Ajker Patrika

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় সমান গুরুত্ব

রুবায়েত হোসেন, খুবি
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, ০৮: ৫৫
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্ররাজনীতিমুক্ত পরিবেশ, সেশনজটবিহীন পাঠক্রম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মনোরম এক উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের ৩৫ বছরে পদার্পণ করেছে।

১৯৯১ সালে চারটি ডিসিপ্লিন এবং ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এখানে ২৯টি ডিসিপ্লিনে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তাঁর নেতৃত্বে ৫ আগস্ট পরবর্তী সংকটময় মুহূর্তেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে।

সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বৈশিষ্ট্য হলো সেশনজটমুক্ত পাঠদান। নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় ক্লাস, প্রকাশিত হয় ফল। এ ছাড়া সব শিক্ষা কার্যক্রম একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। সে কারণে শিক্ষার্থীরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারেন।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানের গুণাবলি অর্জন এবং সংস্কৃতিচর্চার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৩০টির বেশি অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাঁধন, র‍োটার‍্যাক্ট ক্লাব, কৃষ্টি, ভৈরবী, স্পার্ক, ক্যারিয়ার ক্লাব, রিদম, ছায়া বৃত্ত, কেইউপিএস এসবের মধ্যে অন্যতম। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংগঠনের অনুষ্ঠান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা।

উৎসবের ক্যাম্পাস

র‍্যাগ ডে, পয়লা বৈশাখ, বসন্তবরণ, পিঠা উৎসব—সবকিছুতেই থাকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করে। প্রতিদিন কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিকভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে।

ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস

ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস পরিচালনায় অন্যতম উদাহরণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। নেই দেয়ালে পোস্টার, স্লোগান কিংবা দখলদারত্বের সংস্কৃতি। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরেও এ ক্যাম্পাসে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার নজির নেই। শিক্ষার জন্য এটি এক অনন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

গবেষণা ও আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে সাফল্য

এ বছর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা মূল্যায়ন সূচক নেচার ইনডেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ১০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ২০২৫ সালের সর্বশেষ ইমপ্যাক্ট র‍্যাঙ্কিংয়েও জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ ছাড়া স্প্যানিশ গবেষণা সংস্থা সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‍্যাঙ্কিংয়েও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন গবেষণার প্রভাব, উদ্ভাবনী কার্যক্রম ও সামাজিক সম্পৃক্ততার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির এই উন্নতি স্বীকৃতি পেয়েছে বৈশ্বিক গবেষণা পরিমণ্ডলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে চলতি বছর দুই ধাপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গবেষকদের মাঝে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার গবেষণা অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো, পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নাম ‘মীর মুগ্ধ তোরণ’ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে মুগ্ধ ওয়াটার কর্নার চালু করা হয়েছে।

বর্তমান উপাচার্যের নানামুখী উদ্যোগ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে নিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তাঁর নেতৃত্বে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, সহশিক্ষা কার্যক্রমে আনা হয়েছে গতি। পাশাপাশি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আনা হয়েছে অটোমেশনের আওতায়। এ ছাড়া জোর দেওয়া হয়েছে পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনের ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) তত্ত্বাবধানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় চীনের জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি ও তুরস্কের চানাক্কালে অনসেকিজ মার্ট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সব ডিসিপ্লিনকে অ্যাক্রিডিটেশনের আওতায় আনতে চাই। আইকিউএসির সহায়তায় এই কার্যক্রম ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিসিপ্লিনেই আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলামে পাঠদান চলছে। গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণা অনুদান বাড়ানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীরা যেন পিএইচডি করতে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যেই পিএইচডি গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।’

উপাচার্য বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করি, এখানকার গবেষণা দেশের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপি নেত্রী শাহনাজ আটক

চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে

অপারেশন সিঁদুরে নেতৃত্ব দেওয়া অফিসার হচ্ছেন ভারতের র-এর প্রধান

পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁর এমপি, এটি বাংলাদেশের জন্য অনুপযুক্ত: সালাহউদ্দিন

নীলফামারীতে 'আটক' কুমিল্লার দুই সাংবাদিক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত