Ajker Patrika

মিয়া ভাইয়ের উঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা

বিনোদন প্রতিবেদক
মিয়া ভাইয়ের উঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা

বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি মিয়া ভাই খ্যাত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)। জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামের পাঠান বাড়িতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সারির একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে নানা অবদানের জন্য বিখ্যাত এই পাঠান বাড়ি। যুদ্ধাহত সৈনিকদের এনে এই বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে সেবা দিতেন ডা. আজগর হোসেন পাঠান। গতকাল ২৬ মার্চ পাঠান বাড়ির উঠানে বসেছিল জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা।

গতকাল শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণায় দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা কে বি এম মফিজুর রহমান খান স্বাগত বক্তব্য করেন। একে একে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা। উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা অবদানের সাক্ষী। প্রায় দেড়শতাধিক সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধা অংশ নিয়েছিল শুধু এই একটি ইউনিয়নেই। বর্তমানে ৮৫ জন জীবিত। তাদের অংশগ্রহণে মধ্য দিয়ে পুরো অনুষ্ঠান ছিল মুখরিত।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের লোমহর্ষক গল্পে দর্শকরা বুঁদ হয়ে ছিলেন। বক্তাদের অলিখিত ইতিহাস শুনে তৃপ্ত হয়েছে শ্রোতাদের হৃদয়। তাদের বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো, ‘৫০ বছর আগে আমরা পাকিস্তানের  যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষকে নিরাপদ, আধুনিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেওয়া। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে, ৫০ বছর আগে আমরা যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি তারা এখনো আগের অবস্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসে পাকিস্তান থেকে পঞ্চাশ বছর এগিয়ে গেছে। দেশের উন্নয়ন এখন সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আলোচিত। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পুরো এলাকায় বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়জয়কার। পৃথিবীতে যে কয়টি ভাষণ সমৃদ্ধ তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দেয়া সেই ভাষণটি আজ অন্যতম সেরা বলে বিবেচিত।’

এক মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, ‘ইয়াহিয়া খাঁন যখন অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দিল, ঠিক তখনই আমরা ‘‘রক্তসূর্য উঠেছে, বীর বাঙালি জেগেছে। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আমার দাবি, তোমার দাবি, এক দাবি”, এমন উজ্জীবিত স্লোগানে বেলদী থেকে মিছিল শুরু হয়ে কালীগঞ্জের আকাশ মুখরিত করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত ছিলেন। পয়লা মার্চের পর আর মানুষকে শিখিয়ে দিতে হয়নি কোথায় যাবে। সব কথার শেষ কথা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমাদের মা বোনেরা আমাদের খাবার দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে, দিয়েছে নিরাপত্তা। কালীগঞ্জে অবস্থিত মসলিন কটন মিলস লিমিটেড তিন বার মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নিলেও পরবর্তীতে তা পাকিস্তানিরা তাদের দখলে নিয়ে নেয়। অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং উন্নত ট্রেনিং না থাকার কারণে বারবার হেরে যাচ্ছিলাম। ট্যাংকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের শিখানো হলো- বোতলের ভেতরে কেরোসিন আর পটাশিয়াম ক্লোরাইড ভরে তাতে সলতার সাহায্যে আগুন লাগিয়ে ট্যাংকের গায়ে মারলে ট্যাংক ধ্বংস হবে। আগরতলা কতবার যে হেঁটে গিয়েছি তা মনে নেই। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত শরীর, হাঁটার মধ্যেই দশ মিনিট ঘুমিয়েছি। এতো কষ্ট করে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান, দুদকের সাবেক মহাপরিচালক শহিদুজ্জামান সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহমেদ, অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ হোসেন পাঠান, উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোস্তফা মিয়া, তুমলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুবকর মিয়া বাক্কু প্রমূখ। আলোচনা শেষে বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের সংগীত শিল্পীদের পরিবেশনায় চলে দেশের গান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত