Ajker Patrika

চিতা বাঘ আর চিতা এক নয়

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৯: ০৫
চিতা বাঘ আর চিতা এক নয়

অনেকেই চিতা আর চিতা বাঘ নিয়ে ধন্দে পড়ে যান। দুটি যে আলাদা প্রাণী এটিও জানেন না কেউ কেউ। এমনকি কোনো কোনো বইয়ে ডাঙার দ্রুততম জন্তু হিসেবে চিতা বাঘের ছবি ছেপে দেওয়া হয় অবলীলায়।

দুটোরই লম্বা লেজ, অনেকটা একই রকম গায়ের রং ও ফোঁটা বিভ্রান্ত করে মানুষকে। তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই এদের অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান হয়ে উঠবে আপনার সামনে। তেমনি আচরণসহ নানা বিষয়ে আছে পার্থক্য।

নানান ধরনের পার্থক্য
চিতার ইংরেজি নাম চিতা (cheetah) ও অপরদিকে চিতা বাঘের ইংরেজি নাম লেপার্ড। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে হান্টিং লেপার্ড নামেও বেশ পরিচিতি পায়। এর কারণ, একসময় ভারতীয় অভিজাতরা চিতা পোষ মানিয়ে তা দিয়ে অ্যান্টিলোপ শিকার করতেন। ওই চিতারা মায়ের থেকে আগেই অ্যান্টিলোপ শিকারের বিদ্যা শিখে আসত। স্থলভাগের দ্রুততম প্রাণী কিন্তু চিতা বাঘ নয়, চিতা।

দুটি প্রাণীর মুখমণ্ডলেও পার্থক্য আছে। চিতার নাকের দুই ধার বরাবর চোখ থেকে চোয়াল পর্যন্ত গাঢ় কালো দাগ আছে। চিতা বাঘের এমন কোনো দাগ নেই। চিতার মুখ গোলাকার ও দাঁত ছোট। চিতাবাঘের মুখ একটু লম্বাটে, চোয়াল শক্তিশালী।

চিতার উচ্চতা চিতা বাঘের চেয়ে বেশি। তবে চিতা বাঘের স্বাস্থ্য চিতার তুলনায় ভালো অর্থাৎ ভারী গড়ন এদের। অপর দিকে দ্রুতগতি সম্পন্ন প্রাণী হওয়ায় চিতার শরীর যে একটু পলকা ধরনের এটা বুঝতেই পারছেন।

পাঁচটি বিগ ক্যাট বা বড় বিড়ালের একটি চিতা বাঘ। তবে চিতাকে সাধারণত বিগ ক্যাটের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ এরা প্যান্থারা গণের অন্তর্ভুক্ত নয়। চিতার গর্জন করার অক্ষমতাও একে বড় বিড়ালদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়।

চিতা ও চিতা বাঘ দুটি প্রাণীরই হলুদ শরীরের কালো ফোঁটা থাকে। তবে এই ফোঁটা বা দাগ একেবারেই আলাদা। চিতা বাঘ আর চিতা দুটোর চামড়ার বেলায় হলদে-বাদামি জমিনে কালো ফোঁটা আছে। তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন চিতাবাঘের কালো ফোঁটাগুলো মাঝখানে হলুদ রেখে অনেকটা বলয়ের রূপ নিলেও চিতার বেলায় মাঝখানের হলুদ চিহ্ন ছাড়া কেবলই কালো ফোঁটা।

দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের এক চিড়িয়াখানায় চিতা।চিতা বাঘের নখ বিড়ালের মতো। তবে এই ধারালো নখ থাবার আড়ালে ঢুকিয়ে থাকে। শিকার ধরার সময় নখ বার করে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু, চিতার নখ অনেকটা কুকুরের মতো। তা বাইরের দিকে বের করাই থাকে। চিতার গাছে চড়তে না পারার অন্যতম কারণ হলো নখের এই গড়ন। এই নখের কারণে পায়ের ছাপ থেকে দুটি প্রাণীকে আলাদা করা যায়।

চিতা সাধারণত দিনের আলোতেই শিকার করে। রাতে কম দেখতে পায়। তবে চিতাবাঘ রাতেই শিকার ধরতে পছন্দ করে। এদের চোখের কোষ ওই সময়ই বেশি সংবেদনশীল। অবশ্য পরিস্থিতির অদল-বদল মানে কখনো চিতাকে রাতে ও চিতা বাঘকে দিনেও শিকার করতে দেখা যায়। চোখের কথা বললে, চিতার চোখ হলুদাভ বাদামি এবং চিতা বাঘের চোখ সবজে নীল।

এদিকে চিতাকে সাধারণত খোলামেলা জায়গা অর্থাৎ সাভানা এলাকায় বিচরণ করতে দেখা যায়, অপর দিকে চিতা বাঘের সাধারণ একটু গভীর জঙ্গল পছন্দ।

চিতার নাকের গর্ত চিতা বাঘের চেয়ে বড়। এটি প্রচণ্ড গতিতে দৌড়ানোর সময় তাদের শ্বাস নিতে সহায়তা করে। তাদের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড এবং অন্যান্য বিভিন্ন অঙ্গ একই কারণে তাদের আকারের তুলনায় বড়।

ঘণ্টায় ৭৫ মাইল বেগে দৌড়ানোর সময়, চিতার চওড়া, চ্যাপ্টা লেজ তাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাদের পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে বড়, যা তাদের গতি তিন সেকেন্ডের মধ্যে ঘণ্টায় ৬৪ মাইলে নিয়ে যায়। যদিও চিতা সর্বোচ্চ গতি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের শিকার ধরতে হবে।

চিতাদের তুলনায় অনেক কম গতি সম্পন্ন চিতা বাঘেরা। এদের পেছনের পায়ের তুলনায় সামনের পা বড় থাকে। যা তাদের সামনের ভারী অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ফলে শিকারের ওপর নিজের ভর চাপিয়ে দিতে পারে। তাদের গতির যে অভাব তারা তা পুষিয়ে দেয় গাছে আরোহণের দক্ষতা এবং নিজের চেয়ে ভারী শিকারকে গাছে টেনে তোলার সক্ষমতার মাধ্যমে।

শ্রীলঙ্কার এক জাতীয় উদ্যানের গাছে চিতা বাঘ।চিতা বাঘ তাদের শিকারকে কব্জায় আনতে, এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং পরাস্থ করার জন্য প্রচণ্ড শক্তি ব্যবহার করে। তাদের শিকারকে বলা যেতে পারে ‘অনুসরণ’ ও ঝাঁকুনি’ পদ্ধতি। অতর্কিতে আক্রমণ করে শিকার করে এরা। তারা চিতার চেয়ে বড় শিকার ধরতে সক্ষম।

চিতা বাঘ এমনকি একটি গাছের ডাল-পাতার আড়াল থেকেও শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। চিতা বাঘের মতো, চিতাও শুরুতে শিকারের কাছাকাছি যায়। তারপর দ্রুতগতিতে তাড়া করে। উভয়েই তাদের ঘাড়ে কামড় দিয়ে শিকারকে হত্যা করে। যদিও চিতা তাদের শিকারকে মারতে করতে কয়েক মিনিট সময় নিতে পারে।

চিতা এবং চিতাবাঘ উভয়ই সুযোগসন্ধানী শিকারি। চিতা ছোট থেকে মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করতে পছন্দ করে। প্রধানত ইমপালা এবং স্প্রিংবকের মতো ছোট আকারের অ্যান্টিলোপ শিকার করে। চিতা বাঘ বেশ বড় আকার প্রাণীও শিকার করতে সক্ষম। এর মধ্যে এমনকি নিজের দ্বিগুণ আকারের বড় জাতের হরিণও আছে। অবশ্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এমনকি মওকা মতো পেলে পাখি শিকার করতে দেখা যায় দুটি জন্তুকেই।

চিতা আছে কোথায়
সম্প্রতি ভারতে আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া থেকে চিতা আনা নিয়ে বেশ আলোড়ন উঠেছে। দুই দফায় মোট ২০টি প্রাপ্ত বয়স্ক চিতা আনা হয় সেখান থেকে। এগুলো ছাড়া হয় মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে। মজার ঘটনা এ অরণ্যে চিতা বাঘও আছে। তবে কুনো জাতীয় উদ্যানে আনার পর বিভিন্ন সময় চিতারা বাচ্চাও দিয়েছে। তবে এখানে বেশ কয়েকটি প্রাপ্ত বয়স্ক ও বাচ্চা চিতা মারা যাওয়ায় এই প্রকল্পটি নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। বর্তমানের কুনোতে ২১টি চিতা আছে। এর মধ্যে ছয়টি মদ্দা, আটটি মাদি ও সাতটি বাচ্চা।

তবে কথা হলো এরা আফ্রিকান চিতা। এশীয় চিতা এখন আছে কেবল পৃথিবীর একটি দেশে, সেটি ইরান। ভারতেও এক সময় এশীয় চিতাদের চমৎকার বিচরণক্ষেত্র ছিল। 

ভারত থেকে এশীয় চিতা বিলুপ্ত হওয়ার একটা বড় কারণ বন্য চিতা ধরা। অপর কারণ, বন্দী অবস্থায় এদের বংশ বৃদ্ধি না হওয়া। ১৬১৩ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রথম কোনো পোষা চিতার বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন তার ‘তুজাক-ই-জাহাঙ্গিরি’ বইয়ে।

অ্যান্টিলোপ ধরতে চিতা পোষ মানানোর প্রথম রেকর্ড পাওয়া যায় কালিকিনির রাজার রাজসভার বারো শতকের বিবরণীতে। মধ্যযুগে ভারতজুড়ে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্পোর্টটি। চিতার সাহায্যে কৃষ্ণসার মৃগ শিকারের ধুম পড়ে যায় ওই সময়।

বাদশাহ আকবর তাঁর শাসনামলে আনুমানিক ৯ হাজার চিতা বন্দী করেন। বন্য চিতা ধরার হারটা আঠারো শতকের কোনো এক সময়ে একেবারে চূড়ায় পৌঁছে যায়। জঙ্গল থেকে চিতা ধরে আনতে আনতে সেখানে এদের সংখ্যা একেবারে কমে যায় বিংশ শতকের গোড়ার দিকে। অ্যান্টিলোপ শিকারের খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভারতীয় রাজারা ১৯১৮-৪৫ সালের মধ্যে আফ্রিকা থেকে চিতা আনার খবর মেলে।

পাঁচটি বিগ ক্যাট বা বড় বিড়ালের একটি চিতা বাঘ। শ্রীলঙ্কার একটি অরণ্যের দৃশ্য।পরিবেশবাদী ঐতিহাসিক মহেশ রানগর্জন ‘জার্নাল অব মুম্বাই ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র ১৯৯৮ সালের সংখ্যায় লেখেন, ১৮৭১ সালে প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চা চিতা জীবন্ত উদ্ধারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। উপমহাদেশে চিতার ভাগ্য নির্ধারণে কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করে এই ঘোষণা।

যতদূর জানা যায় ভারতের শেষ তিনটি চিতা শিকার করেন সারগুজার মহারাজা, ১৯৪৮ সালে। তবে ১৯৫১ সালে ছত্তিশগড়ের উত্তর-পশ্চিমে একটি মাদি চিতা দেখার রেকর্ড আছে। ১৯৫১-৫২ সালের দিকেই ভারত থেকে চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এরপরও চিতা দেখার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য মেলে, ১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে মধ্যপ্রদেশের করিয়া এবং সারগুজার জঙ্গলে, তারপর ১৯৭৫-এ হাজারিবাগ জেলার দান্তো কালান গ্রামে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে ওডিশার সিমলাপালের জঙ্গলে চিতা দেখার দাবি করেন টাইগার প্রজেক্টের দুজন কর্মকর্তা। তবে গবেষকেরা এই দাবিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তাঁদের ধারণা, অ্যালবিনো চিতাবাঘকেই চিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে কি চিতা ছিল
১৯৩৫ সালে বোম্বাই ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির এক জার্নালে চিতার এলাকা হিসেবে বাংলা থেকে মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও রাজপুতানা (বর্তমান রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের আংশিক) এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে ডেকানের (দক্ষিণের ভারতের বড় একটি অংশ ডেকান মালভূমির অংশ) কথা বলা হয়েছে। এর কোনোটির সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানা নেই। সে হিসেবে ধরে নেওয়া যায় বাংলাদেশের সীমানায় পড়া কোনো এলাকায় নিকট অতীতে অন্তত এই জন্তুটি ছিল না।

ফ্রান্সের এক চিড়িয়াখানায় দৌড়াচ্ছে চিতা।একসময় এশীয় চিতা ছিল মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আরব উপদ্বীপে। পাকিস্তানে বেলুচিস্তানে ১৯৯০-এর দশকেও ছিল, শেষটি মারা পড়ে ১৯৯৭ সালে চাগাইয়ে। কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান থেকেও ১৯৮০ সালের পরে বিদায় নেয়। তবে ২০১৪ সালে হঠাৎই তুর্কমিনিস্তানের বাধিজ স্টেট ন্যাশনাল পার্কে একটা চিতার দেখা মেলে। হয়তো ওটা ইরান থেকে এসেছে।

ইরানের চিতা
এবার এশীয় চিতার একমাত্র আবাসস্থল ইরানের দিকে নজর দেওয়া যাক। ইরানের বিস্তৃত মালভূমিতে এখন ৫০টির কম চিতা টিকে আছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া এদের টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কয়েকটি এলাকায় থাকলেও তুরান আর মিয়ানদাশতের আশপাশে বাস করা চিতাগুলোই শেষ আশার আলো হিসেবে টিমটিম করে জ্বলছে।

গত ১৫ বছরে চিতার সংখ্যা দুনিয়াজুড়ে শতকরা ৫৩ ভাগ কমেছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। বিচরণের এলাকার ৯১ ভাগই হারিয়েছে চিতারা। ইরানের ওই চিতাসহ গোটা পৃথিবীতে এখন সাকল্যে ৭ হাজার ১০০ চিতা আছে। আফ্রিকান চিতারা মহাদেশের অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়া এই ছয়টি দেশে আটকে গেছে।

ইরানের একটি পার্কে এশীয় চিতা।চিতা না থাকলেও চিতা বাঘ আছে বাংলাদেশে
একটা সময় প্রায় গোটা বাংলাদেশেই ছিল চিতা বাঘেদের বিচরণ। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে, এমনকি উত্তরা ও মিরপুরেও দেখা মিলত এদের। মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় তো ছিল চিতা বাঘেদের প্রিয় বিচরণ ভূমি। সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোতেও মহানন্দে চষে বেড়াত তারা। তবে এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না বাংলাদেশের বনাঞ্চলে আর বুনো চিতা বাঘ আছে। কিন্তু শত বিপদ মাথায় নিয়ে এখনো এ দেশের প্রকৃতিতে সত্যি আছে এই প্রাণীটি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে এখনো হঠাৎ হঠাৎ মেলে চিতার খবর। শিকারিদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে এখনো টিকে আছে ওরা। ‘ডিটেকটিং দ্য স্পট: আ রিভিউ অন ল্যাপার্ড অকারেন্সেস ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি কাজ করেছেন মুনতাসির আকাশ, স্কট ট্রেগারস, তানিয়া জাকির, শাহরিয়ার সিজার রহমান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা খালেক মিলা ও অনিমেষ ঘোষ। চিতা বাঘ নিয়ে বাংলাদেশে এমন গবেষণা এটাই প্রথম। সেখান থেকেও জানা যায় বাংলাদেশে চিতা বাঘদের সাম্প্রতিক বিচরণের নানা খবর। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার পাঁচটি ও কক্সবাজার অঞ্চলে চিতা বাঘ দেখার নিশ্চিত দুটি তথ্যের কথা বলা হয়েছে।

সুপ্রিয় চাকমা, শাহরিয়ার সিজার রহমানদের গবেষণা, ক্যামেরা ট্র্যাপও নিশ্চিত করছে, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত কয়েকটি এলাকায় চিতা বাঘের আলাদা বসতি আছে। যদিও কোনোখানেই সংখ্যাটি বেশি নয়। রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় চাকমা যে গবেষণা করেছিলেন, তার ফলাফল নিশ্চিত করে বান্দরবানের সাঙ্গু এবং রাঙামাটির কাসালং এবং রাইংখং সংরক্ষিত অরণ্যে চিতা বাঘের উপস্থিতি।

২০১৮ সালে পঞ্চগড়ে আসা চিতা বাঘটি বাঁচার জন্য একটি ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা।বাংলাদেশের বনে এমনকি কালো চিতাও দেখা গেছে। শরীরে মেলানিনের আধিক্যে যেসব চিতাবাঘের গায়ের রং কালো হয়, তারাই পরিচিত কালো চিতা বা ব্ল্যাক প্যান্থার নামে। তবে এরা আলাদা কোনো প্রজাতি নয়। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরী কালো চিতা দেখেছিলেন প্রায় তিন যুগ আগে বান্দরবানের আলীকদম এলাকায়। ২০১১ সালে বড় মোদক যাওয়ার সময় আমাদের মারমা গাইড আংসু মারমার কাছ থেকে জানতে পারলাম, ১৯৯০ সালের দিকে রেমাক্রি এলাকায় একটা কালো চিতা ফাঁদ পেতে মেরেছিল শিকারিরা।

সিলেট বিভাগের কোনো কোনো অরণ্যেও এদের দেখা যাওয়ার কথা শোনা যায় কখনো কখনো। এক সময় বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গুলিতে এদের চমৎকার বসতি ছিল। এখনো রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এদের আনাগোনার খবর মিলছে নিয়মিত বিরতিতেই। বেশির ভাগের ধারণা সীমান্তের ওপার থেকেই আসে এরা। তবে এখানে এলেই সাধারণত মানুষের পিটুনিতে মরতে হয় প্রাণীটিকে। উত্তরের জেলাগুলিতে এমন করুণ পরিণতির শিকার হওয়ার পরও আশার কথা, পূর্বপুরুষের পুরোনো আস্তানাকে এখনো একেবারে ভুলে যায়নি নয়া জমানার চিতা বাঘেরা। এখন জরুরি মানুষের সঙ্গে এদের সংঘাতটা এড়ানো।

চিতা আর চিতা বাঘের পার্থক্য বলতে গিয়ে দুটি প্রাণী নিয়েই বিস্তর আলোচনা হয়ে গেল। আর এটা পরিষ্কার যে দুটো প্রাণীই আছে খুব বিপদে। আর সেটা আমাদের মানুষদের কারণেই। কাজেই আমাদের উচিত এদের রক্ষা করা। না হলে আরও অনেক সুন্দর প্রাণীর মতো এরাও এক সময় হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে।

তথ্য সূত্র: দ্য হিন্দু, বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ ম্যাগাজিন, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত