আতাউর রহমান মারুফ

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। পড়ে ভীষণ আনন্দ পান। কিন্তু বড় মুখ করে তা অন্যের কাছে বলতে সংকোচ করেন। ‘মূলধারা’র সাহিত্যপাঠেও হুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। ফলে একটা সংকট আঁচ করা যায়। হুমায়ূনের অত্যন্ত স্বতন্ত্র সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য এর প্রধান কারণ। আর সাহিত্য পাঠজনিত আমাদের জাতীয় দীনতাও তার জন্য কম দায়ী নয়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য বইটি নির্মিত। আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হুমায়ূন তাঁর কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই বইয়ের মোট নয়টি অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটি প্রবন্ধ। আড়াই শ পৃষ্ঠার এই বইয়ে হুমায়ূনকে দেখার সম্ভাব্য সব ক’টি চোখই যাচাই-বাছাই করেছেন মোহাম্মদ আজম।
হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূনকে বোঝাপড়ার এক নিজস্ব নিরীক্ষায় রত আছেন। সাহিত্যবোদ্ধাদের হুমায়ূন-মূল্যায়নেও রেখেছেন কড়া নজর। ‘কেন হুমায়ূন আহমেদ’ অধ্যায়ে তিনি তাঁর এই যৌথ প্রযোজনার ফলাফল তুলে ধরেন। তাঁর মতে, হাতে-কলমে ‘শিক্ষিত’ নয় বলে অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে যোগ্য ভাবেন না। তবে আজম নিজে হুমায়ূনকে একজন ‘জাত লেখক’ বলে মনে করেন। তাই হুমায়ূনকে আবিষ্কারের সংকল্পে এই বইয়ে হাত দিয়েছেন। তাতে আরেকটি কাজও উদ্ধার হবে—‘শিক্ষিত’ লেখকশ্রেণির হালহকিকত বের করে আনা যাবে।
জনপ্রিয়তা হুমায়ূন-পাঠের প্রধান অন্তরায়। জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের জনপ্রিয় উক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। জনপ্রিয় সাহিত্যকে পড়ার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি আছে। বিপদ হচ্ছে, হুমায়ূন সেসব খোপে আঁটেন না। ‘হুমায়ূন-পাঠের সমস্যা’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের লেখার বৈশিষ্ট্যটি চিহ্নিত করেন। হুমায়ূন তাঁর চরিত্রগুলোর ওপর কোনো ধরনের মতাদর্শ চাপিয়ে দেন না। তার মানে, উদারনৈতিক ধারার সরলরৈখিক ভালো-মন্দের দিকনির্দেশনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তা-ও নয়। হুমায়ূন মূলত নাগরিক মধ্যবিত্তদের নিয়ে লিখেছেন। তবে নগরের বৃহৎ ক্যানভাস তুলে ধরেননি। তাঁর গল্প পারিবারিক আবহে সীমাবদ্ধ থেকেছে। সেখানেই আবর্তিত হয়েছে প্রেম, সমাজ বা রাজনীতি; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ চিত্রকল্প। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁর সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে মনস্তত্ত্বের যেসব নিপুণ নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার আশপাশেও ঘেঁষেননি হুমায়ূন। এসবে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে—গল্পের চরিত্র বা পরিবেশের নিজস্বতা বজায় থাকে। হুমায়ূনের সাহিত্যে যে স্বাভাবিক ‘ঢাকা’র চিত্র পাওয়া যায়, তা বাংলা সাহিত্যে খুব সুলভ নয়। তবে এটাই আবার হুমায়ূন-পাঠের প্রধান প্রতিবন্ধক। সাহিত্যপাঠের প্রচলিত পদ্ধতি দিয়ে তাঁকে বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে সাহিত্য সমালোচনার সক্রিয়তাকে আরও বেগবান করার মাধ্যমে হুমায়ূন-পাঠ সহজ হবে বলে আজম মনে করেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জীবনের দৈনন্দিনতাকে নিপুণভাবে চিত্রিত করতে হুমায়ূন অতুলনীয়। সে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে সহানুভূতির উদার দৃষ্টি নিয়েই তাঁদের গল্প লিখেছেন। জীবনকে তিনি দেখতেন ইতিবাচক অর্থে। সেটাই প্রচার করেছেন সাহিত্যে। নিজের ভাব ফুটিয়ে তুলতে উপযোগী আর মনোরম ভাষা ছিল তাঁর সহজাত অস্ত্র। লেখার এই পদ্ধতি ছিল পাঠকের জন্য খুবই আরামদায়ক। ফলে হুমায়ূন হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ‘জনপ্রিয় হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর এই অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাঙালি জনগোষ্ঠীর গড় বৈশিষ্ট্যকে হুমায়ূন দারুণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর গল্প বলার ধারা পাল্টেছে; কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের সমান উপস্থাপনায় হেরফের হয়নি। পরিবার এখনো বাঙালির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই ভবঘুরে হিমু বা জটিল-কঠিন রহস্য সমাধানকারী মিসির আলির জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে পারিবারিক বলয় বাদ পড়ে না। এসব চরিত্র গড়পড়তা বাঙালির স্বভাবমুক্তও থাকে না। হুমায়ূনের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিতেও অজপাড়া গাঁয়ের সজীব আবহ বজায় থাকে। মানুষ ‘কল্পকাহিনি’ ঠিক যেসব কারণে পছন্দ করে, বাস্তব তুলে ধরতে হুমায়ূন সেসব উপকরণের কার্যকর প্রয়োগ করেন লেখায়। ফলে অপরিচিত প্লটকেও পাঠক অবচেতনে আপন ভাবতে পারেন। আবার এসব বৈশিষ্ট্যের ফলে হুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যায় দেশজতার একটা তাজা ঘ্রাণ। জনপ্রিয় হয়েও ‘মূলধারা’র সাহিত্যে এ কারণে তিনি অবধারিত পাঠ্য হবেন।
হুমায়ূনের কথাসাহিত্যে তাঁর নিজের আরোপিত কথা খুব কম পাওয়া যায়। চরিত্রগুলোর সংলাপ আর মনোজগতের তৎপরতা নিয়ে কাহিনির কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেন। হুমায়ূন নিজে বিশেষ কোনো পক্ষের ওকালতি করেন না; বরং তাঁর বিশেষ নজর থাকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ তৈরি করা। যাতে চরিত্রগুলোর অন্তস্থ শক্তি ও সুপ্ত মানবিকতা সহজাতভাবেই বিকাশের সুযোগ পায়। এটাই তাঁর সাহিত্য দর্শন। ‘কথাশিল্পী হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর সাহিত্যিক সফলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ বড় উপন্যাস লিখেছিলেন। তবে সেগুলো সার্থক উপন্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হননি। কিন্তু ছোটগল্প বা ছোট উপন্যাসে ইঙ্গিতধর্মী ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা তৈরিতে তিনি অসাধারণভাবে সফল। এসব ক্ষেত্রের বহুসংখ্যক রচনা ও সফলতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে চিহ্নিত করবে।
হুমায়ূনের ভাষার সারল্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হুমায়ূনের ভাষাবিষয়ক অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; সরল রেখেও ভাষার গভীরতা বজায় রাখতে হুমায়ূনের বেগ পেতে হয়নি। হুমায়ূন গল্প বলতেন মুখের ভাষায়। ফলে তাঁর লেখায় জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম স্বর উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর রচনাপাঠের জন্য দুটিই প্রয়োজন—নান্দনিকবোধ আর সারল্যের মধ্যেই গভীরতা আবিষ্কারের সামর্থ্য।
মুক্তিযুদ্ধ হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিতে হুমায়ূন অধিকতর বাস্তবনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত মত বা দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে বিভিন্নভাবে নিরীক্ষা করেছেন হুমায়ূন। হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি। একটি যুদ্ধের আঁচ কীভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিকতাকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তার দুর্দান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন। গ্রামে বা শহরে গেরিলা বাহিনীর সক্রিয়তার বাঙ্ময় উপস্থাপনাও উঠে এসেছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধে’র ভাষ্য হিসেবে খুঁজে পেতে হুমায়ূনের সাহিত্য অতুলনীয়।
হুমায়ূনের সাহিত্যে উঠে আসা মওলানা বা ভাটি অঞ্চল নিয়ে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘মূলধারা’য় অবহেলিত মওলানা শ্রেণিকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন। এসব মওলানা ক্ষমতাকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিষ্ক্রিয়। তবে ধর্মের নিরপেক্ষ চর্চার বাস্তবতা উপস্থাপন পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছে। একইভাবে ভাটি অঞ্চল বা গ্রামীণ জীবনের যে অনুপুঙ্খ বিবরণ হুমায়ূন তুলে ধরেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার দৃষ্টান্ত অত বেশি নেই।
এই বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে হুমায়ূনের সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে খুব স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তিনি যা দেখতেন, তাই তুলে ধরতেন। তার লেখায় পিতৃতন্ত্র এসেছে; কিন্তু পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পায়নি। নারী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারকাঠামোর বাইরে ক্ষমতাবান কোনো নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সামাজিক মূল্যবোধের এমন রক্ষণশীল উপস্থাপনে তার পাঠকগোষ্ঠীও সম্মত ছিল বলে ধরা যায়। তবে, চূড়ান্তভাবে, হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসকে ঔপনিবেশিকতার অবধারিত প্রভাব থেকে মুক্ত পাঠের স্বাদ এনে দেয়।
সবশেষে বলা যায়, এই বই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা। হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে এবং ‘মূলধারা’র সাহিত্যে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ের প্রচেষ্টা—দুই-ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। তবে মোহাম্মদ আজম তা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। যথাযথ প্রশংসা বা সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আজমের আলোচনার পদ্ধতিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক কানাগলির প্রাসঙ্গিক সব গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তিনি হাজির করেছেন। তার ছাঁচে ফেলে হুমায়ূনকে বিচার করেছেন। বিপুল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল পাঠকেও মজাদার করে তোলে। বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা ধরে রাখতে ভাষার সীমাবদ্ধতাকে উতরে যেতে চেয়েছেন। শব্দের ব্যবহার চমক জাগানিয়া, তবে অনুভূতিকে তৃপ্তি দেয়। ফলে গবেষণাধর্মী হলেও বইটি পড়ার উত্তেজনা পুরো সময়ে টানটান হয়ে থাকে। সংস্কৃতি অধ্যয়নের (কালচারাল স্টাডিজ) নিরিখে সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই বই একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যে আদর্শস্থানীয়।
হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য
লেখক: মোহাম্মদ আজম
প্রথমা প্রকাশন
মূল্য: ৫০০ টাকা
আরও পড়ুন

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। পড়ে ভীষণ আনন্দ পান। কিন্তু বড় মুখ করে তা অন্যের কাছে বলতে সংকোচ করেন। ‘মূলধারা’র সাহিত্যপাঠেও হুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। ফলে একটা সংকট আঁচ করা যায়। হুমায়ূনের অত্যন্ত স্বতন্ত্র সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য এর প্রধান কারণ। আর সাহিত্য পাঠজনিত আমাদের জাতীয় দীনতাও তার জন্য কম দায়ী নয়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য বইটি নির্মিত। আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হুমায়ূন তাঁর কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই বইয়ের মোট নয়টি অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটি প্রবন্ধ। আড়াই শ পৃষ্ঠার এই বইয়ে হুমায়ূনকে দেখার সম্ভাব্য সব ক’টি চোখই যাচাই-বাছাই করেছেন মোহাম্মদ আজম।
হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূনকে বোঝাপড়ার এক নিজস্ব নিরীক্ষায় রত আছেন। সাহিত্যবোদ্ধাদের হুমায়ূন-মূল্যায়নেও রেখেছেন কড়া নজর। ‘কেন হুমায়ূন আহমেদ’ অধ্যায়ে তিনি তাঁর এই যৌথ প্রযোজনার ফলাফল তুলে ধরেন। তাঁর মতে, হাতে-কলমে ‘শিক্ষিত’ নয় বলে অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে যোগ্য ভাবেন না। তবে আজম নিজে হুমায়ূনকে একজন ‘জাত লেখক’ বলে মনে করেন। তাই হুমায়ূনকে আবিষ্কারের সংকল্পে এই বইয়ে হাত দিয়েছেন। তাতে আরেকটি কাজও উদ্ধার হবে—‘শিক্ষিত’ লেখকশ্রেণির হালহকিকত বের করে আনা যাবে।
জনপ্রিয়তা হুমায়ূন-পাঠের প্রধান অন্তরায়। জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের জনপ্রিয় উক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। জনপ্রিয় সাহিত্যকে পড়ার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি আছে। বিপদ হচ্ছে, হুমায়ূন সেসব খোপে আঁটেন না। ‘হুমায়ূন-পাঠের সমস্যা’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের লেখার বৈশিষ্ট্যটি চিহ্নিত করেন। হুমায়ূন তাঁর চরিত্রগুলোর ওপর কোনো ধরনের মতাদর্শ চাপিয়ে দেন না। তার মানে, উদারনৈতিক ধারার সরলরৈখিক ভালো-মন্দের দিকনির্দেশনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তা-ও নয়। হুমায়ূন মূলত নাগরিক মধ্যবিত্তদের নিয়ে লিখেছেন। তবে নগরের বৃহৎ ক্যানভাস তুলে ধরেননি। তাঁর গল্প পারিবারিক আবহে সীমাবদ্ধ থেকেছে। সেখানেই আবর্তিত হয়েছে প্রেম, সমাজ বা রাজনীতি; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ চিত্রকল্প। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁর সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে মনস্তত্ত্বের যেসব নিপুণ নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার আশপাশেও ঘেঁষেননি হুমায়ূন। এসবে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে—গল্পের চরিত্র বা পরিবেশের নিজস্বতা বজায় থাকে। হুমায়ূনের সাহিত্যে যে স্বাভাবিক ‘ঢাকা’র চিত্র পাওয়া যায়, তা বাংলা সাহিত্যে খুব সুলভ নয়। তবে এটাই আবার হুমায়ূন-পাঠের প্রধান প্রতিবন্ধক। সাহিত্যপাঠের প্রচলিত পদ্ধতি দিয়ে তাঁকে বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে সাহিত্য সমালোচনার সক্রিয়তাকে আরও বেগবান করার মাধ্যমে হুমায়ূন-পাঠ সহজ হবে বলে আজম মনে করেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জীবনের দৈনন্দিনতাকে নিপুণভাবে চিত্রিত করতে হুমায়ূন অতুলনীয়। সে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে সহানুভূতির উদার দৃষ্টি নিয়েই তাঁদের গল্প লিখেছেন। জীবনকে তিনি দেখতেন ইতিবাচক অর্থে। সেটাই প্রচার করেছেন সাহিত্যে। নিজের ভাব ফুটিয়ে তুলতে উপযোগী আর মনোরম ভাষা ছিল তাঁর সহজাত অস্ত্র। লেখার এই পদ্ধতি ছিল পাঠকের জন্য খুবই আরামদায়ক। ফলে হুমায়ূন হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ‘জনপ্রিয় হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর এই অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাঙালি জনগোষ্ঠীর গড় বৈশিষ্ট্যকে হুমায়ূন দারুণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর গল্প বলার ধারা পাল্টেছে; কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের সমান উপস্থাপনায় হেরফের হয়নি। পরিবার এখনো বাঙালির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই ভবঘুরে হিমু বা জটিল-কঠিন রহস্য সমাধানকারী মিসির আলির জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে পারিবারিক বলয় বাদ পড়ে না। এসব চরিত্র গড়পড়তা বাঙালির স্বভাবমুক্তও থাকে না। হুমায়ূনের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিতেও অজপাড়া গাঁয়ের সজীব আবহ বজায় থাকে। মানুষ ‘কল্পকাহিনি’ ঠিক যেসব কারণে পছন্দ করে, বাস্তব তুলে ধরতে হুমায়ূন সেসব উপকরণের কার্যকর প্রয়োগ করেন লেখায়। ফলে অপরিচিত প্লটকেও পাঠক অবচেতনে আপন ভাবতে পারেন। আবার এসব বৈশিষ্ট্যের ফলে হুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যায় দেশজতার একটা তাজা ঘ্রাণ। জনপ্রিয় হয়েও ‘মূলধারা’র সাহিত্যে এ কারণে তিনি অবধারিত পাঠ্য হবেন।
হুমায়ূনের কথাসাহিত্যে তাঁর নিজের আরোপিত কথা খুব কম পাওয়া যায়। চরিত্রগুলোর সংলাপ আর মনোজগতের তৎপরতা নিয়ে কাহিনির কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেন। হুমায়ূন নিজে বিশেষ কোনো পক্ষের ওকালতি করেন না; বরং তাঁর বিশেষ নজর থাকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ তৈরি করা। যাতে চরিত্রগুলোর অন্তস্থ শক্তি ও সুপ্ত মানবিকতা সহজাতভাবেই বিকাশের সুযোগ পায়। এটাই তাঁর সাহিত্য দর্শন। ‘কথাশিল্পী হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর সাহিত্যিক সফলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ বড় উপন্যাস লিখেছিলেন। তবে সেগুলো সার্থক উপন্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হননি। কিন্তু ছোটগল্প বা ছোট উপন্যাসে ইঙ্গিতধর্মী ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা তৈরিতে তিনি অসাধারণভাবে সফল। এসব ক্ষেত্রের বহুসংখ্যক রচনা ও সফলতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে চিহ্নিত করবে।
হুমায়ূনের ভাষার সারল্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হুমায়ূনের ভাষাবিষয়ক অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; সরল রেখেও ভাষার গভীরতা বজায় রাখতে হুমায়ূনের বেগ পেতে হয়নি। হুমায়ূন গল্প বলতেন মুখের ভাষায়। ফলে তাঁর লেখায় জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম স্বর উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর রচনাপাঠের জন্য দুটিই প্রয়োজন—নান্দনিকবোধ আর সারল্যের মধ্যেই গভীরতা আবিষ্কারের সামর্থ্য।
মুক্তিযুদ্ধ হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিতে হুমায়ূন অধিকতর বাস্তবনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত মত বা দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে বিভিন্নভাবে নিরীক্ষা করেছেন হুমায়ূন। হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি। একটি যুদ্ধের আঁচ কীভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিকতাকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তার দুর্দান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন। গ্রামে বা শহরে গেরিলা বাহিনীর সক্রিয়তার বাঙ্ময় উপস্থাপনাও উঠে এসেছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধে’র ভাষ্য হিসেবে খুঁজে পেতে হুমায়ূনের সাহিত্য অতুলনীয়।
হুমায়ূনের সাহিত্যে উঠে আসা মওলানা বা ভাটি অঞ্চল নিয়ে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘মূলধারা’য় অবহেলিত মওলানা শ্রেণিকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন। এসব মওলানা ক্ষমতাকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিষ্ক্রিয়। তবে ধর্মের নিরপেক্ষ চর্চার বাস্তবতা উপস্থাপন পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছে। একইভাবে ভাটি অঞ্চল বা গ্রামীণ জীবনের যে অনুপুঙ্খ বিবরণ হুমায়ূন তুলে ধরেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার দৃষ্টান্ত অত বেশি নেই।
এই বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে হুমায়ূনের সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে খুব স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তিনি যা দেখতেন, তাই তুলে ধরতেন। তার লেখায় পিতৃতন্ত্র এসেছে; কিন্তু পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পায়নি। নারী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারকাঠামোর বাইরে ক্ষমতাবান কোনো নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সামাজিক মূল্যবোধের এমন রক্ষণশীল উপস্থাপনে তার পাঠকগোষ্ঠীও সম্মত ছিল বলে ধরা যায়। তবে, চূড়ান্তভাবে, হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসকে ঔপনিবেশিকতার অবধারিত প্রভাব থেকে মুক্ত পাঠের স্বাদ এনে দেয়।
সবশেষে বলা যায়, এই বই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা। হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে এবং ‘মূলধারা’র সাহিত্যে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ের প্রচেষ্টা—দুই-ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। তবে মোহাম্মদ আজম তা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। যথাযথ প্রশংসা বা সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আজমের আলোচনার পদ্ধতিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক কানাগলির প্রাসঙ্গিক সব গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তিনি হাজির করেছেন। তার ছাঁচে ফেলে হুমায়ূনকে বিচার করেছেন। বিপুল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল পাঠকেও মজাদার করে তোলে। বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা ধরে রাখতে ভাষার সীমাবদ্ধতাকে উতরে যেতে চেয়েছেন। শব্দের ব্যবহার চমক জাগানিয়া, তবে অনুভূতিকে তৃপ্তি দেয়। ফলে গবেষণাধর্মী হলেও বইটি পড়ার উত্তেজনা পুরো সময়ে টানটান হয়ে থাকে। সংস্কৃতি অধ্যয়নের (কালচারাল স্টাডিজ) নিরিখে সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই বই একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যে আদর্শস্থানীয়।
হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য
লেখক: মোহাম্মদ আজম
প্রথমা প্রকাশন
মূল্য: ৫০০ টাকা
আরও পড়ুন
আতাউর রহমান মারুফ

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। পড়ে ভীষণ আনন্দ পান। কিন্তু বড় মুখ করে তা অন্যের কাছে বলতে সংকোচ করেন। ‘মূলধারা’র সাহিত্যপাঠেও হুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। ফলে একটা সংকট আঁচ করা যায়। হুমায়ূনের অত্যন্ত স্বতন্ত্র সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য এর প্রধান কারণ। আর সাহিত্য পাঠজনিত আমাদের জাতীয় দীনতাও তার জন্য কম দায়ী নয়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য বইটি নির্মিত। আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হুমায়ূন তাঁর কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই বইয়ের মোট নয়টি অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটি প্রবন্ধ। আড়াই শ পৃষ্ঠার এই বইয়ে হুমায়ূনকে দেখার সম্ভাব্য সব ক’টি চোখই যাচাই-বাছাই করেছেন মোহাম্মদ আজম।
হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূনকে বোঝাপড়ার এক নিজস্ব নিরীক্ষায় রত আছেন। সাহিত্যবোদ্ধাদের হুমায়ূন-মূল্যায়নেও রেখেছেন কড়া নজর। ‘কেন হুমায়ূন আহমেদ’ অধ্যায়ে তিনি তাঁর এই যৌথ প্রযোজনার ফলাফল তুলে ধরেন। তাঁর মতে, হাতে-কলমে ‘শিক্ষিত’ নয় বলে অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে যোগ্য ভাবেন না। তবে আজম নিজে হুমায়ূনকে একজন ‘জাত লেখক’ বলে মনে করেন। তাই হুমায়ূনকে আবিষ্কারের সংকল্পে এই বইয়ে হাত দিয়েছেন। তাতে আরেকটি কাজও উদ্ধার হবে—‘শিক্ষিত’ লেখকশ্রেণির হালহকিকত বের করে আনা যাবে।
জনপ্রিয়তা হুমায়ূন-পাঠের প্রধান অন্তরায়। জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের জনপ্রিয় উক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। জনপ্রিয় সাহিত্যকে পড়ার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি আছে। বিপদ হচ্ছে, হুমায়ূন সেসব খোপে আঁটেন না। ‘হুমায়ূন-পাঠের সমস্যা’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের লেখার বৈশিষ্ট্যটি চিহ্নিত করেন। হুমায়ূন তাঁর চরিত্রগুলোর ওপর কোনো ধরনের মতাদর্শ চাপিয়ে দেন না। তার মানে, উদারনৈতিক ধারার সরলরৈখিক ভালো-মন্দের দিকনির্দেশনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তা-ও নয়। হুমায়ূন মূলত নাগরিক মধ্যবিত্তদের নিয়ে লিখেছেন। তবে নগরের বৃহৎ ক্যানভাস তুলে ধরেননি। তাঁর গল্প পারিবারিক আবহে সীমাবদ্ধ থেকেছে। সেখানেই আবর্তিত হয়েছে প্রেম, সমাজ বা রাজনীতি; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ চিত্রকল্প। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁর সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে মনস্তত্ত্বের যেসব নিপুণ নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার আশপাশেও ঘেঁষেননি হুমায়ূন। এসবে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে—গল্পের চরিত্র বা পরিবেশের নিজস্বতা বজায় থাকে। হুমায়ূনের সাহিত্যে যে স্বাভাবিক ‘ঢাকা’র চিত্র পাওয়া যায়, তা বাংলা সাহিত্যে খুব সুলভ নয়। তবে এটাই আবার হুমায়ূন-পাঠের প্রধান প্রতিবন্ধক। সাহিত্যপাঠের প্রচলিত পদ্ধতি দিয়ে তাঁকে বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে সাহিত্য সমালোচনার সক্রিয়তাকে আরও বেগবান করার মাধ্যমে হুমায়ূন-পাঠ সহজ হবে বলে আজম মনে করেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জীবনের দৈনন্দিনতাকে নিপুণভাবে চিত্রিত করতে হুমায়ূন অতুলনীয়। সে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে সহানুভূতির উদার দৃষ্টি নিয়েই তাঁদের গল্প লিখেছেন। জীবনকে তিনি দেখতেন ইতিবাচক অর্থে। সেটাই প্রচার করেছেন সাহিত্যে। নিজের ভাব ফুটিয়ে তুলতে উপযোগী আর মনোরম ভাষা ছিল তাঁর সহজাত অস্ত্র। লেখার এই পদ্ধতি ছিল পাঠকের জন্য খুবই আরামদায়ক। ফলে হুমায়ূন হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ‘জনপ্রিয় হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর এই অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাঙালি জনগোষ্ঠীর গড় বৈশিষ্ট্যকে হুমায়ূন দারুণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর গল্প বলার ধারা পাল্টেছে; কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের সমান উপস্থাপনায় হেরফের হয়নি। পরিবার এখনো বাঙালির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই ভবঘুরে হিমু বা জটিল-কঠিন রহস্য সমাধানকারী মিসির আলির জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে পারিবারিক বলয় বাদ পড়ে না। এসব চরিত্র গড়পড়তা বাঙালির স্বভাবমুক্তও থাকে না। হুমায়ূনের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিতেও অজপাড়া গাঁয়ের সজীব আবহ বজায় থাকে। মানুষ ‘কল্পকাহিনি’ ঠিক যেসব কারণে পছন্দ করে, বাস্তব তুলে ধরতে হুমায়ূন সেসব উপকরণের কার্যকর প্রয়োগ করেন লেখায়। ফলে অপরিচিত প্লটকেও পাঠক অবচেতনে আপন ভাবতে পারেন। আবার এসব বৈশিষ্ট্যের ফলে হুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যায় দেশজতার একটা তাজা ঘ্রাণ। জনপ্রিয় হয়েও ‘মূলধারা’র সাহিত্যে এ কারণে তিনি অবধারিত পাঠ্য হবেন।
হুমায়ূনের কথাসাহিত্যে তাঁর নিজের আরোপিত কথা খুব কম পাওয়া যায়। চরিত্রগুলোর সংলাপ আর মনোজগতের তৎপরতা নিয়ে কাহিনির কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেন। হুমায়ূন নিজে বিশেষ কোনো পক্ষের ওকালতি করেন না; বরং তাঁর বিশেষ নজর থাকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ তৈরি করা। যাতে চরিত্রগুলোর অন্তস্থ শক্তি ও সুপ্ত মানবিকতা সহজাতভাবেই বিকাশের সুযোগ পায়। এটাই তাঁর সাহিত্য দর্শন। ‘কথাশিল্পী হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর সাহিত্যিক সফলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ বড় উপন্যাস লিখেছিলেন। তবে সেগুলো সার্থক উপন্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হননি। কিন্তু ছোটগল্প বা ছোট উপন্যাসে ইঙ্গিতধর্মী ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা তৈরিতে তিনি অসাধারণভাবে সফল। এসব ক্ষেত্রের বহুসংখ্যক রচনা ও সফলতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে চিহ্নিত করবে।
হুমায়ূনের ভাষার সারল্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হুমায়ূনের ভাষাবিষয়ক অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; সরল রেখেও ভাষার গভীরতা বজায় রাখতে হুমায়ূনের বেগ পেতে হয়নি। হুমায়ূন গল্প বলতেন মুখের ভাষায়। ফলে তাঁর লেখায় জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম স্বর উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর রচনাপাঠের জন্য দুটিই প্রয়োজন—নান্দনিকবোধ আর সারল্যের মধ্যেই গভীরতা আবিষ্কারের সামর্থ্য।
মুক্তিযুদ্ধ হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিতে হুমায়ূন অধিকতর বাস্তবনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত মত বা দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে বিভিন্নভাবে নিরীক্ষা করেছেন হুমায়ূন। হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি। একটি যুদ্ধের আঁচ কীভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিকতাকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তার দুর্দান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন। গ্রামে বা শহরে গেরিলা বাহিনীর সক্রিয়তার বাঙ্ময় উপস্থাপনাও উঠে এসেছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধে’র ভাষ্য হিসেবে খুঁজে পেতে হুমায়ূনের সাহিত্য অতুলনীয়।
হুমায়ূনের সাহিত্যে উঠে আসা মওলানা বা ভাটি অঞ্চল নিয়ে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘মূলধারা’য় অবহেলিত মওলানা শ্রেণিকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন। এসব মওলানা ক্ষমতাকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিষ্ক্রিয়। তবে ধর্মের নিরপেক্ষ চর্চার বাস্তবতা উপস্থাপন পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছে। একইভাবে ভাটি অঞ্চল বা গ্রামীণ জীবনের যে অনুপুঙ্খ বিবরণ হুমায়ূন তুলে ধরেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার দৃষ্টান্ত অত বেশি নেই।
এই বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে হুমায়ূনের সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে খুব স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তিনি যা দেখতেন, তাই তুলে ধরতেন। তার লেখায় পিতৃতন্ত্র এসেছে; কিন্তু পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পায়নি। নারী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারকাঠামোর বাইরে ক্ষমতাবান কোনো নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সামাজিক মূল্যবোধের এমন রক্ষণশীল উপস্থাপনে তার পাঠকগোষ্ঠীও সম্মত ছিল বলে ধরা যায়। তবে, চূড়ান্তভাবে, হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসকে ঔপনিবেশিকতার অবধারিত প্রভাব থেকে মুক্ত পাঠের স্বাদ এনে দেয়।
সবশেষে বলা যায়, এই বই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা। হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে এবং ‘মূলধারা’র সাহিত্যে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ের প্রচেষ্টা—দুই-ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। তবে মোহাম্মদ আজম তা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। যথাযথ প্রশংসা বা সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আজমের আলোচনার পদ্ধতিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক কানাগলির প্রাসঙ্গিক সব গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তিনি হাজির করেছেন। তার ছাঁচে ফেলে হুমায়ূনকে বিচার করেছেন। বিপুল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল পাঠকেও মজাদার করে তোলে। বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা ধরে রাখতে ভাষার সীমাবদ্ধতাকে উতরে যেতে চেয়েছেন। শব্দের ব্যবহার চমক জাগানিয়া, তবে অনুভূতিকে তৃপ্তি দেয়। ফলে গবেষণাধর্মী হলেও বইটি পড়ার উত্তেজনা পুরো সময়ে টানটান হয়ে থাকে। সংস্কৃতি অধ্যয়নের (কালচারাল স্টাডিজ) নিরিখে সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই বই একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যে আদর্শস্থানীয়।
হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য
লেখক: মোহাম্মদ আজম
প্রথমা প্রকাশন
মূল্য: ৫০০ টাকা
আরও পড়ুন

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। পড়ে ভীষণ আনন্দ পান। কিন্তু বড় মুখ করে তা অন্যের কাছে বলতে সংকোচ করেন। ‘মূলধারা’র সাহিত্যপাঠেও হুমায়ূনকে নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য নেই। ফলে একটা সংকট আঁচ করা যায়। হুমায়ূনের অত্যন্ত স্বতন্ত্র সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য এর প্রধান কারণ। আর সাহিত্য পাঠজনিত আমাদের জাতীয় দীনতাও তার জন্য কম দায়ী নয়। এই সূত্রের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য বইটি নির্মিত। আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হুমায়ূন তাঁর কথাসাহিত্যে ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই বইয়ের মোট নয়টি অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটি প্রবন্ধ। আড়াই শ পৃষ্ঠার এই বইয়ে হুমায়ূনকে দেখার সম্ভাব্য সব ক’টি চোখই যাচাই-বাছাই করেছেন মোহাম্মদ আজম।
হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূনকে বোঝাপড়ার এক নিজস্ব নিরীক্ষায় রত আছেন। সাহিত্যবোদ্ধাদের হুমায়ূন-মূল্যায়নেও রেখেছেন কড়া নজর। ‘কেন হুমায়ূন আহমেদ’ অধ্যায়ে তিনি তাঁর এই যৌথ প্রযোজনার ফলাফল তুলে ধরেন। তাঁর মতে, হাতে-কলমে ‘শিক্ষিত’ নয় বলে অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে যোগ্য ভাবেন না। তবে আজম নিজে হুমায়ূনকে একজন ‘জাত লেখক’ বলে মনে করেন। তাই হুমায়ূনকে আবিষ্কারের সংকল্পে এই বইয়ে হাত দিয়েছেন। তাতে আরেকটি কাজও উদ্ধার হবে—‘শিক্ষিত’ লেখকশ্রেণির হালহকিকত বের করে আনা যাবে।
জনপ্রিয়তা হুমায়ূন-পাঠের প্রধান অন্তরায়। জনপ্রিয় সাহিত্য নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের জনপ্রিয় উক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। জনপ্রিয় সাহিত্যকে পড়ার প্রচলিত কিছু পদ্ধতি আছে। বিপদ হচ্ছে, হুমায়ূন সেসব খোপে আঁটেন না। ‘হুমায়ূন-পাঠের সমস্যা’ অধ্যায়ে মোহাম্মদ আজম হুমায়ূনের লেখার বৈশিষ্ট্যটি চিহ্নিত করেন। হুমায়ূন তাঁর চরিত্রগুলোর ওপর কোনো ধরনের মতাদর্শ চাপিয়ে দেন না। তার মানে, উদারনৈতিক ধারার সরলরৈখিক ভালো-মন্দের দিকনির্দেশনা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে, তা-ও নয়। হুমায়ূন মূলত নাগরিক মধ্যবিত্তদের নিয়ে লিখেছেন। তবে নগরের বৃহৎ ক্যানভাস তুলে ধরেননি। তাঁর গল্প পারিবারিক আবহে সীমাবদ্ধ থেকেছে। সেখানেই আবর্তিত হয়েছে প্রেম, সমাজ বা রাজনীতি; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ চিত্রকল্প। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাঁর সাহিত্যের একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু আধুনিকতাবাদী সাহিত্যে মনস্তত্ত্বের যেসব নিপুণ নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার আশপাশেও ঘেঁষেননি হুমায়ূন। এসবে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে—গল্পের চরিত্র বা পরিবেশের নিজস্বতা বজায় থাকে। হুমায়ূনের সাহিত্যে যে স্বাভাবিক ‘ঢাকা’র চিত্র পাওয়া যায়, তা বাংলা সাহিত্যে খুব সুলভ নয়। তবে এটাই আবার হুমায়ূন-পাঠের প্রধান প্রতিবন্ধক। সাহিত্যপাঠের প্রচলিত পদ্ধতি দিয়ে তাঁকে বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে। তবে সাহিত্য সমালোচনার সক্রিয়তাকে আরও বেগবান করার মাধ্যমে হুমায়ূন-পাঠ সহজ হবে বলে আজম মনে করেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জীবনের দৈনন্দিনতাকে নিপুণভাবে চিত্রিত করতে হুমায়ূন অতুলনীয়। সে সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে সহানুভূতির উদার দৃষ্টি নিয়েই তাঁদের গল্প লিখেছেন। জীবনকে তিনি দেখতেন ইতিবাচক অর্থে। সেটাই প্রচার করেছেন সাহিত্যে। নিজের ভাব ফুটিয়ে তুলতে উপযোগী আর মনোরম ভাষা ছিল তাঁর সহজাত অস্ত্র। লেখার এই পদ্ধতি ছিল পাঠকের জন্য খুবই আরামদায়ক। ফলে হুমায়ূন হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন জনপ্রিয় সাহিত্যিক। ‘জনপ্রিয় হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর এই অভাবনীয় গ্রহণযোগ্যতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাঙালি জনগোষ্ঠীর গড় বৈশিষ্ট্যকে হুমায়ূন দারুণ বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে তাঁর গল্প বলার ধারা পাল্টেছে; কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের সমান উপস্থাপনায় হেরফের হয়নি। পরিবার এখনো বাঙালির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই ভবঘুরে হিমু বা জটিল-কঠিন রহস্য সমাধানকারী মিসির আলির জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে পারিবারিক বলয় বাদ পড়ে না। এসব চরিত্র গড়পড়তা বাঙালির স্বভাবমুক্তও থাকে না। হুমায়ূনের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনিতেও অজপাড়া গাঁয়ের সজীব আবহ বজায় থাকে। মানুষ ‘কল্পকাহিনি’ ঠিক যেসব কারণে পছন্দ করে, বাস্তব তুলে ধরতে হুমায়ূন সেসব উপকরণের কার্যকর প্রয়োগ করেন লেখায়। ফলে অপরিচিত প্লটকেও পাঠক অবচেতনে আপন ভাবতে পারেন। আবার এসব বৈশিষ্ট্যের ফলে হুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যায় দেশজতার একটা তাজা ঘ্রাণ। জনপ্রিয় হয়েও ‘মূলধারা’র সাহিত্যে এ কারণে তিনি অবধারিত পাঠ্য হবেন।
হুমায়ূনের কথাসাহিত্যে তাঁর নিজের আরোপিত কথা খুব কম পাওয়া যায়। চরিত্রগুলোর সংলাপ আর মনোজগতের তৎপরতা নিয়ে কাহিনির কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেন। হুমায়ূন নিজে বিশেষ কোনো পক্ষের ওকালতি করেন না; বরং তাঁর বিশেষ নজর থাকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ তৈরি করা। যাতে চরিত্রগুলোর অন্তস্থ শক্তি ও সুপ্ত মানবিকতা সহজাতভাবেই বিকাশের সুযোগ পায়। এটাই তাঁর সাহিত্য দর্শন। ‘কথাশিল্পী হুমায়ূন’ অধ্যায়ে তাঁর সাহিত্যিক সফলতা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ বড় উপন্যাস লিখেছিলেন। তবে সেগুলো সার্থক উপন্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হননি। কিন্তু ছোটগল্প বা ছোট উপন্যাসে ইঙ্গিতধর্মী ও তীক্ষ্ণ বর্ণনা তৈরিতে তিনি অসাধারণভাবে সফল। এসব ক্ষেত্রের বহুসংখ্যক রচনা ও সফলতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে চিহ্নিত করবে।
হুমায়ূনের ভাষার সারল্য বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হুমায়ূনের ভাষাবিষয়ক অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; সরল রেখেও ভাষার গভীরতা বজায় রাখতে হুমায়ূনের বেগ পেতে হয়নি। হুমায়ূন গল্প বলতেন মুখের ভাষায়। ফলে তাঁর লেখায় জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম স্বর উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর রচনাপাঠের জন্য দুটিই প্রয়োজন—নান্দনিকবোধ আর সারল্যের মধ্যেই গভীরতা আবিষ্কারের সামর্থ্য।
মুক্তিযুদ্ধ হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখিতে হুমায়ূন অধিকতর বাস্তবনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত মত বা দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে বিভিন্নভাবে নিরীক্ষা করেছেন হুমায়ূন। হুমায়ূনের মুক্তিযুদ্ধ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি। একটি যুদ্ধের আঁচ কীভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিকতাকে ছুঁয়ে দিয়ে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে, তার দুর্দান্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন। গ্রামে বা শহরে গেরিলা বাহিনীর সক্রিয়তার বাঙ্ময় উপস্থাপনাও উঠে এসেছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধে’র ভাষ্য হিসেবে খুঁজে পেতে হুমায়ূনের সাহিত্য অতুলনীয়।
হুমায়ূনের সাহিত্যে উঠে আসা মওলানা বা ভাটি অঞ্চল নিয়ে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ‘মূলধারা’য় অবহেলিত মওলানা শ্রেণিকে নতুন চোখে দেখার চেষ্টা করেছেন হুমায়ূন। এসব মওলানা ক্ষমতাকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন বা নিষ্ক্রিয়। তবে ধর্মের নিরপেক্ষ চর্চার বাস্তবতা উপস্থাপন পুরো দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন আঙ্গিক দিয়েছে। একইভাবে ভাটি অঞ্চল বা গ্রামীণ জীবনের যে অনুপুঙ্খ বিবরণ হুমায়ূন তুলে ধরেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার দৃষ্টান্ত অত বেশি নেই।
এই বইয়ের সর্বশেষ অধ্যায়ে হুমায়ূনের সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে খুব স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—তিনি যা দেখতেন, তাই তুলে ধরতেন। তার লেখায় পিতৃতন্ত্র এসেছে; কিন্তু পুরুষতন্ত্র প্রাধান্য পায়নি। নারী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারকাঠামোর বাইরে ক্ষমতাবান কোনো নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সামাজিক মূল্যবোধের এমন রক্ষণশীল উপস্থাপনে তার পাঠকগোষ্ঠীও সম্মত ছিল বলে ধরা যায়। তবে, চূড়ান্তভাবে, হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্য ও পাঠাভ্যাসকে ঔপনিবেশিকতার অবধারিত প্রভাব থেকে মুক্ত পাঠের স্বাদ এনে দেয়।
সবশেষে বলা যায়, এই বই সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রচেষ্টা। হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে এবং ‘মূলধারা’র সাহিত্যে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ের প্রচেষ্টা—দুই-ই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। তবে মোহাম্মদ আজম তা দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। যথাযথ প্রশংসা বা সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আজমের আলোচনার পদ্ধতিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, ইতিহাস বা সাংস্কৃতিক কানাগলির প্রাসঙ্গিক সব গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তিনি হাজির করেছেন। তার ছাঁচে ফেলে হুমায়ূনকে বিচার করেছেন। বিপুল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলাফল পাঠকেও মজাদার করে তোলে। বক্তব্যের প্রাঞ্জলতা ধরে রাখতে ভাষার সীমাবদ্ধতাকে উতরে যেতে চেয়েছেন। শব্দের ব্যবহার চমক জাগানিয়া, তবে অনুভূতিকে তৃপ্তি দেয়। ফলে গবেষণাধর্মী হলেও বইটি পড়ার উত্তেজনা পুরো সময়ে টানটান হয়ে থাকে। সংস্কৃতি অধ্যয়নের (কালচারাল স্টাডিজ) নিরিখে সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই বই একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যে আদর্শস্থানীয়।
হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য
লেখক: মোহাম্মদ আজম
প্রথমা প্রকাশন
মূল্য: ৫০০ টাকা
আরও পড়ুন

আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
২ দিন আগে
কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
২ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
এস এম মাসুদুল হক বলেন, ‘আমরা আবেদন করা ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। শর্তসাপেক্ষে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়।’
মাসুদুল হক আরও বলেন, ১ হাজার ৮৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মধ্যে যেগুলো চলতি বছর জারি করা এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করেছে, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে।
দেড় হাজারের বেশি অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির আবেদন গত ৮ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রহণ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকেরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। এর বাইরে দেশে আরও ৫ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে এ বছরের শুরুতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে প্রথমে এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষকেরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। এর মধ্যে তাঁদের এক পদযাত্রায় পুলিশ লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহার করে। বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পিটুনির সে ঘটনা আলোড়ন তোলে। এর একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
গত ২৫ জুন ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালা অনুসারে, মাদ্রাসাগুলোর মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্ত হবে। ইবতেদায়ির প্রধান বেতন পাবেন দশম গ্রেডে আর সাধারণ, বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। আর ক্বারী বা নুরানি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রতিটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যে পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০তম গ্রেডে বেতন পাবেন।
নীতিমালা অনুসারে, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। আর নীতিমালায় মাদ্রাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা এসেছে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। একাডেমিক স্বীকৃতি, প্রতিষ্ঠানের জমি, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বার্ষিক পরীক্ষার গড় নম্বর, পরিবেশ ইত্যাদি সূচকে নম্বর নির্ধারণ করে মাদ্রাসাগুলোর গ্রেডিং করা হবে।
নীতিমালায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের এমপিও কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদ্রাসাগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে এমপিও দেবে। প্রথমে মাদ্রাসাগুলোকে এমপিও কোড দেওয়া হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে বা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে যোগদানের তারিখ থেকে এমপিও পাবেন।
বিক্ষোভ-মিছিল করেননি শিক্ষকেরা
সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণসহ পাঁচ দাবিতে আজ বিক্ষোভ-মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। তবে প্রধান উপদেষ্টা ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদন দেওয়ায় তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেননি। তবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্য জোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘১ হাজার ৮৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় অনুমোদন দিয়েছেন বলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা আমাদের বিক্ষোভ-মিছিল না করার অনুরোধ করেছেন। তাই আমরা বিক্ষোভ-মিছিল করিনি। তবে আমরা লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাব। আপাতত আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না।’

আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
এস এম মাসুদুল হক বলেন, ‘আমরা আবেদন করা ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। শর্তসাপেক্ষে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়।’
মাসুদুল হক আরও বলেন, ১ হাজার ৮৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মধ্যে যেগুলো চলতি বছর জারি করা এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করেছে, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে।
দেড় হাজারের বেশি অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির আবেদন গত ৮ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রহণ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকেরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পেয়ে থাকেন। এর বাইরে দেশে আরও ৫ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে এ বছরের শুরুতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে প্রথমে এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষকেরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। এর মধ্যে তাঁদের এক পদযাত্রায় পুলিশ লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যবহার করে। বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পিটুনির সে ঘটনা আলোড়ন তোলে। এর একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
গত ২৫ জুন ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালা অনুসারে, মাদ্রাসাগুলোর মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্ত হবে। ইবতেদায়ির প্রধান বেতন পাবেন দশম গ্রেডে আর সাধারণ, বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। আর ক্বারী বা নুরানি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রতিটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যে পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০তম গ্রেডে বেতন পাবেন।
নীতিমালা অনুসারে, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। আর নীতিমালায় মাদ্রাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা এসেছে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। একাডেমিক স্বীকৃতি, প্রতিষ্ঠানের জমি, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বার্ষিক পরীক্ষার গড় নম্বর, পরিবেশ ইত্যাদি সূচকে নম্বর নির্ধারণ করে মাদ্রাসাগুলোর গ্রেডিং করা হবে।
নীতিমালায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের এমপিও কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদ্রাসাগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে এমপিও দেবে। প্রথমে মাদ্রাসাগুলোকে এমপিও কোড দেওয়া হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে বা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে যোগদানের তারিখ থেকে এমপিও পাবেন।
বিক্ষোভ-মিছিল করেননি শিক্ষকেরা
সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণসহ পাঁচ দাবিতে আজ বিক্ষোভ-মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। তবে প্রধান উপদেষ্টা ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির অনুমোদন দেওয়ায় তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেননি। তবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্য জোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘১ হাজার ৮৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় অনুমোদন দিয়েছেন বলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা আমাদের বিক্ষোভ-মিছিল না করার অনুরোধ করেছেন। তাই আমরা বিক্ষোভ-মিছিল করিনি। তবে আমরা লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাব। আপাতত আমরা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না।’

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯ জুলাই ২০২১
কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
২ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়ের অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান বলেন, গতকাল রোববার বিধিমালাটি সংশোধনের গেজেট জারি হয়েছে। গত আগস্টে জারি করা বিধিমালায় ৪ ক্যাটাগরির পদ থাকলেও সংশোধনে দুটি ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে। সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি নতুন বিধিমালায় নেই।
সমালোচনার মুখে পদগুলো বাতিল করা হলো কি না—জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আপনারা এটি খতিয়ে দেখতে পারেন।’
এ ছাড়া বিধিমালায় একটি ‘শব্দগত পরিবর্তন’ আনা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান।
মাসুদ আকতার বলেন, ‘আগের বিধিমালায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া পদগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশ পদ বিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ও অন্য ৮০ শতাংশ পদ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন বলে উল্লেখ ছিল। এখানে একটি শব্দগত ভুল হয়েছিল আমাদের, মনে হচ্ছিল, ৮০ শতাংশ পদে বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন। কিন্তু আসলে কোটা ছাড়া পদের ওই ৮০ শতাংশ ছিল কমন। অর্থাৎ বিজ্ঞান বা অন্যান্য বিষয়ের ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন।’
মাসুদ আকতার খান আরও বলেন, তাই বিধিমালার কোটার বাইরের ৮০ শতাংশ পদের ক্ষেত্রে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দবন্ধকে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন’ শব্দবন্ধ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নতুন বিধিমালায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের দুটি পদ নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো সংগীত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি সৃষ্টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ বিধিমালায় সংগীত বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির সমালোচনা করে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
একই দিন এক সেমিনারে সংগীত শিক্ষক পদ সৃষ্টির কঠোর সমালোচনা করেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক স্তরে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপকে ‘ইসলামবিরোধী অ্যাজেন্ডা’ আখ্যা দিয়ে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।

কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়ের অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান বলেন, গতকাল রোববার বিধিমালাটি সংশোধনের গেজেট জারি হয়েছে। গত আগস্টে জারি করা বিধিমালায় ৪ ক্যাটাগরির পদ থাকলেও সংশোধনে দুটি ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে। সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি নতুন বিধিমালায় নেই।
সমালোচনার মুখে পদগুলো বাতিল করা হলো কি না—জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আপনারা এটি খতিয়ে দেখতে পারেন।’
এ ছাড়া বিধিমালায় একটি ‘শব্দগত পরিবর্তন’ আনা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান।
মাসুদ আকতার বলেন, ‘আগের বিধিমালায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া পদগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশ পদ বিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ও অন্য ৮০ শতাংশ পদ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন বলে উল্লেখ ছিল। এখানে একটি শব্দগত ভুল হয়েছিল আমাদের, মনে হচ্ছিল, ৮০ শতাংশ পদে বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন। কিন্তু আসলে কোটা ছাড়া পদের ওই ৮০ শতাংশ ছিল কমন। অর্থাৎ বিজ্ঞান বা অন্যান্য বিষয়ের ডিগ্রিধারীরা নিয়োগ পাবেন।’
মাসুদ আকতার খান আরও বলেন, তাই বিধিমালার কোটার বাইরের ৮০ শতাংশ পদের ক্ষেত্রে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দবন্ধকে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন’ শব্দবন্ধ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নতুন বিধিমালায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের দুটি পদ নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো সংগীত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি সৃষ্টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ বিধিমালায় সংগীত বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির সমালোচনা করে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
একই দিন এক সেমিনারে সংগীত শিক্ষক পদ সৃষ্টির কঠোর সমালোচনা করেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক স্তরে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপকে ‘ইসলামবিরোধী অ্যাজেন্ডা’ আখ্যা দিয়ে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯ জুলাই ২০২১
আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
২ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২ দিন আগেমো. আশিকুর রহমান

বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
ক্যাডেট কলেজগুলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল শাখার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব, ক্রীড়া ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
বর্তমানে দেশে মোট ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। ছেলেদের জন্য ৯টি: ফৌজদারহাট (চট্টগ্রাম), ঝিনাইদহ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল), রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, পাবনা ও কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ। মেয়েদের জন্য ৩টি: ময়মনসিংহ, ফেনী ও জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
অনলাইনে আবেদন যেভাবে
অনলাইনে আবেদন করতে হবে নিচের যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার সত্যায়িত সনদ (ইংরেজি মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।
২. জন্মসনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের
৪. মা-বাবা বা অভিভাবকের মাসিক আয়ের প্রত্যয়নপত্র।
৫. মা ও বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
গুরুত্বপূর্ণ সময়সূচি ধাপ তারিখ ও সময়
আবেদন শুরু ১ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ৮টা
আবেদন শেষ ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকেল ৫টা
প্রবেশপত্র সংগ্রহ ১১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা–বেলা ১টা
ভর্তি পরীক্ষা হবে যেমন
ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে, মোট ৩০০ নম্বরের রচনামূলক পদ্ধতিতে।
বিষয় নম্বর
ইংরেজি ১০০
গণিত ১০০
বাংলা ৬০
সাধারণ জ্ঞান ৪০
পরীক্ষার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে
আবেদনকারীর যোগ্যতা
যারা আবেদন করতে পারবে না
যেসব প্রার্থী আগে ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত, মৌখিক বা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে, তারা পুনরায় আবেদন করতে পারবে না। এ ছাড়া নিম্নোক্ত অবস্থায় আবেদন অগ্রহণযোগ্য হবে—গ্রস নকনী, ফ্ল্যাট ফুট, কালার ব্লাইন্ড, অতিরিক্ত ওজন, অ্যাজমা, মৃগী, হৃদ্রোগ, বাত, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, রাতকানা, ডায়াবেটিস, হেমোফিলিয়া, কিংবা বিছানায় প্রস্রাবের অভ্যাস থাকলে।
তথ্যসূত্র: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৬

বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
ক্যাডেট কলেজগুলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল শাখার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব, ক্রীড়া ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
বর্তমানে দেশে মোট ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। ছেলেদের জন্য ৯টি: ফৌজদারহাট (চট্টগ্রাম), ঝিনাইদহ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল), রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, পাবনা ও কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ। মেয়েদের জন্য ৩টি: ময়মনসিংহ, ফেনী ও জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
অনলাইনে আবেদন যেভাবে
অনলাইনে আবেদন করতে হবে নিচের যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার সত্যায়িত সনদ (ইংরেজি মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।
২. জন্মসনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের
৪. মা-বাবা বা অভিভাবকের মাসিক আয়ের প্রত্যয়নপত্র।
৫. মা ও বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
গুরুত্বপূর্ণ সময়সূচি ধাপ তারিখ ও সময়
আবেদন শুরু ১ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ৮টা
আবেদন শেষ ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকেল ৫টা
প্রবেশপত্র সংগ্রহ ১১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা–বেলা ১টা
ভর্তি পরীক্ষা হবে যেমন
ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাসের আলোকে, মোট ৩০০ নম্বরের রচনামূলক পদ্ধতিতে।
বিষয় নম্বর
ইংরেজি ১০০
গণিত ১০০
বাংলা ৬০
সাধারণ জ্ঞান ৪০
পরীক্ষার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে
আবেদনকারীর যোগ্যতা
যারা আবেদন করতে পারবে না
যেসব প্রার্থী আগে ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত, মৌখিক বা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে, তারা পুনরায় আবেদন করতে পারবে না। এ ছাড়া নিম্নোক্ত অবস্থায় আবেদন অগ্রহণযোগ্য হবে—গ্রস নকনী, ফ্ল্যাট ফুট, কালার ব্লাইন্ড, অতিরিক্ত ওজন, অ্যাজমা, মৃগী, হৃদ্রোগ, বাত, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, রাতকানা, ডায়াবেটিস, হেমোফিলিয়া, কিংবা বিছানায় প্রস্রাবের অভ্যাস থাকলে।
তথ্যসূত্র: ক্যাডেট কলেজ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০২৬

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯ জুলাই ২০২১
আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
২ দিন আগে
কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২ দিন আগেশিক্ষা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না (ইউএসটিসি) এবং ইউনিভার্সিটি অব চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস (ইউসিএএস) থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন।
সুযোগ-সুবিধা
চীনের বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত। বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের পুরো কোর্সেরও টিউশন নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা। স্নাতকোত্তরের জন্য প্রতি মাসে থাকছে ৩ হাজার ইউয়ান আর পিএইচডির জন্য ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ইউয়ান। থাকছে বিমানভাড়া ও সম্পূর্ণ মেডিকেল ইনস্যুরেন্স সুবিধা। বৃত্তিটির আওতায় তরুণেরা বিশ্বমানের গবেষণা পরিবেশে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলতে পারবেন। যাঁরা চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এএনএসও স্কলারশিপ হতে পারে এক অনন্য সুযোগ।
আবেদনের যোগ্যতা
এএনএসও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, আবেদনকারী অবশ্যই চীনের নাগরিক নন, এমন প্রার্থী হতে হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ক্ষেত্রে প্রার্থীর জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ বা তার পরে হতে হবে। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীর জন্ম হতে হবে ১ জানুয়ারি ১৯৯১ বা তার পরে। প্রার্থীদের ইংরেজি বা চীনা ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।
বৃত্তির সংখ্যা
প্রতিবছর ২০০টি স্নাতকোত্তর ও ৩০০টি পিএইচডি বৃত্তি দেওয়া হয়।
আবেদনের প্রয়োজনীয় তথ্য
এএনএসও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও প্রস্তুত রাখতে হবে। এগুলো হলো পাসপোর্টের কপি, হালনাগাদ করা সিভি, গবেষণা অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, দুটি সুপারিশপত্র, গবেষণা প্রস্তাবনা, ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র ও শারীরিক সুস্থতার সনদ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে স্নাতকের সনদ ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য স্নাতকোত্তরের সনদ থাকতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়: ৩১ জানুয়ারি, ২০২৬।

বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রতিভাবানদের জন্য উন্মুক্ত হলো চীনের অ্যালায়েন্স অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অর্গানাইজেশনস (এএনএসও) বৃত্তি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না (ইউএসটিসি) এবং ইউনিভার্সিটি অব চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস (ইউসিএএস) থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন।
সুযোগ-সুবিধা
চীনের বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত। বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের পুরো কোর্সেরও টিউশন নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা। স্নাতকোত্তরের জন্য প্রতি মাসে থাকছে ৩ হাজার ইউয়ান আর পিএইচডির জন্য ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ইউয়ান। থাকছে বিমানভাড়া ও সম্পূর্ণ মেডিকেল ইনস্যুরেন্স সুবিধা। বৃত্তিটির আওতায় তরুণেরা বিশ্বমানের গবেষণা পরিবেশে নিজের দক্ষতা গড়ে তুলতে পারবেন। যাঁরা চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এএনএসও স্কলারশিপ হতে পারে এক অনন্য সুযোগ।
আবেদনের যোগ্যতা
এএনএসও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, আবেদনকারী অবশ্যই চীনের নাগরিক নন, এমন প্রার্থী হতে হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ক্ষেত্রে প্রার্থীর জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ বা তার পরে হতে হবে। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীর জন্ম হতে হবে ১ জানুয়ারি ১৯৯১ বা তার পরে। প্রার্থীদের ইংরেজি বা চীনা ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।
বৃত্তির সংখ্যা
প্রতিবছর ২০০টি স্নাতকোত্তর ও ৩০০টি পিএইচডি বৃত্তি দেওয়া হয়।
আবেদনের প্রয়োজনীয় তথ্য
এএনএসও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও প্রস্তুত রাখতে হবে। এগুলো হলো পাসপোর্টের কপি, হালনাগাদ করা সিভি, গবেষণা অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, দুটি সুপারিশপত্র, গবেষণা প্রস্তাবনা, ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র ও শারীরিক সুস্থতার সনদ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে স্নাতকের সনদ ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য স্নাতকোত্তরের সনদ থাকতে হবে।
আবেদন পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়: ৩১ জানুয়ারি, ২০২৬।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। এ সত্যে কোনো খাদ নেই। মানুষ তাঁর সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। হুমায়ূনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক আজম। পঁচিশ বছর ধরে হুমায়ূন পড়ছেন। একই সঙ্গে তিনি ‘পেশাদার’ পাঠকও। সাহিত্য পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯ জুলাই ২০২১
আন্দোলনের মুখে শর্তসাপেক্ষে অনুদানভুক্ত ১ হাজার ৮৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক।
২ দিন আগে
কয়েকটি ইসলামি দলের আপত্তির পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষকের পদ বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি কিছু ‘শব্দগত পরিবর্তন’ এনে গত আগস্টে জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২ দিন আগে
বাংলাদেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আবেদন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টা থেকে, চলবে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
২ দিন আগে