Ajker Patrika

চবির পঞ্চম সমাবর্তন

২২ হাজার গ্র্যাজুয়েট এক মঞ্চে

সুমন বাইজিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কালো টুপি আকাশে ছুড়ে দিয়ে সমাবর্তনের স্মৃতিটা ফ্রেমবন্দী করেছেন সবাই। ছবি: সংগৃহীত
কালো টুপি আকাশে ছুড়ে দিয়ে সমাবর্তনের স্মৃতিটা ফ্রেমবন্দী করেছেন সবাই। ছবি: সংগৃহীত

চারপাশে শুধুই উচ্ছ্বাস, গর্ব ও আবেগের এক মোহময় মেলবন্ধন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২ হাজার ৩০০ একরের সবুজ পাহাড়ঘেরা ক্যাম্পাস যেন পরিণত হয়েছিল আনন্দ-উৎসবে। হাজারো শিক্ষার্থীর পরনে কালো গাউন ও মাথায় টুপি, বুকভরা স্বপ্ন আর চোখে আগামীর প্রত্যাশা।

দীর্ঘ ৯ বছর পর আয়োজিত চবির পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস ছিল মুখর। ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে স্নাতক সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৮৬ গ্র্যাজুয়েট এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ৪২ জন পিএইচডি এবং ৩৩ জন এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে চেনা স্থানে সবাই মিলিত হয়েছেন। কালো টুপি আকাশে ছুড়ে দিয়ে অনেকে স্মৃতিটা ফ্রেমবন্দী করছেন। কেউ মায়ের মাথায় পরিয়ে দিচ্ছেন সেই গর্বের টুপি, কেউবা নিজের ছোট্ট শিশুর জন্যও আলাদাভাবে তৈরি করেছেন একই রঙের গাউন-টুপি। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে স্মৃতির অ্যালবামে বন্দী করছেন কিছু মুহূর্ত।

১৪ মে বুধবার বেলা ১টায় শুরু হওয়া এই বর্ণিল আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও চবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতি সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তৈরি করে। তাঁর নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ এবং নোবেল জয়ের ইতিহাস মন্ত্রমুগ্ধ করেছে গ্র্যাজুয়েটদের।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা যে বিশ্ব গড়তে চাই, সেই বিশ্ব গড়ার ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু আমরা গৎবাঁধা পথে চলি বলে নতুন পৃথিবীর কথা চিন্তা করি না। এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন সব সময় এটা স্মরণে রেখেই তার পাঠদান, গবেষণা কর্মসূচি চালু রাখে।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার শুরুটা এখান থেকেই। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম শিক্ষক হিসেবে। তবে দিন দিন ছাত্র হয়ে গেছি। কোনো দিন নোবেল পাব, এটা ভাবিনি। আমি আমার কাজ করে গেছি।’

সমাবর্তন সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি দিয়েছি। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর জীবনের অর্জনগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমাবর্তনের দিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। প্রধান উপদেষ্টা এবং আমাদের প্রিয় গ্র্যাজুয়েটদের অংশগ্রহণে দিনটি পূর্ণতা পেয়েছে।’

চবির পঞ্চম সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও চবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চবির পঞ্চম সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও চবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সমাবর্তনের দিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই পুরো ক্যাম্পাসে যেন উৎসবের আমেজ। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, ছবি তোলা, স্মৃতির ডায়েরিতে নতুন পৃষ্ঠা যোগ করার মুহূর্ত—সব মিলিয়ে দিনটি হয়ে উঠেছে অবিস্মরণীয়। সদ্য গ্র্যাজুয়েট উম্মে সালমা বলেন, ‘দিনটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো লেগেছে। বন্ধুদের চোখে আনন্দের ঝিলিক, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাসি আর অশ্রু মিশ্রিত মুহূর্ত। আজকের এই অর্জনের পেছনে মা-বাবা ছিলেন নীরব প্রেরণা। জীবনের স্মৃতির পাতায় আমৃত্যু দিনটি জ্বলজ্বল করবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। এ বছর কিছু ত্রুটি থাকলেও ভবিষ্যতের আয়োজনগুলোতে এসব দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজসহ বহু গুণী ব্যক্তিত্ব।

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯, ২০০৮ ও ২০১৬ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর এবারের আয়োজন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, হয়ে উঠেছে একটি প্রজন্মের স্বপ্নপূরণের উৎসব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

নূর ধান-২: এক চালেই হবে ভাত পোলাও খিচুড়ি বিরিয়ানি তেহারি

ভারতের সঙ্গে টক্কর দিলে বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ: বিজেপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত