Ajker Patrika

বাবার নামে ইনস্টিটিউট করছি

বাবার নামে ইনস্টিটিউট করছি

বাবা গান গাওয়ার জন্য যেখানে যেতেন, প্রায় সময়ই আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। ওনাকে মানুষ এত ভালোবাসতেন, শত শত শ্রোতা ওনার গান মগ্ন হয়ে শুনতেন। আমাদের বাড়ির সামনে যে রাস্তা, সেখানে প্রতিদিন মানুষের ভিড় লেগে থাকত আবদুল আলীম সাহেব বের হবেন, তাঁকে এক নজর দেখবেন, কথা বলবেন বলে। বাবা মানুষের এতটাই কাছের ছিলেন। ওনার এত জনপ্রিয়তা ছিল, মানুষ তাঁকে এতটাই ভালোবাসত—আমার সেই বয়সে সেটা বিস্ময়কর লাগত। উনি যখন মারা গেছেন তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।

 বাবা নিজে গানবাজনা করতেন। আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারেও তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। আমরা ভাইবোনদের একসঙ্গে বসিয়ে গানও শেখাতেন। তবে সেটা খুব কম। কিছুক্ষণ শিখিয়ে বলতেন, যাও পড়তে বসো। উনি তখন এত ব্যস্ত ছিলেন যে আমাদের নিয়ে আলাদা সময় বের করার খুব একটা সুযোগও ছিল না।

২০১৪ সালে ইউনেসকোর পৃষ্ঠপোষকতায় একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বাবার গান সারা বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখান থেকে ১৪ জন শিল্পী নির্বাচন করেছিলাম। কাজটি আবার চালু করার চেষ্টা করব। তাহলে বাবার গানগুলো সুর বিকৃত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। ওনার নামে একটা ফোক ইনস্টিটিউট করারও ইচ্ছে আছে। সেই উদ্যোগ অনেক দিন আগেই নিয়েছিলাম। করোনার কারণে কিছুদিন কার্যকলাপ বন্ধ ছিল। আবার কাজ শুরু করব। বাবার গানের পাশাপাশি আমাদের লোকজ বাদ্যযন্ত্রগুলোর প্রশিক্ষণও হবে। সরকারি সহযোগিতাও চাইব।

বাবার নামে একটা সংগঠন আছে আবদুল আলীম ফাউন্ডেশন, ওই সংগঠনের একটা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করব শিগগিরই। বাবার গানগুলো ধরে রাখার জন্য এটা জরুরি। সেখানে ওনার যত গান আমাদের সংগ্রহে আছে সেগুলো থাকবে। তবে বাবার অনেক গান এরই মাঝে ভাইরাল হয়ে গেছে। বিভিন্ন চ্যানেল থেকে এগুলো আপলোড করা হচ্ছে, তাদের তো রাইটও নেই গানগুলো নিয়ে এভাবে ব্যবসা করার। এটা হয়তো আমাদেরও ভুল, আমরাও এত দিন চেষ্টা করিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কপিরাইট করে বাবার সব গানের স্বত্ব নিয়ে নেব। সেই চেষ্টা চলছে।

সংগীতশিল্পী আবদুল আলীমের তিন সন্তান আসগর আলীম, নূরজাহান আলীম ও জহির আলীমএখন ভাটিয়ালির চর্চা নেই বললেই চলে। বাবার গলায় ভাটিয়ালির যে গভীরতা ছিল, সেই গভীরতা এখন কারও মাঝেই পাই না। বাবার গলা এত চড়া আর ভরাট ছিল, যেটা সবার নেইও। অনেকেরই ধারণা, বাবার কণ্ঠ ছিল সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এমন কণ্ঠ সহজে হয় না। চড়া স্কেলে আর লম্বা টানের গান এখন আর হয় না বললেই চলে। সারি গান হয়, এটা অনেকটা ভাটিয়ালির কাছাকাছি। ভাটিয়ালি আসলে কণ্ঠের গান। কণ্ঠের শক্তিটাই এই গানের শক্তি। ভাটিয়ালির আসল মজাটা এখন কারও কাছেই পাই না। গায়কের অভাবে এর চর্চা বা প্রসারও হচ্ছে না। ভাটিয়ালি গান তো আমাদের দেশের সম্পদ। প্রচুর গান তৈরি হয়। কিন্তু ভাটিয়ালির মতো মূল্যবান একটি গানের ধারা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। হেলায় অমূল্য সম্পদ হারাতে বসেছি।

সাদাকালো যুগের প্রায় ছবিতেই বাবার গান থাকত। অনেকে ওনাকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তবে উনি গান চর্চাতেই পুরো সময় দিতেন। ওনাকে নিয়ে অনেকেই এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইতেন। তবে উনি গানটাই গাওয়ার চেষ্টা করতেন।

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আদালতের বিচারকাজে বাধা দেওয়ায় আইনজীবীর দণ্ড, ক্ষমা চেয়ে পার

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত