Ajker Patrika

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাবধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাবধান

রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনা, আদালতের স্থগিত আদেশ নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা, অনুমোদন ছাড়া শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা, ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে মামলাসহ নানা সমস্যা চলছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমস্যায় কণ্টকিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৫টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্রু ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

গতকাল ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রাম এবং অনুমোদিত আসনের বেশি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে অননুমোদিত ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতে কমিশন থেকে একাধিকবার সতর্ক ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

‘নিয়মানুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্জিত ডিগ্রির মূল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী হবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন। ৬৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, ২২টিতে উপ-উপাচার্য এবং ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে কোনো ব্যক্তি নিয়োজিত নেই।’

ইউজিসি বলছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ‍উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পরামর্শ দেওয়া হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সঠিক তথ্য যাচাই করে শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করে কমিশন বলছে, কেউ অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রাম এবং অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসনসংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত আসনে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং এর ফলে পরবর্তীতে কোনো আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষিত হলে অথবা সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম বাতিল হলে বা অনুমোদিত আসনসংখ্যার অধিক আসনে ভর্তি হওয়ার কারণে সনদ বাতিল হলে তার দায়-দায়িত্ব ইউজিসির ওপর বর্তাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ কখনোই ফাঁকা রাখা উচিত না। তিনি বলেন, ‘এসব পদ শূন্য থাকলে তারা তো ভালোমতো শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে জটিলতা আছে সেখানে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক না করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত। এভাবে গণবিজ্ঞপ্তি দিলে শিক্ষার্থীরা দ্বিধায় পড়ে যেতে পারে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই নির্দেশ দিতে হবে। 

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী অবস্থা
ইবাইস ইউনিভার্সিটির কোনো অনুমোদিত ঠিকানা নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ‍উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে বারিধারার নর্দ্দার ঠিকানায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়েও রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ‍উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি সরকার বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বছরের জন্য এর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিলেও তারা তা শুরু করতে পারেনি। দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা সরকার বন্ধ করে দিলে আদালতে গিয়ে পক্ষে রায় পায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাস্টি বোর্ড দুই ভাগে ভাগ হয়ে একাধিক মামলা করে। উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে বিশ্ববিদ্যালয়টির যে ঠিকানা দেওয়া আছে সরেজমিনে সেটির কোনো অস্তিত্ব পায়নি ইউজিসি।

টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর ১০টি প্রোগ্রামের অনুমোদন দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম  ‍শুরুর অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিবিএ, এমবিএ, এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরে এই চারটি প্রোগ্রামের ভুতাপেক্ষ অনুমোদন চেয়ে কমিশনে আবেদন করলে ইউজিসি অনুমোদন দেয়নি। সরকার ও ইউজিসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা বিশ্ববিদ্যালয়টির মামলা চলছে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও আদালতে গিয়ে তারা পক্ষে রায় পেয়েছে। পরে ইউজিসি তাদের আদেশ প্রত্যাহার করলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আদালতে একাধিক মামলা আছে। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিন পদে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা প্রতিনিধি নেই।

সরকারের অনুমোদন পেলেও রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা আছে সেগুলো বন্ধ করার মতো ক্ষমতা কমিশনের হাতে নেই। তাই আমরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী জটিলতা রয়েছে সেসব তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হতে সতর্কতা জারি করেছি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে রিট করে পক্ষে রায় পাওয়ায় সেসব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত