আজম খানের নাম শুনি ১৯৯২ সালের দিকে, ঢাকার ব্যান্ড ফিডব্যাকের কাছে। ততদিনে আজম খান নামটি বাংলা রকের অগ্রপথিক হিসেবে তার তুমুল জনপ্রিয়তার ২০ বছর পার করে ফেলেছে। সম্ভবত সঠিক তথ্যের অভাবে পশ্চিম বাংলার সংগীতপ্রেমীরা এই ক্রেডিটটা দিয়েছে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’কে, যাদের শুরুটা হয়েছিল আজম খানের অনেক পরে। আমি আজম খান সম্পর্কে, তাঁর কাজ ও ইতিহাস সম্পর্কে আরো গভীর ও বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৯৮ পর্যন্ত, সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে পরিচয় হওয়া পর্যন্ত। সাবিনা আমাকে আজম খানের জনপ্রিয় কিছু গান গেয়ে শোনায়।
বাংলাদেশের প্রত্যেকে আজম খানের গান কয়েক লাইন হলেও জানে। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে যদি কেউ ‘আলাল ও দুলাল’ গান ধরে, আশপাশের প্রত্যেকেই তাল মেলাতে শুরু করবে। আজম খানের গান এই শ্রেণিভেদ ঘোচাতে পেরেছিল। সমাজের তথাকথিত উঁচুতলার লোক থেকে বস্তিবাসী—প্রত্যেকেই তাঁর গানের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারে। এমনটা দৃশ্যত দেখা যায় না।
এত জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও তিনি মেইনস্ট্রিম মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কখনো যাননি। উঁচু ক্লাসের ধার ধারেননি, সংগীতকাররা যে সার্কেল বানিয়ে চলেন, সেখানেও কখনো দেখা যায়নি তাঁকে। তিনি কেবল গান বেঁধে গেছেন, রেকর্ডিং করে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছেন অনেকটা আগন্তুকের মতো।
আমাকে বলা হয়েছিল, আজম খান একসময় ছোট একটি ক্যাসেটের দোকান খুলেছিলেন। দোকানের আয় দিয়ে জীবিকা চালাতেন। ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। যদিও আরেকটু বড় হয়ে ক্রিকেটও খেলতেন এবং ভালো খেলতেন। কিন্তু ফুটবলটা ছিল তাঁর প্যাশন। বিকেলবেলায় তিনি এলাকার মাঠে গিয়ে ছেলেদের ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করতেন। এলাকার বাচ্চারা তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল।
এমনকি ২৮ মার্চ ২০১১, আমি যেদিন আজম খানের সাক্ষাৎকার নিতে সমর্থ হই, তখন তিনি ৬২ বছরে। সদ্য ক্যানসারের চিকিৎসার ধকল কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন। সাক্ষাৎকার শেষ করে তাঁর বাসার সামনে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, বলেছিলেন—এরপর তিনি মাঠে যাবেন, বাচ্চাদের ফুটবল খেলা দেখবেন। এটাই ছিলেন আজম খান! আমাদের সময়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সংগীতব্যক্তিত্ব!
২০১১ সালের মার্চে সাবিনার সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে যাই। ইচ্ছা ছিল, আজম খানের সঙ্গে যেভাবেই হোক আলাপ করতেই হবে। তাঁর সঙ্গে আমার আলাপচারিতা সাবিনা ছোট্ট ক্যামকর্ডারে রেকর্ড করবে, এমনই পরিকল্পনা ছিল। সাবিনা তখন ক্যামকর্ডারটা নতুন কিনেছে, চালাতে অত পটু নয়; আমি কিছু বেসিক জিনিস শিখিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, যেভাবে যতখানি পারো রেকর্ড করে রেখো। এটা আমাদের ব্যক্তিগত সুভিন্যর হয়ে দাঁড়াবে।
আজম খানের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সাবিনা। আমাদের খুবই ভালো বন্ধু আসাদুজ্জামান নূরকেও বলা হয়েছিল পরিকল্পনার ব্যাপারে। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশ টিভির ক্যামেরা আমাদের পুরো আলাপচারিতা রেকর্ড করে রাখবে। রেকর্ডের একটা কপি দেশ টিভি দিয়েছিল আমাকে। অনেকে পরে জানিয়েছিল, এত বিস্তারিতভাবে আজম খানের ইন্টারভিউ এর আগে কেউ নেয়নি।
লাখ লাখ বাঙালির মনে তাঁর অদ্ভুত আবেদনের কারণে ক্ষীণকায়, লম্বা, আপনভোলা, প্রতিষ্ঠানবিমুখ, প্রচারনিস্পৃহ আজম খান সিরিয়াস গবেষণার বিষয় হতে পারেন। সংগীত ও সমাজের সম্পর্ক বাংলার বিদ্বজ্জনদের মস্তিষ্কে কোনো দিনই তেমন গুরুত্ব পায়নি (ফলে এই ‘মস্তিষ্ক’ও আমার মতে গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত)। আর আধুনিক সংগীত ও তার সামাজিক ভূমিকা তো বিষয় হিসেবে ব্রাত্যই থেকে গেল। তাই আজম খানের সংগীত, পরিবেশনার আঙ্গিক ও গণ-আবেদন নিয়ে এখনো গবেষণাধর্মী কোনো কাজই হলো না। অকল্পনীয়র কম জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আজম খান বাংলাদেশের সমাজে প্রান্তবাসীই থেকে গেছেন।
(ইংরেজি থেকে অনূদিত)
দেখুন কবীর সুমনের নেওয়া আজম খানের সাক্ষাৎকার:
আজম খানের নাম শুনি ১৯৯২ সালের দিকে, ঢাকার ব্যান্ড ফিডব্যাকের কাছে। ততদিনে আজম খান নামটি বাংলা রকের অগ্রপথিক হিসেবে তার তুমুল জনপ্রিয়তার ২০ বছর পার করে ফেলেছে। সম্ভবত সঠিক তথ্যের অভাবে পশ্চিম বাংলার সংগীতপ্রেমীরা এই ক্রেডিটটা দিয়েছে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’কে, যাদের শুরুটা হয়েছিল আজম খানের অনেক পরে। আমি আজম খান সম্পর্কে, তাঁর কাজ ও ইতিহাস সম্পর্কে আরো গভীর ও বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৯৮ পর্যন্ত, সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে পরিচয় হওয়া পর্যন্ত। সাবিনা আমাকে আজম খানের জনপ্রিয় কিছু গান গেয়ে শোনায়।
বাংলাদেশের প্রত্যেকে আজম খানের গান কয়েক লাইন হলেও জানে। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে যদি কেউ ‘আলাল ও দুলাল’ গান ধরে, আশপাশের প্রত্যেকেই তাল মেলাতে শুরু করবে। আজম খানের গান এই শ্রেণিভেদ ঘোচাতে পেরেছিল। সমাজের তথাকথিত উঁচুতলার লোক থেকে বস্তিবাসী—প্রত্যেকেই তাঁর গানের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারে। এমনটা দৃশ্যত দেখা যায় না।
এত জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও তিনি মেইনস্ট্রিম মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কখনো যাননি। উঁচু ক্লাসের ধার ধারেননি, সংগীতকাররা যে সার্কেল বানিয়ে চলেন, সেখানেও কখনো দেখা যায়নি তাঁকে। তিনি কেবল গান বেঁধে গেছেন, রেকর্ডিং করে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছেন অনেকটা আগন্তুকের মতো।
আমাকে বলা হয়েছিল, আজম খান একসময় ছোট একটি ক্যাসেটের দোকান খুলেছিলেন। দোকানের আয় দিয়ে জীবিকা চালাতেন। ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। যদিও আরেকটু বড় হয়ে ক্রিকেটও খেলতেন এবং ভালো খেলতেন। কিন্তু ফুটবলটা ছিল তাঁর প্যাশন। বিকেলবেলায় তিনি এলাকার মাঠে গিয়ে ছেলেদের ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করতেন। এলাকার বাচ্চারা তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল।
এমনকি ২৮ মার্চ ২০১১, আমি যেদিন আজম খানের সাক্ষাৎকার নিতে সমর্থ হই, তখন তিনি ৬২ বছরে। সদ্য ক্যানসারের চিকিৎসার ধকল কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন। সাক্ষাৎকার শেষ করে তাঁর বাসার সামনে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, বলেছিলেন—এরপর তিনি মাঠে যাবেন, বাচ্চাদের ফুটবল খেলা দেখবেন। এটাই ছিলেন আজম খান! আমাদের সময়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সংগীতব্যক্তিত্ব!
২০১১ সালের মার্চে সাবিনার সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে যাই। ইচ্ছা ছিল, আজম খানের সঙ্গে যেভাবেই হোক আলাপ করতেই হবে। তাঁর সঙ্গে আমার আলাপচারিতা সাবিনা ছোট্ট ক্যামকর্ডারে রেকর্ড করবে, এমনই পরিকল্পনা ছিল। সাবিনা তখন ক্যামকর্ডারটা নতুন কিনেছে, চালাতে অত পটু নয়; আমি কিছু বেসিক জিনিস শিখিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, যেভাবে যতখানি পারো রেকর্ড করে রেখো। এটা আমাদের ব্যক্তিগত সুভিন্যর হয়ে দাঁড়াবে।
আজম খানের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সাবিনা। আমাদের খুবই ভালো বন্ধু আসাদুজ্জামান নূরকেও বলা হয়েছিল পরিকল্পনার ব্যাপারে। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশ টিভির ক্যামেরা আমাদের পুরো আলাপচারিতা রেকর্ড করে রাখবে। রেকর্ডের একটা কপি দেশ টিভি দিয়েছিল আমাকে। অনেকে পরে জানিয়েছিল, এত বিস্তারিতভাবে আজম খানের ইন্টারভিউ এর আগে কেউ নেয়নি।
লাখ লাখ বাঙালির মনে তাঁর অদ্ভুত আবেদনের কারণে ক্ষীণকায়, লম্বা, আপনভোলা, প্রতিষ্ঠানবিমুখ, প্রচারনিস্পৃহ আজম খান সিরিয়াস গবেষণার বিষয় হতে পারেন। সংগীত ও সমাজের সম্পর্ক বাংলার বিদ্বজ্জনদের মস্তিষ্কে কোনো দিনই তেমন গুরুত্ব পায়নি (ফলে এই ‘মস্তিষ্ক’ও আমার মতে গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত)। আর আধুনিক সংগীত ও তার সামাজিক ভূমিকা তো বিষয় হিসেবে ব্রাত্যই থেকে গেল। তাই আজম খানের সংগীত, পরিবেশনার আঙ্গিক ও গণ-আবেদন নিয়ে এখনো গবেষণাধর্মী কোনো কাজই হলো না। অকল্পনীয়র কম জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আজম খান বাংলাদেশের সমাজে প্রান্তবাসীই থেকে গেছেন।
(ইংরেজি থেকে অনূদিত)
দেখুন কবীর সুমনের নেওয়া আজম খানের সাক্ষাৎকার:
ভৌতিক গল্পের প্রতি আলাদা টান রয়েছে অর্থহীন ব্যান্ডের সাইদুস সালেহীন সুমন ও ক্রিপটিক ফেইটের শাকিব চৌধুরীর। দুই বন্ধু মিলে দেখেছেন অনেক হরর সিনেমা। ভৌতিক গল্পের সন্ধানে ছুটে গেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
৬ মিনিট আগেআবুল হায়াত ও দিলারা জামানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটক ‘বেলা ও বিকেল’। এতে তাঁরা দুজন অভিনয় করেছেন নামভূমিকায়। আবুল হায়াত অভিনয় করেছেন বিকেল চরিত্রে এবং দিলারা জামান বেলার ভূমিকায়।
১৪ মিনিট আগেতাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলার একমাত্র কন্যা আইরা তেহরীম খান। মা-বাবার মতো আইরাও নাম লেখালেন শোবিজে। শুরু হলো বিজ্ঞাপন দিয়ে। প্রথম কাজে আইরা সঙ্গে পেয়েছে মা মিথিলাকে। গত শনিবার প্রকাশ্যে এসেছে বিজ্ঞাপনটি।
১৭ মিনিট আগে১৮ আগস্ট নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৭৬তম জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার। ১৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে শুরু হবে উৎসব, চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। উৎসবে প্রদর্শিত হবে সেলিম আল দীনের দুটি নাটক ‘দেয়াল’ ও ‘নিমজ্জন’।
২১ মিনিট আগে