Ajker Patrika

সনদের সঙ্গে ঝুলছে শিক্ষার্থীদের ভাগ্যও

রবিউল আলম, ঢাকা
সনদের সঙ্গে ঝুলছে শিক্ষার্থীদের ভাগ্যও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুর ইসলাম বিপ্লব। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষায় পা রাখেন। নিয়মানুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্পন্ন করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ২০২০ গড়িয়ে ২০২১ সালের ৯ মাস শেষ হতে চললেও এখনো ৩য় বর্ষও শেষ করতে পারেননি এই শিক্ষার্থী। এতে ঠিক সময়ে চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না তিনি।

ইংরেজি বিভাগ ছাড়াও চবির ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স, মেরিন সায়েন্সেস, ফিশারিজ, ওশনোগ্রাফি, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন ও পরিবেশ বিদ্যা ইনস্টিটিউট, প্রাণিবিদ্যাসহ আরও কয়েকটি বিভাগ সাড়ে ছয় বছরেও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকের সনদ দিতে পারেনি। এ জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রাজনীতি, সমন্বয়হীনতা এবং ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে উদাসীনতাকে দায়ী করছেন। সেই সঙ্গে চাকরিতে প্রবেশ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৬ আগস্ট থেকে ৩য় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যেভাবে চলছে, সামনের বছরেও স্নাতকের সনদ হাতে পাই কি না, জানি না। তখন পাস করার পর দেখব চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ পর্যায়ে। সরকারি চাকরিতে পরীক্ষায় পাস করেও নিয়োগ পেতে দু-তিন বছর চলে যায়। স্নাতক শেষ করতে অতিরিক্ত সময় লেগে যাওয়ায় ভাগ্যে কী আছে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

এ সমস্যা চবির শিক্ষার্থী বিপ্লবের একার নয়, তাঁর মতো বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মনে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ভর করেছে। সময়মতো সনদ না পাওয়ায় চাকরির আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন আরও অনেকেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বদিউজ্জামাল মিলনের স্নাতক শেষ করার কথা ২০২০ সালের আগেই। অথচ তিনি এখনো আটকে আছেন সপ্তম সেমিস্টারে।

মিলন বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের আমার শিক্ষাবর্ষের বন্ধুদেরও স্নাতক শেষ হয়েছে। এত দিন পরিবারকে বলেছি, চার বছর পরেই পাস করে চাকরি নেব। অথচ সাড়ে ছয় বছরেও স্নাতক শেষ করতে পারিনি। আমাদের জীবন নিয়ে এভাবে খেলা করার মানে হয় না।’

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করেছি, সে অনুযায়ী কাজও করছি। অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীদের জট থেকে মুক্তি দেওয়া যায়, সে চেষ্টা করছি।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩১ আগস্ট অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার নীতিমালা অনুমোদন করেছে। তবে সশরীরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

পরীক্ষা আটকে থাকায় শিক্ষাজীবনে স্থবিরতা এলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ হাজার নিয়োগসহ বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষার ঘোষণা এসেছে। কিন্তু সনদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ সেগুলোয় আবেদন করতে পারছে না। সরকারি চাকরির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারছেন না তাঁরা।

শিক্ষাজটের কারণে চাকরির পরীক্ষায় আবেদনবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মিটিং করেছি। সেখানে আমরা তাঁদের বলে দিয়েছি, মেইন সিলেবাস ঠিক রেখে নন-মেজর বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিতে। স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করে সেমিস্টারের সময় কমিয়ে পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে, যাতে এসব শিক্ষার্থী দ্রুত জব মার্কেটে প্রবেশ করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত