Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

সন্ধ্যাকালীন অ্যামেচার থিয়েটার চর্চায় আটকে আছে মঞ্চনাটক

মোহাম্মদ বারী। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের ২৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় নাট্যদল অনুস্বর। আজ দলটির ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ মঞ্চে আসছে দলের নতুন প্রযোজনা ‘বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান’। এ ছাড়া আয়োজন করা হয়েছে অনুস্বর সংলাপ অনুষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনুস্বরের দলপ্রধান অভিনেতা ও নির্দেশক মোহাম্মদ বারীর সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

আজ অনুস্বর নাট্যদলের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কী থাকছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে?

নতুন নাটক ‘বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান’-এর প্রদর্শনী এবং অনুস্বর সংলাপ নামের একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। প্রতিবছর এই সংলাপে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয় নাট্যকর্মী ও দর্শকদের সামনে। নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর তিনি বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যকে ঘিরে শুরু হয় সংলাপ। দর্শকেরা অতিথিকে প্রশ্ন করেন। এবার থাকছেন নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক অধ্যাপক অসীম দাশ। সংলাপটি অনুষ্ঠিত হবে ২৬ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে, সন্ধ্যা ৭টায়। এ ছাড়া বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান নাটকটির প্রদর্শনী হবে আজ ২৫ জুলাই অনুস্বরের নিজস্ব স্টুডিওতে। বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মোট দুটি প্রদর্শনী হবে।

বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান নাটকের প্রেক্ষাপট কী নিয়ে?

বর্তমান বিশ্বের যুদ্ধাবস্থা এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আজ আমাদের সামনে উপস্থিত, যার উত্তর দিতে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ কুণ্ঠিত, ভয়ার্ত, লজ্জিত। যুদ্ধ প্রতিনিয়ত এমন সব বীভৎস ঘটনার জন্ম দিচ্ছে, যেখানে জ্ঞান অনেকটাই অসার, নৈতিকতা ক্লান্ত আর মানবতা পরাজিত। এই পরিস্থিতি আজ গোটা মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ রকম বিভ্রান্তিময় সময়ের পাকচক্রে গভীর রাতে এক বুদ্ধিজীবীর বাসায় হাজির হয় শয়তান। এ নাটক বর্তমান বিভ্রান্তকালের এক কল্পিত রাতের গল্প। লিখেছেন সাইফ সুমন। পরে আমি কিছু জায়গায় সংযোজন করেছি। তাই নাট্যকার হিসেবে আমাদের দুজনের নাম রয়েছে। নির্দেশনা দিয়েছি আমি। অভিনয় করেছেন সাইফ সুমন, মিতু, মাজেদুল মিঠু, নুরুজ্জামান সরকার ও রিমা।

এমন বিষয় বেছে নেওয়ার কারণ কী?

এটা মূলত স্যাটায়ার নাটক। তৌফিক আল হাকিমের মিসরীয় একটি নাটক এবং খলিল আল জিবরানের দুটি গল্পের নির্যাস থেকে রচিত হয়েছে। এটি বেছে নেওয়ার কারণ, যুদ্ধের ডামাডোল পৃথিবীজুড়েই চলছে। যুদ্ধ আসলে কাদের কারণে হয়, কেন হয়, কী কারণে হয়—সে বিষয়গুলো ব্যঙ্গাত্মক জায়গা থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক সময় আমরা মনে করি, শান্তির জন্য যুদ্ধ হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল শান্তির জন্য। যুদ্ধের বিপরীতে আরেকটা জায়গা থাকে। এর সঙ্গে রক্তপাতের সম্পর্ক আছে, অমানবিকতার সম্পর্ক আছে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে শান্তির চেয়ে মানবতার বন্দিত্বের ঘটনা বেশি ঘটে। মানুষের মুক্তির চেয়ে অন্য গোষ্ঠীকে বন্দী করার একটা কায়দা। যুগে যুগে দেখা গেছে যুদ্ধের পেছনে আছে অন্য কোনো উদ্দেশ্য। ফলে মানুষের বেঁচে থাকার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আরও ভয়াবহভাবে নিস্পৃহ হয়।

অনুস্বরের ছয় বছর পূর্ণ হলো। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দল গড়েছিলেন, তার কতখানি পূরণ হয়েছে বলে করেন?

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমাদের যথেষ্ট কর্মকাণ্ড ছিল। বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান আমাদের দ্বাদশ প্রযোজনা। এত কম সময়ে ১২টি নাটক করার অভিজ্ঞতা কম দলেরই আছে। আমাদের কাজ বলে দেয় দল হিসেবে আমরা কতটা সক্রিয়। অনুস্বরের সদস্যদের জীবনী শক্তি হলো কর্মচাঞ্চল্য। এটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি শুরু থেকে। নাটকের বাইরে আমরা সংলাপের আয়োজন করি বিভিন্ন সময়। ভারতেও আমরা নাটক করেছি। সব মিলিয়ে ৬ বছরে আমরা যে কর্মমুখর সময় পার করেছি, তাতে ব্যক্তিগত ও দলপ্রধান হিসেবে আমি আনন্দিত।

নাট্য প্রদর্শনীর জন্য দলগুলোকে নির্ভর করতে হয় শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির ওপর। কিন্তু আপনাদের নিজস্ব স্টুডিও আছে। এই ভাবনটা কী করে এল?

আমাদের যেহেতু রিহার্সালের জায়গা প্রয়োজন, তাই সেই জায়গাতেই যদি প্রদর্শনীর জায়গা করা যায়, তাহলে নিয়মিত কাজ করার একটি সুযোগ তৈরি করা যাবে। সেই ভাবনা থেকেই অনুস্বর স্টুডিও। অল্প আসন হলেও দর্শকদের নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজন করা যাচ্ছে। এখানে আমরা কম দৈর্ঘ্যের নাটকগুলো করছি এবং সফল হয়েছি। এতে দর্শক যেমন ভিন্ন স্বাদের নাটক পাচ্ছেন, আমরাও হলের জন্য কারও ওপর নির্ভরশীল থাকছি না। দলের সদস্যদের নিয়মিত চর্চার একটা ব্যবস্থাও হয়েছে। অনেক দলেরই নিজস্ব জায়গা আছে। যেখানে তারা রিহার্সাল করে। তারাও চাইলে এমনটা করতে পারে। অনেকেই এখন করছে। যেমন প্রাচ্যনাট, আরণ্যক তাদের ওয়ার্কশপ প্রোগ্রামগুলো করছে।

আমাদের দেশে মঞ্চনাটকের যাত্রাটা দীর্ঘ সময়ের। গুণী অনেক শিল্পী উঠে এসেছেন মঞ্চ থেকে। কিন্তু এত বছরেও মঞ্চে কেন পেশাদারত্ব তৈরি হলো না?

একটা প্রজন্ম বিশেষ করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নব নাট্য আন্দোলন শুরু করেছিল। মানুষকে নতুনভাবে থিয়েটারের রস খুঁজে পাওয়ার পথ তৈরি করেছিল। তাদের আমি ধন্যবাদ দিই। কিন্তু পেশাদারত্ব তৈরির কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তাদের ছিল না। এটা হতেই পারে। কারণ তারা মাত্র শুরু করেছিল। একসময় নানা পেশায় জড়িয়ে গেছে। এ কারণেই তারা সন্ধ্যাকালীন থিয়েটার করেছে। কিন্তু থিয়েটারকে আশ্রয় করে একটা পেশার জায়গা তৈরি হতে পারে, সেটি ভাবেনি। তাদের উদ্দেশ্যহীন কর্মকাণ্ডের জন্যই থিয়েটার পেশাদারত্বের জায়গায় পৌঁছায়নি। যথাযথ চেষ্টা করলে হয়তো পেশাদারত্বের জায়গায় যাওয়া যেত। কিন্তু সন্ধ্যাকালীন অ্যামেচার থিয়েটার চর্চার মধ্যে আটকে রাখা হলো মঞ্চনাটককে। নিজস্ব পেশার বাইরে শিল্পচর্চার রস পেতে সন্ধ্যার সময়টা কাটানোর জন্য থিয়েটারকে বেছে নেওয়া হলো।

পেশাদারত্ব তৈরি করতে কী করা উচিত বলে মনে করেন?

এর জন্য যে অবকাঠামো ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, স্পনসরশিপের প্রয়োজন, সেটা আমাদের নেই। একচ্ছত্রভাবে কাউকে দোষারোপ করেও লাভ নেই। এই ক্ষেত্রটাই বিকশিত হয়নি। কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে তা করবে কিসের আশায়। সেই প্রাপ্তির জায়গা তৈরি করতে হবে। অনেকেই চেষ্টা করছেন। তবে সময় লাগবে। আরও একটি আন্দোলন লাগবে পেশাদারত্ব সৃষ্টি করতে। সেটা হয়তো শুরু হয়েছে। যেমন সৈয়দ জামিল আহমেদ প্রজেক্টভিত্তিক অনেক কাজ করছেন। অনেক ছেলেমেয়ে নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের পারিশ্রমিক দিয়ে শো করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা অন্যদেরও পথ দেখাচ্ছে, অনুপ্রাণিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

স্পিকারের বাসভবনই হবে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাস

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: মানিকগঞ্জের প্যানেল মেয়র আরশেদ আলীসহ চারজন কারাগারে

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত