Ajker Patrika

জলবায়ু পরিবর্তন দুর্বিষহ করে তুলছে জনজীবন, সিপিআরডির গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তন দুর্বিষহ করে তুলছে জনজীবন, সিপিআরডির গবেষণা

দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছায় না বলে দাবি করেছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেকারত্ব-দারিদ্র্য বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, সামাজিক অবক্ষয়, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব আরও বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সিপিআরডি আয়োজিত এই আয়োজনে পরিবেশবিদরা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এই পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ও জীবিকার পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশে ৩টি অঞ্চল মোংলা, রাজশাহী ও শরীয়তপুরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আকস্মিক দুর্যোগ, লবণাক্ততার কারণে এসব অঞ্চলের ২০০টি পরিবার ৯ কোটি ২৪ লক্ষ ৯৮ হাজার প্রত্যক্ষ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া তারা স্বাস্থ্য সংকট, বাস্তুচ্যুতি, সামাজিক ও যৌন হয়রানি, পানিসংকট, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, মানসিক বিপর্যয়, ক্যানসারসহ নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ২০ বছরে মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু পাখি হারিয়েছেন। যার ক্ষতির পরিমাণ ৬৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা। মানুষের ঘর বাড়ি, ফসল হানির পাশাপাশি কর্মঘণ্টা কমে গেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ২০০ জন মানুষের মধ্যে ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ বলেন তারা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভোগেন, ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ মানুষ তাদের পেশ বদলিয়েছেন, ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ কর্ম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বলেন, তারা এবং তাদের পরিবারে রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্যোগে অধিক মাত্রায় বেশি বঞ্চনার শিকার হন নারীরা। ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ গর্ভবতী এবং বয়স্ক নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, নারীদের বিভিন্ন স্ত্রীরোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, নারীদের চর্মরোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, নারীদের প্রসবজনিত জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের অধিকার, সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার এবং কর্ম প্রাপ্তির অধিকারের দিক থেকে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং নৃ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার বিনষ্ট হওয়া এবং ভোগান্তি সব থেকে বেশি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের গবেষণা ফলাফলগুলো বাংলাদেশে সফররত ইউএনএইচসিআর-এর জলবায়ু ও মানবাধিকার দূত ড. ইয়ান ফ্রাইকে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, প্রকৃতি নির্ভর ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এই অধিকার যাদের লঙ্ঘন হচ্ছে তাদের কথাগুলো নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ পানি দুষ্প্রাপ্যের দেশ। শুকনো মৌসুমে মাত্র ২০ ভাগ পানি আসে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। পিতৃভূমি রক্ষা করা মানুষের মানবাধিকার। কিন্তু এটি রক্ষা করা হচ্ছে না।’

জলবায়ু পরিবর্তনে যাদের অবদান বেশি তাদের সমস্যা সমাধানে বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শরীফ জামিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চাইলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাফিক বিভাগকে সাউন্ড লেভেল মিটার তুলে দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: পিআইডি
ট্রাফিক বিভাগকে সাউন্ড লেভেল মিটার তুলে দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: পিআইডি

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন জারি করা শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এক দিকনির্দেশনামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তর অডিটরিয়ামে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এই কর্মশালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৬০ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট, বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচজন কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা অংশ নেন।

কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান (এনডিসি)।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ট্রাফিক সার্জেন্টদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে ভলান্টিয়ারদের সম্পৃক্ত করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পেইন শুরু করব। কয়েকটি নীরব এলাকাকে এবার আমরা শব্দ দূষণমুক্ত করতে চাই।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে চলেন আমরা হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান এবং সচেতনতা একসাথে পরিচালনা করি এবং এটা চলমান রাখতে হবে। কারণ, আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে—সেটা এক দিনে হবে না, কিন্তু চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হবে।’ এই বিধিমালা বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কর্মশালায় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু। তিনি জানান, হালনাগাদ বিধিমালায় প্রথমবারের মতো পুলিশকে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত আছেন ৪ হাজার ১০৫ জন। এই জনবল দিয়ে দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহরকে ট্রাফিকিং করা খুবই চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু তারপরও ডিএমপির ট্রাফিক সদস্যগণ নিরলসভাবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।’

আনিছুর রহমান আরও বলেন, এই বিধিমালায় যেহেতু ট্রাফিক সার্জেন্টদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোতে ৯৮০ জন ট্রাফিক পুলিশ রয়েছেন—তাঁদের দিয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘ট্রাফিক সার্জেন্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। এই যে উনারা রাত-দিন, ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁর কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগটুকু যেহেতু পেয়েছি, কাজেই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

নিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ‘পরিবেশর সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিকে আমাদের সবার চর্চার মধ্যে আনতে হবে। একটু একটু করে করতে থাকলে একদিন নিশ্চয়ই একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।’

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এনডিসি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিধিমালা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানমও বক্তব্য দেন।

কর্মশালায় বিগত থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য উপাচার্যকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রকল্পের পক্ষ থেকে ডিএমপিকে ৫০টি সাউন্ড লেভেল মিটার দেওয়া হয়, যার একটি ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের হাতে তুলে দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লির বাতাসে দুর্যোগপূর্ণ দূষণ, ঢাকার বায়ুমান সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দিল্লির বাতাসের অবস্থা আবারও দুর্যোগপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজ রোববার দূষিত শহর তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। আইকিউএয়ারের সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৫৪। যা নির্দেশ করে, ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি— গোড়ান, পেয়ারাবাগ রেল লাইন, বেচারাম দেউরি, কল্যাণপুর, দক্ষিণ পল্লবী, শান্তা ফোরাম, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকা দিল্লির একিউআই স্কোর ৫০৭। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিশরের কায়রো (১৯১), পাকিস্তানের লাহোর (১৯১), ভারতের কলকাতা (১৮১) ও মুম্বাই (১৬৫)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় তাপমাত্রা ১৬.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত