ইশতিয়াক হাসান

আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ।
গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।

চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।

সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।

প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।

আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ।
গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।

চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।

সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।

প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।
ইশতিয়াক হাসান

আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ।
গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।

চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।

সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।

প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।

আমার জঙ্গলভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং ও কাপ্তাই, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গল-পাহাড় যে চষে বেড়িয়েছি। যেখানেই গিয়েছি চোখে জ্বালা করেছে, কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোয় গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ ও বাঘ শিকার করেছেন। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে, ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল আরও অনেক দিন। সত্যি বলতে, এখনো আমি মাঝে মাঝে দিবাস্বপ্ন দেখি, একটা-দুটো চিতা কি এখনো লুকিয়ে রেখেছে মধুপুর তার অন্তঃপুরে?
সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর, খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গেছেন, সেটা কোথায় হারাল! নানির মুখে শোনা হবিগঞ্জের মাধবপুরে গোয়াল থেকে বাঘে গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানাবাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ মারা, সাতছড়িতে গাড়ির কাচে চিতা বাঘের থাবা চালানো—এমনই সব ঘটনা শুনে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ত শরীরে।
টেকনাফে গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’-এর সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের কথা। আমার দাদিও ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে নব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাঁচিলে। তবে এখন মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, পুরোনো দিনের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীর কথা ভেবে কী হবে, যা বন আছে সেগুলোই বা কত দিন থাকবে?
আজ বিশ্ব বন দিবস। এই দিনে আর মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না, বরং চলুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চারটি বনের সঙ্গে পরিচিত হই। বন নিয়ে ধারাবাহিক এই লেখার পরের পর্বগুলোয় আরও কিছু বনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
লতা বাঘের কাপ্তাই
কাপ্তাইয়ের জঙ্গল সব সময়ই আমার প্রিয় অরণ্যগুলোর একটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলগুলোর মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি গিয়েছি। আপনি যদি অরণ্যপ্রেমী হন এবং এখনো না গিয়ে থাকেন, তবে এই অরণ্যে একটিবার অন্তত যাওয়া আপনার জন্য অবশ্যকর্তব্য। পাহাড়, অরণ্য, বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদেও মজে যাবেন।
কর্ণফুলীর দুই পাশে সীতা আর রাম পাহাড়ের অরণ্য চোখ ছানাবড়া করে দেবে আপনার। অনেক বড় এলাকা নিয়ে কাপ্তাইয়ের জঙ্গল, তবে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের আয়তন ৫৪ বর্গকিলোমিটারের মতো।
কর্ণফুলী নদীর তীরেই বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস। সেখানেই বনকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকেই উঠে যাওয়া অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা দেখে রোমাঞ্চিত হবেন। উঁচু, সবুজ এক পাহাড়। শরীরে গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বড়-ছোট, হরেক জাতের গাছপালা। অবশ্য শুধু বন বিভাগের বিট অফিস থেকে নয়, আশপাশের নদীপাড়ের বড় একটা জায়গা থেকেই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়টির দেখা পাবেন। দূর থেকে চোখ বুলিয়েও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কোনো কোনো গাছ শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েছে বহু আগে। গাছের গা থেকে বেরিয়ে আসা অজস্র লতা ও ঝুরি পাহাড়ি জঙ্গলটিকে করে তুলেছে আরও দুর্ভেদ্য। এটা সীতা পাহাড়। এলাকার কোনো বয়স্ক ব্যক্তির দেখা পেয়ে গেলে তিনি হয়তো আপনাকে বলবেন, একসময় আরও গভীর ছিল এই অরণ্য, আদিম সব গাছপালায় ঠাসা ছিল। কালের চক্রে, মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এ দেশের আরও অনেক বনের মতোই জৌলুশ হারিয়েছে জঙ্গলটা।
রাম পাহাড় বিটে একটা সার্চলাইট আছে। রাতে পাহারাদার বনকর্মী এটার আলো ফেলে নদীর জলে, চোরাই কাঠ বোঝাই করে নৌকা যাচ্ছে নাকি এর খোঁজে। আমিও ঠায় বসে ছিলাম এখানে কয়েক রাত, যদি এর আলোয় পানি খেতে আসা কোনো বন্যপ্রাণী ধরা দেয়! তো শেষমেশ ধৈর্যের ফল মিলল। সার্চলাইটের আলোয় তৃতীয় রাতে আবিষ্কার করলাম নদীর ওপারে, সীতা পাহাড়ের দিকটায় জ্বলজ্বলে এক জোড়া চোখ। আলোটা স্থির করতেই অন্ধকারের রাজ্যে আবছাভাবে দেখা গেল শরীরটা। পরমুহূর্তেই ওটা হাওয়া। তবে ততক্ষণে পরিচয় জানা হয়ে গেছে, মেছো বিড়াল। হয় পানি খেতে, নতুবা মাছ শিকারে বেরিয়েছিল।
ওপাশের রাম পাহাড়ের জঙ্গলেও ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সেখানে হয়তো কোনো কাঠুরে কিংবা পাহাড়ের পাড়ায় বাস করা মারমা তরুণ আপনাকে বলবে গাছে গাছে চলে বেড়ানো লতা বাঘের গল্প। গাছ থেকেই যারা অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটির শিকারের ওপর। সত্যি, এখনো এই লতা বাঘ আছে কাপ্তাইয়ের বন-পাহাড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ও তাঁর সঙ্গীরা ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী করেছেন একে। তবে লতা বাঘ স্থানীয় নাম, বইয়ের নাম ক্লাউড্যাড ল্যাপার্ড বা মেঘলা চিতা। কেউ কেউ আবার ডাকেন গেছো বাঘ নামে। আমাদের অবশ্য একদল কাঠুরে বড় বাঘ দেখার গল্পও বলেছিলেন। যদিও নিজেকে বড় মাপের বাঘপ্রেমী দাবি করা এই আমারও এ তথ্য বিশ্বাস করতে মন সায় দেয়নি।
নদী ধরে চলে যেতে পারেন কাপ্তাই মুখ খালের জঙ্গলেই। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে এই অরণ্য এক কথায় অসাধারণ। তারপর আবার এখানে হাতির দেখা মেলার সম্ভাবনা আট আনা। কর্ণফুলী নদীতে এখানে এসে পড়েছে কাপ্তাই মুখ খাল, তাই অরণ্যটিরও এই নাম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি যখন গিয়েছিলাম, শুনেছিলাম দুঃখী এক চিতা বাঘের গল্, সঙ্গীর মৃত্যুতে একাকী ঘুরে বেড়াত যে কাপ্তাই মুখের বনে। তবে পরে একসময় আর জঙ্গলে দেখা যায়নি তাকেও। হয়তো অন্য কোনো জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেক খুঁজেও সেবার চিতা বাঘের তাজা কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।
কাপ্তাইয়ের জঙ্গলে উল্লুক, মায়া হরিণ, বুনো কুকুর, চিতা বিড়াল, ভালুক, বুনো শূকরসহ আছে নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সেরো আর বিশাল আকারের হরিণ সাম্বারের গল্পও বলেন কেউ কেউ।
গহিন অরণ্য লাঠিটিলা
সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মৌলভীবাজারের জুড়ির লাঠিটিলার জঙ্গল। কুলাউড়া কিংবা জুড়ি থেকে রওনা দিয়ে বনটিতে পৌঁছাবার আগেই চা-বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গায় চলে আসবেন। রাস্তা চলে গেছে সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন। সবুজ টিলায় চা-বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা—সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে।
আরও কয়েকটা সুন্দর চা-বাগান পেরিয়ে পৌঁছাবেন লাঠিটিলা বিট অফিসে। ওখান থেকে দিলখুশা চা-বাগানকে পাশ কাটিয়ে বাজারে। পথে এক ছড়ার পাড়ে দূর থেকে তিনটি আজব প্রাণীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম প্রথমবার যখন লাঠিটিলায় গিয়েছিলাম। বেজির সঙ্গে মিল আছে, তবে গায়ে-গতরে বড়। চোখের পাশ থেকে সাদা দাগ নেমে গেছে নিচে। পরে অবশ্য নিশ্চিত হই ওগুলো বেজিরই একটি জাত, কাঁকড়াভূক বেজি। এ ধরনের বেজির কেবল গভীর বনাঞ্চলেই দেখা মেলে।
মূল জঙ্গলে ঢোকার পর ছড়া ধরেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় হলে জোকের আক্রমণ থেকে সাবধান। আবার ডাঙার পথ ধরেও চলতে পারবেন। গাছের ডাল দিয়ে বানানো এক সেতু ধরে ছড়া পেরিয়ে আমরা যেমন ঢুকেছিলাম গর্জনসহ বড় গাছের বনে। হঠাৎ বাঁয়ে একটু দূরে গাছের ডালে নড়াচড়া! কাছে যেতেই আবিষ্কার করি চশমা হনুমান।

চলতে চলতে একসময় গভীর বনানীতে চলে আসবেন। পথ হয়ে উঠবে আরও সরু, দুর্গম। এই উঠছে, তো পরমুহূর্তেই নামছে। ডানে অরণ্য, বায়ে খাদ। জংলি গাছের জঙ্গল পথের ওপর এসে জড়িয়ে ধরতে চাইবে পা। সঙ্গে যে গাইড থাকবে, তার থেকে জানবেন মায়া হরিণ, বাঘডাস, শজারু, শিয়ালরা বনে আছে বিস্তর।
ঢালু একটা সরু পথ ধরে একসময় ঢুকবেন ন্যাচারাল ফরেস্টে, মানে আমরা এভাবে ঢুকেছিলাম। প্রাকৃতিক গাছগাছালি বেশি থাকায় জায়গাটি এই নামে পরিচিত। চারদিকে পাহাড়, গহিন আদিম অরণ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গর্জন। খাঁড়া পাথুরে টিলা বেয়ে নেমে আসছে স্বচ্ছ জলের ঝরনা। সেখানে নিচে পানি জমে তৈরি হয়েছে ছোট্ট এক জলাধার। তিন দিকে পাহাড়। সবুজ পাহাড়ের শরীরে চাপালিশ, বনাকসহ হরেক চেনা-অচেনা গাছের জঙ্গল, বিভিন্ন গাছ থেকে নেমে আসা লতা, অদ্ভুত আলো-আঁধারি, গাছপালা ভিজিয়ে বয়ে চলা ঝরনা, ছোট্ট লেক—সব মিলিয়ে প্রকৃতির আশ্চর্য এক রূপ দেখে চমকে উঠবেন। আমি যেমন চমকেছিলাম।
এগোতে চাইলে যে পাথুরে পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামছে, সেটায় উঠতে হবে। কোনোমতে উঠতে পারলেও ওপরের জঙ্গল বড় দুর্ভেদ্য। কিন্তু ওখানকার মায়াবী রূপ যেন আপনাকে জাদু করে ফেলবে! ঘন গাছপালার ফাঁক গলে নিচে এসে পড়া ফালি ফালি সূর্যরশ্মি বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
এরপর পাহাড়ে ওঠার সেই অর্থে রাস্তা নেই। টহলের সময় বনকর্মীদের কদাচিৎ ব্যবহার করার ফলে খাঁড়া, সরু একটা পথের মতো তৈরি হয়েছে। হাত-পা ব্যবহার করে দুর্গম সেই পথে ওপরে উঠে পড়তে পারবেন। দুপাশে আশ্চর্য গভীর বনানী, মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ঝরনা। ওই হিমশীতল পানিপথেই এগোতে গিয়ে হয়তো পেয়ে যাবেন ছোট্ট এক টুকরো নরম মাটিতে মায়া হরিণের পায়ের ছাপ। লাঠিটিলার জঙ্গলে ঘুরতে পারতেন ডাঙা কিংবা ছড়ার বিভিন্ন পথেই। যত ভেতরে ঢুকবেন বন তত দুর্গম।
লাঠিটিলায় কখনো কখনো খবর মেলে চিতা বাঘ আর বুনো কুকুরদের। এমনিতে জঙ্গলটির আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার বা ৫ হাজার একরের কিছু বেশি। তবে লাঠিটিলার জঙ্গল ধরে এমনকি চলে যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পেছনের জঙ্গলে। তেমনি লাঠিটিলার ওপাশে ভারতের জঙ্গলও পাবেন। বলা চলে, মিলিয়ে-ঝিলিয়ে বড় এলাকায় থাকে বুনো প্রাণীরা।এমনকি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির ছোট একটি পালও। এখন সিলেট বিভাগের কেবল লাঠিটিলায় দেখা মেলে বুনো হাতির। এমনকি ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে একাধিকবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার খবরও মিলেছিল লাঠিটিলা থেকে।
লাঠিটিলায় হতে চলেছে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক। এটা নিয়ে মনে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধছে, মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলে অরণ্য আর বুনো প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
দুধপুকুরিয়া একটি বনের নাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান ভাইয়ের মুখে দুধপুকুরিয়া নামটা শোনার পরেই গেঁথে গিয়েছিল মনে। এমন সুন্দর নামের যে কোনো বন আছে বাংলাদেশে, এটাই জানতাম না। অনেকটা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বিভিন্ন জায়গা যেমন কুঞ্জপুকুর, দুধসয়ার দ্বীপ—এসবের কথা মাথায় চলে আসছিল। ভেবেছিলাম সময়-সুযোগ পেলে যেতে হবে। হাতিও নাকি বেশ সহজে দেখা মেলে ওখানে। রাঙামাটি-বান্দরবান রাস্তায় বাঙ্গালহালিয়া পেরিয়ে আরও অনেকটা গিয়ে জঙ্গলটা, তবে দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পড়েছে চট্টগ্রামের সীমানায়। কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে এক সকালে হাজির হয়ে যাই দুধপুকুরিয়ায়।
চারপাশে গাছপালার মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাকা সড়ক। ছড়ার ওপর সুন্দর এক সেতু পাবেন। জায়গাটিকে অনেকে চেনে ডাকবাংলার মোড় নামে। এখানে বন বিভাগের পুরোনো, অব্যবহৃত একটা বাংলো দেখেছিলাম। আমার ধারণা, সেখান থেকেই এই নাম। স্থানীয় দুই কিশোরকে সঙ্গী করে আমি ঢুকেছিলাম অরণ্যে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন অরণ্যটি থেকে।
দুধপুকুরিয়ার অরণ্যে ঢুকতেই গাছপালার ছায়ারা আপনাকে ঘিরে ফেলল। কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব অনুভব করবেন। শিমুল গাছ দেখবেন, গর্জন দেখবেন। হঠাৎ বালুর ওপরে কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ পাবেন, ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা মায়া হরিণ কিংবা বুনো শূকরের পায়ের ছাপ।
স্থানীয় কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে জঙ্গলপথে দেখা হয়ে গেলে হয়তো স্মৃতি হাতড়ে বলবেন বড় বাঘের গল্প। গরু ঘাড়ে কামড়ে ধরে নিয়ে যেত পাহাড়ের আস্তানায়।
বড় গাছের পাশাপাশি ছোট গাছ, ঝোপ-জঙ্গল নজর কাড়বে। অর্কিডও দেখবেন। তবে চলাফেরা করতে হবে সাবধানে। দুধপুকুরিয়ায় এখন দাপুটে জন্তুর মধ্যে কেবল টিকে আছে হাতিই। আশপাশের বেশ কয়েকটি জঙ্গল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির পাল। তাই দেখা পাবেন এমন গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের আয়তন ৪৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। বসন্তবাউরি, টিয়া, কাঠঠোকরা, লম্বা লেজের ভিমরাজের দেখা পেতে পারেন। কাঠবিড়ালি, বানর আছে বিস্তর। ছড়ার শীতল জলে নেমে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলভ্রমণ শেষ করে মূল রাস্তায় বের হয়ে আসতে পারবেন।

সবার পরিচিত লাউয়াছড়া
ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছি আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানাবাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরও অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনন। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাত হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল। যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল, মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তারপর আবার যেমন হঠাৎ থেমেছিল, তেমনি আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের। ঢাকায় ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া।
লাউয়াছড়া আমার খুব পছন্দের একটি বন। আমার মনে হয় সুন্দরবনের পর এ দেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি চেনে এই বনকেই। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা, সেই তুলনায় অরণ্যটি খুব একটা বড় নয়। এমনিতে মাত্র ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যানটি। তবে অরণ্য এলাকা আরও বেশি। বনটির জন্মও প্রাকৃতিকভাবে নয়। যদ্দুর জানি, ব্রিটিশ সরকার উড়োজাহাজ থেকে বীজ ছিটিয়ে এই বন পত্তনের সূচনা করে। কালক্রমে সেটাই পরিণত হয় গহিন অরণ্যে। একসময় কিন্তু দেখার মতো এক বন ছিল লাউয়াছড়া। বিশাল সব মহিরুহের কারণে দিনের বেলাতেই নেমে আসত আঁধার। তখন বাংলাদেশের আরও অনেক বনের মতো লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত।

প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ লাউয়াছড়ায় বাঘ দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। রাতে জিপে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন তিনি, সেটা বিংশ শতকের ষাটের দশকের ঘটনা। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই পড়ে জেনেছি, ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি জেনারেল। মাচায় বসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঘটি মারেন ভদ্রলোক। নওয়াজেশ আহমদের দেখা ওই বাঘটাই মারা পড়েছিল কি না, বলতে পারব না। এখন বাঘ দূরে থাক, এমনকি চা-বাগান এবং ছোট অরণ্যগুলোতেও একসময় ঘুরে বেড়ানো চিতা বাঘের টিকিটাও দেখবেন না এই বনে। তবে খুব ভোরে বের হলে জঙ্গলের ভেতরকার ঘেসো জমিতে মায়া হরিণ দেখতে পাবেন। বুনো শূকর আর অজগরও আছে। আছে উল্লুক, বাঁশভল্লুক, লজ্জাবতী বানরসহ হরেক জাতের বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া কেটে চলে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এ কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে বেশ কিছু বুনো প্রাণ ঝরে যায় প্রতি বছর। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার রাখার অনুরোধ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার পর, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বন্যপ্রাণী চলাচলের ঝুঁকি কমবে।

বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১৫ ঘণ্টা আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ।
২১ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়িত ৮৯১টি প্রকল্পে অনিয়মের আনুমানিক পরিমাণ বলা হয়েছে ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা)।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এ সময় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও ছিলেন।
প্রতিবেদনে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত ১২টি তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রণীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অর্থের চাহিদার বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব প্রকট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবচেয়ে বিপদাপন্ন অঞ্চলে বরাদ্দের অগ্রাধিকার কম এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবে জলবায়ু অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, জলবায়ু তহবিলের অর্থে সাফারি পার্ক ও ইকোপার্ক নির্মাণের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে নিম্নমানের কাজ, অর্থ আত্মসাৎ ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যর্থতার প্রকটতাও গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১ দশমিক ৬ শতাংশ) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫১৫ দিনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশের বেশি সময় লেগেছে। কোনো কোনো প্রকল্পে চার বছরের পরিবর্তে ১৪ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে।
টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু অর্থায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।’
গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো—
১. বিসিসিএসএপি ২০০৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ হালনাগাদ করে যুগোপযোগী করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে ট্রাস্ট ফান্ড এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতার জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করতে হবে। আইনে ট্রাস্টের জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ক ধারা সংযোজন করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিধান যুক্ত করতে হবে। ট্রাস্ট থেকে কমপক্ষে একজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল অর্জনে সক্ষম বা ট্রান্সফর্মেটিভ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের আওতায় অর্থ বরাদ্দের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত আইন, যেগুলো ট্রাস্টের জন্য প্রযোজ্য, তা সুনির্দিষ্ট করে ট্রাস্ট আইনে উল্লেখ করতে হবে। আর্থিক ও কারিগরি ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি ও শর্তাবলি নির্ধারণ, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও অর্থ ছাড়, মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তদারকি, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং নথি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দুর্নীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ, অংশীজনের অংশগ্রহণ, তহবিল ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট তথ্য উন্মুক্তকরণ, পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যায়ন এবং নিয়মিত নিরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয় নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. রাজস্ব বাজেটের বাইরে বিসিসিটিকে উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম, যেমন—আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেডিং, ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমসহ বেসরকারি অর্থায়ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. থিমভিত্তিক, বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকির ভৌগোলিক বিন্যাসভিত্তিক এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে বিসিসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত পথ নকশা প্রস্তুত করতে হবে। পথ নকশায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. বিসিসিটির আওতায় স্বল্পমেয়াদি এবং টাকার অঙ্ক ক্ষুদ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিহার করতে হবে। প্রান্তিক, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা, উপজেলা এবং স্থান যেখানে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় এমন স্থানে বিসিসিটি থেকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৬. বাংলাদেশে বাস্তবায়িত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের প্রকল্প নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা করার জন্য একটি পৃথক স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বাস্তবায়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে জলবায়ু তহবিল কার্যকরভাবে পৌঁছানো নিশ্চিতে বিপদাপন্নতার সূচক এবং ভৌগোলিক বা স্থানিক ঝুঁকিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৮. জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয় সমন্বয়ের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনাসহ অংশীজন সমন্বয় ও আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. তহবিলসমূহের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, অবকাঠামো ও সৌর সড়কবাতি-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়িত ৮৯১টি প্রকল্পে অনিয়মের আনুমানিক পরিমাণ বলা হয়েছে ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা)।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এ সময় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও ছিলেন।
প্রতিবেদনে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত ১২টি তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রণীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অর্থের চাহিদার বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব প্রকট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবচেয়ে বিপদাপন্ন অঞ্চলে বরাদ্দের অগ্রাধিকার কম এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবে জলবায়ু অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, জলবায়ু তহবিলের অর্থে সাফারি পার্ক ও ইকোপার্ক নির্মাণের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে নিম্নমানের কাজ, অর্থ আত্মসাৎ ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যর্থতার প্রকটতাও গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১ দশমিক ৬ শতাংশ) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫১৫ দিনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশের বেশি সময় লেগেছে। কোনো কোনো প্রকল্পে চার বছরের পরিবর্তে ১৪ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে।
টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু অর্থায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।’
গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো—
১. বিসিসিএসএপি ২০০৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ হালনাগাদ করে যুগোপযোগী করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে ট্রাস্ট ফান্ড এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতার জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করতে হবে। আইনে ট্রাস্টের জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ক ধারা সংযোজন করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিধান যুক্ত করতে হবে। ট্রাস্ট থেকে কমপক্ষে একজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল অর্জনে সক্ষম বা ট্রান্সফর্মেটিভ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের আওতায় অর্থ বরাদ্দের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত আইন, যেগুলো ট্রাস্টের জন্য প্রযোজ্য, তা সুনির্দিষ্ট করে ট্রাস্ট আইনে উল্লেখ করতে হবে। আর্থিক ও কারিগরি ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি ও শর্তাবলি নির্ধারণ, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও অর্থ ছাড়, মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তদারকি, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং নথি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দুর্নীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ, অংশীজনের অংশগ্রহণ, তহবিল ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট তথ্য উন্মুক্তকরণ, পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যায়ন এবং নিয়মিত নিরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয় নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. রাজস্ব বাজেটের বাইরে বিসিসিটিকে উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম, যেমন—আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেডিং, ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমসহ বেসরকারি অর্থায়ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. থিমভিত্তিক, বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকির ভৌগোলিক বিন্যাসভিত্তিক এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে বিসিসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত পথ নকশা প্রস্তুত করতে হবে। পথ নকশায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. বিসিসিটির আওতায় স্বল্পমেয়াদি এবং টাকার অঙ্ক ক্ষুদ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিহার করতে হবে। প্রান্তিক, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা, উপজেলা এবং স্থান যেখানে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় এমন স্থানে বিসিসিটি থেকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৬. বাংলাদেশে বাস্তবায়িত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের প্রকল্প নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা করার জন্য একটি পৃথক স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বাস্তবায়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে জলবায়ু তহবিল কার্যকরভাবে পৌঁছানো নিশ্চিতে বিপদাপন্নতার সূচক এবং ভৌগোলিক বা স্থানিক ঝুঁকিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৮. জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয় সমন্বয়ের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনাসহ অংশীজন সমন্বয় ও আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. তহবিলসমূহের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, অবকাঠামো ও সৌর সড়কবাতি-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ।
২১ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে এই লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে এই লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১৫ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ।
২১ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে ঢাকার বাতাসেও দূষণের মাত্রা গতকালের তুলনায় বেড়েছে।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১০৫, যা গতকাল ছিল ৮০। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ ১০ম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ২২তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের লাহোর শহরটির বায়ুমান আজ ৩৫৯, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের কলকাতা ও দিল্লি, উগান্ডার কাম্পালা ও পাকিস্তানের করাচি। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৪৮, ২৩১, ১৫৯ ও ১৫৬।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে ঢাকার বাতাসেও দূষণের মাত্রা গতকালের তুলনায় বেড়েছে।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১০৫, যা গতকাল ছিল ৮০। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ ১০ম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ২২তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের লাহোর শহরটির বায়ুমান আজ ৩৫৯, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের কলকাতা ও দিল্লি, উগান্ডার কাম্পালা ও পাকিস্তানের করাচি। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৪৮, ২৩১, ১৫৯ ও ১৫৬।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১৫ ঘণ্টা আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে আবারও সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ। লঘুচাপটি বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে। এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বরাবর মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৪ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৮ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৭ মিনিটে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
তবে শীতের দেখা মিলতে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ডিসেম্বর মাসের আগে সারা দেশে শীত না পড়ার সম্ভাবনা কম। এর আগে অবশ্য নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি উত্তরাঞ্চলে হালকা শীত পড়তে পারে।

বঙ্গোপসাগরে আবারও সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ। লঘুচাপটি বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে। এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বরাবর মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত আংশিক মেঘলা থাকবে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৪ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৮ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৭ মিনিটে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
তবে শীতের দেখা মিলতে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ডিসেম্বর মাসের আগে সারা দেশে শীত না পড়ার সম্ভাবনা কম। এর আগে অবশ্য নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি উত্তরাঞ্চলে হালকা শীত পড়তে পারে।

আমার জঙ্গল ভ্রমণের শুরু সিলেট বিভাগের অরণ্যগুলো দিয়ে। তারপর পরিচয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোর সঙ্গে। বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ, চিতা বাঘের খোঁজে কাপ্তাই মুখ খালসহ কত জঙ্গলে-পাহাড় যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পুরোনো দিনের গহিন অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর গল্প শুন
২১ মার্চ ২০২৩
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১৫ ঘণ্টা আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত। বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার শীর্ষ দশে প্রায় দেখা যাচ্ছে শহরগুলোকে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোরের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ।
২১ ঘণ্টা আগে