Ajker Patrika

তারুণ্যের ভাবনায় ঈদ আনন্দ 

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৫১
তারুণ্যের ভাবনায় ঈদ আনন্দ 

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের রয়েছে নানা রকম ভাবনা। কেউ স্মৃতিপটে ভাবছেন শৈশবে মহল্লার সবাই জড়ো হয়ে চাঁদ দেখার কথা, কেউবা ঈদ কার্ড বিনিময় কিংবা রাত জেগে মেহেদী রাঙানোর সময়গুলো মিস করছেন। বর্তমান তরুণদের কাছে ঈদের আনন্দটা ঠিক কেমন জানতে চেয়েছেন আবু মো. ফজলে রোহান

আনন্দের রূপ বদলেছে কিন্তু হারিয়ে যায়নি
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যা‌‌য়—এই কথা প্রায়ই শুনি। হ্যাঁ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়, আনন্দের ধরন বদলে যায়, কিন্তু হারিয়ে যায়না।

একটা সময় ঈদ কার্ড, সালামি পাওয়া কিংবা ঘুরে-বেড়ানোর মাঝে আনন্দ থাকলেও এখন সালামি পাওয়ার চেয়ে সালামি দিতে বেশি ভালো লাগে। ছোট বাচ্চারা ৫ টাকা পেলেও তাদের কি যে উচ্ছ্বাস আর খুশি! দেখতেই ভালো লাগে। এখন হাতে কিছু টাকা থাকলেই মনে হয় বাসায় সবার জন্য টুকটাক খরচ করি। নিজের জন্য নতুন জামা কেনা বাধ্যতামূলক মনে হয় না। না নিলেও চলবে এমন। শৈশবে ঈদের দিনে মজার মজার খাবার খাওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম। ঘরে মা কোমড় বেঁধে কত কাজ করতো বুঝতাম না। এখন ঈদে মায়ের পাশে কাজ এগিয়ে দিলে মা স্বস্তিতে থাকেন, তা দেখে ভালো লাগে। কালের বিবর্তনে আনন্দ পাওয়ার ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে, ধরণ পাল্টেছে, কিন্তু বিলীন হয়ে যায়নি।

জেফরিন নওশীন
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 নাজমুল ইসলাম নাইমসৃষ্টিশীল ঈদকার্ডে মোড়ানো সোনালি শৈশব
পড়াশোনার সুবাদে বাড়ি থেকে দূরে অবস্থান করায় ঈদের আনন্দের সঙ্গে বাড়ি ফেরার আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে ঈদকে ঘিরে এখনকার এতসব উৎসব-উন্মাদনার ভীড়েও মিস করি শৈশবের সোনালি সময়গুলোকে। পাড়া-মহল্লায় আতশবাজি ফোটানো এবং পছন্দের মানুষের মাঝে ঈদ কার্ড বিলি করার যে একটা কালচার ছিল তা এখন আর আগের মতো নেই। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে রং-বেরঙের ঈদ কার্ড পাওয়ার মধ্যে ছিল অন্যরকম আবেগ ও আনন্দ। বর্তমানের এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে ঈদ কার্ড আদান-প্রদানের ব্যাপারটা প্রায় বিরল দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। এই প্রজন্ম হয়তো ঈদ কার্ডের সঙ্গে সেভাবে পরিচিতও না। তবে আমাদের শৈশব বাঁধানো ছিল সৃষ্টিশীল ঈদকার্ডের রঙিন মোড়কে। আমি মিস করি আমার শৈশবের ঈদ। 

নাজমুল ইসলাম নাইম
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 কামরুন নাহার কণাআনন্দের গ্রাফ ক্রমশ নিচের দিকে ধাবিত হয়ে চলেছে
ছোটবেলায় ঈদের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানিতে ঝাপিয়ে গোসল করা এবং নতুন জামা পড়ে কে কার আগে একে অন্যের নতুন জামা দেখব তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো। হরেক রকমের মজার মজার খাবারের ভোজনবিলাস তো ছিলই। দিনশেষে সালামির হিসাব-নিকাশের পর্ব সেরে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াতাম, কোন দোকানে বার্বি পুতুল কিংবা নতুন ধাচের খেলনা এসেছে তা নিয়ে ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। সালামির টাকা জমিয়ে পছন্দের খেলনা কেনা, কার আম্মু কি রেঁধেছে তা নিয়ে বান্ধবীদের সাথে আলাপ-আলোচনা, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব এ নিয়ে শতরকমের জল্পনা-কল্পনা ঈদের আনন্দকে সারাদিন সরব রাখতো। কিন্তু এখন আমার মধ্যে না আছে পাড়াজুড়ে ছোটাছুটির ইচ্ছা, না আছে সালামি নিয়ে বড়াই করার আগ্রহ—এমনকি যাদের সঙ্গে ঈদের আমেজ জমে উঠতো তারাই জীবনের প্রয়োজনে একেকজন একেক প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চাইলেই একসঙ্গে হওয়া সম্ভব নয়। সময় এবং আনন্দের গ্রাফটা ক্রমশ নিচের দিকে ধাবিত হয়ে চলেছে, ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের মতো হয়তো।

কামরুন নাহার কণা
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ রাজীবঈদের শিক্ষা হোক ধনী-গরীবের সাম্যতা বজায়
বছর ঘুরে ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। আনন্দের মাঝেও কিছু বিষাদ লুকিয়ে থাকে। মিলে মিশে একসঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকাই হোক ইদের শিক্ষা। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ুক ঈদের আনন্দ। সবার মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হোক। একে অন্যের সঙ্গে গড়ে ওঠুক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। এই বন্ধনের মাধ্যমেই সমাজ বদলে যাবে, বদলে যাবে অতীতের সকল গ্লানি। চিরকাল এই বন্ধন অটুক থাকুক সেটাই প্রত্যাশা থাকবে। সমাজে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার ইদআনন্দে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবুও আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি, দাদা-দাদীসহ সকলকে নিয়ে ইদ আনন্দে কাটুক।

মোহাম্মদ রাজীব
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত