Ajker Patrika

চাকরির চেয়ে কর্তব্য বড়

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০৯
চাকরির চেয়ে কর্তব্য বড়

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার ভয়াবহ ঘটনাটি যখন ঢাকায় ঘটছিল, তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে ছিলেন। ১৪ আগস্ট দুই বোন আমস্টারডাম শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও আমস্টেল নদীর তীরঘেঁষা সরু রাস্তায় ঘুরতে বের হয়েছিলেন। এরপর তাঁরা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আসেন। বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাড়িতে ছিলেন তাঁরা। আদর-আপ্যায়নের কমতি ছিল না। সানাউল হকের মেয়েদের সঙ্গে খুব ভাব হয়ে যায় শেখ রেহানার। তাঁরা নানা কারণে হো হো করে হাসছিলেন। আর তখন ওয়াজেদ মিয়া ধমক দিয়ে বলেছিলেন: ‘এত হাসাহাসি ভালো নয়, এতে সারা জীবন কাঁদতে হতে পারে!’

মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার জীবন একেবারে বদলে গেল। খবর এল, ঢাকায় গোলমাল হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানাকে যে খাতির-যত্ন করছিলেন সানাউল হক, এক দিনের ব্যবধানেই তা বদলে গেল। সানাউল হককে শোক সংবাদটি দিতে ফোন করেছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। তাঁকে সানাউল হক বলেন, ‘আপনারা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে এখানে পাঠিয়ে তো আমাকে বিপদে ফেললেন।’

সানাউল হকের সঙ্গে কথা বলে খুবই হতাশ হয়ে পড়েন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। সোফায় বসে থাকেন কিছুক্ষণ। এরপর খানিকটা উঁচুগ্রামে স্বগতোক্তির মতো বলেন, ‘আই অ্যাম দ্য ক্যাপ্টেন অব দিস শিপ, লেট মি টেক ডিসিশন। বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের আমি ইউরোপের রাস্তাঘাটে ফেলে দিতে পারি না। আমি তাদের এখানেই ফিরিয়ে আনব।’

সানাউল হক দ্বিতীয় সচিবের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধু-কন্যাদের বেলজিয়াম-পশ্চিম জার্মানির সীমান্তের আখেন পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে বনে নিয়ে আসা হলো তাঁদের। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু-কন্যাদের আশ্রয় দেওয়ার শাস্তিস্বরূপ জিয়া সরকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ছয় মাসের জন্য ওএসডি করেছিল।

সূত্র: সরাফ আহমেদ, প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন, পৃষ্ঠা: ৫১-৭৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত