Ajker Patrika

রাকসু নির্বাচন

তিন হলে ভোট গণনা শেষ, কেন্দ্রের ফল ১৪ ঘণ্টা পর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় গণনা শুরুর সময় থেকে ১৪ ঘণ্টা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা জানান।

উপাচার্য জানান, রাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হতে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে গণনা শুরু হয়েছে। ব্যালট পেপারগুলো গুছিয়ে ওএমআর মেশিনে তোলা গেলে সময় কিছুটা কম লাগবে বলেও জানান তিনি।

ভোটে প্রার্থীদের নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এটা একধরনের ভোটের উৎসব ছিল। কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে—যেমন অমোচনীয় কালি মুছে যাওয়া, কিছু ব্যালটে স্বাক্ষর থাকা বা লিফলেট পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগে ভোট গ্রহণের স্বচ্ছতা নষ্ট হয়নি। জাল ভোট বা বড় ধরনের অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাইনি।’

এক কেন্দ্রে আগে থেকে ব্যালটে স্বাক্ষর করে রাখার ব্যাপারে অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা আগে থেকে কিছু ব্যালটে স্বাক্ষর করে রাখতে পারেন। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই করবে।

উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘এই ভোট ছাত্রছাত্রীদের। তারা সন্তুষ্ট আর তাদের সন্তুষ্টিই আমার সন্তুষ্টি।’

এদিকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনটি হল সংসদের ব্যালটের ভোট গণনা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হলগুলোর ফল ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘মেয়েদের তিনটি হল সংসদের ব্যালট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর ফল ঘোষণার পর আপনারা বুঝতে পারবেন, একটার পর একটা ফলাফল আসতে কত সময় লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এইচএসসি পরীক্ষার ফল: মূল্যায়নে কড়াকড়ি ছাড়াও নানা সমস্যায় খারাপ ফল

  • এইচএসসিতে দুই দশকে সবচেয়ে খারাপ ফল
  • ৫ লাখ ফেল, কমেছে জিপিএ-৫
  • পাসে শীর্ষে মাদ্রাসা, নিচে কুমিল্লা বোর্ড
  • তারপরও সাফল্যে এগিয়ে মেয়েরা
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১১টি বোর্ড মিলিয়ে ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। তখন থেকে এইচএসসিতে পাসের হার আর কখনো ৫৯ শতাংশের নিচে নামেনি। এর আগে অবশ্য ২০০৪ সালে ফল আরও খারাপ হয়। তখন পাসের হার ছিল মাত্র ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। এবারের গড় পাসের হার গত বছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এবারের পাসের হার এত নিচু হওয়ার কারণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

ফল ও সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত তিনটি কারণে এবার পাসের হার এবং জিপিএ-৫ কমেছে। প্রথমত, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে কলেজে ক্লাস কম পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান ও আইসিটিতে পাসের হার ছিল তুলনামূলক কম। তৃতীয়ত, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘কড়াকড়ি’; যাকে কেউ কেউ বলছেন ‘যথাযথ মূল্যায়ন’। এ ছাড়া শিক্ষকসংকটসহ নানা সমস্যা গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফলের এই অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই ফলকে বাস্তবতার প্রতিফলন বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় দেখি, যে পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মাত্রার দক্ষতা থাকা উচিত, তা নেই। এর কারণ হলো, শিক্ষায় নানা সংকট রয়েছে। যেমন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের যে ধরনের একাডেমিক যোগ্যতা থাকার কথা, তা নেই। মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছেন না। শিক্ষা নিয়ে সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’

এবারের ফল শিক্ষার প্রকৃত চিত্র বলে মনে করেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারও। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি, যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল; পাসের হারই যেন সাফল্যের প্রতীক, জিপিএ-৫-এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদণ্ড। ফল “ভালো” দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আমি সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।’

ফল ধসের কয়েকটি কারণ

২০০৫ সালের এইচএসসির মাত্র ৫৯ দশমিক ০৭ শতাংশ গড় হারের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার বেড়েছে। কখনো সামান্য কমবেশি হয়েছে। কিন্তু এবার এসেছে বড় ধাক্কা। গড় পাস এবার গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিপুলভাবে কমেছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১।

ফল খারাপের পেছনের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা বরাবরই খারাপ করে। হিসাববিজ্ঞানও কঠিন বিষয়। এসব বিষয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষক নেই। শিক্ষকের অভাবসহ কিছু কারণ রয়েছে। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’

একই সুরে কথা বলেছেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে খারাপ ফলের প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে। এ ছাড়া দুর্গম হাওরাঞ্চল ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান, আইসিটি বিষয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে ভালো করতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিতিশীল সময়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না হওয়া ফল খারাপের অন্যতম কারণ।’

মানবিক ও বাণিজ্যে ধরাশায়ী শিক্ষার্থীরা

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারও তুলনামূলক ভালো করেছে। তার তুলনায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ফল এবার বেশ খারাপ হয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেখানে বাণিজ্য বিভাগে পাসের হার মাত্র ৫৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ আর মানবিকে মাত্র ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ইংরেজিতেই বেশি খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা।

৫ লাখ ফেল, কমেছে জিপিএ-৫

এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলের সংখ্যা বেশি। তথ্য বলছে, মোট ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ১১ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। আর মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। সব মিলিয়ে এবার ফেল করেছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী।

এবারও এগিয়ে মেয়েরা

সার্বিক ফল অনুযায়ী এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও এগিয়ে মেয়েরা। জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৩৭ হাজার ৪৪ এবং ছাত্র ৩২ হাজার ৫৩ জন।

২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই ফেল

চলতি বছর দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৫। আর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৩৪৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি।

পাসে শীর্ষে মাদ্রাসা, নিচে কুমিল্লা বোর্ড

৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে, ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

ফলের তথ্য বলছে, ঢাকা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ পাস করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুজব-অভিযোগের মধ্যে ভোট উৎসব

  • বড় ধরনের অনিয়ম বা সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি
  • আজ সকাল ১০টা নাগাদ ফল ঘোষণা হতে পারে
দীন ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়রিমন রহমান    
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ডিনস কমপ্লেক্স ভোটকেন্দ্রে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ডিনস কমপ্লেক্স ভোটকেন্দ্রে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজব, প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে একটানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গণনা শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফল ঘোষণায় লাগতে পারে অন্তত ১৭ ঘণ্টা।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট দিয়েছেন। তবে ভোটকেন্দ্রে মেয়েদের উপস্থিতি ছেলেদের চেয়ে কিছুটা কম। ছেলেদের ১১টি হলের ভোট পড়ার গড় হার ৬৯ থেকে ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত। তবে মেয়েদের ছয়টি হলের ভোট পড়ার হার ৭০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। সব মিলিয়ে ভোট পড়ার গড় হার দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২৮ হাজার ৯০৯ জন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৮৭ জন ভোট দিয়েছেন।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। সকালে ভোট শুরুর পর বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রই ফাঁকা দেখা যায়। শুধু ডিনস কমপ্লেক্স ও শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে ভোটারদের একটু লাইন দেখা যায়। জুবেরী ভবনের ভোটার ছিলেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির ও ছাত্রশিবিরের প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তাই এ দুই কেন্দ্রে তাঁদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়। বেলা সাড়ে ১১টার পর কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। অনেক কেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। ভোটারদের লাইন থাকায় একটি কেন্দ্রে বিকেল ৪টার পরও ভোট গ্রহণ চলে।

বেলা ২টার দিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভবনের ভোটকেন্দ্রের সামনে শুরু হয় হট্টগোল। ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন এখানে এসে অভিযোগ করেন, এখানে তাঁরা আগাম স্বাক্ষর দেওয়া ১০০টি ব্যালট দেখেছেন। তিনি আরও অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্রের শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত স্কাউটের এক সদস্য ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের জন্য ভোট চাচ্ছেন। এই কেন্দ্রে লাইনে থাকা ভোটারদের অভিযোগ, এক ঘণ্টা ধরে এখানে ধীরগতিতে ভোট হচ্ছিল। দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করলে কেন্দ্রটিতে ফের স্বাভাবিকভাবে ভোট শুরু হয়।

ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হবিবুর রহমান হল সংসদের ছাত্রশিবিরের জিএস প্রার্থী আশিক শিকদার ও স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শওকত হোসেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী রায়হান আলী ভোট দিতে এসে এক ঘণ্টা ধরে কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করে নিজের প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বললেন, তিনি বিষয়টি খেয়াল করেননি।

এই নির্বাচনে জাল ভোট ঠেকাতে ছবিসহ ভোটার তালিকার পাশাপাশি আঙুলে অমোচনীয় কালি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে এই কালি অমোচনীয় ছিল না। একটু পরেই কালি উঠে যাচ্ছিল।

ভোট দিয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা

ভোটারের লাইনে কথা হয় ফারসি ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি তাপসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসব উৎসব মনে হয়েছে। আমরা এমন কাউকেই প্রতিনিধি হিসেবে চাই, যারা শুধু শিক্ষার্থীদের হয়েই কাজ করবে। আর নির্বাচন যেন প্রতিবছর হয়, সেই আশা থাকবে।’

সমাজকর্ম বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবু হেনা শাকিল বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি কয়েক মাস হয়েছে। আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী আমেজ। আমি এইবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনটা রাকসু দিয়ে শুরু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।’

সমাজকর্ম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তাসনিম আলম শোভা বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ যথেষ্ট সন্তোষজনক। ভোটদানের সময় ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ায় ভোট জালিয়াতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হোক, যারা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।’

নিষিদ্ধ স্থানে বিএনপি-জামায়াত

এই ভোট উপলক্ষে তিন দিন ক্যাম্পাসের চারপাশে ২০০ গজের ভেতর সকল প্রকার সভা-সমাবেশ ও জমায়েত নিষিদ্ধ করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে বিনোদপুর ফটকের পূর্বপাশে ক্যাম্পাসের দেয়াল ঘেঁষেই সড়কের ওপর শামিয়ানা টানিয়ে দিনভর অবস্থান করেছেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের থেকে একটু পশ্চিমে রাস্তার বিপরীত পাশে শামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান নেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বাইরের নেতা-কর্মীরা। এ দুটি স্থানই পুলিশের ঘোষণা অনুযায়ী জমায়েতের জন্য ‘নিষিদ্ধ স্থান’।

এ ছাড়া সরেজমিনে অক্ট্রয় মোড়, কাজলা ফটক, রাবির প্রধান ফটক, চারুকলার পেছনে বুধপাড়া ফটক, স্টেশন বাজার ও রুয়েটসংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে দুই দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে। তবে এসব স্থানে বিএনপির চেয়ে জামায়াত-শিবিরের লোকজনই ছিল বেশি। দুপুরে প্যাকেটে করে আসা খাবার তাঁদের খেতে দেখা যায় এসব স্থানে বসেই।

দুপুরে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, ক্যাম্পাসের ২০০ গজের ভেতর সমাবেশ-জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এসব জমায়েতের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

ফেসবুকে অস্ত্র-বোমার গুজব

রাবি ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ভোট গ্রহণ চলাকালে তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীতে প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে অস্ত্র বিলি করছে জামায়াত-শিবিরের লোকজন।’ ভিডিওতে বনের ভেতর কিছু লোকের অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে তাঁরা কী করছেন তা স্পষ্ট নয়।

পরে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ‘এটির খুব নিকটেই পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যদের অবস্থান। এ রকম একটি প্রকাশ্য স্থানে পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়াকর্মীদের নাকের ডগায় অস্ত্র বিতরণ করা সম্ভব নয়। কোনো একটি মহল উৎসুক লোকজনের আড্ডা দেওয়া ও খাওয়ার বিষয়টি দূর থেকে ধারণ করে অস্ত্র বিতরণের নামে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’

এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ছাত্রদল নেতা রাহীর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটও দেয় পুলিশ। আবার ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যে ক্যাম্পাসে বোমাবাজি চলছে। এটির ব্যাপারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ বলে ‘ভিডিওটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পরবর্তীতে ভিডিওটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ফ্যাক্টচেক করে দেখা যায়, দৃশ্যটি সম্পূর্ণরূপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।’

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সকালে ভোট দেওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তবে দুপুর গড়াতেই তাঁদের মুখে আসে নানা অভিযোগ। প্যানেলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আটটি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা অভিযোগ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বোমাবাজির গুজব ছড়াচ্ছে ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতা আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা।

এ ছাড়া অমোচনীয় কালি মুছে যাওয়া, চিরকুট নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া, অন্য প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজের মধ্যে প্রচারণা চালানো, খালেদা জিয়া ও হবিবুর রহমান হলের পাশে ছাত্রদল বুথ নির্মাণ, বহিরাগত প্রবেশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়াকড়ি শিথিল, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আগের রাতে ক্যাম্পাসে দেয়াললিখনের মতো অভিযোগ তোলা হয়।

প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘এই নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে কি না সেটি ফলাফলের পর বলা যাবে।’

সকালে ভোট দেওয়ার পর ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির অভিযোগ করেন, তাঁদের পোলিং এজেন্টদের ছবিসহ ভোটার তালিকা দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। শিবিরের প্যানেলের সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের প্যানেল।

সংবাদ সম্মেলনে আবির বলেন, ‘শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনে প্রায় এক ঘণ্টা ভোট কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে ভেতরে গিয়ে আমরা ১০০ ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করা অবস্থায় দেখতে পাই।’ এটি ছাত্রশিবিরের ভোট কারচুপির চেষ্টা বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বামধারার গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুলও নানা অভিযোগ তুলেছেন। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। কিছু প্যানেল সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের শর্তকে লঙ্ঘন করে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ খরচ করেছে। উপহার বিলি, ভূরিভোজ আয়োজন, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মতো ঘটনার বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।’

তবে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলের সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে ভোটের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে কোনো অসংগতি পাইনি। ভোট গ্রহণ অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোটার বেশি হওয়ার কারণে অব্যবস্থাপনা লক্ষ করা গেছে।’ প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কিছু অভিযোগ দেখেছি।’

ফল হতে পারে আজ দুপুরে

বিকেলে ভোট গ্রহণের পর ব্যালট বাক্সগুলো কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নেওয়া হয়। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত গণনার কাজই শুরু হয়নি। আগের দিন নির্বাচন কমিশন বলেছিল, ভোট গ্রহণের পর বিকের ৫টার মধ্যে তারা গণনা শুরু করবে। এতে ‘নির্ভুল’ ফল দিতে তাদের সময় লাগবে অন্তত ১৭ ঘণ্টা। সে অনুযায়ী আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ফল আসার কথা ছিল। কিন্তু গণনা শুরু হতে বিলম্বের কারণে এর প্রভাব পড়তে পারে ফল ঘোষণার ক্ষেত্রেও। হলগুলোর ফল ঘোষণা কিছুটা আগে হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রীয় সংসদের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে শুক্রবার দুপুরও গড়াতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, ভোট গণনা হবে ছয়টি অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গায় এলইডি স্ক্রিনে ফল গণনা সরাসরি দেখানো হবে। ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। তবে ফলাফল কখন ঘোষণা হতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।

এবারের রাকসু ভোটে ১১টি প্যানেল অংশ নেয়। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়েছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৪৭ জন। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদের ১৫টি পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী লড়াই করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এই সংখ্যা রাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বাধিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাকসুতেও শিবিরের বড় জয়, কোন্দলে ছাত্রদলের ভরাডুবি

  • ২৬টির মধ্যে ২৪টি পদে শিবিরের জয়। এজিএস পদে জিতেছে ছাত্রদল, একটিতে স্বতন্ত্রপ্রার্থী।
  • ভোটের ঠিক দুই দিন আগে ছাত্রদলের কোন্দল সামনে আসে। বহিষ্কার হন এক নেতা।
সুমন বাইজিদ, চবিসবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
ইব্রাহিম হোসেন ও সাঈদ বিন হাবিব। ছবি: সংগৃহীত
ইব্রাহিম হোসেন ও সাঈদ বিন হাবিব। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির। গত বুধবারের এই ভোটে ২৬টি পদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) ২৪টি পদে জয় পেয়েছে তারা। ভোটে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও সফলতা আসেনি। সংগঠন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা, কোন্দল এবং বিএনপির কাছ থেকে সাংগঠনিক কোনো সুবিধা না পাওয়ায় ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন শিবির-সমর্থিত প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।

মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির প্যানেলের সাজ্জাদ হোছন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।

চাকসুর ইতিহাসে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৯৯০-এর ছাত্র ঐক্যের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মো. রেজা জানান, ‘’৯০ সালে শিবিরবিরোধী ছাত্র ঐক্যের প্যানেলে ১২টি সংগঠন একত্র হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছিল। ওই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ঐক্যের কাছে শিবিরের প্যানেল হেরে গিয়েছিল। ছাত্রদল এবার সেই ঐক্য দেখাতে না পারায় পরাজিত হয়েছে।’

চাকসু নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে ছাত্রদলের কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন উর রশীদ। গত রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে নেতিবাচকভাবে। নির্বাচনে পরাজয়ে এটি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ২০২৩ সালের আগস্টে চবি ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি এখনো। ফলে দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি এবং বিএনপির কাছ থেকে আর্থিক ও মানসিক শক্তি জোগান না পাওয়া, ১৯৯০-এর আদলে সর্বদলীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও বিএনপির ইমেজ সংকটের মতো বিষয়গুলো ছাত্রদলের পরাজয়ের পেছনে কাজ করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

যদিও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে কেন্দ্র ভাবছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে কমিটি দিতে পারব। তবে এখানে আমাদের এজিএস প্রার্থীর তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এখানে প্যানেল হিসেবে জিততে না পারার পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখি না।’ চাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মহাসমাবেশ। ফাইল ছবি
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মহাসমাবেশ। ফাইল ছবি

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষক নেতারা সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রেসক্লাবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর মধ্যে আমরাও (প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা) যদি অনশন কর্মসূচি শুরু করি, তাহলে বড় ঝামেলা সৃষ্টি হবে। সার্বিক বিবেচনায় ঐক্য পরিষদের নেতারা অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’।

শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সভা শেষে আজ সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি করছেন। আমরা মনে করি, তাঁদের এ দাবি যৌক্তিক। উপদেষ্টা এ দাবির বিষয়ে পে কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের কাছে লিখিত আকারে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।

‘আমরা এ বিষয়টি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁরা এ বিষয়ে পে কমিশনের সুপারিশ পেলে তা সমাধান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

দীর্ঘদিন ধরে মামলার কারণে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, ‘মামলাটি কিছুদিন আগে শুনানি হয়েছে, শুনানি সরকারের পক্ষে। শিক্ষকদের পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করেছি, যেখানে নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকদের একটি অংশকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

তিন দফা দাবিতে গত ২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন শিক্ষকেরা। দাবি আদায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দিনে ১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।

পরে গত ২৯ মে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলে কর্মবিরতির কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

এরপর গত ৩০ আগস্ট দিনভর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন তাঁরা ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে আমরণ অনশনে যাবেন।

তবে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি এসে পড়ায় এই কর্মসূচি পিছিয়ে ১৭ অক্টোবর পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত