সপ্তম শ্রেণি থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাতেন মো. আল-আমিন হোসেন। বাবার ওপর সংসারের বোঝা কমাতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই ছোট্ট বয়সে স্বপ্ন দেখেন বড় হয়ে চাকরি করবেন না; বরং চাকরি দেবেন। সে ভাবনা থেকে শুরু হয় পথচলা। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০১৩ সালে ভর্তি হন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগে। তবে স্নাতক শেষ না করেই মাত্র দুই বছরের মাথায় পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। দেশটির আলস্টার ইউনিভার্সিটির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শেষ করেন উচ্চশিক্ষা। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, সিস্টেমেটিক চিন্তা আর গ্রাহককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশে ফিরে তিনি গড়ে তোলেন প্রযুক্তিনির্ভর টিকিটিং ও পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘চক্রযান’। সফল এই তরুণ উদ্যোক্তা তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।
আব্দুর রাজ্জাক খান
শৈশবের দিনগুলো কেমন কেটেছে, পড়াশোনা কোথায় করেছেন?
আমার শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা সবই ঢাকায়। ছোটবেলায় কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। ক্লাস সেভেন থেকে টিউশনি করেছি। বলতে পারেন, নিজের খরচ নিজেই চালাতাম। চেষ্টা করতাম বাবার ওপর চাপ কমানোর। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগপর্যন্ত টিউশনি ও ছোটখাটো কিছু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যাতে নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও সামান্য সহায়তা করতে পারি। হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে দুই বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি) পড়াশোনা করেছি।
শিক্ষাজীবনে কীভাবে ক্যারিয়ার ও লক্ষ্য নির্ধারণের দিকে মনোযোগী ছিলেন?
শৈশব থেকে আমার শেখার কৌতূহল এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার অভ্যাস ছিল। স্কুল ও কলেজজীবনে দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানের অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়াশোনা করার সময় আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, সিস্টেমেটিক চিন্তা এবং গ্রাহককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি শিখেছি। আজ এই শিক্ষা সরাসরি কাজে লাগছে আমার প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগে। ছোট খেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, আমি চাকরি করব না, বরং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করব। নতুনদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেব।
আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাই।
আমার প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মের নাম ‘চক্রযান’। এটি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর টিকিটিং ও পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি টোটাল আইটি সলিউশন কোম্পানি হিসেবেও কাজ করছে। আমরা বাস অপারেটরদের জন্য ডিজিটাল টিকিটিং, রিজারভেশন ম্যানেজমেন্ট এবং রুট অ্যানালিটিকস প্রদান করি। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের ব্যবসার জন্য কাস্টমাইজড ইআরপি সফটওয়্যার, ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং ক্লাউডভিত্তিক ম্যানেজমেন্ট সলিউশনও সরবরাহ করি। আমাদের লক্ষ্য হলো, পরিবহনসহ দেশের বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
এই উদ্যোগের ধারণা কীভাবে পেলেন?
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের উন্নত পরিবহনব্যবস্থা দেখে ধারণা পেয়েছি। আমরা যখন শুরু করি, তখন আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থাপনা তেমন ছিল না। দেশের বাস টার্মিনালে লম্বা লাইন, টিকিট-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এবং তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব দেখে মনে হয়েছিল, এগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তাই অপারেটরদের জন্য সিট ম্যানেজমেন্ট ডিজিটাল করা এবং ভ্রমণকারীদের জন্য অনলাইন বুকিং সুবিধা নিশ্চিত করার চিন্তা নিয়ে ‘চক্রযান’ শুরু করি।
উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা এসেছে মূলত দুই দিক থেকে। একদিকে, ভ্রমণকারীরা টিকিট-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বা তথ্যের অভাবে সমস্যায় পড়ছিলেন। অন্যদিকে, ছোট ও মাঝারি বাস অপারেটররা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। আমি দেখলাম, প্রযুক্তির মাধ্যমে এই দুই পক্ষকে একসঙ্গে আনা গেলে সবার জন্যই নতুন মূল্য তৈরি করা সম্ভব।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে চ্যালেঞ্জ ও বাজারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আস্থা তৈরি করা। অপারেটরদের পুরোনো পদ্ধতি বদলাতে রাজি করানো, ইন্টারনেট ও পেমেন্ট অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা সামলানো এবং গ্রাহকদের অনলাইন পেমেন্টে আস্থা তৈরি করা। এসব খুবই কঠিন কাজ ছিল। প্রথম প্রথম বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকে সুবিধা বুঝলেও দ্বিধায় ছিলেন। তবে কয়েকজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অপারেটর এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। তাদের সফল অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে অন্যদের মধ্যেও আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কোন বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন?
আমি মূলত গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব সহজ রাখা, মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস, স্পষ্ট কনফার্মেশন এবং নমনীয় ক্যানসেল বা রিফান্ড নীতি—এসবকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ব্যাকএন্ডে রিয়েল-টাইম সিট আপডেট, নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করাও আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।
দেশে আরও অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। চক্রযান অন্যদের থেকে আলাদা বা বিশেষ কী সেবা দেয়?
চক্রযান শুধু পরিবহন টিকিটিংয়ের সমাধান দেয় না; বরং পুরো পরিবহন খাতকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাসের ভেতরে ক্যামেরা স্থাপন, ওয়াইফাই সিস্টেম উন্নয়ন, লেনদেনকে সম্পূর্ণ ক্যাশলেস করা এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এক কথায়, পরিবহন খাতকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে যা যা প্রয়োজন, চক্রযান সে সব সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। আর এটিই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় চক্রযানকে আলাদা করে তোলে।
সাফল্যের পেছনে কার্যকর কৌশল কী ছিল, এ পর্যন্ত কতজন অপারেটর আপনার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন?
এখানে মূলত তিনটি বিষয় কাজ করেছে। এগুলো হলো: অপারেটরের সঙ্গে সত্যিকারের পার্টনারশিপ, প্রোডাক্টকে নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারবান্ধব রাখা এবং স্বচ্ছ নীতি মেনে আস্থা তৈরি করা। এ ছাড়া ছোট ছোট সফলতা প্রমাণ হিসেবে দেখানো এবং দ্রুত সাপোর্ট প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে ৪০ টিরও বেশি নামীদামি কোম্পানি যুক্ত রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সেবা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্ভেজালভাবে গ্রহণ করে আসছে। এটিই আমাদের প্রতি ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও আস্থার বড় প্রমাণ।
স্বনামধন্য অপারেটরদের যুক্ত করা এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো?
প্রথমে কয়েকজন অপারেটরকে দেখিয়েছি কীভাবে তাদের বিক্রি বাড়বে, কনফ্লিক্ট কমবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে। সফল কেস তৈরি হওয়ার পর অন্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং কাস্টমাইজড সমাধানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য দ্রুত কাস্টমার সাপোর্ট, ভাড়া ও টিকিটের পূর্ণ স্বচ্ছতা, নিরাপদ পেমেন্ট এবং দ্রুত রিফান্ড নীতি চালু করেছি। এ ছাড়া ইতিবাচক রিভিউ এবং বাস্তব সফল কেস শেয়ার করাও আস্থা তৈরিতে সাহায্য করেছে।
সমস্যায় পড়লে কীভাবে মোকাবিলা করেন?
প্রথমেই আমি সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আসলে কোথায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছোটখাটো ইস্যু হলে দ্রুত সমাধান করি, তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলে নতুনভাবে পরিকল্পনা করি এবং প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করি। এ সময় টিমকে পাশে রাখি এবং তাদের পূর্ণ সাপোর্ট দিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি ব্যর্থতাকে কখনোই নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখি না; বরং এটিকে শেখার একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি, যা ভবিষ্যতে আমাকে আরও শক্তিশালীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কর্মসংস্থান তৈরিতে চক্রযানের ভূমিকা কী?
আমরা স্থানীয় ট্যালেন্ট নিয়োগ করি এবং তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করি। এতে অপারেটরদের ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নতুন ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও রিস্কিলিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে আরও বড় পরিসরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চক্রযানকে কোথায় দেখতে চান?
আমরা মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন (বাস, ফেরি, লোকাল ট্রান্সপোর্ট), করপোরেট বুকিং সলিউশন, এআইভিত্তিক ডিমান্ড ফোরকাস্টিং এবং ইআরপি ও সফটওয়্যার সলিউশন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের পরিবহন খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজ করা, ব্যবহারকারীদের জন্য ক্যাশলেস, পেপারলেস, হ্যাসলফ্রি এবং সুবিধাজনক সেবা নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য আরও লাভজনক ও স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা চাই, চক্রযান শুধু বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরেই নয়, এশিয়ার দেশগুলোতেও সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করুক।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করুন। দ্রুত ছোট সমাধান তৈরি করে বাজারে পরীক্ষা করুন এবং ফিডব্যাক নিন। ধৈর্য ধরুন ও ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করতে থাকুন। টিমের প্রতি আস্থা রাখুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে ধাপে ধাপে আগানো। মনে রাখবেন, ব্যর্থতাকে কখনো ভয় পাবেন না; প্রতিটি ব্যর্থতাই নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দেয়।
শৈশবের দিনগুলো কেমন কেটেছে, পড়াশোনা কোথায় করেছেন?
আমার শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা সবই ঢাকায়। ছোটবেলায় কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। ক্লাস সেভেন থেকে টিউশনি করেছি। বলতে পারেন, নিজের খরচ নিজেই চালাতাম। চেষ্টা করতাম বাবার ওপর চাপ কমানোর। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগপর্যন্ত টিউশনি ও ছোটখাটো কিছু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যাতে নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও সামান্য সহায়তা করতে পারি। হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে দুই বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এইউবি) পড়াশোনা করেছি।
শিক্ষাজীবনে কীভাবে ক্যারিয়ার ও লক্ষ্য নির্ধারণের দিকে মনোযোগী ছিলেন?
শৈশব থেকে আমার শেখার কৌতূহল এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার অভ্যাস ছিল। স্কুল ও কলেজজীবনে দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানের অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়াশোনা করার সময় আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, সিস্টেমেটিক চিন্তা এবং গ্রাহককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি শিখেছি। আজ এই শিক্ষা সরাসরি কাজে লাগছে আমার প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগে। ছোট খেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, আমি চাকরি করব না, বরং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করব। নতুনদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেব।
আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাই।
আমার প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মের নাম ‘চক্রযান’। এটি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর টিকিটিং ও পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি টোটাল আইটি সলিউশন কোম্পানি হিসেবেও কাজ করছে। আমরা বাস অপারেটরদের জন্য ডিজিটাল টিকিটিং, রিজারভেশন ম্যানেজমেন্ট এবং রুট অ্যানালিটিকস প্রদান করি। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের ব্যবসার জন্য কাস্টমাইজড ইআরপি সফটওয়্যার, ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং ক্লাউডভিত্তিক ম্যানেজমেন্ট সলিউশনও সরবরাহ করি। আমাদের লক্ষ্য হলো, পরিবহনসহ দেশের বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
এই উদ্যোগের ধারণা কীভাবে পেলেন?
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের উন্নত পরিবহনব্যবস্থা দেখে ধারণা পেয়েছি। আমরা যখন শুরু করি, তখন আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থাপনা তেমন ছিল না। দেশের বাস টার্মিনালে লম্বা লাইন, টিকিট-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব এবং তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব দেখে মনে হয়েছিল, এগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তাই অপারেটরদের জন্য সিট ম্যানেজমেন্ট ডিজিটাল করা এবং ভ্রমণকারীদের জন্য অনলাইন বুকিং সুবিধা নিশ্চিত করার চিন্তা নিয়ে ‘চক্রযান’ শুরু করি।
উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা এসেছে মূলত দুই দিক থেকে। একদিকে, ভ্রমণকারীরা টিকিট-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বা তথ্যের অভাবে সমস্যায় পড়ছিলেন। অন্যদিকে, ছোট ও মাঝারি বাস অপারেটররা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। আমি দেখলাম, প্রযুক্তির মাধ্যমে এই দুই পক্ষকে একসঙ্গে আনা গেলে সবার জন্যই নতুন মূল্য তৈরি করা সম্ভব।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে চ্যালেঞ্জ ও বাজারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আস্থা তৈরি করা। অপারেটরদের পুরোনো পদ্ধতি বদলাতে রাজি করানো, ইন্টারনেট ও পেমেন্ট অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা সামলানো এবং গ্রাহকদের অনলাইন পেমেন্টে আস্থা তৈরি করা। এসব খুবই কঠিন কাজ ছিল। প্রথম প্রথম বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকে সুবিধা বুঝলেও দ্বিধায় ছিলেন। তবে কয়েকজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অপারেটর এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। তাদের সফল অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে অন্যদের মধ্যেও আস্থা তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কোন বিষয়গুলোকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন?
আমি মূলত গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব সহজ রাখা, মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস, স্পষ্ট কনফার্মেশন এবং নমনীয় ক্যানসেল বা রিফান্ড নীতি—এসবকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ব্যাকএন্ডে রিয়েল-টাইম সিট আপডেট, নির্ভরযোগ্য পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করাও আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।
দেশে আরও অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। চক্রযান অন্যদের থেকে আলাদা বা বিশেষ কী সেবা দেয়?
চক্রযান শুধু পরিবহন টিকিটিংয়ের সমাধান দেয় না; বরং পুরো পরিবহন খাতকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাসের ভেতরে ক্যামেরা স্থাপন, ওয়াইফাই সিস্টেম উন্নয়ন, লেনদেনকে সম্পূর্ণ ক্যাশলেস করা এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ প্রদান। এক কথায়, পরিবহন খাতকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে যা যা প্রয়োজন, চক্রযান সে সব সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। আর এটিই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় চক্রযানকে আলাদা করে তোলে।
সাফল্যের পেছনে কার্যকর কৌশল কী ছিল, এ পর্যন্ত কতজন অপারেটর আপনার প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন?
এখানে মূলত তিনটি বিষয় কাজ করেছে। এগুলো হলো: অপারেটরের সঙ্গে সত্যিকারের পার্টনারশিপ, প্রোডাক্টকে নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারবান্ধব রাখা এবং স্বচ্ছ নীতি মেনে আস্থা তৈরি করা। এ ছাড়া ছোট ছোট সফলতা প্রমাণ হিসেবে দেখানো এবং দ্রুত সাপোর্ট প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে ৪০ টিরও বেশি নামীদামি কোম্পানি যুক্ত রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সেবা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্ভেজালভাবে গ্রহণ করে আসছে। এটিই আমাদের প্রতি ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি ও আস্থার বড় প্রমাণ।
স্বনামধন্য অপারেটরদের যুক্ত করা এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো?
প্রথমে কয়েকজন অপারেটরকে দেখিয়েছি কীভাবে তাদের বিক্রি বাড়বে, কনফ্লিক্ট কমবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে। সফল কেস তৈরি হওয়ার পর অন্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং কাস্টমাইজড সমাধানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য দ্রুত কাস্টমার সাপোর্ট, ভাড়া ও টিকিটের পূর্ণ স্বচ্ছতা, নিরাপদ পেমেন্ট এবং দ্রুত রিফান্ড নীতি চালু করেছি। এ ছাড়া ইতিবাচক রিভিউ এবং বাস্তব সফল কেস শেয়ার করাও আস্থা তৈরিতে সাহায্য করেছে।
সমস্যায় পড়লে কীভাবে মোকাবিলা করেন?
প্রথমেই আমি সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আসলে কোথায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছোটখাটো ইস্যু হলে দ্রুত সমাধান করি, তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলে নতুনভাবে পরিকল্পনা করি এবং প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করি। এ সময় টিমকে পাশে রাখি এবং তাদের পূর্ণ সাপোর্ট দিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি ব্যর্থতাকে কখনোই নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখি না; বরং এটিকে শেখার একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি, যা ভবিষ্যতে আমাকে আরও শক্তিশালীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কর্মসংস্থান তৈরিতে চক্রযানের ভূমিকা কী?
আমরা স্থানীয় ট্যালেন্ট নিয়োগ করি এবং তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করি। এতে অপারেটরদের ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নতুন ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও রিস্কিলিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে আরও বড় পরিসরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চক্রযানকে কোথায় দেখতে চান?
আমরা মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন (বাস, ফেরি, লোকাল ট্রান্সপোর্ট), করপোরেট বুকিং সলিউশন, এআইভিত্তিক ডিমান্ড ফোরকাস্টিং এবং ইআরপি ও সফটওয়্যার সলিউশন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের পরিবহন খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজ করা, ব্যবহারকারীদের জন্য ক্যাশলেস, পেপারলেস, হ্যাসলফ্রি এবং সুবিধাজনক সেবা নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য আরও লাভজনক ও স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা চাই, চক্রযান শুধু বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরেই নয়, এশিয়ার দেশগুলোতেও সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করুক।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করুন। দ্রুত ছোট সমাধান তৈরি করে বাজারে পরীক্ষা করুন এবং ফিডব্যাক নিন। ধৈর্য ধরুন ও ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করতে থাকুন। টিমের প্রতি আস্থা রাখুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করে ধাপে ধাপে আগানো। মনে রাখবেন, ব্যর্থতাকে কখনো ভয় পাবেন না; প্রতিটি ব্যর্থতাই নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দেয়।
বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয় অধ্যয়ন করে সেগুলো পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে বলে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের কিশোর বয়স থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সময় পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য পেয়েছেন গবেষকেরা...
৩৩ মিনিট আগেনেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম মেরিট বৃত্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির আওতায় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য বৃত্তিটি কার্যকর থাকবে।
৭ ঘণ্টা আগেইংরেজি ভাষায় প্রিপজিশনের সঠিক ব্যবহার প্রাঞ্জল ও সঠিক বাক্য রচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিভিন্ন noun, adjective বা participle-এর পরে কোন preposition বসবে, তা সব সময় সহজে মনে রাখা যায় না। এ পর্বে আমরা দেখব কোন ধরনের শব্দের সঙ্গে কোন preposition সাধারণত ব্যবহার হয়।
৭ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। সাত দফায় মোট ৪৫টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছে প্যানেলটি।
২০ ঘণ্টা আগে