রাজীব কুমার সাহা
আমাদের দৈনন্দিন আলাপ-আলোচনায় প্রায়ই বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহার করি। এমনি একটি অতি পরিচিত শব্দবন্ধ হলো ‘টাকার কুমির’। এটিকে আমরা প্রায় সবাই বাগধারা হিসেবে পড়েছি। কিন্তু এর পেছনের গল্পটি কি আমাদের জানা আছে? কেন বলছি টাকার কুমির? আর কুমিরের সঙ্গে টাকা-পয়সার কী সম্পর্ক? আজ জানব এ বাগধারাটির আদ্যোপান্ত।
‘টাকার কুমির’ বাগধারাটির অর্থ হলো যার অনেক টাকা-পয়সা আছে এমন বা বিত্তশালী ব্যক্তি। টাকার কুমির শব্দবন্ধটির আদি রূপ টাকার কুমির ছিল না। মূল শব্দবন্ধটি ছিল ‘টাকার কুবের’, যা পরিবর্তিত হয়ে টাকার কুমির শব্দবন্ধে রূপ নিয়েছে। পৌরাণিক বিশ্বাসমতে, কুবের হচ্ছে ধন-সম্পদের দেবতা। ধনাধিপতি কুবের হলেন ব্রহ্মর্ষি পুলস্ত্যের পৌত্র এবং পৌলস্ত্য বা বিশ্রবার ও ভরদ্বাজ-কন্যা দেববর্ণিনীর পুত্র।
কুবের সমস্ত ধনের প্রদাতা এবং অধ্যক্ষ। তিনি যক্ষ ও কিন্নরগণের অধিপতি ও দশ দিকপালের অন্যতম। তিনি যেহেতু ধনসম্পদের দেবতা, স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে প্রচুর টাকা, সোনাদানাসহ নানা সম্পদ জমা থাকত। মূলত এই দেবতা কুবের থেকেই ‘টাকার কুবের’ শব্দবন্ধটির উদ্ভব। কিন্তু শব্দের কালানুক্রমিক বিবর্তনে এই শব্দবন্ধটি ‘টাকার কুমির’রূপে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে পড়ে। ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে ভিন্ন ভাষা সংযোগ এবং পারিপার্শ্বিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ফলে কোনো একটি শব্দ অন্য একটি শব্দের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। তবে এর পেছনে থাকতে হয় সুনির্দিষ্ট যুক্তি।
শব্দের এই যে পরিবর্তন, ব্যাকরণের ভাষায় এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে বলা হয় ‘লোকনিরুক্তি’ বা ‘ফোক-ইটিমোলজি’। এটি ধ্বনি পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়াবিশেষ। ‘নিরুক্তি’ শব্দটির ব্যাকরণিক অর্থ হলো প্রকৃতি-প্রত্যয়াদি বিশ্লেষণ করে শব্দের ব্যুৎপত্তি বা উৎস নির্দেশ করা। শিক্ষিত মানুষের নয়, লোকসাধারণের, অর্থাৎ অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত জনসাধারণের জ্ঞানবিশ্বাস অনুসারে নির্ণীত ব্যুৎপত্তির ওপরে নির্ভর করে যে ধ্বনি পরিবর্তন হয় তাকেই লোকনিরুক্তি বলে। যেমন ইংরেজি ‘আর্মচেয়ার’ ধ্বনিসাম্যের প্রভাবে বাংলায় হয়ে যায় ‘আরামচেয়ার’ বা ‘আরামকেদারা’। এটি লোকনিরুক্তির উদাহরণ। অনুরূপ ধনের অধিপতি কুবের, অতএব ‘টাকার কুবের’ কথাটা ঠিক। কিন্তু ‘কুবের’ সাধারণ লোকের অপরিচিত এবং পুরাকালে গল্পে শোনা যায়, কুমিরের পেটে অনেক সোনাদানা পাওয়া যেত।
কেননা কুমির মানুষ খেয়ে খেয়ে টাকা-পয়সা ও সোনাদানা পেটে জমিয়ে রাখত। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ শব্দবন্ধটির মনে মনে একটি ব্যুৎপত্তি কল্পনা করে নিয়েছে। অতএব ‘টাকার কুবের’ ধ্বনিসাম্যের সুযোগে লোকমুখে রূপ পায় ‘টাকার কুমির’ হিসেবে। কালক্রমে শব্দবন্ধের অর্থ অপরিবর্তিত থাকলেও জনসাধারণের প্রচলিত বিশ্বাস ও ধারণা অনুযায়ী ‘টাকার কুমির’ শব্দবন্ধই অধিক বিত্তশালী অর্থে স্থির রূপ পায়।
লোকনিরুক্তির প্রভাবে ‘টাকার কুবের’ যেভাবে ‘টাকার কুমির’-এ পরিণত হয়েছে, বাংলা ভাষায় এমন শব্দের বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পাল্লা দিয়ে দেশেও বাড়ছে ‘টাকার কুমির’!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আমাদের দৈনন্দিন আলাপ-আলোচনায় প্রায়ই বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহার করি। এমনি একটি অতি পরিচিত শব্দবন্ধ হলো ‘টাকার কুমির’। এটিকে আমরা প্রায় সবাই বাগধারা হিসেবে পড়েছি। কিন্তু এর পেছনের গল্পটি কি আমাদের জানা আছে? কেন বলছি টাকার কুমির? আর কুমিরের সঙ্গে টাকা-পয়সার কী সম্পর্ক? আজ জানব এ বাগধারাটির আদ্যোপান্ত।
‘টাকার কুমির’ বাগধারাটির অর্থ হলো যার অনেক টাকা-পয়সা আছে এমন বা বিত্তশালী ব্যক্তি। টাকার কুমির শব্দবন্ধটির আদি রূপ টাকার কুমির ছিল না। মূল শব্দবন্ধটি ছিল ‘টাকার কুবের’, যা পরিবর্তিত হয়ে টাকার কুমির শব্দবন্ধে রূপ নিয়েছে। পৌরাণিক বিশ্বাসমতে, কুবের হচ্ছে ধন-সম্পদের দেবতা। ধনাধিপতি কুবের হলেন ব্রহ্মর্ষি পুলস্ত্যের পৌত্র এবং পৌলস্ত্য বা বিশ্রবার ও ভরদ্বাজ-কন্যা দেববর্ণিনীর পুত্র।
কুবের সমস্ত ধনের প্রদাতা এবং অধ্যক্ষ। তিনি যক্ষ ও কিন্নরগণের অধিপতি ও দশ দিকপালের অন্যতম। তিনি যেহেতু ধনসম্পদের দেবতা, স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে প্রচুর টাকা, সোনাদানাসহ নানা সম্পদ জমা থাকত। মূলত এই দেবতা কুবের থেকেই ‘টাকার কুবের’ শব্দবন্ধটির উদ্ভব। কিন্তু শব্দের কালানুক্রমিক বিবর্তনে এই শব্দবন্ধটি ‘টাকার কুমির’রূপে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে পড়ে। ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে ভিন্ন ভাষা সংযোগ এবং পারিপার্শ্বিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ফলে কোনো একটি শব্দ অন্য একটি শব্দের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। তবে এর পেছনে থাকতে হয় সুনির্দিষ্ট যুক্তি।
শব্দের এই যে পরিবর্তন, ব্যাকরণের ভাষায় এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে বলা হয় ‘লোকনিরুক্তি’ বা ‘ফোক-ইটিমোলজি’। এটি ধ্বনি পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়াবিশেষ। ‘নিরুক্তি’ শব্দটির ব্যাকরণিক অর্থ হলো প্রকৃতি-প্রত্যয়াদি বিশ্লেষণ করে শব্দের ব্যুৎপত্তি বা উৎস নির্দেশ করা। শিক্ষিত মানুষের নয়, লোকসাধারণের, অর্থাৎ অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত জনসাধারণের জ্ঞানবিশ্বাস অনুসারে নির্ণীত ব্যুৎপত্তির ওপরে নির্ভর করে যে ধ্বনি পরিবর্তন হয় তাকেই লোকনিরুক্তি বলে। যেমন ইংরেজি ‘আর্মচেয়ার’ ধ্বনিসাম্যের প্রভাবে বাংলায় হয়ে যায় ‘আরামচেয়ার’ বা ‘আরামকেদারা’। এটি লোকনিরুক্তির উদাহরণ। অনুরূপ ধনের অধিপতি কুবের, অতএব ‘টাকার কুবের’ কথাটা ঠিক। কিন্তু ‘কুবের’ সাধারণ লোকের অপরিচিত এবং পুরাকালে গল্পে শোনা যায়, কুমিরের পেটে অনেক সোনাদানা পাওয়া যেত।
কেননা কুমির মানুষ খেয়ে খেয়ে টাকা-পয়সা ও সোনাদানা পেটে জমিয়ে রাখত। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ শব্দবন্ধটির মনে মনে একটি ব্যুৎপত্তি কল্পনা করে নিয়েছে। অতএব ‘টাকার কুবের’ ধ্বনিসাম্যের সুযোগে লোকমুখে রূপ পায় ‘টাকার কুমির’ হিসেবে। কালক্রমে শব্দবন্ধের অর্থ অপরিবর্তিত থাকলেও জনসাধারণের প্রচলিত বিশ্বাস ও ধারণা অনুযায়ী ‘টাকার কুমির’ শব্দবন্ধই অধিক বিত্তশালী অর্থে স্থির রূপ পায়।
লোকনিরুক্তির প্রভাবে ‘টাকার কুবের’ যেভাবে ‘টাকার কুমির’-এ পরিণত হয়েছে, বাংলা ভাষায় এমন শব্দের বিস্তার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পাল্লা দিয়ে দেশেও বাড়ছে ‘টাকার কুমির’!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫