Ajker Patrika

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখার আগে ভাবুন

আশিকুর রিমেল
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৪৬
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখার আগে ভাবুন

অপরাধ কী? একটা ঘটনাই তো? সে ঠিক আছে। কিন্তু ঘটনায় কর্তা থাকে, থাকে বিধেয়। আর কিছু কি থাকে? থাকে। পৃথিবীর নিয়মে ‘পর্যবেক্ষক’ ছাড়া তো ঘটনাই নেই। তাহলে ঘটনার সঙ্গে কে জড়ায়, কীভাবে জড়ায়? যদি ঘটনা অপরাধই হয়, তবে ভুক্তভোগী কি শুধু ঘটনার সক্রিয় সত্তা কেবল, নাকি এর সঙ্গে দ্রষ্টাও জড়িয়ে পড়ে? দ্রষ্টা নিজেও কি ভুক্তভোগী হয়ে ওঠে না? এই তাবৎ প্রশ্ন নিয়ে তালগোল পাকিয়ে গেলে একটু বড় শ্বাস নিন। 

তারপর ভাবুন একটা সিনেমা আপনার সামনে অথবা আপনি তার সামনে। আর তার নাম—‘রেহানা মরিয়ম নূর’। সম্পূর্ণ বাংলাদেশে ধারণকৃত একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। যোগ্যতা তো বটেই, অর্জনের খাতার দিকে তাকালেই সিনেমাটির নাম গর্ব করে বলতে হবে। দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে যখন মৌলিক নির্মাণ নিয়ে হাপিত্যেশ চলছে, তখন কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেওয়া সিনেমা নিয়ে আলাদা করে কথা বলার দাবি এমনিতেই ওঠে। 

এমনিতে পুরস্কার না জেতা পর্যন্ত কোনো নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন আলোচনার রেওয়াজ নেই। এই বিচারেও রেহানা মরিয়ম নূর আলোচনার দাবিটি জানিয়ে রেখেছে জোরেশোরে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো আঁ সেরতাঁ র‍্যগা বিভাগে প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়া ছাড়াও হংকং এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘রেহানা’। ঝুলিতে রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসে (অ্যাপসা) গ্র্যান্ড জুরি ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। আর এসব এড়িয়ে গিয়ে শুধু নির্মাণ হিসেবে দেখলেও আলোচনাটি করতে হবে। কারণটি উন্মোচিত হবে ক্রমশ। 

তবে, আপনি যদি ভেবে থাকেন অনেক আলোচনা-সমালোচনা শুনেছি এই সিনেমা নিয়ে; যাই দেখে আসি, তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। শুধু তাঁরাই নন, যাঁরা সিনেমাটি খুব বুঝতে যাবেন; তাঁরা তো বটেই, এমনকি নিছক বিনোদনের জন্য যাঁরা যাবেন, তারাও বিরক্ত হওয়ার আশঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি আসলে বিরক্তিরও নয়, উদ্বেগের, মানসিক চাপের! খুব চলতি কথায় বোঝাতে ‘বিরক্ত’ই বলছি। 

কিন্তু কী কারণ? সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি! আগে এই প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা আছে কি না, একটু ভেবে দেখুন তো! 

একটি ঘটনা! কেউ দেখেনি! তাই বলে কি তা ঘটেনি? আবার যদি এমন হয়, সেই ঘটনার সাক্ষী শুধু আপনিই, তাহলে ঘটনাটি প্রমাণের জন্য কি আপনি একাই যথেষ্ট? অন্যদিকে আপসেরও ঢের সুযোগ আছে! আপনি কি আপস করবেন? যদি ঘটনাটি আপনার পাশেই বারবার ঘটে যাওয়া একটি অন্যায় হয়, তবুও? আর যদি আপস না-ই করেন, তাহলে কেনই-বা করবেন না, ভেবেছেন? 

আপাতত ভাবনাটা থাক। এসব না ভাবলেও চলবে। কারণ, সিনেমাটিই আপনাকে সঙ্গে করে এই ভাবনার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যে সিনেমাটি দেখতে যাচ্ছেন, তার নাম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আপনি জানেন যে, এই নামের একটি চরিত্রের সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটবেই। এবং সেটি অবশ্যই প্রধান চরিত্র হবে। 

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার একটি দৃশ্য

হয়েছেও তাই। সিনেমাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেহানার সঙ্গেই চলতে হয় দর্শকদের। চিত্রনাট্য ও দৃশ্যায়ন দেখে অনায়াসে বলা যায় সিনেমাটির নামকরণ সার্থক হয়েছে। অন্তত এ বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আপনি ভীষণ রাগী বা জেদি হলে তো কথাই নেই, প্রথম দৃশ্য ও ডায়ালগ থেকেই আপনি রেহানা মরিয়ম নূর হয়ে উঠবেন। বলে নেওয়া ভালো, নারী-পুরুষের ভেদে নয়, আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা থেকেই আপনি নূরের সঙ্গে মিশে যাবেন। একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক আচার-আচরণের মধ্যেই সে প্রবণতা রয়েছে। আর রাগ, জেদ কম থাকলেও সমস্যা নেই; ক্যামেরা তো আছেই। মুভিং মোডে সব সময় আপনাকে নিয়ে যাবে রেহানার সঙ্গে। চরিত্রের সঙ্গে সংযোগ ঘটতে যা লাগে, তাই। ক্যামেরার কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। চরিত্রের সঙ্গে ক্যামেরার দৌড় আপনাকেও হাঁপিয়ে তুলতে পারে। 

যদিও ক্যামেরা মুভিং শটে আমাদের দেশের আরেক নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত চলচ্চিত্র, টেলিছবিতে দেখে আমরা খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। সে কথায় না যাই। 

একটা কথা বলুন তো, আপনার কি মনে হয় একশ্রেণির মেয়েই থাকে, যারা আসলে ধর্ষণ হওয়ার যোগ্য? ধর্ষণের জন্য একশ্রেণির নারীই থাকে? থাক আপনাকে আর এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করতে চাই না! এসব প্রশ্ন এবং উত্তর সিনেমার গল্পের মধ্যে পেয়ে যাবেন হয়তো। শুধু আপনার নিজের অভিজ্ঞতাটুকু যোগ হবে। 

তা ছাড়া এখনই সিনেমার গল্প তো আর বলে দিতে পারি না। আজও দেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি; একটু খুঁজলেই সেই তালিকা পেয়ে যাবেন। সিনেমার দলের বাইরে, বিশেষত নির্মাতার বাইরে প্রত্যেকেই আমরা দর্শক। রেহানা মরিয়মের গল্পটা দেখে-শুনে, বুঝতে চেষ্টা করতে পারি, মন্তব্যও করতে পারি। এ ছাড়া আরেকটু সাহস থাকলে কোনো চরিত্রকে ধারণ করার শিক্ষাটিও নিয়ে নিতে পারি! 

কিন্তু এই মুহূর্তে গল্প বলা, উঁহু; আবার পরে কখনো বিস্তর গল্প করা যাবে। তবে হ্যাঁ, সিনেমাটিতে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে রেহানা মরিয়মকে বুঝতে কিঞ্চিৎ দূরত্ব থেকে যাবে, বড়জোর সেগুলোর বিষয়ে ব্যক্তিগত কিছু মন্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। 

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার পোস্টাররেহানা মরিয়ম অন্য চরিত্রগুলোর নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে তার একান্ত নিজের বলতে কোনো সময় নেই। অন্য চরিত্রগুলোর প্রতি শুধু নিরলস দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মানুষের বাইরে স্রষ্টার ইবাদতে নামাজ পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত চরিত্রগুলোর ভয়, দুশ্চিন্তা, অহংকার, হুমকি, অসহায়ত্ব তাঁকে পুরোটা সময় মানসিক চাপে রাখে। চলতি কথায় ‘বিরক্ত’ করে। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা, আমাদের চারপাশেই বারবার ঘটে যাওয়া একটা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে গিয়ে ক্ষুব্ধ, জেদি, বাধ্য, বিধ্বস্ত, দুঃখী, আহত, আনন্দিত করে মরিয়মকে। বিশেষ করে সিনেমাটিতে ঘটনার সঙ্গে শব্দ ধারণ, দরজার শব্দ, পানির শব্দ, এমনকি নিশ্বাসের শব্দ ভীষণ প্রভাবিত করেছে। 

শুরুতেই বলেছি, দর্শক ‘বিরক্ত’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি! কারণ, সিনেমাটিতে আপনি যে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন, তার সময়টা এভাবেই কাটছে! 

ক্রমে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে রেহানার রাগ ও জেদের অন্যতম কারণগুলো। সিনেমাটি শেষে যদি আপনি বিরক্ত হন এবং চারপাশের কোথাও এর প্রভাব পড়তে দেখেন, তাহলে বুঝে নেবেন নির্মাতা সফল হয়েছেন। সে হিসেবে কমই ভুল হবে যে, নির্মাতা আপনাকে বিরক্তই করতে চেয়েছিলেন! 

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানানো খুব জরুরি। সেটি হলো রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটির অন্যতম প্রধান চরিত্র তার মেয়ে। মা ও মেয়ে—উভয়ের সঙ্গেই রয়েছে ‘বাহির’ থেকে দরজা আটকে যাওয়ার দৃশ্য! একটু খেয়াল রাখবেন, দরজার ভেতর-বাহির এই বন্দী-মুক্তি খেলায় কোনো রহস্য লুকিয়ে নেই তো! 

চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি এখনো চলছে। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই ছবিটি পাইরেসি হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ কথা বলা মুশকিল যে, কে কোন মাধ্যমে দেখবেন। তবে সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখার আনন্দটা আসলেই অন্য রকম। 

শেষ কথা। কথা নয় ঠিক। আচ্ছা, #metoo আন্দোলনের কথা আপনাদের মনে আছে? রেহানা মরিয়ম নূর দেখতে দেখতে এ নিয়ে বলতে বা লিখতে গিয়ে এ প্রশ্নই মাথায় আসছে কেবল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬ বছর পর প্রকাশ্যে এল অপু-মোমরেনাজের বিচ্ছেদের খবর

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
রাশেদ মামুন অপু। ছবি: সংগৃহীত
রাশেদ মামুন অপু। ছবি: সংগৃহীত

ছয় বছর আগে ভেঙেছে সংসার। এত দিন গোপন রেখেছিলেন সেই খবর। অবশেষে আজ রোববার তা প্রকাশ্যে এলো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন রাশেদ মামুন অপু ও মমরেনাজ মোম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে প্রেম হয় দুজনের, সেই প্রেমের পরিণতি বিয়ে, সংসার। রাশেদ মামুন অপু জনপ্রিয় অভিনেতা, মমরেনাজ মোম বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নিউজ প্রেজেন্টার। দুজনেই জানালেন, আর একসঙ্গে নেই তাঁরা।

রাশেদ মামুন অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটা দুজনে আলোচনা করেই নিয়েছি। কারণ, জীবনে সবারই ভালো থাকা জরুরি।’

মমরেনাজ মোম জানিয়েছেন, অনেক আগেই দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন তাঁরা। দীর্ঘদিনের গোপন বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন নিজেদের স্বস্তির জন্য। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অবশেষে ঈশ্বর ক্ষমা করলেন। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, ভয়, লজ্জার জন্য দীর্ঘ ৬ বছরের বিচ্ছেদ চেপে রাখার সিদ্ধান্ত দুজন মিলে নিয়েছিলাম। গোপনীয়তা বিষয়টি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল দুজনের জন্যই। তাই দুজনের সিদ্ধান্তে আমরা বিষয়টি পরিষ্কার হতে চাই। এখন খুব আন্তরিকভাবে দুজনের সিদ্ধান্তেই আমরা বিষয়টি প্রকাশ্যে আনছি। বিচ্ছেদ মানেই ধ্বংস নয়, শেষ হয়ে যাওয়া নয়...।’

মোমরেনাজ মোম। ছবি: সংগৃহীত
মোমরেনাজ মোম। ছবি: সংগৃহীত

অপু ও মমরেনাজের সংসারে এক ছেলে রয়েছে। তার সম্পর্কে জানতে চাইলে অপু জানান, সে অপুর সঙ্গেই আছে। অপুর সঙ্গেই থাকবে। তবে বিচ্ছেদের এই ঘটনা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাইলেন না অপু। জানালেন, তিনিও একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করে ঘটানাটি জানিয়েছেন। তবে স্ট্যাটাসটি এখন অনলি মি করে রেখেছেন। বিচ্ছেদের ঘটনাকে জীবনের বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে দেখছেন না দুজনের কেউ। বরং জীবনের আরেকটি অধ্যায় বলেই মনে করছেন।

রাশেদ মামুন অপু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে থিয়েটার করেছেন। সেখান থেকেই শোবিজের সঙ্গে সখ্য শুরু। ঢাকায় এসে গিয়াস উদ্দীন সেলিমের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর নিজে চারটি নাটক পরিচালনা করেছেন। অভিনয়ে এসে রাজশাহী ভাষার আঞ্চলিক সংলাপ দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। সেই থেকে নিয়মিত অভিনয় করছেন, একের পর এক নাটক সিনেমায় অভিনয় করে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘প্রিন্স’ সিনেমায় শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুরু হচ্ছে তারকাবহুল ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ সিনেমার শুটিং

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘বনলতা এক্সপ্রেস’ সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা (সর্ববাঁয়ে) ও অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘বনলতা এক্সপ্রেস’ সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা (সর্ববাঁয়ে) ও অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’ অবলম্বনে তানিম নূর বানিয়েছিলেন ‘উৎসব’। এবার হুমায়ূন আহমেদের ‘কিছুক্ষণ’ উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করছেন তিনি। নাম ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। আগেই জানা গিয়েছিল, এতে অভিনয় করবেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ ও সাবিলা নূর। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো অভিনয়শিল্পীদের। এতে আরও আছেন আজমেরি হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, ইন্তেখাব দিনার ও শ্যামল মাওলা।

হুমায়ূন আহমেদের ‘কিছুক্ষণ’ উপন্যাসে অসুস্থ মামাকে দেখতে ট্রেনে করে দিনাজপুর যাচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী চিত্রা। তার সেই ট্রেন জার্নির অভিজ্ঞতা নিয়েই এগিয়ে যায় কাহিনি। নির্মাতা সেই গল্পই পর্দায় তুলে ধরবেন, তবে সিনেমার প্রয়োজনে থাকবে কিছু সংযোজন-পরিমার্জন। থাকবে নতুন চমক। তবে কী সেই চমক, তা জানা যাবে বনলতা এক্সপ্রেস মুক্তির পর। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামীকাল থেকে ঢাকায় শুরু হবে শুটিং। চিত্রা চরিত্রে থাকছেন সাবিলা নূর। আগামী রোজার ঈদে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।

পারিবারিক গল্পের উৎসব সিনেমায় অভিনয় করেছেন একঝাঁক তারকা। এবারও তারকাসমৃদ্ধ পারিবারিক গল্পের সিনেমা দিয়ে দর্শকের সামনে আসার পরিকল্পনা নির্মাতার। বনলতা এক্সপ্রেস প্রসঙ্গে নির্মাতা তানিম নূর বলেন, ‘উৎসব শেষ করার পর নতুন সিনেমা নিয়ে যখন পরিকল্পনা করছিলাম, অনেকে পরামর্শ দিল আরেকটা পারিবারিক গল্প নিয়ে কাজ করতে। তখন ভাবলাম, হুমায়ূন আহমেদের কোনো গল্প নিয়ে কাজ করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই কিছুক্ষণ উপন্যাস নিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু।’

অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘চরিত্রের প্রেমে পড়েই এই সিনেমায় যুক্ত হওয়া। সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ দারুণ লেগেছে। এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসটি আমার পড়া, সেটার প্রতিও ভালো লাগা আছে। বনলতা এক্সপ্রেসে আমার সহশিল্পী যাঁরা আছেন, তাঁরা আমার অনেক দিনের সঙ্গী। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।’

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘তানিম নূরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সিনেমাটি সবার ভালো লাগবে। হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে সিনেমা এই বিষয়টি যেমন দর্শকের আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তেমনি অভিনেতা হিসেবে আমরাও একটি ভালো সিনেমার অংশ হতে অধীর হয়ে আছি।’

আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘এই সিনেমার নির্মাতা ও সহশিল্পীরা আমার ভীষণ পছন্দের। তানিম নূর যখন এই চরিত্রের কথা বলল, তখন আমার মেয়ে বলেছে, তুমি এটি করো। কারণ আমাকে নাকি সব সময় সিরিয়াস আর অবসাদগ্রস্ত চরিত্রে দেখা যায়। আর হুমায়ূন আহমেদ যে আমার কত পছন্দের, সেটা সবাই জানে। অনেক বছর পর তাঁর গল্পে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। এটা আমার কাছে বিশেষ কিছু।’

জাকিয়া বারী মম বলেন, ‘বনলতা এক্সপ্রেসে উঠে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর ড্রাইভার তানিম নূর। এ ছাড়া যাত্রাপথে সহযাত্রীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমার সহযাত্রীরা সবাই দুর্দান্ত। আশা করি দারুণ একটি যাত্রা হবে আমাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসের আয়োজন

৬ ইয়াং স্টারকে নিয়ে ৩ বিচারকের গান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
(বাঁ থেকে) মেসি, আব্রাম, লুইস সুয়ারেজ ও শাহরুখ খান। ছবি: সংগৃহীত
(বাঁ থেকে) মেসি, আব্রাম, লুইস সুয়ারেজ ও শাহরুখ খান। ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালে আরটিভি ইয়াং স্টার প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন গীতিকার কবির বকুল, সুরকার ইমন সাহা ও কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজা। বিচারকের আসনে বসে তাঁরা বলেছিলেন প্রতিযোগিতার শীর্ষ শিল্পীদের সুযোগ করে দিতে কাজ করবেন, তাদের নিয়ে গান বানাবেন। কথামতো সেই প্রতিযোগিতার শীর্ষ দশের ছয় প্রতিযোগীকে নিয়ে গান বানালেন তাঁরা। বিজয় দিবস উপলক্ষে তৈরি গানটি আজ বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে লিজার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হবে। ‘আমরা সবাই বাংলাদেশ’ শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন লিজা এবং ইয়াং স্টার ২০২৩-এর জাহিদ অন্তু, অনিক, অরিন্দল, আদিবা, অঙ্কিতা ও দীপান্বিতা। সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন ইমন সাহা। ‘আমার মুখে বাংলাদেশ, আমার বুকে বাংলাদেশ, সুখে দুঃখে আমার বাংলাদেশ... আমরা সবাই বাংলাদেশ’—এমন কথায় গানটি লিখেছেন কবির বকুল।

আমরা সবাই বাংলাদেশ গানটির সার্বিক আয়োজন ও প্রযোজনা করেছেন লিজা। গানের ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছেন রাজ বিশ্বাস শংকর। শুটিং হয়েছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, শিখা চিরন্তনসহ বিভিন্ন লোকেশনে।

কবির বকুল বলেন, ‘মূলত গানটির উদ্যোক্তা কণ্ঠশিল্পী লিজা। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি দেশের গান উপহার দেওয়ার। এই সুন্দর দেশটার সঙ্গে প্রতিটি মানুষের যে আত্মিক টান, আবেগমাখা সম্পর্ক, দেশের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা—তা-ই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি গানের কথায়।’

সুরকার ইমন সাহা বলেন, ‘প্রতিযোগিতার সময় থেকেই আমাদের ইচ্ছা ছিল নতুনদের নিয়ে গান করার। সেই ইচ্ছার প্রতিফলন এই গান। সবাই মিলে একটি সুন্দর দেশের গান উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস গানটি ভালো লাগবে সবার।’

কণ্ঠশিল্পী লিজা বলেন, ‘আমি নিজেও রিয়েলিটি শো থেকে এসেছি। শো শেষে আমাদের বাকি জার্নিটা কিন্তু সলো হয়, দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। নিজের জীবন থেকেই উপলব্ধি করেছি, শুধু নতুন শিল্পী খুঁজে বের করলেই হবে না, তাঁদের প্রপার গাইড করতে হবে। তাঁদের পাশে থাকতে হবে। তাই বিচারকের আসনে থাকার সময়ই বলেছিলাম, নতুনদের জন্য কাজ করব, শুধু কাভার সং নয়, প্রতিটি নতুন শিল্পীর মৌলিক গান হওয়া প্রয়োজন। তাই ইয়াং স্টারদের নিয়ে আমাদের এই দেশের গান। চেষ্টা করেছি একটি সুন্দর গান উপহার দিতে। আমরা চাই গানটি সব শ্রোতার কাছে পৌঁছে যাক, তাই আমার চ্যানেল থেকে প্রকাশ করা হলেও, কোনো ধরনের কপিরাইট রেসট্রিকশন রাখছি না। যে কেউ চাইলে যেকোনো চ্যানেলে গানটি প্রকাশ করতে পারবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রটারড্যাম উৎসবে ‘দেলুপি’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘দেলুপি’ সিনেমার দৃশ্য
‘দেলুপি’ সিনেমার দৃশ্য

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের ঘটনা, বাস্তবতা আর সম্পর্কের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম বানিয়েছেন ‘দেলুপি’। যেখানে রাজনীতি আছে, ভালোবাসা আছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, যাত্রাশিল্পীদের সংগ্রাম আছে; আর আছে জীবন বদলানোর গল্প। এটি নির্মাতার প্রথম সিনেমা। গত ৭ নভেম্বর খুলনায় মুক্তি পেয়েছিল দেলুপি। পরের সপ্তাহে দেশব্যাপী মুক্তি পায়। প্রথম সিনেমাতেই প্রশংসা পাচ্ছেন তাওকীর। এখনো সিনেমাটি চলছে প্রেক্ষাগৃহে। এর মধ্যে জানা গেল নেদারল্যান্ডসের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রটারড্যামে জায়গা করে নিয়েছে দেলুপি। এই উৎসবে আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার হবে সিনেমাটির।

আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম শহরে শুরু হবে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রটারড্যামের ৫৫তম আসর। যেখানে বিশ্বের সেরা নির্মাতা, উদীয়মান প্রতিভা ও আর্টহাউস সিনেমার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। উৎসবের ‘ব্রাইট ফিউচার’ বিভাগে প্রদর্শিত হবে দেলুপি। এই বিভাগে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বানানো প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেমা নির্বাচিত হয়।

রটারড্যামে দেলুপির যাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বসিত পুরো টিম। পরিচালক তাওকীর বলেন, ‘রটারড্যাম থেকে আমরা যখন প্রথম মেইল পেয়ে জানতে পারি, তারা সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করতে চায়। সে সময় একটু বিপাকেই পড়ে গিয়েছিলাম। কেননা আমরা সিনেমা বানানোর সময় দেলুটি ইউনিয়নের মানুষদের কথা দিয়েছিলাম, সিনেমাটা প্রথমে তাঁদের দেখাব। আমাদের এই ইচ্ছা ফেস্টিভ্যালের অর্গানাইজারদের জানিয়েছিলাম। তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়। আমরা সিনেমাটি আগে খুলনায় রিলিজ দিই। এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের দর্শকেরা দেলুপি দেখতে পারবেন। তাই আমরা আনন্দিত।’

দেলুপি সিনেমায় যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা সবাই খুলনার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা। অভিনয় করেছেন চিরনজিৎ বিশ্বাস, অদিতি রায়, রুদ্র রায়, মো. জাকির হোসেনসহ অনেকে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত