Ajker Patrika

ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ১১ অভিযোগ ছাত্রদলের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদল-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদল-সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়ম, অসংগতি ও ভোট কারচুপির ১১টি অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রদল-সমর্থিত ভিপি পদে পরাজিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে ক্লিয়ার করতে পারবে, ডাকসু নির্বাচন বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রদল-সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী (পরাজিত) মো. আবিদুল ইসলাম খান এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।

ডাকসু নির্বাচনের ছাত্রদল-সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। মো. আবিদুল ইসলাম খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ডাকসু নির্বাচনের ১৩ দিন পর নির্বাচনের অসংগতি ও অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উত্থাপন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত এই প্যানেল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কমিশনকে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাননি বলে উল্লেখ করেন প্যানেলটি থেকে অংশ নেওয়া ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য দেন তিনি।

আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ, ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়াসহ নানাবিধ জালিয়াতি হয়েছে। ২০১৯ সালের সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এ ছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি বলে জানান তিনি।

আবিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করে বরং অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যে এসেছে।

আবিদুল ইসলাম বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে মোটেও অবহিত করা হয়নি।

এ ছাড়া অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায়ই ভোট গ্রহণ শুরু, ঢাবি প্রশাসন থেকে পোলিং অফিসার নিয়োগ, নির্বাচনে নিরাপত্তা ও জোটসংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী দ্বারা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ, ভোট গণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টাসহ নানান অভিযোগ উঠেছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচনের সময়ে বা পরের দিন অভিযোগ না আনার বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে সংবাদ সম্মেলন শেষে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনের পরের দিন আন্দোলন-সংগ্রামে নামলে তো আগের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, সেখানেই ফিরে যেতাম। আমরা সেই জায়গায় সেক্রিফাইস করে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রচলনে ভূমিকা ও সহনশীল থেকেছি।’

আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। যখন দেখছি কালক্ষেপণ হচ্ছে, তখন আমরা মনে করেছি, এই অভিযোগগুলো আপনাদের জানানো প্রয়োজন।’

ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের কর্মসূচি থাকবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও ভোটাররা আওয়াজ তুলেছেন। সুষ্ঠু রাজনীতি ধারার মধ্য দিয়ে আমাদের অভিযোগ জানিয়েছি এবং সেই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমলে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের অবস্থান ক্লিয়ার করবে। অন্যথায়, সুষ্ঠু রাজনীতি ধারণ করে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, তা জানানো হবে।’

ফলাফল প্রত্যাখ্যান নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে জবাবে আবিদুল বলেন, ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন নিয়ে এখনো পর্যালোচনা হচ্ছে। ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনেও অসংগতি, অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এসেছে। এগুলো নিয়েও পর্যালোচনা চলতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন ও অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসন তার অবস্থান ক্লিয়ার করতে না পারবে, এই ডাকসু নির্বাচন বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে অংশ নেওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরেও নানান অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় আমরা যথানিয়মে তাদের নিকট সব অভিযোগ জানিয়ে সমাধান চেয়েছি, কিন্তু একটি অনিয়মেরও কোনো সমাধান না দিয়ে আমাদের শিক্ষকেরা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের এজিএস তানভীর আল হাদী মায়েদসহ অন্য প্রার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত