Ajker Patrika

৭৫-এ তরুণ নূর

মীর রাকিব হাসান, ঢাকা
৭৫-এ তরুণ নূর

মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই জনপ্রিয় আসাদুজ্জামান নূর। কেবল অভিনেতাই নন, রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি সফল।

আজ (৩১ অক্টোবর) নূরের ৭৫তম জন্মদিন।

এবারের জন্মদিনে

বড় পরিসরে জন্মদিন উদ্‌যাপন বরাবরই এড়িয়ে গেছেন এই নন্দিত ব্যক্তিত্ব। তবে এবার আর এড়াতে পারেননি। কাছের মানুষেরা মিলে আজ বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘তোমারই হোক জয়’ শীর্ষক জন্মোৎসবের আয়োজন করেছেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘যদিও নিজে কিছু করছি না। আহকাম উল্লাহ সবাইকে নিয়ে একটা কমিটি করেছে। গোলাম কুদ্দুছ আছে, অনুপম সেন সভাপতি। ওরাই সব আয়োজন করছে। আমাকে শুধু হাজির হতে বলা হয়েছে। আরও অনেকেই চেষ্টা করেছে। আমি আর কোনোটায় রাজি হইনি। বলেছি, সবাই মিলে এই একটা আয়োজনই করব। ৭৫ বছর বেঁচে থাকাও তো একটা বিশাল ব্যাপার। কোনোবারই উদ্‌যাপন করি না, এবারই একটু রাজি হলাম আরকি।’ শৈশবের জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলায় জন্মদিন হতো না। বাড়িতে একটু ভালো রান্নাবান্না হতো। ঘটা করে কিছু করা হতো না।’

পরিবার

মা-বাবা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। দুই ভাই, এক বোন। ছোট ভাইয়ের নাম আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী। বোনের নাম কাওসার আফসানা। স্ত্রী শাহীন আখতার পেশায় চিকিৎসক। ছেলে সুদীপ্ত ও মেয়ে সুপ্রভা।

সংস্কৃতির বীজ

আসাদুজ্জামান নূরের মা-বাবা দুজনই সংস্কৃতির ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী ছিলেন। তাঁদের উৎসাহেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় আসাদুজ্জামান নূরের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোট্ট শহর নীলফামারীতে যখন কোনো অনুষ্ঠান হতো, আমার বাবা সেগুলোতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। আমাদের বাড়িতে রিহার্সাল হতো। সেখান থেকেই উৎসাহ পাই। স্কুলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তো ছিলই। পরে আস্তে আস্তে আমার নিজের ভেতরও আগ্রহ তৈরি হলো।’

যেভাবে মঞ্চে

প্রথমদিকে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপিতে চাকরি করতেন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ‘চিত্রালী’ ম্যাগাজিনে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন। সেই সূত্রে আলী যাকেরের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই পরিচয়। নূরকে আলী যাকের বললেন, ‘আপনি রিহার্সাল দেখতে আসেন, সাংবাদিক হিসেবে।’ আসাদুজ্জামান নূর গিয়ে দেখেন আতাউর রহমান, আবুল হায়াত, গোলাম রব্বানী, কাজী তামান্না, ড. ইনামুল হক, লাকী ইনামরা আছেন। ‘এঁদের তো আমি চিনি আগে থেকেই। কারণ স্বাধীনতার আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে যে নাটকগুলোর আয়োজন করেছি, তখন তো বিভিন্ন জায়গা থেকে সবাইকে ডেকে এনে নাটক করতে হতো, তখন থেকে উনাদের সঙ্গে পরিচয়। আমাকে দেখে সবাই বললেন, এই যে প্রম্পটার পাওয়া গেছে। তখন আমাকে সবাই মিলে প্রম্পটিংয়ে লাগিয়ে দিলেন।’

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সখ্য

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ টিভি নাটক করতে গিয়ে। তাঁর নাটকেই সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। হুমায়ূন আহমেদের যত টিভি সিরিয়াল হয়েছে বিটিভিতে, প্রতিটিতেই অভিনয় করেছেন। ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তাঁর পরিচালিত ‘আগুনের পরশমণি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিগুলোতেও কাজ করেছেন তিনি।

আসাদুজ্জামান নূরপ্রথম অভিনয়

তিনি প্রথম অভিনয় করেন আবুল হায়াতের নাক ফাটার কল্যাণে! নাটকের নাম ‘তৈল সংকট’। রশীদ হায়দারের লেখা। একটা মারামারির দৃশ্য ছিল। ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বাদল রহমানের ঘুষি লেগে আবুল হায়াতের নাক ফেটে গেল রিহার্সালের সময়। তাঁকে  হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। অথচ এক দিন পরেই নাটক।  বিজ্ঞাপনও চলে গেছে পত্রিকায়। পরিচালক আলী যাকের বললেন, ‘নূরকে নামিয়ে দেওয়া হোক। ও প্রম্পট করে, ওর নাটকটি মোটামুটি মুখস্থ আছে।’ ১৯৭৩ সালের ঘটনা। এভাবেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন আসাদুজ্জামান নূর।

টেলিভিশন নাটকে

টেলিভিশনে কাজ শুরু করেছেন ১৯৭৪ সালে। প্রথম নাটক ‘রঙের ফানুস’। আবদুল্লাহ আল-মামুনের নাটক। ছোট্ট একটা চরিত্র ছিল। দুই-আড়াই মিনিটের। এই দিয়ে শুরু।

ছবিতে অভিনয়

প্রথম অভিনয় শর্টফিল্মে। নাম ‘হুলিয়া’। পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল। নির্মলেন্দু গুণের কবিতার চলচ্চিত্ররূপ। এরপর করলেন ‘দহন’। শেখ নিয়ামতের ছবি। এতে আমি আর ফরীদি ছিলাম। এরপর করলাম ‘শঙ্খনীল কারাগার’।

প্রিয় চরিত্র

টেলিভিশনে তাঁর পছন্দের চরিত্র ‘অয়োময়’ ধারাবাহিকের ছোট মির্জা। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে ‘কোথাও কেউ নেই’ বলে জানান আসাদুজ্জামান নূর। মানুষের কাছে এখনো জনপ্রিয় সেই নাটকের বাকের ভাই চরিত্রটি। এ ছাড়া ‘পিঞ্জিরার মধ্যে বন্দী হইয়া রে’ নাটকে খুনির চরিত্রটাও তাঁর প্রিয়। চরিত্রের নাম নান্দাইলের ইউনূস। ‘নিমফুল’ বলে একটা নাটকে চোরের চরিত্রও তাঁর পছন্দের। ‘আগুনের পরশমণি’ ছবিতে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র। মঞ্চে প্রিয় নাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’। তা ছাড়া ‘ওয়েটিং ফর গডো’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’ তাঁর অন্যতম প্রিয় নাটক।

সেরা প্রাপ্তি

আসাদুজ্জামান নূর মনে করেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো শিল্পী জয়নুল আবেদিন থেকে কবি শামসুর রহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক—সবার সান্নিধ্য পাওয়া। তিনি বলেন, ‘গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমামের মতো মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ হয়েছে। হয়তোবা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমি কখনো যেতে পারিনি, তবে অনেক বড় নেতার সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগ হয়েছে, সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে—সবকিছু মিলিয়ে এগুলোই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

একনজরে আসাদুজ্জামান নূর

আসল নাম:  আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী

জন্ম ও জন্মস্থান: ৩১ অক্টোবর, ১৯৪৬ সালে। জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত

বাবা-মা: আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও আমিনা বেগম

পড়াশোনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (আইন)

প্রথম অভিনয়: মঞ্চে (তৈল সংকট), টিভিতে (রঙের ফানুস), চলচ্চিত্রে (হুলিয়া)

সংসদ সদস্য:  নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালে নির্বাচিত

মন্ত্রিত্ব: সংস্কৃতিমন্ত্রী (২০১৪-১৯)

সম্মাননা: স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত