Ajker Patrika

স্বস্তির যাত্রা

সম্পাদকীয়
স্বস্তির যাত্রা

ঈদ শেষ। বর্ষবরণ শেষ। শেষ হয়েছে চাকমাদের বিজু, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু, মারমা ও রাখাইনদের সাংগ্রাই। এবার ছুটিও শেষ। এই ছুটিতে কারও ঈদযাত্রা হয়েছে আনন্দের, কারও বিষাদের। ছুটিটা অনেকে উপভোগ করেছেন, কেউবা করেননি। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রাটা হয়েছে স্বস্তির। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যেমন প্রস্তুতি দেখা গেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

প্রতি ঈদেই ছুটি কাটাতে শহরের মানুষের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাওয়া নতুন কিছু নয়। নতুন যে বিষয়গুলো চোখে পড়েছে এর মধ্যে প্রথমে বলতে হয় টিকিটের কথা। অনলাইনে বেশ কয়েক বছর ধরে বাস ও ট্রেনের টিকিট কাটা গেলেও তা জোগাড় করতে অনেককেই হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এবার সে রকম গল্প খুব একটা শোনা যায়নি। ফিরতি যাত্রায়ও বিক্রি হয়েছে অগ্রিম টিকিট।

রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জোর গলায়ই বলেছেন, এবার ঈদে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি হয়নি। তবে হ্যাঁ, কালোবাজারে টিকিট বিকিকিনির কাজটা যাঁরা করেন, তাঁরা তো নীরবেই করেন—এ ব্যাপারে সব সময়ই কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।

স্বস্তির বিষয়—সড়কে খুব একটা দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি। প্রতিবার যাত্রীদের মনে যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে, সেটা বোধ হয় এবার ওইভাবে করেনি। দূরের যাত্রীদের কেউ কেউ যে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েননি, সেটা হয়তো দৃঢ় কণ্ঠে বলা যাবে না। তবে সংখ্যাটা সম্ভবত কমেই এসেছে। কেননা এ খবরও তেমন একটা চোখে পড়েনি। বলা যায়, এবার বেশির ভাগ মানুষের ঈদযাত্রা হয়েছে সহজ ও স্বস্তির।

ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় অনেকে হয়তো লক্ষ করেছেন মহাসড়কের পাশেই বসত হাট-বাজার। বেশি দূর যেতে হবে না, রাজধানী ঢাকার ৩০০ ফিট এলাকাতেই এই চিত্র ছিল সহজলভ্য। কিন্তু ঠিক একই চিত্র এবারের ছুটিতে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে যেন। অনেক জায়গায় রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে, অনেক জায়গায় হয়েছে উড়ালসড়ক কিংবা হালের এক্সপ্রেসওয়ে। এর সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সড়কের পাশে বসা বাজারও। ফলে অযথা ভিড়ভাট্টা এড়ানো গেছে, কমেছে যানজট। তাতে করে যাত্রা যে সহজ হয়েছে, এ ব্যাখ্যা না দিলেও চলে।

লম্বা ছুটির সুযোগে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারার মতো কাজ করেছেন অনেকে। শুধু সৈয়দপুরেই দুই দিনে হয়েছে দেড় শতাধিক বিয়ে! এই ঈদে ভাতিজাদের সালামি দেওয়ায় স্বামীকে স্ত্রীর দা দিয়ে জখম করার কাণ্ডটা একই সঙ্গে অদ্ভুত এবং বেদনার! তবে যাঁরা এদের মতো আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছুটি কাটাননি, তাঁরা চলে গেছেন হয় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে, কাপ্তাইয়ের তীরে, এমনকি ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে।তাঁদের কারও যাত্রা-ফিরতি যাত্রায় ব্যাঘাত হয়েছে বলে তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

হাজার নিরাপত্তায়ও দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এবারের ছুটিতে যে রকম নিরাপত্তা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা প্রতিবার ধরে রাখা গেলে সব বারের ছুটিই আনন্দময় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত