Ajker Patrika

ডাকসু নির্বাচন: প্রত্যাশার নতুন দিগন্ত

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী
অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (Dhaka University Central Students’ Union, DUCSU), নির্বাচন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অতএব, এই নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত সুনির্দিষ্ট, গঠনমূলক এবং স্বপ্নময়।

দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচন

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচিত রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি পরিহার করে প্রার্থীদের যোগ্যতা, সততা এবং দূরদর্শিতার ভিত্তিতে ভোট প্রদান করা। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এমন সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করাই হোক এ নির্বাচনের প্রধান লক্ষ্য, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত স্বার্থে কাজ করতে সক্ষম। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে বিরাজমান অসুস্থ প্রতিযোগিতা, হানাহানি এবং দখলদারির অপসংস্কৃতি চিরতরে দূর করা জরুরি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ছাত্র সংসদগুলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং লেখাপড়া সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে। আমাদেরও এমন সুস্থ ও কল্যাণমুখী ছাত্ররাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই ধারায় শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য হবে পড়াশোনা, শিক্ষা-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এবং অধিকার রক্ষায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন।

শিক্ষার মান এবং গবেষণার উৎকর্ষ

এক সময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে, বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এর প্রধান কারণ শিক্ষার গুণগত মান এবং গবেষণায় পর্যাপ্ত মনোযোগের অভাব। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রধান দায়িত্ব হবে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং গবেষণার প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজে উৎসাহিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি কেবল একাডেমিক উৎকর্ষই বাড়াবে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাও উন্নত করবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স বা সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাবে, যেমনটি বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পায়।

আন্তর্জাতিক মান এবং আধুনিক অবকাঠামো

এক সময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলো, এমনকি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকেও বহু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসত। আজ সেই ধারা একেবারে বিলুপ্ত। এর মূল কারণ উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। ডাকসু প্রতিনিধিদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে, অস্বাস্থ্যকর টয়লেটের মতো অবকাঠামোগত সমস্যার দ্রুত সমাধান জরুরি। একই সঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

সুস্থ পরিবেশ এবং যোগ্য নেতৃত্ব

ডাকসুর ভূমিকা শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম। শিক্ষকদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দায়িত্ব। কোনো পরিস্থিতিতেই আইন নিজের হাতে তুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কাম্য নয়। আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সৎ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আসুক, যারা এই প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে।

সংক্ষেপে, ডাকসু নির্বাচন হোক এক নতুন দিগন্তের সূচনা, যা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বকে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। আমরা প্রত্যাশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে এমন নেতৃত্ব উঠে আসবে, যারা শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন, গবেষণার প্রসার এবং আধুনিক অবকাঠামো নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার হারানো গৌরবে ফিরিয়ে আনবে।

লেখক: উপাচার্য, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত