Ajker Patrika

উত্তপ্ত রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ!

নাদীম কাদির
উত্তপ্ত রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ!

কত কিছুতেই আমাদের মন হাসে বা কাঁদে, কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে মন অস্থির হয়ে পড়ে। আরেক ধাপ গেলে মনটা পাগলের মতো আচরণ করে। সাংবাদিক হিসেবে একরকম, শহীদসন্তান হিসেবে অতিমাত্রায় মন পাগলামি করে আর এই পাগল মনকে ধরে রাখা যায় না। নিজ গতিতে দৌড়ায়।

রাজনীতি এখন ‘খেলা হবে’ পর্যায়ে, তবে খেলা বুদ্ধি দিয়ে, নাকি পেশিশক্তি দিয়ে, নাকি অন্য কোনো প্রক্রিয়ায়; তা নিয়ে এখনো ধাঁধা রয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে পরে লিখব। শহীদসন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো আমার মনকে তাড়িত করে। কড়া আর গরম বক্তব্য ছুড়ছেন রাজনীতিবিদেরা। টেলিভিশন টক শোগুলো উত্তপ্ত হয়ে পড়ে, তা-ও ভালো যে রাজপথ রক্তাক্ত হচ্ছে না।

কিন্তু হ্যাঁ, এত গরম ও সরব রাজনীতি যেখানে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।

আজকাল অনেকে বলে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধ পুরোনো ব্যাপার, তাই এর গুরুত্ব নেই। অনেকে বিরক্ত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর সঙ্গে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব কমে গেছে বলে আমার মনে হয়।

আমার চার বছরের পরিশ্রম ও সঞ্চয়ের প্রায় সবটুকু দিয়ে গ্রামে একটি শহীদ স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছি। ভেবেছিলাম সবাই পাশে থাকবে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। কিন্তু হায়!

রক্তভেজা বাংলার মাটি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজও কণ্টকাকীর্ণ পথে চলছে।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চিকলি নদীর পাড়ে আমার পিতার জমিতে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে, কিন্তু সবাই একটি প্রশ্ন করে দুঃখের সঙ্গে, সামনের সরকারি রাস্তা কবে হবে? আমারও একই প্রশ্ন! ২০২১ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করি এবং তাঁর নির্দেশে এসি ল্যান্ড রাস্তায় খুঁটি বসিয়ে আসেন, কিন্তু কাজ আর এগোয়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ রাস্তার কাজটি আটকে দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, সেখানে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের রাস্তার কাজ আটকে রাখার দুঃসাহস কেমন করে হয়? এ রকম অনেক ঘটনা আছে দেশজুড়ে, যা সরকারের জন্য খুবই ক্ষতিকর আর বিব্রতকর। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক করতে দেখা যায় না। স্বাভাবিকভাবেই সবার একমাত্র আওয়ামী লীগের কাছেই প্রত্যাশা বেশি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে লালন করি, তাঁরা আওয়ামী লীগ ছাড়া কার কাছে যাব? কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের হতাশ করছে।

‘খেলা হবে’ রাজনীতি হলো ক্ষমতার জন্য, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো আত্মিক ও গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ ছিল একটি ভয়ংকর অধ্যায়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে অসম্মানিত হয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নানান অজুহাতে হত্যা করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। খুবই কষ্টের ছিল যারা আমার মতো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে, তারা রাস্তাঘাটে বহু জানা-অজানা পুরুষ-নারী ও শিশুর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। যারা ১৯৭১ সালের গণহত্যা দেখেনি, যারা আপনজন হারায়নি, তারাই বলতে পারে মুক্তিযুদ্ধ পুরোনো ব্যাপার। শহীদদের অসম্মান করে তারা শুধু ক্ষমতা আর টাকার পেছনে দৌড়ায়। সরকার যখন বদলায়, তাদের আনুগত্য বদলায়। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে উঠতে দিচ্ছে না। রাজনীতি থেকে তাদের দূর করতে না পারলে রাজনীতি বারবার উত্তপ্ত হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ধারা শক্তিশালী হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত