Ajker Patrika

প্লাস্টিক দূষণ রোধের জোট অপসারণের চেয়ে উৎপাদন করেছে ১ হাজার গুণ বেশি

প্লাস্টিকের অগণিত টুকরো, মাইক্রো প্লাস্টিক এবং আবর্জনা সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। ছবি: এএফপি
প্লাস্টিকের অগণিত টুকরো, মাইক্রো প্লাস্টিক এবং আবর্জনা সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। ছবি: এএফপি

পাঁচ বছর আগে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক জোট গড়ে তুলেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ তেল ও রাসায়নিক কোম্পানি। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, তা তাদের অপসারিত বর্জ্যের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের এক তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

২০১৯ সালে এক্সনমোবিল, ডাও, শেল, টোটাল এনার্জিস এবং শেভরন ফিলিপসের মতো শীর্ষ প্লাস্টিক উৎপাদক কোম্পানিগুলো অ্যালায়েন্স টু ইন্ড প্লাস্টিক ওয়েস্ট (এইপিডব্লিউ) নামে জোট করে। জোটটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০২৩ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ থেকে অপসারণ করবে। লক্ষ্য ছিল বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারে উন্নতি আনা এবং প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারযোগ্য চক্র তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যক্রম ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে ফারাক ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।

লক্ষ্য হাওয়া, প্লাস্টিক উৎপাদন অব্যাহত
প্রথম থেকেই এই জোটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল। গ্রিনপিসের দল আনআর্থড বিভিন্ন পাবলিক রিলেশনস কোম্পানির কাছ থেকে এসব কোম্পানির প্লাস্টিক উৎপাদন ও বর্জ্য অপসারণের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা যায়, এইপিডব্লিউ মূলত প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জনমত বদলানোর চেষ্টা করছিল। ২০১৯ সালে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা নিয়ে তীব্র গণ প্রতিক্রিয়ার মুখে বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবছিল। সেই সময়েও তাঁদের নথিতে বলা হয়, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ‘সরলীকৃত নিষেধাজ্ঞার’ পরিবর্তে ‘বাস্তবসম্মত দীর্ঘমেয়াদি সমাধান’ প্রচারের কথা।

২০২২ সালের শুরুর দিকে ‘১৫ মিলিয়ন টন বর্জ্য অপসারণের’ লক্ষ্য ‘অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে চুপিসারে বাতিল করা হয়।

প্লাস্টিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই জোটের পাঁচটি প্রধান কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করেছে জ্বালানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি। এদের মধ্যে রয়েছে এইপিডব্লিউয়ের চেয়ারম্যান রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ডাওসহ তেল কোম্পানি এক্সনমোবিল, শেল, টোটালএনার্জিজ ও শেভরনফিলিপস। শেভরনফিলিপস মার্কিন তেল জায়ান্ট শেভরন ও ফিলিপস ৬৬-এর একটি যৌথ উদ্যোগ।

মুখে যত কথাই বলুক বাস্তবে এই জোটের কার্যক্রম অনেকটাই বিপরীতমুখী। উড ম্যাকেঞ্জির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জোটের সদস্য পাঁচ কোম্পানি মিলে গত পাঁচ বছরে নতুন করে ১৩২ মিলিয়ন টন পলিথিন (পিই) এবং পলিপ্রোপিলিন (পিপি) প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, যা তাদের সরানো ১ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টন বর্জ্যের চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি।

এইপিডব্লিউয়ের নথি অনুযায়ী, অপসারিত এই প্লাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই মেকানিক্যাল বা কেমিক্যাল রিসাইক্লিং, ল্যান্ডফিলে স্থানান্তর অথবা জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত প্লাস্টিকের পরিমাণ সম্ভবত আরও বেশি, কারণ এই তথ্য কেবলমাত্র সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত দুটি পলিমার—পলিথিন, যা প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং পলিপ্রোপিলিন, যা খাদ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত হয়—এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এতে পলিস্টাইরিনের মতো অন্যান্য প্রধান প্লাস্টিকের তথ্য নেই।

নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় জাতিসংঘের উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই চুক্তির লক্ষ্য পুরো প্লাস্টিক উৎপাদন চক্রকে নিয়ন্ত্রণে আনা। তবে এই আলোচনায় এইপিডব্লিউ জোট এবং জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো নানা তদবির করার চেষ্টা করছে। আলোচনাটি এখন সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তিতে বৈশ্বিক প্লাস্টিক উৎপাদনের সীমা নির্ধারণ করা হবে কিনা, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।

এইপিডব্লিউ ও ফসিল ফুয়েল কোম্পানিগুলো এই সীমার বিরোধিতা করছে। তবে যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন উভয়েই এই সীমার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের নতুন লেবার সরকার দেশের অবস্থান বদলে একটি মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণাপত্রে সই করেছে, যেখানে চুক্তিতে প্রাথমিক প্লাস্টিক পলিমারের উৎপাদন ও ব্যবহার টেকসই মাত্রায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহারে টেকসই মাত্রা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর চুক্তি দরকার।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রও এই গ্রীষ্মে বৈশ্বিক প্লাস্টিক উৎপাদনে সীমা নির্ধারণের পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান এখনো জানা যায়নি।

কী বলছে গ্রিনপিস?
গ্রিনপিস যুক্তরাজ্যের সহপরিচালক উইল ম্যাককালাম বলেন, এই তথ্যে পরিষ্কার যে, তেল কোম্পানিগুলো যতটা প্লাস্টিক উৎপাদন করছে, তা তাঁদের প্রচারিত পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্পগুলোর চেয়ে খুব সামান্য। এটি সুস্পষ্ট গ্রিনওয়াশিং বা পরিবেশ বিষয়ে চোখে ধুলা দেওয়া।

উইল ম্যাককালাম আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যেসব রিসাইক্লিং প্রকল্পগুলো প্রচার করছে, সেগুলো তাঁদের বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদনের কাছে একেবারেই অকার্যকর। তাঁরা একদিকে বাঁধ কেটে দিয়ে দিয়ে পানি ছাড়ছে, আর অন্যদিকে চামচ দিয়ে সেই পানি তোলার চেষ্টা করছে। এসব করে কোনো কাজ হবে না। প্রথমেই প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ কমাতে হবে। এটিই একমাত্র সমাধান।’

মার্কিন পরিবেশবিদ বিল ম্যাককিবেন বলেন, এটি গ্রিনওয়াশিংয়ের সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। তেল ও গ্যাস শিল্প আসলে প্লাস্টিক শিল্পেরই আরেক রূপ। তাঁরা কয়েক দশক ধরেই এমন করছে।

এইপিডব্লিউয়ের অবস্থান
পিআর কোম্পানি ওয়েবার শ্যান্ডউইকের নথি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে এএপিডব্লিউ গঠনের পেছনে আমেরিকান কেমিক্যাল কাউন্সিলের উদ্যোগ ছিল। তাঁরা প্লাস্টিকের ‘বিরূপ ধারণা’ দূর করতে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের বিরোধিতা করার উপায় খুঁজছিল। ২০১৯ সালে এই কাজের জন্য এএপিডব্লিউ ওয়েবার শ্যান্ডউইককে ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার দেয়।

জোটটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ ও ভিত্তিহীন ধারণাগুলোকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূরীকরণে অবদান রাখা।’

জাতিসংঘের প্লাস্টিক বর্জ্য সংক্রান্ত আলোচনায় এইপিডব্লিউ দীর্ঘদিন ধরেই তদবির চালিয়ে আসছে, যা সোমবার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করবে। সংগঠনের প্রতিনিধিরা বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ কমানোর বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।

এএপিডব্লিউয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘কোনো একক সংগঠন প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। জোটটি এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস ও পুনর্ব্যবহারসহ কার্যকর পদ্ধতি চিহ্নিত করতে কাজ করছে। একটি চক্রাকার অর্থনীতির প্রসার ঘটাচ্ছে।’

ওয়েবার শ্যান্ডউইকের নথিতে উল্লেখ করা হয়, জোটটি স্বল্পমেয়াদি প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত সমাধান’ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছিল, যার মধ্যে ছিল পুনর্ব্যবহার।

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা এক্সনমোবিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে দাখিল করা ওই মামলার নথিতে বলা হয়েছে, এক্সনমোবিল ৫০ বছর ধরে পুনর্ব্যবহারের সক্ষমতা নিয়ে জনসাধারণকে ভুল বুঝিয়েছে ও চটকদার বিপণনের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করেছে।

এরপরও এক্সনমোবিল বলেছে, ‘সমস্যা প্লাস্টিক নয়, সমস্যা হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। আমরা পুনর্ব্যবহারের মতো প্রকৃত সমাধান নিয়ে আসছি। ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ নির্মূলের বৈশ্বিক চুক্তির লক্ষ্য পূরণে কাজ করছি।’

এক্সনমোবিল আরও বলেছে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা সমস্যার সমাধানে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারতেন। আমরা বাস্তব সমাধান আনছি, এমনভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করছি যা সাধারণ পদ্ধতিতে করা কঠিন। আমরা আমাদের গ্রাহকদের প্রতি সব সময় সৎ থেকেছি এবং আমাদের প্রকাশিত বিবৃতিগুলোর ওপর আস্থা রাখি।’

অন্যদিকে, শেল এবং টোটালএনার্জিস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

প্লাস্টিক দূষণের মূলে উৎপাদন
বিশ্বে প্লাস্টিকের উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে ৪৬০ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। একই সময়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ১৫৬ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ৩৫৩ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে, যার মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।

প্লাস্টিকের অগণিত টুকরো, মাইক্রো প্লাস্টিক এবং আবর্জনা সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার হারমানাসে বিগ ওশান ক্লিন আপ কার্যক্রমে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সমস্যার মূল উৎপাদনে। যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেভল্যুশন প্লাস্টিকস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্টিভ ফ্লেচার বলেছেন, নতুন প্লাস্টিক পলিমারের উৎপাদন কমানো ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসের কোনো বাস্তবসম্মত উপায় নেই।

জাতিসংঘের আসন্ন চুক্তি হয়তো এই সংকট নিরসনে নতুন দিক নির্দেশনা দেবে, তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বড় কোম্পানিগুলোর সদিচ্ছার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় তাপমাত্রা ১৬.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর-পূর্ব জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, দিল্লির অবস্থা বিপজ্জনক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।

আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত