Ajker Patrika

একাধিক মেধাতালিকা দিয়েও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো 

রবিউল আলম, ঢাকা
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৪
একাধিক মেধাতালিকা দিয়েও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো 

গত বছরের অক্টোবরে গুচ্ছ ভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন রায়হান চৌধুরী। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২১ সালের প্রথমদিকে স্নাতকের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও করোনার কারণে প্রায় ১ বছর পিছিয়ে গত অক্টোবরে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত মাসে প্রথমে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পরে জবি ছেড়ে ভর্তি হন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগে। তবে পরীক্ষার পাঁচ মাস পার হলেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এখনো স্নাতকের ক্লাস শুরু করতে পারেনি রায়হান। কখন ক্লাস শুরু করতে পারবেন তাও জানেন না তিনি। অথচ উচ্চশিক্ষায় পা রাখার আগেই ১৪ মাস শিক্ষা জটে পড়েছেন এই শিক্ষার্থী

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষা-কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে এখনো যেহেতু গুচ্ছ ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই শিক্ষাজট আরও বাড়বে।

রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আমরা এক বছর জটে পড়েছি তাই উচিত ছিল দ্রুত সময়ে আমাদের ক্লাস শুরু করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মের চেয়েও ধীর গতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যা আমাদের সবার জন্যই বেদনার।’

একই সমস্যায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান রকি। ভর্তি হওয়ার দুই মাস পার হলেও তিনি এখনো ক্লাসে বসতে পারেননি।

এই সমস্যা শুধু রায়হান বা রকির একা নয়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন এবং যারা ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন সবার অবস্থা একই।

গত বছরের ১৭ ও ২৪ অক্টোবর ‘ক’ ও ‘খ’ এবং ১ নভেম্বর ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষা নেয় গুচ্ছ ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরীক্ষার কয়েক দিন পর প্রকাশিত ফলাফলে অসংগতির অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ইউনিটের ভর্তি বাবদ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ফি নির্ধারণেও আপত্তি ওঠে। কোন কোন শিক্ষার্থী ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেও ভর্তি হতে পারছেন না অন্যদিকে অনেকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছুটছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একই সময়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায় দেখা গেছে, অনেকে প্রথমে যে বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তার চেয়ে তুলনামূলক ভালো বিভাগে ভর্তির জন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটছেন। ফলে কয়েক দিন পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন খালি হচ্ছে এবং তারা নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশ করছেন। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের সময় এবং অর্থের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাধিক মেধাতালিকা প্রকাশ করেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ফলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রথম বর্ষের ক্লাসও শুরু করা যাচ্ছে না। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ না করেই ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার তৈরি হয়েছে।

গুচ্ছ ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সপ্তম মেধাতালিকা শেষে অষ্টমবারের মতো ভর্তির সুযোগ দিলেও সব আসনের জন্য শিক্ষার্থী পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগের প্রতিটিতে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য আসন থাকলে মাত্র ২১ জন করে শিক্ষার্থী পেয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম থেকে সপ্তম মেধাতালিকায় বিষয় বরাদ্দ পেয়েও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি, তাঁদের সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এখানে এখনো ৪৯০টি আসন খালি আছে।

গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় মেধাতালিকার কার্যক্রম শেষে এখনো ১ হাজার ২৭০টি আসন খালি রয়েছে। এই পর্যন্ত তিন ইউনিটের ২ হাজার ৯৫টি আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছে ৮২৫ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ আসন এখনো ফাঁকা রয়েছে। তৃতীয় মেধা তালিকায় ভর্তির পরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১০ আসন শূন্য আছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে ৬৪৪টি সহ গুচ্ছ ভুক্ত আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে।

তবে গুচ্ছের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) দুই মাস আগে গত ২১ ডিসেম্বর প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করেছে। এ ছাড়া আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করবে ঢাবি। একইদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যারা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করবে তাদের নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও চবিতে এখনো ১৪ শতাংশ আসন ফাঁকা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমদ নূর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভর্তি কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করে পরিচালনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকে বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় প্রস্তাবটি রাখা হয়নি। এখন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় যে শিক্ষার্থী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় এসেছে সে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটছে। এইজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারছে না তাই সেমিস্টার শুরু করতে পারছে না।’

মুনাজ আহমদ আরও জানান, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করে সব বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে যারা আবেদন করত তাদের নিয়ে আমরা প্রথম মেধাতালিকা দিতাম। তখন শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে জানতে পারত কোথায় কোথায় তার কী কী বিভাগ এসেছে। সে যেটায় ভালো সেটায় ভর্তি হতো। এরপর একাধিক মেধাতালিকা দিতাম। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এইরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না এবং শিক্ষার্থীদের এত টাকা দিয়ে ভর্তি বাতিল করতেও হতো না।’

বৃত্তি সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত