বিদ্রোহে কোণঠাসা দলীয় প্রার্থী

ফুলবাড়িয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ালে দলীয় অনেক প্রার্থীর ভরাডুবি হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের একাংশ। এ ছাড়া বিএনপি দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ১৭ জন নেতা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে ৭৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের ১৬ জন। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে হামলা-মামলার ঘটনাও বাড়ছে। ইতিমধ্যে এনায়েতপুর, বাকতা ও নাওগাঁও ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে ফুলবাড়িয়ার ১৩টি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিন প্রায় সব প্রার্থী নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শোডাউন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নাওগাঁও ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাকের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, মো. মোজাম্মেল হোসেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা মো. নুরুল ইসলাম। পুটিজানা ইউনিয়নে মো. ময়েজ উদ্দিন তরফদার প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী হয়েছেন আব্দুল আলীম আব্দুল্লাহ।

কুশমাইল ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শামছুল হক। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ও মো. আব্দুল বাতেন পুলু। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সেলিম মিয়া। তবে বালিয়ান ইউপিতে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী মোছা. হাজেরা খাতুন। আর বিএনপির শেখ মো. মিজানুর রহমান ও মোহাম্মদ নাজমুল হুদা প্রার্থী হয়েছেন।

দেওখোলা ইউপিতে মো. তাজুল ইসলাম বাবলুর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদিন। আর বিএনপির নুরে আলম উজ্জ্বল। ফুলবাড়িয়া ইউপিতে মো. রুহুল আমীন প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী হয়েছেন জয়নাল আবেদিন বাদল, মো. আতাহার আলী ও সিরাজুল হক। বাকতা ইউপিতে মো. নাজমুল হক সোহেলের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। আর বিএনপির মো. ফজলুল হক মাখান ও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাঙ্গামাটিয়া ইউপিতে মির্জা মো. কামরুজ্জামান থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মো. শাহজাহান সিরাজ সাজু ও মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুক্তা। বিএনপির রয়েছেন মো. মফিজ উদ্দিন আকন্দ। এনায়েতপুরে মো. বুলবুল হোসেনের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আ. সালাম। আর বিএনপির আ. সা. মু আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, মো. কবীর হোসেন তালুকদার ও আজিজুল হক।

কালাদহে আওয়ামী লীগের মো. ইমান আলী থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম মাস্টার ও মো. নজরুল ইসলাম। আর বিএনপির মো. ফজলুল হক চৌধুরী ও মো. ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী। রাধাকানাই ইউপিতে মো. গোলাম কিবরিয়া তরফদারের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী সারওয়ার আলম।

আছিম পাটুলি ইউপিতে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান সাইফুল। আর বিএনপির মো. ইমরুল কায়েস। ভবানীপুরে মো. জবান আলী সরকার থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আজহারুল ইসলাম ও ডা. কামরুজ্জামান। আর বিএনপির মো. শাহিনুর মল্লিক জীবন, মো. মনিরুজ্জামান ও আনোয়ার হোসেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত এক প্রার্থী বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনীতদের অনেক ক্ষতি হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচন করছেন, দল তাঁদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে।’

তবে নৌকার এক বিদ্রোহী প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দেয়নি। কিন্তু এলাকার মানুষের চাপে এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে প্রার্থী হয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. মালেক সরকার বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অপরদিকে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’