Ajker Patrika

পথ হারাল পথের মাঝেই

আসাদ সরকার
পথ হারাল পথের মাঝেই

৭৬ বছর বয়সের একজন দোতারা বাজিয়ে গলা ছেড়ে গান করছেন, গানের সঙ্গে সঙ্গে দুলছে শরীর, দোতারাটাও। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আরও অনেকে। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে বৃদ্ধের পরিবেশনা। শেষ হতেই মুহুর্মুহু করতালি।

শিল্পী রমজান বাউলের জীবনে এমন ঘটনা রোজই ঘটে। গান শুনে যে বকশিশ পান, তা নিয়ে প্রথমে ছোটেন ওষুধের দোকানে। শ্বাসকষ্ট আর বুকের ব্যথা তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। একসঙ্গে কিনতে গেলে টাকায় কুলোয় না, সে কারণে প্রতিদিন কেনেন। ওষুধ কিনে পায়ে হেঁটেই বাড়ির পথে রওনা দেন। তবে একনাগাড়ে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারেন না। হাঁপিয়ে ওঠেন। কোথাও বসে একটু বিশ্রাম নেন। ঠিক এই সময়টাতেই অনেক বেশি কান্না পায় রমজান বাউলের। বুকের ভেতরে চেপে থাকা ব্যথাগুলো আচমকা নাড়া দিয়ে ওঠে।

রমজান বাউলের বয়স তখন ১৪ বছর। সন্ন্যাসতলীর মেলায় দেখা হয়েছিল রহিম চাঁদ বাউলের সঙ্গে। মেলা থেকেই শখের বসে কিনেছিলেন একটা খঞ্জরি (বাদ্যযন্ত্র)। মেলায় ‘পাল্লা পিঠার গান’ নামে একটা অনুষ্ঠান হতো। সেখানে বিজয় সরকারের গান ধরেছিলেন রহিম চাঁদ, ‘যারে হারায়েছি জীবনে’। ১৪ বছরের কিশোর রমজান সেই গানে বিভোর হয়ে আপন মনে বাজিয়েছিলেন হাতে থাকা খঞ্জরিটা। গানের মাঝে রহিম চাঁদ লক্ষ করেন রমজানের খঞ্জরির তাল। সেই থেকেই শুরু। রহিম চাঁদ রমজানকে শিষ্য করে নেন। কিশোর রমজান হয়ে ওঠেন রমজান বাউল। খঞ্জরির হাত দখল করে দোতারা।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে রমজানের পদচারণা শুরু হয় সারা দেশে। বাউল গান, পালা গান, কবি লড়াই—এমন বড় বড় আসর থেকে ডাক আসতে শুরু করে। প্রখ্যাত বয়াতি হালিম বয়াতি, রশিদ সরকার, লতিফ সরকার, রইছ সরকার, মাতাল রাজ্জাক—এঁদের সঙ্গে এক মঞ্চে গান করেন। তবে জাঁকজমকপূর্ণ সেই আসরগুলো কিছুতেই টানত না তাঁকে। একদিন দোতারাটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অজানায়। গলা ছেড়ে গাইতে গাইতে চলে যান দুচোখ যেদিকে যায়।

গান গেয়ে উপার্জিত টাকায় তিনি ১১ সন্তানকে বড় করেছেন। সাত ছেলে ও চার মেয়ে। স্বপ্ন দেখতেন সাত ছেলে সপ্তাহে এক দিন করে বাবাকে দেখলে পুরো সপ্তাহ কেটে যাবে। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের হিসাব মেলে না। কোনো ছেলেই পাশে নেই তাঁর। মেয়েরাও শ্বশুরবাড়িতে। জীবনের শেষ বেলায় এসে সন্তানদের নিয়ে দেখা স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় মাঝে মাঝে ডুকরে কাঁদেন রমজান, যে চিত্র সবার অচেনা, অজানা। তবে কখনো কখনো নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন, ‘ওদেরই তো চলে না, আমারে দেখবে কী করে?’ কৈশোরে যে গান দিয়ে শুরু করেছিলেন জীবনের পথচলা, জীবনের শেষ বেলায়ও সেই গানই তাঁর পাশে আছে। গান ছাড়া কিছু নেই তাঁর। গলা ছেড়ে গান ধরেন রমজান বাউল—‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু তোর পিড়িতের জ্বালা, ঘর করিতাম বৃক্ষতলায় থাকিতাম একেলা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা: নান্দাইলে সাবেক এমপি-মন্ত্রীকন্যার বিরুদ্ধে মামলা

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত