Ajker Patrika

লেজ হারানোর গল্প

লেজ হারানোর গল্প

‘বন্ধুরা, আমাদের পেছনে থাকা এই লেজ কোনো উপকারেই আসছে না। বরং এর কারণে ফাঁদে আটকে পড়তে হয়। হারাতে হয় সাধের জীবনটা। চলো সবাই লেজ কেটে ফেলি।’ লেজ হারানো শিয়ালের এমন আহ্বান সবাই মেনে নিলেও বিজ্ঞ শিয়াল তা হতে দেয়নি। দেহের সৌন্দর্যের অংশ উল্লেখ করে লেজহীন শিয়ালের দুঃখ আরও বাড়িয়ে দেয়।

লেজবিষয়ক শিয়ালের সভা নিয়ে ঈশপের গল্পটি প্রায় সবার জানা। মানুষের দেহেও যদি লেজ থাকত ব্যাপারটা কেমন হতো! ছেলেবেলা থেকেই এমন ভেবে আসছেন নিউইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গবেষক বো জিয়া। চারপাশে যত প্রাণী দেখছেন প্রায় সবার লেজ রয়েছে। এ নিয়ে প্রায়ই বড়দের প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করতেন তিনি। ব্যাখ্যা করতে বেশ বেগ পেতেন তাঁরা। তাই বড় হয়ে নিজেই লেজ না থাকার নেপথ্যের কারণ বের করলেন।

শুরু করার আগে মেরুদণ্ডের দিকে একটু হাত বুলিয়ে আসা যাক। একদম নিচের দিকে পাওয়া যাবে শক্ত হাড়। গবেষকেরা বলছেন, এখন এর কাজ তেমন একটা নেই বললেই চলে। সড়ক দুর্ঘটনায় ঠিক এ জায়গাটাতেই ব্যথা পেয়েছিলেন লেজ বিষয়ে আগ্রহী গবেষক বো জিয়া। এ ঘটনার পর সহকর্মী ইতাই ইয়ানাইকে নিয়ে নেমে পড়েন গবেষণাকাজে। মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন এপ জাতীয় প্রাণীকে (যারা এপোজিবল গ্রিপ বা মুষ্টি করতে পারে তাদের ‘এপ’ বলা হয়) নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেমন গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও ওরাংউটান।  

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেকার একটি জীবাশ্ম থেকে স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনের কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। মানুষের মতো দেখতে প্রাণীটির লেজের হাড় সক্রিয় ছিল। ধারণা করা যাচ্ছে, এপ প্রাণীদের দেহেও এমনভাবেই লেজের হাড় সক্রিয় ছিল।

কিন্তু আজ থেকে আড়াই কোটি বছর আগে লেজের সেই হাড় তার কার্যকারিতা হারায়। ঠিক কোন জিনটির কারণে এমন হলো, তা বের করতে গিয়ে গবেষকেরা দেখতে পান, একটি বিশেষ জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে লেজটি হারিয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ মেরুদণ্ড থেকে সিগন্যাল না যাওয়া। সহকর্মী ইয়ানাই মজা করে বো জিয়াকে বলেন, ‘সদ্য জন্ম নেওয়া আপনার সন্তানকে যখন লেজসহ দেখবেন তখন কেমন লাগবে? আড়াই কোটি বছর আগে ঠিক এমনটাই দেখে এ স্তন্যপায়ীরা।’

লেজ হারানোর এ প্রক্রিয়া রাতারাতি ঘটেছে বলেও জানান তিনি। লন্ডনের বিজ্ঞানভিত্তিক সাপ্তাহিক নিউজ সায়েন্টিস্ট বলছে, লেজসংক্রান্ত ৩১টি জিন নিয়ে কাজ করেছে দলটি। তখনই এমআরএনএর মাধ্যমে কোড এবং প্রোটিন না যাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। মেরুদণ্ডের নিচের দিকের যে জিনটি এর জন্য দায়ী, সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিবিএক্সটি’। বিবর্তনের সময় মরে যাওয়া বা বিলীন হওয়া ডিএনএর জিনগুলোর মধ্যে এটি একটি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, লেজ নিয়ে পরীক্ষায় ইঁদুরকেও ছাড়েনি এ গবেষক দল। প্রক্রিয়াটি ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করার পর জন্ম হয়েছে লেজহীন ইঁদুরের বাচ্চা! তবে লেজ থাকা বানরের দেহে এর পরীক্ষা চালায়নি। এপ জাতীয় প্রাণীর কাছাকাছি প্রজাতি বানর। অন্যান্য এপের লেজ না থাকলেও বানর দিব্যি লেজ নাড়িয়ে বেড়ায়। নাড়িয়ে বেড়ায় না, যেন লেজহীন শিয়ালের মতো করে এপদের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়! 

বিষয়:

বিচিত্র
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি যে মাপের লোক, আমারে সে মাপের অস্ত্র দিয়া ফাঁসাইতি’

দাম্পত্য কলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

অবশেষে ইকবালের পরিবারমুক্ত হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক

‘হেল্প, হেল্প’ বলে চিৎকার—শিক্ষক এগিয়ে যেতেই গলায় ছুরি চালাল কিশোরী

‘আপত্তিকর’ ভিডিও: বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেন গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত