ইশতিয়াক হাসান

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্য প্রাণী। এই মাসের গোড়ার দিকেই যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
৪ মে, শনিবার। শেরপুর পৌর শহরের দিঘারপাড় মহল্লায় লাল মিয়া তাঁর জমিতে একটি বন্যপ্রাণী দেখতে পান। এ ধরনের প্রাণী আগে কখনো দেখেননি তিনি। নাকসহ শরীরের কিছু অংশ শূকরের মতো। আবার বেশ পার্থক্যও আছে। লাল মিয়া আশপাশের লোকজনকে ডাক দেন। তারপর সবাই মিলে ‘অদ্ভুত’ প্রাণীটিকে বেঁধে ফেলেন। সৌভাগ্যক্রমে এটিকে মেরে না ফেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দেন তাঁরা। পরে জানা যায় এর আসল পরিচয়, এটি একটি হগ ব্যাজার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন হগ ব্যাজারটিকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বনে ছাড়েন।
তিন বছরেরও বেশি আগের একটি ঘটনায় ফিরে যাই। এবারের প্রাণীটির ভাগ্য অবশ্য হগ ব্যাজারটির তুলনায় অনেকই খারাপ ছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চিতনা গ্রাম। এক ব্যক্তি মারা গেলে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। পরদিন সকালে অদ্ভুত চেহারার এক জন্তুকে সেই কবরের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখে এলাকাবাসী। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল, লাশখেকো একটি জন্তুর খোঁজ মিলেছে।
ব্যস, আর যায় কোথায়! ওটাকে ধরে মহাসমারোহে পিটিয়ে মেরে ফেলল গ্রামবাসী। এতটুকুই তথ্য জোগাড় করেছিলাম পত্রিকা থেকে। যদিও ওখানে প্রাণীটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল গন্ধগোকুল বা খাটাশ হিসেবে। তবে জন্তুটির লোমশ শরীর বলছিল অন্য কথা। দেখে একে বিন্টুরং বা ভামের মতোই মনে হচ্ছিল। পরে ছবি দেখে নিশ্চিত হই ওটা বিন্টুরংই।
কিন্তু শেরপুর শহরে হগ ব্যাজার কিংবা নাসিরনগরের গ্রামীণ বনে বিন্টুরং এল কীভাবে?
শুরুটা করছি হগ ব্যাজার দিয়ে। তার আগে একটু বর্ণনা দেওয়া যাক। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই আছে। গায়ে-গতের শূূকরাকার ব্যাজাররা মাঝারি। দৈর্ঘ্য ২২-২৬ ইঞ্চি। লেজটা ৫-৬ ইঞ্চি। ওজন ৫-৮ কেজি। নাকটা শূকরের মতো হওয়ায় শূকরাকার ব্যাজার বা হগ ব্যাজার নাম পেয়েছে। তবে দেহের বিভিন্ন অংশ শূকর থেকে অনেকই আলাদা। গাট্টাগোট্টা শরীরে বাদামি লোম থাকে। গলা-মুখ সাদাটে, পিঠের ওপর লম্বা দুটো কালো দাগ। এদের চেহারার সঙ্গে হানি ব্যাজারদেরও বেশ মিল আছে। তবে কথা হলো, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এখন হানি ব্যাজার আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আশার কথা, হগ ব্যাজার বা শূূকরাকার ব্যাজার বাংলাদেশের বনগুলোতে এখনো অল্পবিস্তর আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলার বন-পাহাড়ে। ভাগ্যচক্রে দু-একজন পর্যটক এর দেখাও পেয়ে যান। এমনই একজন প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম। হঠাৎ এদের একটার মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। সীতাকুণ্ডের বন-পাহাড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়বকুণ্ড থেকে তীর্থদাম অগ্নিকুণ্ডে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে এক ঝিরিতে গা ভেজাচ্ছেলেন। আচমকা ওটাকে দেখেন। শূকরের মতো মুখ, লোমশ চামড়ার আশ্চর্য এই প্রাণী দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তাঁর। বেচারা আগে কখনো হগ ব্যাজারের কথা শোনেননি। চম্পট দেন ওখান থেকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এর আগেই কাঁপা কাঁপা হাতে দুর্দান্ত দুটি ছবি তুলে ফেলেন ওটার।
হগ ব্যাজাররা মোটামুটি সর্বভুক। ফলমূল, গাছের শিকড়, ছোট জন্তু, মাছ—কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই।
আজকের পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি জুবাইদুল ইসলামের সূত্রে জানতে পারলাম, দিঘারপাড়ের পরেই বিল আছে। বিলের পর আবার আছে দুটি ইটভাটা। পৌরসভার মধ্যে পড়লেও জায়গাটির পরিবেশ গ্রামীণ। বিভিন্ন বাড়ির পেছনে ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় কিংবা গাছপালা আছে। বিলের কাছে বাড়ি-ঘর থাকলেও সেগুলোর চারপাশেও ঝোপঝাড় ও বেশ গাছপালা আছে। এদিকে এই এলাকা থেকে গারো পাহাড় বেশ দূরে। তাহলে আমরা অনুমান করতেই পারি, হগ ব্যাজারটি এখানকার স্থানীয় প্রাণী। হয়তো এ রকম আরও দু-চারটি এখনো সেখানে টিকে আছে।
এবার নাসিরনগরের ওই ভামকাণ্ডে চোখ বোলানো যাক আবার। ভামরা আমি যত দূর জানি সর্বভুক। ওটা যে আসলেই লাশ খেয়েছে—এমন কোনো প্রমাণও নেই। যদিও গ্রামবাসী নিশ্চিত না হয়েই জন্তুটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আমরা সত্যি জানি না, যে অপরাধে মারা হয়েছে, তা ওই জন্তুটা করেছে কি না।
কথা হলো, নাসিরনগরে তারা এল কীভাবে? নাসিরনগরের সবচেয়ে কাছের সংরক্ষিত বন সাতছড়ি। তা-ও ওখান থেকে একটি বিন্টুরং অতটা পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে আসাটা স্বাভাবিক নয়! তবে খোঁজ-খবর নিয়ে যত দূর জানতে পেরেছি, নাসিরনগরে কিছু বাঁশ-বন আছে। আর এটা মোটামুটি জানা যে, ভালুকেরা বাঁশবনকে থাকার জায়গা হিসেবে বেশ পছন্দ করে। তাহলে সম্ভবত নাসিরনগরের বাঁশবাগানই ছিল এর আস্তানা। তবে কি সেখানে আরও আছে? নাকি শেষটাকেই আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছি!
এই নাসিরনগরের বাঁশবনের কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ল আমার নানাবাড়ি পাশে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুরে প্রচুর বাঁশবন আছে। ওই সব বনের দু-চারটায় আমি ঘোরাফেরাও করেছি বেশ। তাহলে ওই সব বাঁশবাগানেও দু-চারটা বিন্টুরং আছে নাকি! এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাটোরে একটা বাঁশভালুক দেখার খবর মিলেছিল।
এবার বিন্টুরং জন্তুটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে পাবেন এদের। লোমশ শরীর, গায়ের রং কালো, তবে পা চারটি খাটো। লোমশ লেজটা শুরুর দিকে চওড়া, তারপর ধীরে ধীরে একটু সরু হয়ে শেষ অংশে ভেতরের দিকে কুঁকড়ে গেছে। এই লেজ দিয়ে এরা শক্তভাবে গাছের ডাল বা অন্য যেকোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। চোখ বড়, গোল কান ছোট। সর্বভুক জন্তুটি খুদে স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, ফলমূল সবই খায়। ডুমুর প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে ওপরের দিকে। শাক-সবজি, লতাপাতায়ও আপত্তি নেই। তবে এর মড়াখেকো হিসেবে তেমন কোনো পরিচিতির খবর খুব একটা জানা নেই।
এবার মেছো বিড়ালদের নিয়ে একটু আলাপ করি। বাংলাদেশের অনেক শহরের সীমানায় এমনকি খোদ ঢাকা শহরের পূর্বাচল এলাকায়ও মেছো বিড়াল এখনো অল্প সংখ্যায় হলো টিকে আছে। তেমনি ঢাকা শহরের সীমানায় অল্প-বিস্তর শিয়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুলও আছে এখনো। বিভিন্ন শহরে ও গ্রামের ঘর-বাড়ির কাছে ছোট বন কিংবা গাছপালা আছে এমন জায়গায় টিকে আছে বনবিড়াল, গন্ধেগোকুল, বাঘডাঁসের মতো প্রাণীরা।
একটা সময় গ্রামীণ বনে, শহরে মানুষের আশপাশে অনেক বন্যপ্রাণীই বিচরণ করত। তখন এত ঝামেলাও হতো না। মানুষ এদের সঙ্গে পরিচিতও ছিল। কিন্তু নগারায়ণের কারণে এসব বন্যপ্রাণী ক্রমেই পিছু হটেছে। অনেকগুলো মানুষের হাতে মারা পড়েছে। কিছু আবার বড় বনের দিকে সরে পড়েছে। তবে এত কিছুর পরও অল্প-বিস্তর বন্যপ্রাণী যে এখনো শহরে বা শহরতলি কিংবা মানুষের বাড়ি-ঘরের আশপাশে কালেভদ্রে দেখা যায়, এটি আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। কিন্তু কোনো বন্যপ্রাণীকে আশপাশে দেখলেই মেরে ফেলা তো একেবারেই উচিত নয়। তেমনি সাফারি পার্কে কিংবা কোনো বনে অবমুক্ত করাটাও কি খুব যুক্তিযুক্ত?
একটা জন্তুকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে অন্য জায়গায় সরানোটাও তো নিষ্ঠুরতা। আমাদের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য সব করতে হবে? আমাদের আশপাশে কি বন্যপ্রাণী থাকতে পারে না?
বর্তমানে শিক্ষাকালীন ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, হগ ব্যাজার যে শুধুই বনে থাকে ব্যাপারটি এমন নয়। গুগল আর্থে দেখা যাচ্ছে, শেরপুরে যেখানে একে পাওয়া যায়, তার আশপাশে হোমস্টেড ফরেস্ট বা গ্রামীণ বন আছে। লাগোয়া বিলও আছে। অচেনা প্রাণী শুধু খুব গহিন বনেই থাকে—এই চিন্তাধারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সঙ্গে কনফ্লিক্টিং।
‘অচেনা’ প্রাণী বাসার পেছনের বাঁশবনেও থাকতে পারে। হগ ব্যাজার একটু ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে। বিল, বাড়ির পাশে ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বন—সবকিছু মিলিয়ে এই হগ ব্যাজার শেরপুরে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা বলেই মনে হয়। হগ ব্যাজারদের কিন্তু কখনো কখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন হলের আশপাশে ঘুরঘুর করতেও দেখা গেছে। এদিকে বাঁশভালুক নাসিরনগর বা আশপাশের এলাকার বাঁশবনে এখনো টিকে থাকা অসম্ভব নয়। বাঁশভালুক নিয়ে বাংলাদেশে সে অর্থে তেমন গবেষণা হয়নি। তবে বাইরের গবেষণা বলছে, বাড়ির আশপাশের বাঁশবনেও এদের থাকা সম্ভব।
মুনতাসির আকাশ বলেন, ‘মেছো বিড়াল আর বনবিড়ালের কথাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। শ্রীমঙ্গলে যেমন কোনো মেছো বিড়াল ধরা পড়লেই এদের বাইক্কার বিলের আশপাশে বা কোনো বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। অথচ বাইক্কার বিল একেবারে ছোট্ট একটা জায়গা। তেমনি প্রতিটি বনের ধারণক্ষমতা আছে। মেছো বিড়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষের আশপাশের এলাকায়ও থাকার সুযোগ দিতে হবে। না হলে স্কটল্যান্ডে যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ওয়াইল্ড ক্যাটেরা; বাংলাদেশের বনবিড়াল, মেছো বিড়াল বা হগ ব্যাজারদের একই অবস্থা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্কটল্যান্ডের একটি বনে কেবল ১২-১৪টি পিউর ওয়াইল্ড ক্যাট টিকে আছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, হগ ব্যাজার-বাঁশভালুকের মতো প্রাণীরা নিজের বাসস্থান ছেড়ে খুব বেশি দূরে যায় না। কাজেই এসব প্রাণী যে এলাকায় ধরা পড়েছে, সেই এলাকারই হওয়ার কথা। হগ ব্যাজার শেরপুরে যেখানে ধরা পড়েছে, এর আশপাশে কোথাও থাকতেই পারে। দিনে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে, রাতে বের হয়। কাজেই এটা এত দিন মানুষের চোখে না পড়া অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, কোনো প্রাণী যে জায়গায় ধরা পড়ে, সেখানে তার বসবাসের পরিবেশ থাকলে ওই জায়গাটায় ছাড়াটাই উচিত। কিন্তু পরিবেশ না থাকলে অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় ছাড়তে হয়। না হলে আবার মানুষের হাতে ধরা পড়বে। আর আহত হলে প্রাণীটিকে অবশ্যই সুস্থ করে ছাড়া উচিত। তা ছাড়া যেসব জায়গায় এসব প্রাণী বসবাসের পরিবেশ ছিল, একসময় সেখানে নতুন করে হেবিটেট তৈরি করতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করাটাও জরুরি।
আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এই দিনের চাওয়া—ভালো থাকুক দেশের বন্যপ্রাণী, আপন পরিবেশেই সুস্থ থাকুক এরা। আমরা মানুষ একটু উদার হলে এসব প্রাণীকে বোঝার চেষ্টা করলেই আমাদের আশপাশেও টিকে থাকতে পারে এরা।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্য প্রাণী। এই মাসের গোড়ার দিকেই যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
৪ মে, শনিবার। শেরপুর পৌর শহরের দিঘারপাড় মহল্লায় লাল মিয়া তাঁর জমিতে একটি বন্যপ্রাণী দেখতে পান। এ ধরনের প্রাণী আগে কখনো দেখেননি তিনি। নাকসহ শরীরের কিছু অংশ শূকরের মতো। আবার বেশ পার্থক্যও আছে। লাল মিয়া আশপাশের লোকজনকে ডাক দেন। তারপর সবাই মিলে ‘অদ্ভুত’ প্রাণীটিকে বেঁধে ফেলেন। সৌভাগ্যক্রমে এটিকে মেরে না ফেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দেন তাঁরা। পরে জানা যায় এর আসল পরিচয়, এটি একটি হগ ব্যাজার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন হগ ব্যাজারটিকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বনে ছাড়েন।
তিন বছরেরও বেশি আগের একটি ঘটনায় ফিরে যাই। এবারের প্রাণীটির ভাগ্য অবশ্য হগ ব্যাজারটির তুলনায় অনেকই খারাপ ছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চিতনা গ্রাম। এক ব্যক্তি মারা গেলে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। পরদিন সকালে অদ্ভুত চেহারার এক জন্তুকে সেই কবরের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখে এলাকাবাসী। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল, লাশখেকো একটি জন্তুর খোঁজ মিলেছে।
ব্যস, আর যায় কোথায়! ওটাকে ধরে মহাসমারোহে পিটিয়ে মেরে ফেলল গ্রামবাসী। এতটুকুই তথ্য জোগাড় করেছিলাম পত্রিকা থেকে। যদিও ওখানে প্রাণীটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল গন্ধগোকুল বা খাটাশ হিসেবে। তবে জন্তুটির লোমশ শরীর বলছিল অন্য কথা। দেখে একে বিন্টুরং বা ভামের মতোই মনে হচ্ছিল। পরে ছবি দেখে নিশ্চিত হই ওটা বিন্টুরংই।
কিন্তু শেরপুর শহরে হগ ব্যাজার কিংবা নাসিরনগরের গ্রামীণ বনে বিন্টুরং এল কীভাবে?
শুরুটা করছি হগ ব্যাজার দিয়ে। তার আগে একটু বর্ণনা দেওয়া যাক। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই আছে। গায়ে-গতের শূূকরাকার ব্যাজাররা মাঝারি। দৈর্ঘ্য ২২-২৬ ইঞ্চি। লেজটা ৫-৬ ইঞ্চি। ওজন ৫-৮ কেজি। নাকটা শূকরের মতো হওয়ায় শূকরাকার ব্যাজার বা হগ ব্যাজার নাম পেয়েছে। তবে দেহের বিভিন্ন অংশ শূকর থেকে অনেকই আলাদা। গাট্টাগোট্টা শরীরে বাদামি লোম থাকে। গলা-মুখ সাদাটে, পিঠের ওপর লম্বা দুটো কালো দাগ। এদের চেহারার সঙ্গে হানি ব্যাজারদেরও বেশ মিল আছে। তবে কথা হলো, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এখন হানি ব্যাজার আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আশার কথা, হগ ব্যাজার বা শূূকরাকার ব্যাজার বাংলাদেশের বনগুলোতে এখনো অল্পবিস্তর আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলার বন-পাহাড়ে। ভাগ্যচক্রে দু-একজন পর্যটক এর দেখাও পেয়ে যান। এমনই একজন প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম। হঠাৎ এদের একটার মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। সীতাকুণ্ডের বন-পাহাড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়বকুণ্ড থেকে তীর্থদাম অগ্নিকুণ্ডে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে এক ঝিরিতে গা ভেজাচ্ছেলেন। আচমকা ওটাকে দেখেন। শূকরের মতো মুখ, লোমশ চামড়ার আশ্চর্য এই প্রাণী দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তাঁর। বেচারা আগে কখনো হগ ব্যাজারের কথা শোনেননি। চম্পট দেন ওখান থেকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এর আগেই কাঁপা কাঁপা হাতে দুর্দান্ত দুটি ছবি তুলে ফেলেন ওটার।
হগ ব্যাজাররা মোটামুটি সর্বভুক। ফলমূল, গাছের শিকড়, ছোট জন্তু, মাছ—কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই।
আজকের পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি জুবাইদুল ইসলামের সূত্রে জানতে পারলাম, দিঘারপাড়ের পরেই বিল আছে। বিলের পর আবার আছে দুটি ইটভাটা। পৌরসভার মধ্যে পড়লেও জায়গাটির পরিবেশ গ্রামীণ। বিভিন্ন বাড়ির পেছনে ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় কিংবা গাছপালা আছে। বিলের কাছে বাড়ি-ঘর থাকলেও সেগুলোর চারপাশেও ঝোপঝাড় ও বেশ গাছপালা আছে। এদিকে এই এলাকা থেকে গারো পাহাড় বেশ দূরে। তাহলে আমরা অনুমান করতেই পারি, হগ ব্যাজারটি এখানকার স্থানীয় প্রাণী। হয়তো এ রকম আরও দু-চারটি এখনো সেখানে টিকে আছে।
এবার নাসিরনগরের ওই ভামকাণ্ডে চোখ বোলানো যাক আবার। ভামরা আমি যত দূর জানি সর্বভুক। ওটা যে আসলেই লাশ খেয়েছে—এমন কোনো প্রমাণও নেই। যদিও গ্রামবাসী নিশ্চিত না হয়েই জন্তুটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আমরা সত্যি জানি না, যে অপরাধে মারা হয়েছে, তা ওই জন্তুটা করেছে কি না।
কথা হলো, নাসিরনগরে তারা এল কীভাবে? নাসিরনগরের সবচেয়ে কাছের সংরক্ষিত বন সাতছড়ি। তা-ও ওখান থেকে একটি বিন্টুরং অতটা পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে আসাটা স্বাভাবিক নয়! তবে খোঁজ-খবর নিয়ে যত দূর জানতে পেরেছি, নাসিরনগরে কিছু বাঁশ-বন আছে। আর এটা মোটামুটি জানা যে, ভালুকেরা বাঁশবনকে থাকার জায়গা হিসেবে বেশ পছন্দ করে। তাহলে সম্ভবত নাসিরনগরের বাঁশবাগানই ছিল এর আস্তানা। তবে কি সেখানে আরও আছে? নাকি শেষটাকেই আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছি!
এই নাসিরনগরের বাঁশবনের কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ল আমার নানাবাড়ি পাশে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুরে প্রচুর বাঁশবন আছে। ওই সব বনের দু-চারটায় আমি ঘোরাফেরাও করেছি বেশ। তাহলে ওই সব বাঁশবাগানেও দু-চারটা বিন্টুরং আছে নাকি! এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাটোরে একটা বাঁশভালুক দেখার খবর মিলেছিল।
এবার বিন্টুরং জন্তুটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে পাবেন এদের। লোমশ শরীর, গায়ের রং কালো, তবে পা চারটি খাটো। লোমশ লেজটা শুরুর দিকে চওড়া, তারপর ধীরে ধীরে একটু সরু হয়ে শেষ অংশে ভেতরের দিকে কুঁকড়ে গেছে। এই লেজ দিয়ে এরা শক্তভাবে গাছের ডাল বা অন্য যেকোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। চোখ বড়, গোল কান ছোট। সর্বভুক জন্তুটি খুদে স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, ফলমূল সবই খায়। ডুমুর প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে ওপরের দিকে। শাক-সবজি, লতাপাতায়ও আপত্তি নেই। তবে এর মড়াখেকো হিসেবে তেমন কোনো পরিচিতির খবর খুব একটা জানা নেই।
এবার মেছো বিড়ালদের নিয়ে একটু আলাপ করি। বাংলাদেশের অনেক শহরের সীমানায় এমনকি খোদ ঢাকা শহরের পূর্বাচল এলাকায়ও মেছো বিড়াল এখনো অল্প সংখ্যায় হলো টিকে আছে। তেমনি ঢাকা শহরের সীমানায় অল্প-বিস্তর শিয়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুলও আছে এখনো। বিভিন্ন শহরে ও গ্রামের ঘর-বাড়ির কাছে ছোট বন কিংবা গাছপালা আছে এমন জায়গায় টিকে আছে বনবিড়াল, গন্ধেগোকুল, বাঘডাঁসের মতো প্রাণীরা।
একটা সময় গ্রামীণ বনে, শহরে মানুষের আশপাশে অনেক বন্যপ্রাণীই বিচরণ করত। তখন এত ঝামেলাও হতো না। মানুষ এদের সঙ্গে পরিচিতও ছিল। কিন্তু নগারায়ণের কারণে এসব বন্যপ্রাণী ক্রমেই পিছু হটেছে। অনেকগুলো মানুষের হাতে মারা পড়েছে। কিছু আবার বড় বনের দিকে সরে পড়েছে। তবে এত কিছুর পরও অল্প-বিস্তর বন্যপ্রাণী যে এখনো শহরে বা শহরতলি কিংবা মানুষের বাড়ি-ঘরের আশপাশে কালেভদ্রে দেখা যায়, এটি আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। কিন্তু কোনো বন্যপ্রাণীকে আশপাশে দেখলেই মেরে ফেলা তো একেবারেই উচিত নয়। তেমনি সাফারি পার্কে কিংবা কোনো বনে অবমুক্ত করাটাও কি খুব যুক্তিযুক্ত?
একটা জন্তুকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে অন্য জায়গায় সরানোটাও তো নিষ্ঠুরতা। আমাদের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য সব করতে হবে? আমাদের আশপাশে কি বন্যপ্রাণী থাকতে পারে না?
বর্তমানে শিক্ষাকালীন ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, হগ ব্যাজার যে শুধুই বনে থাকে ব্যাপারটি এমন নয়। গুগল আর্থে দেখা যাচ্ছে, শেরপুরে যেখানে একে পাওয়া যায়, তার আশপাশে হোমস্টেড ফরেস্ট বা গ্রামীণ বন আছে। লাগোয়া বিলও আছে। অচেনা প্রাণী শুধু খুব গহিন বনেই থাকে—এই চিন্তাধারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সঙ্গে কনফ্লিক্টিং।
‘অচেনা’ প্রাণী বাসার পেছনের বাঁশবনেও থাকতে পারে। হগ ব্যাজার একটু ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে। বিল, বাড়ির পাশে ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বন—সবকিছু মিলিয়ে এই হগ ব্যাজার শেরপুরে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা বলেই মনে হয়। হগ ব্যাজারদের কিন্তু কখনো কখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন হলের আশপাশে ঘুরঘুর করতেও দেখা গেছে। এদিকে বাঁশভালুক নাসিরনগর বা আশপাশের এলাকার বাঁশবনে এখনো টিকে থাকা অসম্ভব নয়। বাঁশভালুক নিয়ে বাংলাদেশে সে অর্থে তেমন গবেষণা হয়নি। তবে বাইরের গবেষণা বলছে, বাড়ির আশপাশের বাঁশবনেও এদের থাকা সম্ভব।
মুনতাসির আকাশ বলেন, ‘মেছো বিড়াল আর বনবিড়ালের কথাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। শ্রীমঙ্গলে যেমন কোনো মেছো বিড়াল ধরা পড়লেই এদের বাইক্কার বিলের আশপাশে বা কোনো বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। অথচ বাইক্কার বিল একেবারে ছোট্ট একটা জায়গা। তেমনি প্রতিটি বনের ধারণক্ষমতা আছে। মেছো বিড়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষের আশপাশের এলাকায়ও থাকার সুযোগ দিতে হবে। না হলে স্কটল্যান্ডে যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ওয়াইল্ড ক্যাটেরা; বাংলাদেশের বনবিড়াল, মেছো বিড়াল বা হগ ব্যাজারদের একই অবস্থা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্কটল্যান্ডের একটি বনে কেবল ১২-১৪টি পিউর ওয়াইল্ড ক্যাট টিকে আছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, হগ ব্যাজার-বাঁশভালুকের মতো প্রাণীরা নিজের বাসস্থান ছেড়ে খুব বেশি দূরে যায় না। কাজেই এসব প্রাণী যে এলাকায় ধরা পড়েছে, সেই এলাকারই হওয়ার কথা। হগ ব্যাজার শেরপুরে যেখানে ধরা পড়েছে, এর আশপাশে কোথাও থাকতেই পারে। দিনে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে, রাতে বের হয়। কাজেই এটা এত দিন মানুষের চোখে না পড়া অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, কোনো প্রাণী যে জায়গায় ধরা পড়ে, সেখানে তার বসবাসের পরিবেশ থাকলে ওই জায়গাটায় ছাড়াটাই উচিত। কিন্তু পরিবেশ না থাকলে অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় ছাড়তে হয়। না হলে আবার মানুষের হাতে ধরা পড়বে। আর আহত হলে প্রাণীটিকে অবশ্যই সুস্থ করে ছাড়া উচিত। তা ছাড়া যেসব জায়গায় এসব প্রাণী বসবাসের পরিবেশ ছিল, একসময় সেখানে নতুন করে হেবিটেট তৈরি করতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করাটাও জরুরি।
আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এই দিনের চাওয়া—ভালো থাকুক দেশের বন্যপ্রাণী, আপন পরিবেশেই সুস্থ থাকুক এরা। আমরা মানুষ একটু উদার হলে এসব প্রাণীকে বোঝার চেষ্টা করলেই আমাদের আশপাশেও টিকে থাকতে পারে এরা।
ইশতিয়াক হাসান

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্য প্রাণী। এই মাসের গোড়ার দিকেই যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
৪ মে, শনিবার। শেরপুর পৌর শহরের দিঘারপাড় মহল্লায় লাল মিয়া তাঁর জমিতে একটি বন্যপ্রাণী দেখতে পান। এ ধরনের প্রাণী আগে কখনো দেখেননি তিনি। নাকসহ শরীরের কিছু অংশ শূকরের মতো। আবার বেশ পার্থক্যও আছে। লাল মিয়া আশপাশের লোকজনকে ডাক দেন। তারপর সবাই মিলে ‘অদ্ভুত’ প্রাণীটিকে বেঁধে ফেলেন। সৌভাগ্যক্রমে এটিকে মেরে না ফেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দেন তাঁরা। পরে জানা যায় এর আসল পরিচয়, এটি একটি হগ ব্যাজার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন হগ ব্যাজারটিকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বনে ছাড়েন।
তিন বছরেরও বেশি আগের একটি ঘটনায় ফিরে যাই। এবারের প্রাণীটির ভাগ্য অবশ্য হগ ব্যাজারটির তুলনায় অনেকই খারাপ ছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চিতনা গ্রাম। এক ব্যক্তি মারা গেলে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। পরদিন সকালে অদ্ভুত চেহারার এক জন্তুকে সেই কবরের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখে এলাকাবাসী। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল, লাশখেকো একটি জন্তুর খোঁজ মিলেছে।
ব্যস, আর যায় কোথায়! ওটাকে ধরে মহাসমারোহে পিটিয়ে মেরে ফেলল গ্রামবাসী। এতটুকুই তথ্য জোগাড় করেছিলাম পত্রিকা থেকে। যদিও ওখানে প্রাণীটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল গন্ধগোকুল বা খাটাশ হিসেবে। তবে জন্তুটির লোমশ শরীর বলছিল অন্য কথা। দেখে একে বিন্টুরং বা ভামের মতোই মনে হচ্ছিল। পরে ছবি দেখে নিশ্চিত হই ওটা বিন্টুরংই।
কিন্তু শেরপুর শহরে হগ ব্যাজার কিংবা নাসিরনগরের গ্রামীণ বনে বিন্টুরং এল কীভাবে?
শুরুটা করছি হগ ব্যাজার দিয়ে। তার আগে একটু বর্ণনা দেওয়া যাক। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই আছে। গায়ে-গতের শূূকরাকার ব্যাজাররা মাঝারি। দৈর্ঘ্য ২২-২৬ ইঞ্চি। লেজটা ৫-৬ ইঞ্চি। ওজন ৫-৮ কেজি। নাকটা শূকরের মতো হওয়ায় শূকরাকার ব্যাজার বা হগ ব্যাজার নাম পেয়েছে। তবে দেহের বিভিন্ন অংশ শূকর থেকে অনেকই আলাদা। গাট্টাগোট্টা শরীরে বাদামি লোম থাকে। গলা-মুখ সাদাটে, পিঠের ওপর লম্বা দুটো কালো দাগ। এদের চেহারার সঙ্গে হানি ব্যাজারদেরও বেশ মিল আছে। তবে কথা হলো, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এখন হানি ব্যাজার আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আশার কথা, হগ ব্যাজার বা শূূকরাকার ব্যাজার বাংলাদেশের বনগুলোতে এখনো অল্পবিস্তর আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলার বন-পাহাড়ে। ভাগ্যচক্রে দু-একজন পর্যটক এর দেখাও পেয়ে যান। এমনই একজন প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম। হঠাৎ এদের একটার মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। সীতাকুণ্ডের বন-পাহাড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়বকুণ্ড থেকে তীর্থদাম অগ্নিকুণ্ডে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে এক ঝিরিতে গা ভেজাচ্ছেলেন। আচমকা ওটাকে দেখেন। শূকরের মতো মুখ, লোমশ চামড়ার আশ্চর্য এই প্রাণী দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তাঁর। বেচারা আগে কখনো হগ ব্যাজারের কথা শোনেননি। চম্পট দেন ওখান থেকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এর আগেই কাঁপা কাঁপা হাতে দুর্দান্ত দুটি ছবি তুলে ফেলেন ওটার।
হগ ব্যাজাররা মোটামুটি সর্বভুক। ফলমূল, গাছের শিকড়, ছোট জন্তু, মাছ—কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই।
আজকের পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি জুবাইদুল ইসলামের সূত্রে জানতে পারলাম, দিঘারপাড়ের পরেই বিল আছে। বিলের পর আবার আছে দুটি ইটভাটা। পৌরসভার মধ্যে পড়লেও জায়গাটির পরিবেশ গ্রামীণ। বিভিন্ন বাড়ির পেছনে ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় কিংবা গাছপালা আছে। বিলের কাছে বাড়ি-ঘর থাকলেও সেগুলোর চারপাশেও ঝোপঝাড় ও বেশ গাছপালা আছে। এদিকে এই এলাকা থেকে গারো পাহাড় বেশ দূরে। তাহলে আমরা অনুমান করতেই পারি, হগ ব্যাজারটি এখানকার স্থানীয় প্রাণী। হয়তো এ রকম আরও দু-চারটি এখনো সেখানে টিকে আছে।
এবার নাসিরনগরের ওই ভামকাণ্ডে চোখ বোলানো যাক আবার। ভামরা আমি যত দূর জানি সর্বভুক। ওটা যে আসলেই লাশ খেয়েছে—এমন কোনো প্রমাণও নেই। যদিও গ্রামবাসী নিশ্চিত না হয়েই জন্তুটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আমরা সত্যি জানি না, যে অপরাধে মারা হয়েছে, তা ওই জন্তুটা করেছে কি না।
কথা হলো, নাসিরনগরে তারা এল কীভাবে? নাসিরনগরের সবচেয়ে কাছের সংরক্ষিত বন সাতছড়ি। তা-ও ওখান থেকে একটি বিন্টুরং অতটা পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে আসাটা স্বাভাবিক নয়! তবে খোঁজ-খবর নিয়ে যত দূর জানতে পেরেছি, নাসিরনগরে কিছু বাঁশ-বন আছে। আর এটা মোটামুটি জানা যে, ভালুকেরা বাঁশবনকে থাকার জায়গা হিসেবে বেশ পছন্দ করে। তাহলে সম্ভবত নাসিরনগরের বাঁশবাগানই ছিল এর আস্তানা। তবে কি সেখানে আরও আছে? নাকি শেষটাকেই আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছি!
এই নাসিরনগরের বাঁশবনের কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ল আমার নানাবাড়ি পাশে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুরে প্রচুর বাঁশবন আছে। ওই সব বনের দু-চারটায় আমি ঘোরাফেরাও করেছি বেশ। তাহলে ওই সব বাঁশবাগানেও দু-চারটা বিন্টুরং আছে নাকি! এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাটোরে একটা বাঁশভালুক দেখার খবর মিলেছিল।
এবার বিন্টুরং জন্তুটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে পাবেন এদের। লোমশ শরীর, গায়ের রং কালো, তবে পা চারটি খাটো। লোমশ লেজটা শুরুর দিকে চওড়া, তারপর ধীরে ধীরে একটু সরু হয়ে শেষ অংশে ভেতরের দিকে কুঁকড়ে গেছে। এই লেজ দিয়ে এরা শক্তভাবে গাছের ডাল বা অন্য যেকোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। চোখ বড়, গোল কান ছোট। সর্বভুক জন্তুটি খুদে স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, ফলমূল সবই খায়। ডুমুর প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে ওপরের দিকে। শাক-সবজি, লতাপাতায়ও আপত্তি নেই। তবে এর মড়াখেকো হিসেবে তেমন কোনো পরিচিতির খবর খুব একটা জানা নেই।
এবার মেছো বিড়ালদের নিয়ে একটু আলাপ করি। বাংলাদেশের অনেক শহরের সীমানায় এমনকি খোদ ঢাকা শহরের পূর্বাচল এলাকায়ও মেছো বিড়াল এখনো অল্প সংখ্যায় হলো টিকে আছে। তেমনি ঢাকা শহরের সীমানায় অল্প-বিস্তর শিয়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুলও আছে এখনো। বিভিন্ন শহরে ও গ্রামের ঘর-বাড়ির কাছে ছোট বন কিংবা গাছপালা আছে এমন জায়গায় টিকে আছে বনবিড়াল, গন্ধেগোকুল, বাঘডাঁসের মতো প্রাণীরা।
একটা সময় গ্রামীণ বনে, শহরে মানুষের আশপাশে অনেক বন্যপ্রাণীই বিচরণ করত। তখন এত ঝামেলাও হতো না। মানুষ এদের সঙ্গে পরিচিতও ছিল। কিন্তু নগারায়ণের কারণে এসব বন্যপ্রাণী ক্রমেই পিছু হটেছে। অনেকগুলো মানুষের হাতে মারা পড়েছে। কিছু আবার বড় বনের দিকে সরে পড়েছে। তবে এত কিছুর পরও অল্প-বিস্তর বন্যপ্রাণী যে এখনো শহরে বা শহরতলি কিংবা মানুষের বাড়ি-ঘরের আশপাশে কালেভদ্রে দেখা যায়, এটি আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। কিন্তু কোনো বন্যপ্রাণীকে আশপাশে দেখলেই মেরে ফেলা তো একেবারেই উচিত নয়। তেমনি সাফারি পার্কে কিংবা কোনো বনে অবমুক্ত করাটাও কি খুব যুক্তিযুক্ত?
একটা জন্তুকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে অন্য জায়গায় সরানোটাও তো নিষ্ঠুরতা। আমাদের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য সব করতে হবে? আমাদের আশপাশে কি বন্যপ্রাণী থাকতে পারে না?
বর্তমানে শিক্ষাকালীন ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, হগ ব্যাজার যে শুধুই বনে থাকে ব্যাপারটি এমন নয়। গুগল আর্থে দেখা যাচ্ছে, শেরপুরে যেখানে একে পাওয়া যায়, তার আশপাশে হোমস্টেড ফরেস্ট বা গ্রামীণ বন আছে। লাগোয়া বিলও আছে। অচেনা প্রাণী শুধু খুব গহিন বনেই থাকে—এই চিন্তাধারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সঙ্গে কনফ্লিক্টিং।
‘অচেনা’ প্রাণী বাসার পেছনের বাঁশবনেও থাকতে পারে। হগ ব্যাজার একটু ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে। বিল, বাড়ির পাশে ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বন—সবকিছু মিলিয়ে এই হগ ব্যাজার শেরপুরে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা বলেই মনে হয়। হগ ব্যাজারদের কিন্তু কখনো কখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন হলের আশপাশে ঘুরঘুর করতেও দেখা গেছে। এদিকে বাঁশভালুক নাসিরনগর বা আশপাশের এলাকার বাঁশবনে এখনো টিকে থাকা অসম্ভব নয়। বাঁশভালুক নিয়ে বাংলাদেশে সে অর্থে তেমন গবেষণা হয়নি। তবে বাইরের গবেষণা বলছে, বাড়ির আশপাশের বাঁশবনেও এদের থাকা সম্ভব।
মুনতাসির আকাশ বলেন, ‘মেছো বিড়াল আর বনবিড়ালের কথাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। শ্রীমঙ্গলে যেমন কোনো মেছো বিড়াল ধরা পড়লেই এদের বাইক্কার বিলের আশপাশে বা কোনো বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। অথচ বাইক্কার বিল একেবারে ছোট্ট একটা জায়গা। তেমনি প্রতিটি বনের ধারণক্ষমতা আছে। মেছো বিড়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষের আশপাশের এলাকায়ও থাকার সুযোগ দিতে হবে। না হলে স্কটল্যান্ডে যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ওয়াইল্ড ক্যাটেরা; বাংলাদেশের বনবিড়াল, মেছো বিড়াল বা হগ ব্যাজারদের একই অবস্থা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্কটল্যান্ডের একটি বনে কেবল ১২-১৪টি পিউর ওয়াইল্ড ক্যাট টিকে আছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, হগ ব্যাজার-বাঁশভালুকের মতো প্রাণীরা নিজের বাসস্থান ছেড়ে খুব বেশি দূরে যায় না। কাজেই এসব প্রাণী যে এলাকায় ধরা পড়েছে, সেই এলাকারই হওয়ার কথা। হগ ব্যাজার শেরপুরে যেখানে ধরা পড়েছে, এর আশপাশে কোথাও থাকতেই পারে। দিনে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে, রাতে বের হয়। কাজেই এটা এত দিন মানুষের চোখে না পড়া অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, কোনো প্রাণী যে জায়গায় ধরা পড়ে, সেখানে তার বসবাসের পরিবেশ থাকলে ওই জায়গাটায় ছাড়াটাই উচিত। কিন্তু পরিবেশ না থাকলে অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় ছাড়তে হয়। না হলে আবার মানুষের হাতে ধরা পড়বে। আর আহত হলে প্রাণীটিকে অবশ্যই সুস্থ করে ছাড়া উচিত। তা ছাড়া যেসব জায়গায় এসব প্রাণী বসবাসের পরিবেশ ছিল, একসময় সেখানে নতুন করে হেবিটেট তৈরি করতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করাটাও জরুরি।
আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এই দিনের চাওয়া—ভালো থাকুক দেশের বন্যপ্রাণী, আপন পরিবেশেই সুস্থ থাকুক এরা। আমরা মানুষ একটু উদার হলে এসব প্রাণীকে বোঝার চেষ্টা করলেই আমাদের আশপাশেও টিকে থাকতে পারে এরা।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্য প্রাণী। এই মাসের গোড়ার দিকেই যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
৪ মে, শনিবার। শেরপুর পৌর শহরের দিঘারপাড় মহল্লায় লাল মিয়া তাঁর জমিতে একটি বন্যপ্রাণী দেখতে পান। এ ধরনের প্রাণী আগে কখনো দেখেননি তিনি। নাকসহ শরীরের কিছু অংশ শূকরের মতো। আবার বেশ পার্থক্যও আছে। লাল মিয়া আশপাশের লোকজনকে ডাক দেন। তারপর সবাই মিলে ‘অদ্ভুত’ প্রাণীটিকে বেঁধে ফেলেন। সৌভাগ্যক্রমে এটিকে মেরে না ফেলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দেন তাঁরা। পরে জানা যায় এর আসল পরিচয়, এটি একটি হগ ব্যাজার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন হগ ব্যাজারটিকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বনে ছাড়েন।
তিন বছরেরও বেশি আগের একটি ঘটনায় ফিরে যাই। এবারের প্রাণীটির ভাগ্য অবশ্য হগ ব্যাজারটির তুলনায় অনেকই খারাপ ছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চিতনা গ্রাম। এক ব্যক্তি মারা গেলে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। পরদিন সকালে অদ্ভুত চেহারার এক জন্তুকে সেই কবরের আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখে এলাকাবাসী। কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল, লাশখেকো একটি জন্তুর খোঁজ মিলেছে।
ব্যস, আর যায় কোথায়! ওটাকে ধরে মহাসমারোহে পিটিয়ে মেরে ফেলল গ্রামবাসী। এতটুকুই তথ্য জোগাড় করেছিলাম পত্রিকা থেকে। যদিও ওখানে প্রাণীটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল গন্ধগোকুল বা খাটাশ হিসেবে। তবে জন্তুটির লোমশ শরীর বলছিল অন্য কথা। দেখে একে বিন্টুরং বা ভামের মতোই মনে হচ্ছিল। পরে ছবি দেখে নিশ্চিত হই ওটা বিন্টুরংই।
কিন্তু শেরপুর শহরে হগ ব্যাজার কিংবা নাসিরনগরের গ্রামীণ বনে বিন্টুরং এল কীভাবে?
শুরুটা করছি হগ ব্যাজার দিয়ে। তার আগে একটু বর্ণনা দেওয়া যাক। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই আছে। গায়ে-গতের শূূকরাকার ব্যাজাররা মাঝারি। দৈর্ঘ্য ২২-২৬ ইঞ্চি। লেজটা ৫-৬ ইঞ্চি। ওজন ৫-৮ কেজি। নাকটা শূকরের মতো হওয়ায় শূকরাকার ব্যাজার বা হগ ব্যাজার নাম পেয়েছে। তবে দেহের বিভিন্ন অংশ শূকর থেকে অনেকই আলাদা। গাট্টাগোট্টা শরীরে বাদামি লোম থাকে। গলা-মুখ সাদাটে, পিঠের ওপর লম্বা দুটো কালো দাগ। এদের চেহারার সঙ্গে হানি ব্যাজারদেরও বেশ মিল আছে। তবে কথা হলো, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এখন হানি ব্যাজার আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আশার কথা, হগ ব্যাজার বা শূূকরাকার ব্যাজার বাংলাদেশের বনগুলোতে এখনো অল্পবিস্তর আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলার বন-পাহাড়ে। ভাগ্যচক্রে দু-একজন পর্যটক এর দেখাও পেয়ে যান। এমনই একজন প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম। হঠাৎ এদের একটার মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। সীতাকুণ্ডের বন-পাহাড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়বকুণ্ড থেকে তীর্থদাম অগ্নিকুণ্ডে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে এক ঝিরিতে গা ভেজাচ্ছেলেন। আচমকা ওটাকে দেখেন। শূকরের মতো মুখ, লোমশ চামড়ার আশ্চর্য এই প্রাণী দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় তাঁর। বেচারা আগে কখনো হগ ব্যাজারের কথা শোনেননি। চম্পট দেন ওখান থেকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে এর আগেই কাঁপা কাঁপা হাতে দুর্দান্ত দুটি ছবি তুলে ফেলেন ওটার।
হগ ব্যাজাররা মোটামুটি সর্বভুক। ফলমূল, গাছের শিকড়, ছোট জন্তু, মাছ—কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই।
আজকের পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি জুবাইদুল ইসলামের সূত্রে জানতে পারলাম, দিঘারপাড়ের পরেই বিল আছে। বিলের পর আবার আছে দুটি ইটভাটা। পৌরসভার মধ্যে পড়লেও জায়গাটির পরিবেশ গ্রামীণ। বিভিন্ন বাড়ির পেছনে ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড় কিংবা গাছপালা আছে। বিলের কাছে বাড়ি-ঘর থাকলেও সেগুলোর চারপাশেও ঝোপঝাড় ও বেশ গাছপালা আছে। এদিকে এই এলাকা থেকে গারো পাহাড় বেশ দূরে। তাহলে আমরা অনুমান করতেই পারি, হগ ব্যাজারটি এখানকার স্থানীয় প্রাণী। হয়তো এ রকম আরও দু-চারটি এখনো সেখানে টিকে আছে।
এবার নাসিরনগরের ওই ভামকাণ্ডে চোখ বোলানো যাক আবার। ভামরা আমি যত দূর জানি সর্বভুক। ওটা যে আসলেই লাশ খেয়েছে—এমন কোনো প্রমাণও নেই। যদিও গ্রামবাসী নিশ্চিত না হয়েই জন্তুটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আমরা সত্যি জানি না, যে অপরাধে মারা হয়েছে, তা ওই জন্তুটা করেছে কি না।
কথা হলো, নাসিরনগরে তারা এল কীভাবে? নাসিরনগরের সবচেয়ে কাছের সংরক্ষিত বন সাতছড়ি। তা-ও ওখান থেকে একটি বিন্টুরং অতটা পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে আসাটা স্বাভাবিক নয়! তবে খোঁজ-খবর নিয়ে যত দূর জানতে পেরেছি, নাসিরনগরে কিছু বাঁশ-বন আছে। আর এটা মোটামুটি জানা যে, ভালুকেরা বাঁশবনকে থাকার জায়গা হিসেবে বেশ পছন্দ করে। তাহলে সম্ভবত নাসিরনগরের বাঁশবাগানই ছিল এর আস্তানা। তবে কি সেখানে আরও আছে? নাকি শেষটাকেই আমরা দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছি!
এই নাসিরনগরের বাঁশবনের কথা ভাবতে গিয়েই মনে পড়ল আমার নানাবাড়ি পাশে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরষপুরে প্রচুর বাঁশবন আছে। ওই সব বনের দু-চারটায় আমি ঘোরাফেরাও করেছি বেশ। তাহলে ওই সব বাঁশবাগানেও দু-চারটা বিন্টুরং আছে নাকি! এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাটোরে একটা বাঁশভালুক দেখার খবর মিলেছিল।
এবার বিন্টুরং জন্তুটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে পাবেন এদের। লোমশ শরীর, গায়ের রং কালো, তবে পা চারটি খাটো। লোমশ লেজটা শুরুর দিকে চওড়া, তারপর ধীরে ধীরে একটু সরু হয়ে শেষ অংশে ভেতরের দিকে কুঁকড়ে গেছে। এই লেজ দিয়ে এরা শক্তভাবে গাছের ডাল বা অন্য যেকোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে। চোখ বড়, গোল কান ছোট। সর্বভুক জন্তুটি খুদে স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, ফলমূল সবই খায়। ডুমুর প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে ওপরের দিকে। শাক-সবজি, লতাপাতায়ও আপত্তি নেই। তবে এর মড়াখেকো হিসেবে তেমন কোনো পরিচিতির খবর খুব একটা জানা নেই।
এবার মেছো বিড়ালদের নিয়ে একটু আলাপ করি। বাংলাদেশের অনেক শহরের সীমানায় এমনকি খোদ ঢাকা শহরের পূর্বাচল এলাকায়ও মেছো বিড়াল এখনো অল্প সংখ্যায় হলো টিকে আছে। তেমনি ঢাকা শহরের সীমানায় অল্প-বিস্তর শিয়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুলও আছে এখনো। বিভিন্ন শহরে ও গ্রামের ঘর-বাড়ির কাছে ছোট বন কিংবা গাছপালা আছে এমন জায়গায় টিকে আছে বনবিড়াল, গন্ধেগোকুল, বাঘডাঁসের মতো প্রাণীরা।
একটা সময় গ্রামীণ বনে, শহরে মানুষের আশপাশে অনেক বন্যপ্রাণীই বিচরণ করত। তখন এত ঝামেলাও হতো না। মানুষ এদের সঙ্গে পরিচিতও ছিল। কিন্তু নগারায়ণের কারণে এসব বন্যপ্রাণী ক্রমেই পিছু হটেছে। অনেকগুলো মানুষের হাতে মারা পড়েছে। কিছু আবার বড় বনের দিকে সরে পড়েছে। তবে এত কিছুর পরও অল্প-বিস্তর বন্যপ্রাণী যে এখনো শহরে বা শহরতলি কিংবা মানুষের বাড়ি-ঘরের আশপাশে কালেভদ্রে দেখা যায়, এটি আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে। কিন্তু কোনো বন্যপ্রাণীকে আশপাশে দেখলেই মেরে ফেলা তো একেবারেই উচিত নয়। তেমনি সাফারি পার্কে কিংবা কোনো বনে অবমুক্ত করাটাও কি খুব যুক্তিযুক্ত?
একটা জন্তুকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে অন্য জায়গায় সরানোটাও তো নিষ্ঠুরতা। আমাদের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য সব করতে হবে? আমাদের আশপাশে কি বন্যপ্রাণী থাকতে পারে না?
বর্তমানে শিক্ষাকালীন ছুটিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, হগ ব্যাজার যে শুধুই বনে থাকে ব্যাপারটি এমন নয়। গুগল আর্থে দেখা যাচ্ছে, শেরপুরে যেখানে একে পাওয়া যায়, তার আশপাশে হোমস্টেড ফরেস্ট বা গ্রামীণ বন আছে। লাগোয়া বিলও আছে। অচেনা প্রাণী শুধু খুব গহিন বনেই থাকে—এই চিন্তাধারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের সঙ্গে কনফ্লিক্টিং।
‘অচেনা’ প্রাণী বাসার পেছনের বাঁশবনেও থাকতে পারে। হগ ব্যাজার একটু ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে। বিল, বাড়ির পাশে ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বন—সবকিছু মিলিয়ে এই হগ ব্যাজার শেরপুরে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা বলেই মনে হয়। হগ ব্যাজারদের কিন্তু কখনো কখনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন হলের আশপাশে ঘুরঘুর করতেও দেখা গেছে। এদিকে বাঁশভালুক নাসিরনগর বা আশপাশের এলাকার বাঁশবনে এখনো টিকে থাকা অসম্ভব নয়। বাঁশভালুক নিয়ে বাংলাদেশে সে অর্থে তেমন গবেষণা হয়নি। তবে বাইরের গবেষণা বলছে, বাড়ির আশপাশের বাঁশবনেও এদের থাকা সম্ভব।
মুনতাসির আকাশ বলেন, ‘মেছো বিড়াল আর বনবিড়ালের কথাও আমাদের চিন্তা করা উচিত। শ্রীমঙ্গলে যেমন কোনো মেছো বিড়াল ধরা পড়লেই এদের বাইক্কার বিলের আশপাশে বা কোনো বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। অথচ বাইক্কার বিল একেবারে ছোট্ট একটা জায়গা। তেমনি প্রতিটি বনের ধারণক্ষমতা আছে। মেছো বিড়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীকে মানুষের আশপাশের এলাকায়ও থাকার সুযোগ দিতে হবে। না হলে স্কটল্যান্ডে যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ওয়াইল্ড ক্যাটেরা; বাংলাদেশের বনবিড়াল, মেছো বিড়াল বা হগ ব্যাজারদের একই অবস্থা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্কটল্যান্ডের একটি বনে কেবল ১২-১৪টি পিউর ওয়াইল্ড ক্যাট টিকে আছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, হগ ব্যাজার-বাঁশভালুকের মতো প্রাণীরা নিজের বাসস্থান ছেড়ে খুব বেশি দূরে যায় না। কাজেই এসব প্রাণী যে এলাকায় ধরা পড়েছে, সেই এলাকারই হওয়ার কথা। হগ ব্যাজার শেরপুরে যেখানে ধরা পড়েছে, এর আশপাশে কোথাও থাকতেই পারে। দিনে মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে, রাতে বের হয়। কাজেই এটা এত দিন মানুষের চোখে না পড়া অসম্ভব নয়।
তিনি বলেন, কোনো প্রাণী যে জায়গায় ধরা পড়ে, সেখানে তার বসবাসের পরিবেশ থাকলে ওই জায়গাটায় ছাড়াটাই উচিত। কিন্তু পরিবেশ না থাকলে অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় ছাড়তে হয়। না হলে আবার মানুষের হাতে ধরা পড়বে। আর আহত হলে প্রাণীটিকে অবশ্যই সুস্থ করে ছাড়া উচিত। তা ছাড়া যেসব জায়গায় এসব প্রাণী বসবাসের পরিবেশ ছিল, একসময় সেখানে নতুন করে হেবিটেট তৈরি করতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এসব ক্ষেত্রে মানুষকে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করাটাও জরুরি।
আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এই দিনের চাওয়া—ভালো থাকুক দেশের বন্যপ্রাণী, আপন পরিবেশেই সুস্থ থাকুক এরা। আমরা মানুষ একটু উদার হলে এসব প্রাণীকে বোঝার চেষ্টা করলেই আমাদের আশপাশেও টিকে থাকতে পারে এরা।

প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিক অংশগ্রহণ আরও জোরদার করতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এ জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
৬ ঘণ্টা আগে
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
২ দিন আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ।
৩ দিন আগে
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ আরও জোরদার করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
আজ শনিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ, বন্য প্রাণী উদ্ধার এবং সচেতনতা কার্যক্রমে যারা ইতিমধ্যে কাজ করছেন বা আগ্রহী, তাঁদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধন ফরম পূরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংগৃহীত তথ্য সরকারি কাজে ব্যবহৃত হবে।
স্বেচ্ছাসেবকেরা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, অবৈধ বন্য প্রাণী বাণিজ্য প্রতিরোধ, প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
বন অধিদপ্তর নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। তাদের সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান বা বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কারের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।
নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীরা অনলাইনে এই লিংকে ফরম পূরণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে প্রয়োজনে বন সংরক্ষক, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকার সঙ্গে মোবাইল নম্বর: ০১৯৯৯০০০০৪২ অথবা ই-মেইল: [email protected], [email protected]এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণকে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কর্মযাত্রায় সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করে, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ আরও জোরদার করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
আজ শনিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ, বন্য প্রাণী উদ্ধার এবং সচেতনতা কার্যক্রমে যারা ইতিমধ্যে কাজ করছেন বা আগ্রহী, তাঁদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিবন্ধন ফরম পূরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংগৃহীত তথ্য সরকারি কাজে ব্যবহৃত হবে।
স্বেচ্ছাসেবকেরা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, অবৈধ বন্য প্রাণী বাণিজ্য প্রতিরোধ, প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
বন অধিদপ্তর নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। তাদের সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান বা বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কারের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।
নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীরা অনলাইনে এই লিংকে ফরম পূরণ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে প্রয়োজনে বন সংরক্ষক, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকার সঙ্গে মোবাইল নম্বর: ০১৯৯৯০০০০৪২ অথবা ই-মেইল: [email protected], [email protected]এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণকে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কর্মযাত্রায় সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করে, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্যপ্রাণী। গত ৪ মে যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
২২ মে ২০২৪
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
২ দিন আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ।
৩ দিন আগে
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কার্তিক মাস বিদায় নিতে আর মাত্র দিন সাতেক বাকি। এরপর আসবে হেমন্তকাল। প্রকৃতিতেও লেগেছে হেমন্তের ছোঁয়া। দেশের কোথাও কোথাও পড়ছে হালকা শীত। কোথাওবা পড়েছে হালকা কুয়াশা। আজ শুক্রবারের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও সারা দেশে কুয়াশা পড়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আজ সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে গরমের অনুভূতিও আগের মতো থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৩ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৬ মিনিটে এবং আগামীকাল শনিবার সূর্যোদয় হবে ৬টা ৯ মিনিটে।

কার্তিক মাস বিদায় নিতে আর মাত্র দিন সাতেক বাকি। এরপর আসবে হেমন্তকাল। প্রকৃতিতেও লেগেছে হেমন্তের ছোঁয়া। দেশের কোথাও কোথাও পড়ছে হালকা শীত। কোথাওবা পড়েছে হালকা কুয়াশা। আজ শুক্রবারের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসেও সারা দেশে কুয়াশা পড়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আজ সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে গরমের অনুভূতিও আগের মতো থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৩ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় কোনো বৃষ্টি হয়নি।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৬ মিনিটে এবং আগামীকাল শনিবার সূর্যোদয় হবে ৬টা ৯ মিনিটে।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্যপ্রাণী। গত ৪ মে যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
২২ মে ২০২৪
প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিক অংশগ্রহণ আরও জোরদার করতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এ জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
৬ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ।
৩ দিন আগে
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ১১টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৭৭, যা গতকাল ছিল ১১১। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ ৮ম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ১৭তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৫৯৭, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের কলকাতা, চীনের বেইজিং, ইরাকের বাগদাদ ও চীনের উহান। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২২৮, ২১৩, ১৯৪ ও ১৮৭।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ১১টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৭৭, যা গতকাল ছিল ১১১। বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ ৮ম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ১৭তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৫৯৭, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের কলকাতা, চীনের বেইজিং, ইরাকের বাগদাদ ও চীনের উহান। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২২৮, ২১৩, ১৯৪ ও ১৮৭।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্যপ্রাণী। গত ৪ মে যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
২২ মে ২০২৪
প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিক অংশগ্রহণ আরও জোরদার করতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এ জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
৬ ঘণ্টা আগে
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
২ দিন আগে
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী ঢাকার আকাশে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। আকাশ হালকা মেঘে ঢাকা। আজ দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে তাপমাত্রা কমবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৬ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৮ মিনিটে।
এদিকে সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

রাজধানী ঢাকার আকাশে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। আকাশ হালকা মেঘে ঢাকা। আজ দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে তাপমাত্রা কমবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৬ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৮ মিনিটে।
এদিকে সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এখনো আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রামে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও টিকে আছে কোনো কোনো বন্যপ্রাণী। গত ৪ মে যেমন শেরপুর পৌর শহরের ভেতরেই ধরা পড়ে একটি হগ ব্যাজার। আমাদের আশপাশে থাকা এসব প্রাণীরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে আপন পরিবেশে। এদের নিয়ে আজ ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের আয়োজন।
২২ মে ২০২৪
প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় নাগরিক অংশগ্রহণ আরও জোরদার করতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। এ জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
৬ ঘণ্টা আগে
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
২ দিন আগে
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার এ তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির অবস্থা আজ দুর্যোগপূর্ণ।
৩ দিন আগে