Ajker Patrika

এত দিন যা বলা হয়নি

এত দিন যা বলা হয়নি

ব্যক্তিগত জীবনের অনুভূতির গল্প নিয়ে বই লিখেছেন অভিনয়শিল্পী ও গায়ক তাহসান খান। তাঁর জীবনের অনেক অপ্রকাশিত ঘটনা রয়েছে বইটিতে। ইতিমধ্যে পাঠকদের প্রশংসা পাচ্ছে বইটি। নতুন বই লেখা শুরু করলেন পয়লা বৈশাখে।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় মা শিশু একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। এরপর ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নেওয়া। কিন্তু তৃতীয় বর্ষ শেষ করার পর হঠাৎ অ্যাজমা ধরা পড়ে। ফলে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গেলে যে দম লাগে তা হারিয়ে ফেলেন তাহসান। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা বন্ধ করে দিলেও গানের প্রতি প্রেমটা তো তত দিনে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ফলে গাইতে না পারলেও হারমোনিয়াম বাজাতেন নিয়মিত। পরিবার থেকেও চাওয়া ছিল রবীন্দ্রসংগীতটা যেন ভালো গাইতে পারে ছেলে। রবীন্দ্রসংগীত নিয়মিত গাওয়া না হলেও গানের সঙ্গে আছেন, এটাও কি বেশি নয়। দশম শ্রেণিতে গান লেখা ও সুর করা শুরু। কী ভেবে নিজে গান লেখা ও সুর করা শুরু করলেন? ‘আসলে কয়েকটি কারণ আছে। একটি হলো আমার অ্যাজমা। যার ফলে আমি রবীন্দ্রনাথের গান ভালো করে গাইতে পারছিলাম না। ফলে গান গাইতে না পারার ব্যাকুলতা থেকে নিজে গান লেখা ও সুর করা শুরু। কারণ, নিজে গানে সুর করলে এমন গান বানাতে পারব, যা আমি গাইতে পারি, আমার দমের সঙ্গে যায়। আর আমি যে কথাগুলো বলতে চাই তা গানের মাধ্যমে প্রকাশ করার একধরনের প্ল্যাটফর্ম পাব।’

 এরপর ব্যান্ড করা। জনপ্রিয় হলো ব্যান্ড। কিন্তু নিজের কথাগুলো যেন সবটা বলা হচ্ছিল না। সলো ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিলেন। নিজের মতো লিখলেন, সুর তুললেন। শুরুর দিকের অ্যালবামগুলো তৈরি করেছিলেন নিজের লেখা গান দিয়েই। নানা ব্যস্ততা আর ভিন্নতা খোঁজার চেষ্টায় মাঝে বেশ লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন লেখালেখি থেকে। অন্যের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব এল। নতুন কিছু হবে ভেবে নাটক থেকে চলচ্চিত্রেও নাম লেখালেন। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছেদ হলো, ভেঙে গেল সংসার। কতশত কথা তাঁর সংসার নিয়ে। গান লেখা, সুর করা, গাওয়া সবই চলছিল, অভিনয়েও আছেন নিয়মিত। কী যেন বলা হচ্ছিল না। নিজের সাক্ষাৎকারগুলো পড়তেন, দেখতেন কিন্তু যা বলা দরকার তা বলতে পারছিলেন না। সুযোগটা করে দিল মহামারি করোনা। পিয়ানোতে বসে সুর তুলতে তুলতে যখন ক্লান্ত তখন কিছু লিখতে মন চাইল। নতুন এইসব কথায় সুর না, বেসুরা করে বাস্তব জীবন নিয়ে বলতে চাইলেন। সারা জীবন নিজেকে খুঁজে বেড়ানোর যে প্রয়াস, সে উপলব্ধিগুলো লিখে ফেললেন। জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো সংকলন করেছেন বইয়ের পাতায়। সেগুলো ‘অনুভূতির অভিধান’ নামের গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়েছে এবারের বইমেলায়। বইতে তাহসানের জীবনের কিছু ঘটনা এবং সেসব ঘটনা থেকে তিনি কী অনুভূতি পেয়েছেন, তার বর্ণনা রয়েছে। তার জীবনের ২৫টি ঘটনা নিয়ে ২৫টি গল্প আছে। এই বইয়ে উঠে এসেছে অনুশোচনা, আস্থা, অনুপ্রেরণা, দ্বিধা, কৌতূহল, বিস্ময়, আতঙ্ক, অহংকার, সহমর্মিতা, অপমানসহ ২০টি অনুভূতির গল্প। যে গল্পগুলো একান্তই তাঁর জীবনে ঘটা নানা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত।

 তাঁর শৈশব, পড়াশোনা, কর্মজীবন, বিবাহবিচ্ছেদ থেকে শুরু করে অনেক বিষয় স্থান পেয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনার সাবলীল উপস্থাপনা নিয়ে পাঠক প্রশংসা করেছেন। যেমন বিচ্ছেদ ছিল মানসিক পীড়া সহ্যের এক চরম পরীক্ষা। সেই অনুভূতির গল্প তিনি লিখেছেন ‘অপমান’ চ্যাপ্টারে। সেখানে তাহসান লিখেছেন, ‘বিচ্ছেদ মানেই দোষারোপের প্রতিযোগিতা, সেই কাজটা আমি কখনোই করতে চাইনি। অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন যেন আমি কাদা ছোড়াছুড়ি করি, তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সে কারণেই মুখ বুজে অনেক কিছু হজম করেছি। আমি আর আমার প্রাক্তন যে কত গল্পে কত রূপে তাদের লেখায় ধরা দিয়েছি!

 সবকিছু থেকে আমার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করলাম বইটিতে।’ রকমারির মতে, বিক্রির হারেও বইটি সেরা দশে রয়েছে। তাহসান বলেন, ‘আমার জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে গল্পগুলো লেখা এবং সে ঘটনাগুলো থেকে আমি কী বুঝলাম, জানলাম, ধারণ করলাম– সে কথা আছে।’ তিনি যোগ করেন ‘আমার মনে হয় অনুভূতি নিয়ে আমরা খুব কম কথা বলি। অনুভূতিগুলোকে কীভাবে ধারণ করতে হয় সেটা আমরা কম জানি, যার কারণে আমরা খুব সহজেই হতাশ হয়ে যাই। তাই আমার মনে হয়েছে এগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করা উচিত, বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের।’

সবার মতো তাহসান ফের ঘরবন্দী হয়ে আছেন। এই ঘরবন্দী সময়টা কাজে লাগাবেন বই লিখে। নিজের নতুন বইয়ের লেখা শুরু করেছেন। তবে কী নিয়ে বইটি, এখনই তা নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না।

বিষয়:

তাহসান
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...