রীলঙ্কা নয়, অন্য কয়েকটি দেশও বাংলাদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের সক্ষমতার কারণে ঋণ দিতে পারছে দেশটি। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে কমপক্ষে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ার মূল কারণ হলো এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ভোগ বেড়েছে। যার ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। যদিও জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনামূলক হারে রাজস্ব বাড়ছে না, তারপরও রাজস্ব আয় অনেক বেড়েছে। কর প্রদান ও আদায়ে যখন স্বচ্ছতা আসবে, তখন রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে একদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বাড়াতে হবে, অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি ও মুদ্রা পাচার ঠেকাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত