Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

আফসানা আলম প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রাম থেকে উঠে এসে হলি ক্রস কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বোস্টনে পাবলিক পলিসিতে পিএইচডি গবেষণার যাত্রা। বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসের ব্যস্ত করিডরে লেজিসলেটিভ ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন। বলছি বাংলাদেশের তরুণী আফসানা আলম প্রীতির কথা। তাঁর শৈশব, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন, বৃত্তি পাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে মানিয়ে নেওয়ার গল্প নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান

আব্দুর রাজ্জাক খান

আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা বিষয়ে জানতে চাই।

শৈশব কেটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রামে। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। স্কুলজীবনের প্রথম অংশ কেটেছে স্থানীয় স্কুলে। অষ্টম শ্রেণিতে শহরের রামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। দু-তিন ঘণ্টা লাগত সেখানে যেতে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় হলি ক্রস কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।

আপনি কখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখলেন? প্রেরণা কোথায় পেলেন?

স্নাতকের শেষ দিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবা শুরু করি। স্নাতকে বিষয় ছিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা। হঠাৎ আগ্রহ বদলে যায়। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার প্রক্রিয়াটা জটিল ও ব্যয়বহুল মনে হলেও পরে জানতে পারি, বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। স্বপ্নটা আর অসম্ভব মনে হয়নি। শুধু পড়াশোনা নয়, নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি এবং নতুন সমাজ সম্পর্কে জানার সুযোগও ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, শুরু থেকে পরিবারের সদস্যরা পাশে ছিলেন। তাঁরা সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন এবং প্রতিটি ধাপে আমার সঙ্গে থেকেছেন।

বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?

এই প্রক্রিয়াটা ছিল দীর্ঘ আর ধৈর্যের। শুরুতে এমন বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে শুরু করি, যেখানে আমার আগ্রহের প্রোগ্রাম রয়েছে। এরপর সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করি। ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষা দিই। তারপর শুরু করি স্টেটমেন্ট অব পারপাস লেখার কাজ, যেটি সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে লিখেছি। কারণ, এর মাধ্যমেই নিজের গল্প, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অ্যাডমিশন কমিটির কাছে তুলে ধরতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনপ্রক্রিয়া নিয়ে গাইড করার কেউ ছিলেন না। সবকিছু নিজেই শিখতে হয়েছে। যাঁরা আমাকে একাডেমিক ও প্রফেশনাল দিক থেকে ভালোভাবে চেনেন এবং আমার কাজ সম্পর্কে বলতে পারেন, তাঁদের থেকেই রেফারেন্স লেটার চেয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যখন পা রাখলেন, কী মনে হয়েছিল? সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান—কোনটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?

প্রথম যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি, ভাষাগত দিক থেকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করিনি। ইংরেজি ভাষায় আগে থেকে কিছুটা অভ্যস্ত ছিলাম। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আবহাওয়া। তীব্র ঠান্ডা, বরফ—এসবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। প্রথম তুষার পড়তে দেখার অনুভূতি স্বপ্নের মতো লেগেছিল।

সংস্কৃতির দিক থেকেও কিছু পার্থক্য ছিল। যদিও প্রতিটি সংস্কৃতিরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে।

কাজ, ক্লাস, হোমওয়ার্ক—সবকিছু সামলে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কীভাবে নিজেকে সামলেছেন?

মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা শুরুতে কঠিন ছিল। পড়াশোনার চাপ, একা থাকা, নতুন পরিবেশ—সব মিলিয়ে নিজেকে তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছিল। আমার পরিবার এবং বন্ধুরা সব সময় মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন। এখানে কাউন্সেলিং সেন্টার, ওয়েলনেস প্রোগ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নানা রিসোর্স বা সময় বরাদ্দ থাকে, যা সহায়ক হয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝেছি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজের জন্য সময় বের করা জরুরি। চেষ্টা করি সময় পরিকল্পনা করে ব্যবহার করতে, যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের জন্যও কিছুটা সময় রাখা যায়। মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই, প্রিয় গান শুনি, বই পড়ি কিংবা ইয়োগা করি। আর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা আমার জন্য অপরিহার্য।

‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এ আপনি এখন যুক্ত আছেন। এই কাজটা আসলে কী ধরনের?

বর্তমানে আমি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে ‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এর অধীনে লেজিসলেটিভ ইন্টার্নশিপ করছি। এই কমিশনের মূল কাজ হলো নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, ভোটাধিকার এবং পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া ঘিরে আসা বিলগুলো পর্যালোচনা করা এবং আলোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।

আমার কাজের অংশ হিসেবে নির্বাচনী আইন-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে গবেষণা করি, কমিটির শুনানি পর্যবেক্ষণ করি এবং মাঝে মাঝে রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করি। এই কাজ করতে গিয়ে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া, নীতিনির্ধারণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ—সবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি।

এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বা শিখন অভিজ্ঞতা হয়েছে?

খুব বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি; বরং পুরো পরিবেশটাই ছিল দারুণ। সবাই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে শুরুতে আমেরিকার সরকারব্যবস্থা, নির্বাচনপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটসের সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। এখানে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক শব্দ, নিয়ম ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে।

শুনেছি, আপনি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে হিয়ারিং সেশনে অংশ নিয়েছেন। সেদিনের কথা যদি বলেন।

এই অভিজ্ঞতা সত্যিই বিশেষ ছিল। ক্লাসরুমে বসে এত দিন যেসব নীতি ও পলিসি নিয়ে আলোচনা করতাম, সেগুলো এবার সামনে থেকে দেখা, পুরো প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া—আলাদা অনুভূতি ছিল। যেকোনো আইন বা নীতি কীভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতে তৈরি হয়, সেই বিষয়েও ধারণা হয়েছে। নীতিনির্ধারণ যে শুধু তাত্ত্বিক কিছু নয়, বরং বাস্তব প্রক্রিয়া, সেটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।

‘বিদেশি’ বা নারী শিক্ষার্থী হিসেবে কখনো কি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন?

একজন নারী বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পরিচয় নিয়ে কেউ অবমূল্যায়ন করেছে, এমনটা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা আছে; বিশেষ করে কাজের ধরন, ইন্টার্নশিপ বা কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, কাজের জায়গা—সব সময় চাহিদা বা পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছে।

আফসানা আলম প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত
আফসানা আলম প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত

এখন পাবলিক পলিসিতে পিএইচডি করছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যতে এমন জায়গায় নিজেকে দেখতে চাই, যেখানে গবেষণা আর নীতিনির্ধারণ—দুটি একসঙ্গে করা যায়। আমার কাজ যেন শুধু একাডেমিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তবিক জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে, এটাই চাওয়া। বিশেষ করে নারী, অভিবাসী বা প্রান্তিক মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে কোনো গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা নীতিনির্ধারণমূলক সংস্থায় কাজ করতে চাই।

যেহেতু রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ নিয়ে শিখছি, এই খাতেও কাজ করতে আগ্রহী। যে কাজই করি, তা যেন মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে থাকেন, সেখানে শিক্ষার্থীর জন্য থাকা-খাওয়ার খরচ কত?

আমি বোস্টনে থাকি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এখানে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, হেলথ ইনস্যুরেন্স—সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ২ হাজার ডলার খরচ হয়। এটি সামলাতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্টাইপেন্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরিকল্পনা করে চললে এই খরচ ম্যানেজ করা সম্ভব।

অনেক শিক্ষার্থীই ডাইনিং হলে, ক্যাফে বা টিউটরিং করে আয় করেন। আপনার ক্ষেত্রে কেমন ছিল?

ক্যাফেতে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভালো লেগেছে। কাস্টমার গ্রিটিংস, কফি বানানো—এসব আমার ভালো লাগত। এখন বিভিন্ন ধরনের কফি বানাতে পারি! টিউটরিংয়ের অভিজ্ঞতাও দারুণ ছিল। যখন কাউকে কিছু শেখাতাম, সে ক্ষেত্রে নিজেরও অনেক কিছু জানা হয়ে যেত।

ফান্ডিং থাকলেও কি কখনো আর্থিক টানাপোড়েন অনুভব করেছেন?

হ্যাঁ, অবশ্যই। পুরোপুরি ফান্ডেড হলেও আর্থিক টানাপোড়েন তো রয়েছেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে যেখানে থাকি, সেই শহরটা অনেক ব্যয়বহুল।

এখানে বিভিন্ন ধরনের খরচ থাকে, অনেক সময় এমন খরচও চলে আসে, যেটা আগে ধারণা করা যায় না। তাই মনে হয়, বাজেট করে চলাটা খুব জরুরি।

যাঁরা এখন যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসতে চান, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?

প্রথমে নিজের লক্ষ্য অটুট রাখতে হবে। আপনি কেন মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান, কোন বিষয়ে করতে চান, আর সেটা কীভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে মেলে। এসব বিষয় ভেবে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। স্টেটমেন্ট অব পারপাস আর রেফারেন্স লেটার—এসব নিয়ে আগে থেকে কাজ করা উচিত। তাড়াহুড়ো না করে হাতে সময় নিয়ে এই প্রস্তুতিগুলো নিতে পারলে ভালো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এসে শুধু পড়াশোনাই নয়, মানিয়ে নেওয়া, একা থাকা, আর্থিক দিক সামলানো—সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা খুব দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। এই জার্নিতে অনিশ্চয়তা এবং নানা ধরনের মানসিক চাপ আসবে। আপনি যদি মন থেকে চেষ্টা করেন, শেখার ইচ্ছা রাখেন, আর ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান, অবশ্যই সফল হবেন।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শহীদ মিনারে তৃতীয় দিনের মতো প্রাথমিকের শিক্ষকদের অবস্থান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। আর কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলেও গতকাল রোববার মধ্যরাতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা।

রোববার বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ রাত পৌনে ১০টায় কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ও তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিবরণীতেও শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিতের কথা বলা হয়েছিল।

তবে শিক্ষকেরা শহীদ মিনারে ফেরার পর আরেক আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি কর্মবিরতি ও অবস্থান চালানোর ঘোষণা দেন।

সেসময় সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষক নেতা মুহিব উল্লাহ বলেছিলেন, ‘সাধারণ শিক্ষকদের জনরোষে নেতারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।’

রোববার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সহকারী শিক্ষকেরা দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানান।

শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে এই তিন দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।

যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের দাবি, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকেরা। শনিবার মধ্যরাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষকেরা ‘পুলিশের হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে শিক্ষকেরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন। এই মোর্চায় আছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

এদিকে ১১ তম গ্রেডে বেতনসহ, পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারাও ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭ টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। কর্মবিরতির কারণে দ্বিতীয় দিনেও এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনের তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয় সিএসসি বৃত্তি

শিক্ষা ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনে তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয় সিএসসি বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির আওতায় দেশটির তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। এই বৃত্তিটিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিটি কার্যকর থাকবে।

তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৫ সালে পেইয়াং ইউনিভার্সিটি নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল চীনের প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গবেষণাক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক গবেষণাগার, উদ্ভাবনমুখী পাঠ্যক্রম এবং বিশ্বমানের শিক্ষকদের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়।

সুযোগ-সুবিধা

তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত। বিশ্ববিদ্যালয়টির বৃত্তি কর্মসূচি উদ্ভাবন, আন্তসাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং একাডেমিক সাফল্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বৃত্তিটির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করা হবে। ক্যাম্পাসে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। থাকছে মাসিক ভাতা ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা। এ ছাড়া স্নাতকোত্তরের জন্য থাকছে ৩ হাজার চায়নিজ ইউয়ান এবং পিএইচডির জন্য থাকছে সাড়ে ৩ হাজার ইউয়ান।

আবেদনের যোগ্যতা

প্রার্থীদের চীনা নাগরিকত্ব থাকা যাবে না। এ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্নাতকের জন্য আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে আর স্নাতকোত্তরের জন্য ৪০ বছরের নিচে হতে হবে। আইইএলটিএস স্কোর ৬ থাকতে হবে বা টোয়েফলে স্কোর ন্যূনতম ৮০ থাকতে হবে।

অধ্যয়নের ক্ষেত্রসমূহ

তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আধুনিক ও চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। এগুলো হলো কম্পিউটার সায়েন্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি; পরিবেশবিজ্ঞান; স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; জীববিজ্ঞান ও বায়োটেকনোলজি; ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা; গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন।

প্রয়োজনীয় তথ্য

অনলাইন সিএসসি আবেদন ফরম, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্ক্যান কপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, চায়নিজ বা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ, শিক্ষা বা গবেষণার অভিজ্ঞতার জীবনবৃত্তান্ত, তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারভাইজারের অ্যাকসেপটেনস লেটার, শিক্ষা বা গবেষণা পরিকল্পনা, দুটি সুপারিশপত্র, শারীরিক পরীক্ষার ফরমের ফটোকপি, অপরাধমুক্তির সনদ।

আবেদন পদ্ধতি

আগ্রহী প্রার্থীরা ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের শেষ সময়: আগামী ১৮ জানুয়ারি, ২০২৬।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন শুরু

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের প্রক্রিয়া রোববার (৯ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত। আর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির চারটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। টেলিটক সিমের মাধ্যমে ফি জমা দিতে হবে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর রাত ১২ পর্যন্ত ফি জমা দেওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে।

প্রাথমিকভাবে যোগ্য প্রার্থীরা আগামী ১৬-২৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। আবেদনের প্রক্রিয়া শেষে ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এই লিংকে গিয়ে বিস্তারিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এইচএসসি ২০২৬: আপাতত নির্বাচনী পরীক্ষা নয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০২৬ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আপাতত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী পরীক্ষা নিতে পারবে না।

আজ রোববার বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে

বলা হয়, ২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনী পরীক্ষার তারিখ পরে আলাদা একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধানদের এই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণের আহ্বানও জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচিতে সব বিষয়ে পূর্ণ সময়ে ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ওই বছরের মে-জুন মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি ২৩ আগস্ট ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত